আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
225 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (39 points)
শাইখ,
১| হাদীসে মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা আনে এবং আল্লাহর ভালেবাসা বাড়ায় এই হাদীসে মিসওয়াক করতে যে বলা হয়েছে সেটার মানে টা কি?

২|মিসওয়াক মানে কি গাছের ডাল দিয়ে করাকে বুঝায় নাকি টুথব্রাশকে বুঝায়?

৩| আমাদের এলাকার এক ইমাম আছেন,যিনি বিদআত ও পালন করেন,এখন তিনি যদি শাইখ আবদুল কাদীর জিলানীকে গাউসুল আযম বলে সম্মোধন করেন তাহলে তেনার ঈমান কি থাকবে?

৪|তেনার পিছনে নামায পড়লে কি নামায হবে কিনা?

৫|যেহেতু গাউসুল আযম নামটি শুধু আল্লাহরই তাই কাউকে এটি দিলে তো সে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করলো তাহলে তো তার পিছনে নামায হবে না,আপনাদের মতামত কি?

৬|রুকু যাওয়ার সময় দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখলে হবে কিনা?

৭|সিজদাহ যাওয়ার সময় দুই পা সহ পায়ের আংগুল ফাকা রাখলে হবে?
৮|সিজদার সময় দুই পা সহ পায়ের পাতাকে একত্রে কাছাকাছি লাগিয়ে রাখলে শুদ্ধ হবে কিনা?
৯|সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি কি কাধে দিকে ফিরাবো নাকি ডান বাম পাশের মুসল্লির দিকে ফিরাবো?অনেকে আবার কাধে ফেরেশতাকে সালাম দেয়!!!

১০|আমি যদি ফরজের জামাআত নামাযের ২ রাকাতের ১ রাকাত মিস করে ফেলি তাহলে আমার নামায কি আবার পূরণ করতে হবে নাকি বাকি থাকা এক রাকাত নামায জামাতের সাথে পড়লে হয়ে যাবে?
এক্ষেত্রে করণীয় কি?

 ১১| এক আবদুল্লাহর মনের অজান্তেই খারাপ চিন্তা এসে যাচ্ছে তার এখন করণীয় কি?এটা কিভাবে বন্ধ করা যায়?

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ النَّبِيِّ ﷺ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিসওয়াক হলো মুখগহ্বর পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের মাধ্যম।
সহীহ : বুখারী ২/৬৮২ (তা‘লীক সূত্রে), নাসায়ী ৫, সহীহুত্ তারগীব ২০৯, আহমাদ ২৪২০৩, দারিমী ৭১১,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩৮১)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে,
‘‘মিসওয়াক হলো মুখ পবিত্রকরণের হাতিয়ার’’। مِسْوَاكُ মিসওয়াক হলো প্রত্যেক সে কাষ্ঠ খন্ড যা দ্বারা ঘর্ষণের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করা হয়। আর তা যে মুখমণ্ডল পরিষ্কারের একটি হাতিয়ার তাতে কোন সন্দেহ নেই। মিসওয়াকের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। আর এ হাদীসের উদ্দেশ্য মিসওয়াক ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান।

★সুতরাং মিসওয়াক বলতে গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা বুঝায়।

(০২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
গাছের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতে হবে।
টুথব্রাশ দিয়ে মিসওয়াক করলে পরিপূর্ণ সুন্নত আদায় হয় না।

মিসওয়াকের সুন্নতের দুটি দিক আছে। এক. দাঁতের পরিচ্ছন্নতা; যেমন—কয়েক দিন মিসওয়াক না করার দরুন মুখে দুর্গন্ধ হলে তা মাকরুহ। দুই. আরেকটি দিক হলো মিসওয়াক করার মাধ্যম, যার দ্বারা দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে।
,
টুথপেস্ট, ব্রাশ ও মাজন দিয়ে মিসওয়াক করার ক্ষেত্রে মিসওয়াকের সুন্নতের প্রথম দিকটি আদায় হবে।

 ইমাম নববী (রহ.) বলেন,  দাঁতের দুর্গন্ধ ও ময়লা দাগ পরিষ্কার করার জন্য যেকোনো জিনিস দিয়ে মিসওয়াক করলেই দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত করার সুন্নত আদায় হয়ে যায়। (শরহে মাজহাব ১/২৮১)
,
কিন্তু দ্বিতীয় সুন্নতটি আদায় তখনই হবে, যখন মিসওয়াকটি রাসুল (সা.)-এর মিসওয়াকের মতো (লাকড়ির) হবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল ১/৬৫)

(০৩)
যেহেতু তিনি বিদ'আত করেন,তাই তার পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহ। 
,
(০৪) 
তার পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহ। 
তবে তার পিছনে নামাজ আদায় করলে নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
,
সেই নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবেনা।

আরো জানুনঃ

(০৫)
গাউস শব্দটি আরবী। এর অর্থ হল, সাহায্যকারী, আবেদন পূরণকারী। আজম শব্দটিও আরবী। এর অর্থ হল, বড় বা মহান। সে হিসেবে, গাউসুল আজম অর্থ হল, বড় সাহায্যকারী। [লিসানুল আরব ২/১৭৪]
,
বড় সাহায্যকারী একমাত্র আল্লাহ তাআলা। কোনো মাখলুক বড় সাহায্যকারী হতে পারে না। কোনো মাখলুকের কাছে সাহায্য প্রর্থনা করা সুস্পষ্ট কুফরী। 

