আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
61 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে অবাধ্য স্ত্রীর বিষয়ে। প্রশ্নের বর্ণনা একটু বড়, তাই ধৈর্য্য সহকারে পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। আল্লাহর রহমতে ১৫ বছর বয়সে আল্লাহ হেদায়েতের রাস্তা দেখান, তখন থেকেই নিয়মিত নামাজ, রোজাসহ সব ধরনের আমল করার চেষ্টা করেছি আজ পর্যন্ত। নিজের আখলাকের বিষয়ে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি হেফাজত করতে। সেই ছোট বেলা থেকেই গায়রে মাহরামদের দিকে চোখ না তুলে তাকানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছি, রাস্তায় সবসময় নিজের পায়ের দিকে তাকিয়েই হাঁটি। স্কুল কলেজ মেডিকেল সব জায়গায় খুব কষ্ট করে হলেও পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করেছি, ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সবজায়গায়তেই কোনো গায়ের মাহরামকে এ্যাড করিনি, নিজের চাচাতো খালাতো বোন হলেও। সবই আমার প্রতি আল্লাহর অনেক বড় এহসান। আমি দ্বীনের পথে আসার পর প্রত্যেক পদে পদে নিজ বাবা মা, আত্মীয় স্বজনের কাছে এই দ্বীন মানা নিয়ে কটু কথা শুনেছি। বাসার সবাই চেয়েছিলো আমিও তাদের মত সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলবো, আর মুসলমান হিসেবে শুধু নামাজ রোজা করবো। কিন্তু জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কড়াকড়িভাবে মেনে চলবো এটা তারা ভালোভাবে মেনে নেয়নি। তবুও বিরূপ পরিবেশে একরকম যুদ্ধ করেই চলছিলাম জীবনে। জেনারেল লাইনের এই ফেতনাময় পরিবেশ থেকে বাঁচতে বিয়ে করা আমার জন্য খুবই জরুরি ছিল। তাই বাসায় দীর্ঘ ৬-৭ বছর এ বিষয়ে দাওয়াতের মেহনত করার পর অনেক গালমন্দ শুনে হলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয় বিয়ে দিতে। রাজি হলেও বিয়ের ক্ষেত্রেও তারা চেয়েছিলেন তাদের মত উচ্চ শিক্ষিত স্মার্ট মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসি, কিন্তু আমার নিজের খুব ইচ্ছে ছিল একজন দ্বীনদার কুরআনের হাফেজা বিয়ে করার। আমি নিজেও ৩ পারা মত হেফজ করেছিলাম, তাই চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী কুরআনের হাফেজা হলে আমার জন্য হেফজ করার রাস্তাটা সহজ হবে। কিন্তু বেকার ছিলাম প্লাস নিজে কুরআনের হাফেজ না বলে কেউ হাফেজা মেয়ে আমার কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। অনেক কষ্টে একজনের খোঁজ পেলাম যে কিনা জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করেছে কিন্তু করোনার সময় স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজে থেকে মাদ্রাসায় গিয়ে হিফজ শুরু করেছে। তার আখলাক চরিত্রও ভালো। তবে মাহরাম গায়ের মাহরাম এগুলো এখনও পুরো পুরি মেনে চলা শুরু না করলেও যথেষ্ট পর্দাশীল। তো সবকিছু বিবেচনায় তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসি।  তার সাথে দেড় বছর সংসার করতে পেরেছিলাম। দেড় বছরের মাথায় একটা ছেলে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরদিনই সে করোনায় মারা যায়। আল্লাহ তার ওপর রহম করুন। সে এই আইওএম এর ২২৭ ব্যাচের ছাত্রী ছিল। আল্লাহর এই বান্দী আমার জন্য চোখের শীতলতা ছিল। সবসময় আমার খেয়াল রাখতো, দ্বীনের বিষয়ে খুব এগিয়ে গিয়েছিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পর। যা পড়তো মাদরাসায়, সব আমল করতো। আমাকেও তালিম করতো, ভুল পথে পা বাড়ালে আল্লাহর কথা স্মরন করিয়ে