আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন নারী চিকিৎসক। এমবিবিএস শেষ করে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের জন্য গাইনি সাবজেক্ট তাকে বেছে নিয়েছিলাম শুধুমাত্র দ্বীনদার বোনদের খেদমতের জন্য । এবং এটার জন্য একটা পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে চান্স পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। কোর্সটাতে দুই বছর চলে গেছে। টোটাল পাঁচ বছর কখনো বা বেশি লাগে। আমার একটা ছয় বছরের বাচ্চা আছে। বাচ্চাটাকে করার জন্য পার্মানেন্ট একজন কাজের মহিলা আছেন। আমার শাশুড়ি /মা কারো পক্ষেই আমার সাথে থাকা পার্মানেন্টলি। আমার স্বামী একজন চিকিৎসক। আমাদের দুজনকে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতে হয়। আমার স্বামীর সাথে আমার বোঝাপড়ার সমস্যা আছে। আমার স্বামী কারো না করে না হুটহাট রেগে যায়, ছোটখাটো বিষয়ে রাগ করে। কথা বন্ধ করে দিয়ে দিনের পর দিন থাকে। মাঝেমধ্যে রাগ হলে ডিভোর্সের কথাও বলে। ইদানিং তো প্রায় ডিভোর্সের কথা বলছে। প্রায় দুই মাস আগে প্রচন্ড বড় একটা ঝগড়া হয়, সে আমাকে ডিভোর্স তার ফ্যামিলির সব মেম্বারদেরকে আসতে বলেন। সে রেগে গিয়ে বলে সে সুইসাইড করবে। আমি আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে বলি সমস্তটাই আমার দোষ। আমি হয়তো সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারছি না। রাগ হলেই সে বলে সে আমার বস সন্তুষ্ট না , আমি তার কাছে চক্ষু শীতলকারি নিশ্চয়ই হতে পারিনি। সেজন্য আমার ভয় হচ্ছে, আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে পারব তো? আসলেও অনেক ক্ষেত্রে ঠিক আমি তাকে বুঝতেই পারছি না। আমার স্ট্রেসের বিষয়টাও অনেক বড় একটা বিষয় আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। আমার স্বামী ওই বড় ঝগড়াটার সময় একবার রাগ করে বলেছিল সে সুইসাইড করতে চায়। সে আমার প্রতি অনেক বেশি অসন্তুষ্ট। আমি জানি না আমার পক্ষ থেকে কোন কমতি খুঁজে পাই না। কিন্তু সে অনেক পারফেক্ট একটা মানুষ। এবং চাই আমিও সবকিছু পারফেক্টলি করি। কিন্তু ডিউটি পড়াশোনা প্রচন্ড প্রেসার সামলে আমার পক্ষে সংসার পারফেক্টলি সম্ভব হয় না। সে আবার আমার কোর্স করতে নিষেধও করে না ডিরেক্টলি। হসপিটাল এর কাছে বাসা নিয়ে থাকি। এবং কাজের মহিলার খরচ সমস্তটাই সে বহন করে। কিন্তু কারণে অকারনে রাগ করার কারণে, ডিভোর্স পর্যন্ত যাওয়ার কারণে, আমার কাছে মনে হয়, আমাকে stress ফ্রি থাকতে হবে। তাহলে হয়তো তার আগে সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে পারব ইনশাল্লাহ। এসব চিন্তা করে ইস্তেখারা শুরু করি। প্রায় আড়াই মাস ইস্তেখারা করার পরেও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। একবার মনে হচ্ছে কোর্স ছেড়ে দিই।পুরোপুরি দিনকে আঁকড়ে ধরে থাকি। সাহাবীদের মত পুরোপুরি পর্দায় থাকি। আবার মনে হচ্ছে, কোর্স ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি বাসায় থাকলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাব না তো? অনেক আলেমরা বলেন, নারী চিকিৎসকদের চাকরি করা জায়েজ আছে। কিন্তু আমার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার জন্য কি হবে? একই ফতোয়া খাটবে?
কোর্স ছেড়ে দেয়ার কথা শুনে আমার স্বামী আমার বাবার সাথে আমার মার সাথে বিষয়টা শেয়ার করে, যাতে করে তারা স্বামীকে দোষ না দিতে পারে, সে বলে সিদ্ধান্তটা পুরাপুরি আমার। আমার স্বামী বলেন আমার কোর্সের বিষয়ে উনার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত পড়াশোনা,অতিরিক্ত স্ট্রেস এগুলির জন্য আমার মেজাজের পরিবর্তন হলে,বা বাসার কোন কাজ ইনকমপ্লিট থাকলে উনি ঠিকই মন খারাপ করে থাকেন। আসলে,উনি আমার পড়াশোনার বিষয়ে,, কোন নোটস লাগলে, কোন কাজ বাইরে থেকে করতে হলে, হেল্প করেন না। বলেন তোমার কাজ তুমি করো । তোমার পড়াশোনার বিষয়ে আমি কোন হেল্প করতে পারবো না। এটা বুঝতেছিনা সে আমার পড়াশোনা বিষয়ে পজেটিভ আর নেগেটিভ। ইদানিং তো,বেশি ভাবাচ্ছে আমাকে আল্লাহর ভয়টা। আমি নিজেও আসলে চিন্তা করছি, আমি আজকে মারা গেলে, আল্লাহর কাছে ঠিকমত জবাবদিহি করতে পারব তো সবার হক সম্পর্কে? আল্লাহ আমাকে মাফ করবেন তো?
