সুরা আ'রাফের ৩১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
৭:৩১ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۳۱﴾
হে বনী আদম, তোমরা প্রতি সালাতে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর এবং খাও, পান কর ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।
এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলা হয়েছেঃ
আয়াতে পোষাককে ‘যীনাত’ বা ‘সাজ-সজ্জা’ শব্দের মাধ্যমে এ জন্যই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, সালাতে শধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করা ছাড়াও সামথ্য অনুযায়ী সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করা শ্ৰেয়। হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতের সময় উত্তম পোষাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি বলতেনঃ 'আল্লাহ্ তা'আলা সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তাই আমি প্রতিপালকের সামনে সুন্দর পোষাক পরে হাজির হই’। যে গুপ্ত-অঙ্গ সর্বাবস্থায় বিশেষতঃ সালাত ও তাওয়াফে আবৃত করা ফরয, তার সীমা কি? কুরআনুল কারীম সংক্ষেপে গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করার নির্দেশ দিয়ে এর বিবরণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পুরুষের গুপ্তাঙ্গ নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের গুপ্তাঙ্গ মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল ছাড়া সমস্ত দেহ।
হাদীসসমূহে এসব বিবরণ বর্ণিত রয়েছে। এ হচ্ছে গুপ্ত অঙ্গের ফরয সম্পর্কিত বিধান। এটি ছাড়া সালাতই হয় না। সালাতে শুধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করাই কাম্য নয়; বরং সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করতেও বলা হয়েছে। যেমন সাদা পোষাক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পোষাকাদির মধ্যে সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা, পোষাকাদির মধ্যে তাই উত্তম পোষাক। আর এতে তোমাদের মৃতদেরকে কাফনও দাও। [আবু দাউদঃ ৩৮৭৮, তিরমিযীঃ ৯৯৪, ইবন মাজাহঃ ১৪৭২]
অনেকে সাজসজ্জার পোষাক পরাকে অহংকারী পোষাক মনে করে থাকে এটা আসলে ঠিক নয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক লোক বললঃ কোন লোক পছন্দ করে তার পোষাক উত্তম হোক, তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূল বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর, সুন্দরকে ভালবাসেন। অহংকার হল, হককে না মানা, মানুষকে অবজ্ঞা করা। [মুসলিমঃ ১৪৭]
আবার অহংকার হয় এমন পোষাকও পরা যাবে না যদিও তাতে কারো কারো নিকট বাহ্যিক সুন্দর রয়েছে। যেমনঃ টাখনুর নীচে কাপড় পরা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে অহংকার বশে কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দিবে আল্লাহ তার দিকে তাকবেন না। [বুখারীঃ ৫৭৮৩]
★আয়াতের শানে নুযুল হিসেবে এসেছে যে, আরবের মুশরিকরা জাহেলিয়াতে মসজিদে হারামে কাবার তাওয়াফ করার সময় উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করত। এ ব্যাপারে তাদের দর্শন ছিল, যে কাপড় পরে গুণাহ করেছি তা দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না। বিশেষতঃ কুরাইশরা এ বিধিবিধানের প্রবর্তন করে। তারাই শুধু তাওয়াফের জন্য কাপড় দিতে পারবে। এতে করে তারা কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারত। এমনকি মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। শয়তান তাদেরকে এভাবে ইবাদাত করতে উদ্বুদ্ধ করত এবং এ কাজকে তাদের মনে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় কা'বার তাওয়াফ করত আর বলত, কে আমাকে তাওয়াফের কাপড় ধার দেবে? যা তার লজ্জাস্থানে রাখবে। আরও বলতঃ আজ হয় কিছু অংশ প্রকাশ হয়ে পড়বে নয়ত পুরোটাই। আর যা আজ প্রকাশিত হবে তা আর হালাল করব না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়- “তোমরা তোমাদের মাসজিদ তথা ইবাদাতের স্থানে সুন্দর পোষাক পরবে।” [মুসলিমঃ ৩০২৮]
,
★বিধর্মীদের ধর্মীয় নিদর্শন নয় এমন শালীন পোশাক যা পরিধান করে মানুষ মান সম্মত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে এবং উপযোগী হিসেবে মনে করে এমন পোশাক পরিধান করে নামায পড়া উচিত। যে পোশাক পরিধান করে মানসম্মত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে মানুষ অপছন্দ করে এমন পোশাক পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহে তানজিহী।
,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু নামাযের মধ্যে সতরের আওতাধীন কোনো অঙ্গ খুলে যাচ্ছেনা,স্পষ্ট বুঝাও যাচ্ছেনা,তাই এহেন কাপড়ে নামাজ জায়েজ আছে।
,
আরো জানুনঃ