হাদিস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مُوسَى، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، أَخْبَرَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ، وَابْنُ، لَهِيعَةَ عَنْ قَيْسِ بْنِ الْحَجَّاجِ، قَالَ وَحَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا أَبُو الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا لَيْثُ بْنُ سَعْدٍ، حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ الْحَجَّاجِ الْمَعْنَى، وَاحِدٌ، عَنْ حَنَشٍ الصَّنْعَانِيِّ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ كُنْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمًا فَقَالَ " يَا غُلاَمُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ "

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ্ তা'আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ্ তা'আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ্ তা'আলাকে তুমি কাছে পাবে। 

★তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা'আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ্ তা'আলার নিকটেই কর।

আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা'আলা তোমার জন্যে লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ্ তা'আলা তোমার তাকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে।

সহীহঃ (তিরমিজি ২৫১৬ মিশকাত (৫৩০২), যিলালুল জান্নাত (৩১৬-৩১৮)।)


★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
উল্লেখিত হাদীসে রাসূল (সা.) শুধু আল্লাহ তাআলার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন।  সুতরাং আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-কে গাউসুল আজম বলা শরিয়ত সম্মত হবে না।

উল্লেখিত ইমাম যদি গাউসুল আজম বলে 
 আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) কে বড় সাহায্যকারী হিসেবে মানে,বিশ্বাস করে,তাহলে এটি স্পষ্ট শিরক হবে।
তার পিছনে নামাজ হবেনা।  

তবে প্রশ্নে উল্লেখিত ইমাম সাহেব যদি এই অর্থে গাউসুল আজম না বলে,বরং শুধু শাব্দিক ভাবেই বলে থাকে,তাহলে এটিকে শিরক বলা যাবেনা।     

(০৬)
হবে,এতে নামাজের সমস্যা হবেনা।

(০৭)
হ্যাঁ নামাজ হবে।
,
(০৮)
হ্যাঁ নামাজ শুদ্ধ হবে।
,
(০৯)
হাদীস শরীফ থেকে বুঝা যায় যে পিছন থেকে গালের অংশ দেখা যাওয়া সুন্নাত।

কাধের দিকে নজর দিলেও গাল দেখা যাবে।
তাই কাধের দিকে নজর দিতে হবে।
,
তবে প্রশ্নে উল্লেখিত উভয়টিই আমল যোগ্য।
کذا فی التاتارخانیہ:
وعند التسلیمۃ الأولی إلی کتفہ الأیمن، وعند التسلیمۃ الثانیۃ إلی کتفہ الأیسر۔ (کتاب الصلاۃ، الفصل الثالث في کیفیۃ الصلاۃ، زکریا ۲۵/ ۱۸۶، رقم: ۲۰۹۳)
সারমর্মঃ
ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান কাধের দিকে নজর রাখবে,বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম কাধের দিকে নজর দিবে।

বিস্তারিত জানুনঃ   

(১০)
তাহলে আপনি ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর পর নিজে সালাম না ফিরিয়ে উঠে গিয়ে বাকি এক রাকাত নামাজ আদায় করবেন।
এতে সুরা ফাতেহা সহ অন্য সুরা পাঠ করবেন।    
,
(১১)
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আমল গুলি করুনঃ 

★আপনি এসব কুচিন্তাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।

★তালিমের পরিবেশ, আমলের পরিবেশ, তেলাওয়াতের পরিবেশ, জিকির-মুরাকাবা, দোয়ার পরিবেশে বেশি বেশি সময় দিবেন।

★যখনই নির্জনে থাকবেন, অবসর থাকবেন তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই।

★কুচিন্তা চলে আসে এমন কাজ ও পরিবেশ–বিশেষত ইন্টারনেটের এডাল্ট কন্টেন্ট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। গোপন গুনাহর ব্যাপারে আল্লাহকে বেশি ভয় করুন।

★মাঝে মাঝে কবর জেয়ারত করবেন। এর দ্বারা দিল নরম হবে। গুনাহর প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে। 

★এই দোয়া পাঠ করুনঃ

اللهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تُحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ ، وَمَنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ
হে আল্লাহ! আপনার প্রতি এমন ভীতি আমাদেরকে দান করুন, যা আমাদের মাঝে এবং আমাদের গুনাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হবে এবং এমন আনুগত্য দান করুন, যা আমাদেরকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছাবে। (তিরমিযী ৩৫০২)

★যদি বিবাহিত হন তাহলে নিয়মিত স্ত্রীসহবাস করুন। 

কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِذَا أَحَدُكُمْ أَعْجَبَتْهُ الْمَرْأَةُ ، فَوَقَعَتْ فِي قَلْبِهِ ، فَلْيَعْمِدْ إِلَى امْرَأَتِهِ فَلْيُوَاقِعْهَا ، فَإِنَّ ذَلِكَ يَرُدُّ مَا فِي نَفْسِهِ

যখন তোমাদের কাউকে কোন স্ত্রীলোক মুগ্ধ করে এবং তা তার মনকে প্রলূব্ধ করে তখন সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে এবং তার সাথে মিলন করে। এতে তার মনে যা আছে তা দূর করবে। (মুসলিম ১৪০৩)
(সংগৃহীত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...