আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
66 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
গুণাহ,বান্দার হক বিষয়ে প্রশ্ন:
১.আমার সম্মূখে কারো হাসি ঠাট্টা করা হলে আর তা যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুনে ফেলি তবে কি আমার গুণাহ হবে আর বান্দার হক নষ্ট হবে? আবার তা অনিচ্ছায় শুনে যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসি আসে তবে কি গুণাহ হবে ও বান্দার হক নষ্ট হবে? আবার অনেক তা অনিচ্ছায় শুনেছি কি না তা নিয়ে সন্দেহ হয় এক্ষেত্রে কি গুণাহ হবে ও বান্দার হক নষ্ট হবে?

২.রাস্তায় হাটার সময় ভুল করে কোন ইট পাথর বা অন্য কিছু যা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক তা যদি পায়ে ধাক্বা লেগে অন্য স্থানে সরে যায় এক্ষেত্রে কি আমার জন্য ঐ বস্তুটি সরানো কি বাধ্যতামূলক? কারণ,যেই স্থানে সরে গেছে ঐ স্থানে আবার কেউ যদি কষ্টের শিকার হতে পারে।

৩.অট্টহাসি হাসা কি গুণাহ?
৪.আমি একটা ইসলামিক গল্পের বই পড়ছি। যেটা বিভিন্ন সিরিজ এর আর সেখানে সত্য কাল্পনিক সকল ঘটনাই আছে।সেখানে অনেক গল্প(নবী আলাইহিস সালাম ও সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহু ব্যাপারে ,সাদ্দাদের কাহিনী ইত্যাদি)আছে যা আমার জানামতে বানোয়াট।আর অনেক ঘটনা আছে যার  (যেমন নবী আলাইহিস সালাম সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহু এর ঘটনা ইত্যাদি) সনদ দেওয়া নাই।এই বই আত্মশুদ্ধি ও মনকে প্রফুল্ল করার উদ্দেশ্যে পরা যাবে?আর যে কাহিনীর সনদ নাই তাও কি পরা যাবে?

প্রশ্ন:(নামাজ বিষয়ক)
১.নামাজা সিজদার সময় শরীরের পজিশন অনেক সময় সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত ভাবে যদি একটু বাকা হয় কিন্তু কিবলা পরিবর্তন হয়না। অনেক সময় হয়ত বুঝাও যায়না এরকম হয়েছে। এক্ষেত্রে কি নামাজ ভেঙ্গে যাবে?

২.জামাআতে নামাজে একটা কাজে ভুল নিয়ে সন্দেহ হলে নামাজ ভেঙ্গে আবার নামাজের নিয়ত নিলে বা পরবর্তী রাকাতে নিয়ত নিলে তা কি জায়েয এবং এর পরবর্তী হুকুম কি মাসবুকের মত?

৩.নামাজে রুকু থেকে উঠার সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর কাছাকাছি অবস্থায়( দাড়ানো অবস্থায় নয়) "রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ' বলে ফেলেছি এক্ষেত্রে নামাজে কোন সমস্যা হয়েছে বা গুণাহ হয়েছে?(তখন আমি জামাআতে নামাজে ছিলাম)
[সম্ভবত মাগরিব]
৪.আমি যোহরের ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্বাদা মিস হয়ে যাওয়ায় ২ রাকাতের পর তা পারছিলাম তখন নিয়ত বাধার পর হঠাৎ মনে হল যে আমি হয় দুই রাকাতের নিয়ত করেছি তখন কিছুক্ষণ পর নামাজ ভেঙ্গে দেয়ার পরে আবার সুন্নাতে মুয়াক্বাদার নিয়ত নিতে গিয়ে মনে হল যে আমি হয়ত চার রাকাত এর নিয়তই করেছিলাম তখন আমি পুরোপুরি তাকবির দেইনাই (আল্লাহ আক বলে বাদ দেই) । তারপর চার রাকাত এর নিয়ত করেছি না দুই রাকাতের তা নিয়ে সন্দেহ হলে আমি যোহরের চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্বাদার কাযার নিয়তে (যেটা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম) তা আদায় করেছি।এখন আমার নামাজ কি আদায় হয়েছে? না হলে করণীয় কি?

৫.আগষ্টের ২৪ তারিখ  আছরের জামায়াতে নামাজে নিয়ত বাধার সময় তখন সবাই রুকুতে ছিল।আমি নিয়ত বেধে রুকুতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সন্দেহ হচ্ছে যে আমি কি নিয়ত বেধে দাঁড়িয়ে হাত বেঁধে তারপর তাকবির দিয়ে রুকুতে গিয়েছি নাকি সরাসরি নিয়ত করে হাত না বেধেই সরাসরি রুকুতে গিয়েছি । এখন আমার করণীয় কি?