বাচ্চাটাকে বাসায় রেখে যাই একজন খাদিমার কাছে। ইদানিং খেয়াল করছি সে প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে, অভিমান করছে, রাগ করে আমার থেকে দূরে গিয়ে বসে আছে, জেদ দেখাচ্ছে। কোর্সের এত বেশি প্রেসার এর জন্য, তাকে ঠিক মতো সময় দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সামনে আবার পরীক্ষা। বড় পরীক্ষা। সেটাতে দিবো কিনা তাই চিন্তা করছিলাম। শায়খ, আমি কি আমার বাচ্চার হক নষ্ট করছি? শুধুমাত্র দ্বীনদার বোনদের খেদমতের উদ্দেশ্যে ক্যারিয়ার করতে গিয়ে, ফরজ নামাজ মাঝেমধ্যে দেরি হয়ে যেতে পারে /মিস হয়ে যেতে পারে, স্বামীর সাথে মাঝেমধ্যে বেশি ঝগড়া হতে পারে /আল্লাহ চাইলে নাও হতে পারে (আসলে আগের অভিজ্ঞতা খারাপ তো), একজন খাদিমা রেখেছি, ওনার পর্দা লঙ্ঘন হচ্ছে আমার স্বামীর সামনে, এর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে কিনা? গাইনিতে যেহেতু সব মহিলা, কিছু কিছু সময় ওয়ার্ড বয় দাদু থাকে পুরুষ, অথবা অফিসিয়াল কাজে পুরুষদের সাথে কথা বলতে গিয়ে, কন্ঠের পর্দার লঙ্ঘন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে, দ্বীনদার বোনদের খিদমতের জন্য, এই যে বিষয়গুলি বললাম সেগুলি ছাড় দিয়ে এগিয়ে যাব কোর্স টাতে?????, আল্লাহ কি আমার এই উদ্দেশ্যের জন্য, বাকি সবগুলি বিষয়ে, যেসব কমতি থাকে, ফরজ তরক হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে, সেগুলিকে আল্লাহ আমাকে ছাড় দিবেন? নাকি কোর্সটা বাদ দিয়ে, বাসায় স্বামী সন্তানের হক নিয়ে সচেষ্ট থাকবো? আমার জন্য কোনটা ভালো হবে? দয়া করে বলবেন? মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। কোন একটা বিষয় সিদ্ধান্ত আসতে পারছিনা। সামনে যেহেতু পরীক্ষা কোর্সের জন্য পড়াশোনা করছি। আমার বাবা কখনো মতেই কোর্স ছাড়তে দিবেন না। কিন্তু আমি সবকিছুর উপরে আল্লাহর ভয় করছি। যদি এত সবকিছুর পরেও দ্বীনদার বোনদের খিদমতের উদ্দেশ্যে কোর্সটা কর আমার জন্য ঠিক হয় তাহলে আমি হয়তো কোর্স কন্টিনিউ করব। আর যদি ঠিক না হয় এমত অবস্থায় কোর্সটা হয়তো বাদ দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ। মৃত্যুর পরের জিন্দেগীর ভয় করছি। ।কোর্স চলাকালীন সময়ে, ডিউটি পড়াশোনার প্রেসার, আবার এদিকে স্বামীর কথা বলা বন্ধ করে রাখা , এগুলি আমাকে খুব কষ্ট দেয় এত স্ট্রেস নিতে পারি না। দেখা যায় বাচ্চার সাথে অনেক সময় রিয়েক্ট করে ফেলি। দয়া করে আমার সমস্ত পরিস্থিতি বিবেচনা করে, একটা সঠিক সমাধান দিবেন। আলেমরা অনেক সময় বলেন, ছোট ক্ষতি করে হলো বড় কোন লাভ অর্জন হলে সেটা করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে আমার এই কোর্সটা করাটা কি জায়েজ হবে? আমি কি আমার পোস্টটা কন্টিনিউ করে যাব কিনা?, সবদিক থেকে ধকল সামলাইতে হবে, কোর্স ছেড়ে দিলে। কিন্তু ইনশাল্লাহ আল্লাহর ভয়টা এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে। এক্ষেত্রে কোর্স কন্টিনিউ করার হুকুম থাকলে সেটাই করব ইনশাআল্লাহ। আমাকে দয়া করে একটু সঠিক সমাধান দিবেন। কাইন্ডলি। আমার শ্বশুর বাড়ির লোক যেন চান আমি কোর্স কন্টিনিউ করি। আমাদের এই গাইনি ডিউটিতে আমাকে নাইট করতে হবে। সেক্ষেত্রেও বাচ্চা এবং হাজবেন্ড, কষ্ট পেতে পারে। যদি আমার হাজবেন্ডের এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই উনার ভাষায়। উনি অনেক বেশি ইন্ট্রভার্টেড। সেজন্য ওনার মনের আসল কথাটা জানা সহজ না আমার জন্য। সমাধান দেওয়ার পাশাপাশি আমার জন্য দোয়াও করবেন।