৬.আছরের নামাজ এর সময় মোবাইল টিপছিলাম তখন আমি ভাবলাম পরে নামাজ পড়ি।পরে আরো ভাবলাম ৬:১৫ তে পড়ে নেব। কিন্তু ৬:১৫ তে দেখলাম ৬:২২ এ আসরের নামাজ শেষ হয়। তখন সম্ভবত মাগরিবের নামাজ যে ৬:২৫ এ শুরু তা ভুলেই গেছি।তখন তাড়াতাড়ি ওযু করে ৬:১৯ এ নামাজ শুরু করে সম্ভবত ৬:২৫ এ শেষ হয়।আমার প্রবল ধারনা যে আমি ৬:২২ এর আগে আসরের ১ রাকাত পড়েছি।এখন আমার নামাজ কি হয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

(গুনাহ ও বান্দার হক বিষয়ক)
(০১)
এক্ষেত্রে গীবত শুনলে আপনার গুনাহ হবে,বান্দার হক নষ্ট হবে,অন্যথায় নয়।

(০২)
এক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ বস্তুটি সরানো বাধ্যতামূলক নয়।

(০৩)
আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সাধারণত মুচকি হাসি দিতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪২)।
 অর্থাৎ রাসুল (সা.) বেশির ভাগ সময় মুচকি হাসতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় কথা বলতেন।

হজরত জারির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩০৩৫)

রাসুল সাঃ আমাদের  শিখিয়েছেন, একজন মুসলিম অপর ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে। শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি ছদাকা হিসেবে গণ্য করেছেন। 

(‘ছদাকা’ মানে দান, যার বিনিময়ে আল্লাহ আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন।) একটি হাদীসে নবীজী বলেছেন-
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ.
প্রতিটি ভালো কাজ ছদাকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হল, অপর ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৭০

আরেক হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ.
তোমার ভায়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি ছদাকা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬

কারো সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে কী হয়? সে খুশি হয়। আর কারো সাথে এমনভাবে সাক্ষাৎ করা, যা তাকে অনন্দিত করে- এ কাজটি আল্লাহ অনেক পছন্দ করেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ لَقِيَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ بِمَا يُحِبُّ لِيُسِرَّهُ سَرَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَة.
যে ব্যক্তি নিজের কোনো মুসলিম ভাইকে খুশি করার জন্য এমনভাবে সাক্ষাৎ করে, যেমনটি সে পছন্দ করে (এর বিনিময়ে) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে খুশি করবেন। -আলমুজামুস সগীর, তবারানী, হাদীস ১১৭৮; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৩৭২১

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
https://ifatwa.info/59744/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে
(وَمِنْهَا الْقَهْقَهَةُ) وَحَدُّ الْقَهْقَهَةِ أَنْ يَكُونَ مَسْمُوعًا لَهُ وَلِجِيرَانِهِ وَالضَّحِكُ أَنْ يَكُونَ مَسْمُوعًا لَهُ وَلَا يَكُونُ مَسْمُوعًا لِجِيرَانِهِ وَالتَّبَسُّمُ أَنْ لَا يَكُونَ مَسْمُوعًا لَهُ وَلَا لِجِيرَانِهِ. كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ
 হাসি তিন প্রকার। প্রত্যেকটির সংজ্ঞা নিম্নরূপ।  যথা-
(১)ক্বাহ্ক্বাহাঃ যা সে নিজেও শুনবে এবং তার প্রতিবেশীগণ ও শুনবে।
(২)দ্বিহকঃযা সে নিজে শুনবে,তবে তার প্রতিবেশীগণ শুনবে না।
(৩)তাবাস্সুমঃযা সে নিজেও শুনবে না এবং প্রতিবেশীরা ও শুনবে না।(যাখিরাহ)এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/10843

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إيَّاك وكثرةَ الضَّحك؛ فإنَّه يميت القلبَ، ويذهب بنورِ الوجه
“উচ্চ আওয়াজে হাসা থেকে সাবধান থাকো। কেননা এতে অন্তর মরে যায় এবং মুখ মণ্ডলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।” (মুসনাদ আহমদ প্রমূখ। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)

বেশি হাসা মাকরুহ, বা অট্ট হাসি দেওয়াও মাকরুহ। এর দ্বারা অন্তর মরে যায়।


দলিল হিসেবে দারুল উলুম দেওবন্দ বুখারি শরীফের টিকার একটি বাক্য উপস্থাপন করা হয়।
وأما المکروہ من الضحک فہو الإکثار من الضحک فإنہ یمیت القلب وذلک ہو مذموم (حاشیة بخاری: ۹۰۰/۲، اتحاد دیوبند)۔

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই,
অট্টহাসিকে অভ্যাস বানিয়ে নেয়া মাকরুহ।মাঝেমধ্যে হয়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য।

(০৪)
হ্যাঁ, পড়া যাবে।

(নামাজ বিষয়ক)

(০১)
এক্ষেত্রে নামাজ ভেঙ্গে যাবেনা।

(০২)
পরবর্তী রাকাতের নিয়ত করক যায়না।

আর উক্ত কারনে নামাজ ভেঙ্গে দেয়া জায়েজ নেই।

এক্ষেত্রে পুনরায় নামাজের নিয়ত করলে সেক্ষেত্রে জামাতে নামাজ হলে ও ইমাম সাহেব ২য় বা পরবর্তী রাকাত গুলোতে থাকলে সেক্ষেত্রে আপনি মাসবুক হবেন।

(০৩)
এক্ষেত্রে নামাজের কোনো সমস্যা হয়নি।

(০৪)
হ্যাঁ, আদায় হয়েছে।

(০৫)
উক্ত নামাজ আদায় হয়ে গিয়েছে।
চিন্তা না করার পরামর্শ থাকবে। 

(০৬)
এটা যেহেতু সেইদিনের আছর নামাজ ছিলো,তাই উক্ত আসর নামাজ আদায় হয়ে গিয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...