দিত। আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও এক পা দিত না, তা সে আমি তার সামনে থাকি বা দূরে হোস্টেলেই থাকি না কেন। আমার সাথে খুব বিনয়ের সাথে চলতো, ঝগড়াঝাটি খুব অপছন্দ ছিল আমাদের দুজনেরই। খুব কষ্ট পেয়ে আমার চোখের সামনে মারা গেছে। আল্লাহর বান্দীকে যখন শ্বাসকষ্ট নিয়ে এম্বুলেন্সে উঠিয়েছিলাম, তখনও সে ঐ অবস্থায় নেকাব হাত মোজা পা মোজা ছাড়া বের হয়নি। হাসপাতালে ঠিকমত চিকিৎসা দিতে চায়নি করোনা রোগী বলে। মুখে সব খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল ডাক্তাররা। সারারাত আমার কাছে একটু পানি চাচ্ছিলো একটু পর পর। কিন্তু আমি দিতে পারিনি। এভাবেই আমার চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেল। ১ দিন বয়সের বাচ্চা নিয়ে আমি এক কঠিন পরীক্ষায় পড়ে গেলাম। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর তার বোনেরও ছেলে হয়। তো আমার ছেলেকে কিছুদিন বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তারা নিয়ে যায়।  মাঝে কিছু মাস পার হওয়ার পর ছেলেটাকে বড় করতে হবে, নিজের কাছে নিয়ে আসতে হবে এই কথা চিন্তা করে তাকে দেখভাল করার জন্য আরেকটা বিয়ে করি। বেকার, বউ মরে গেছে, ছেলে আছে, এসব শুনে কেউ মেয়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না, তাই দ্বিতীয় স্ত্রী সম্পর্কে এত বেশি খোঁজ খবর নেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি, তবুও যতটুকু জানতে পেরেছিলাম খুব খারাপ না, আলিয়া মাদ্রাসায় আলিম সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো। তাকে আর তার পরিবারকে আমার সবকিছু খুলে বলেছিলাম। আমার ছেলেটাকে এভাবে মানুষ করতে হবে এসব কিছু বলে নিয়েছিলাম। সাথে এ-ও বলেছিলাম যে আমার প্রথম স্ত্রী আমার জন্য এমন চোখ শীতলকারী ছিল, আমার চোখের সামনে খুব কষ্ট পেয়ে মারা গেছে, তাকে ভোলা আমার জন্য সম্ভব না, তার গল্প আমি মাঝে মধ্যে করবো। আমাদের নবী, খাদিজা (রা) এর গল্প আয়িশা (রা) এর কাছে করতেন এই উদাহরণ দিয়েও বুঝিয়েছিলাম। তারা সবকিছুতে রাজি হয়ে বিয়েতে মত দেয়। মেয়ে এমন কথাও বলেছিলো যে সে এমনভাবে চলবে যাতে কারও কাছে মনেই না হয় যে আগের স্ত্রী নেই, এমন ভাবে সে তাকে ফলো করবে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে তাদের আসল রূপ বের হয়ে আসতে থাকে। বিয়ের পর তাদের বাসায় গিয়ে জানতে পারি যে আমার পূর্বের বিয়ে আর ছেলে আছে এটা সম্পূর্ণ গোপন করে তারা সবার কাছে বলেছে যে তাদের মেয়ের সাথে আমার প্রথম বিয়ে হয়েছে। আমার ছেলেকেও তারা আমার বোনের ছেলে বলে চালিয়ে দিয়েছে সবার কাছে। বিয়ের রাতেই সে সহবাস করতে চায়, সহবাস করতে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছে সে কুমারী না। যেহেতু আমি নিজে ডাক্তারী পড়ছি আর আগেও একজন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করেছি, সেহেতু তার অবস্থা আমার কাছে যথেষ্ট সন্দেহজনক মনে হয়েছে। যদিও সে এসব বিষয়ে কিছু স্বীকার করেনি তবুও তার চালচলন, ভাবগতি প্লাস তার বাপেরবাড়ির মানুষদের আমাকে ও আমার পরিবারকে তাদের বাসার আশেপাশের কোনো মানুষের সাথে কথা বলতে না দেওয়াটা আমাকে বেশি সন্দেহে ফেলেছে। মেয়ে যেমন দ্বীনদার দাবি করেছিলো তার ধারে কাছেও না, বিয়ের আগে বেপর্দা ঘুরে বেড়ানো, সে তার কিছু বান্ধবী আর বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড মিলে চটপটি খেতে গেছে এসব গল্পও আমার সামনে সে বলে। আমার জন্য এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর ছিল যেহেতু আমি নিজে এমন ফেতনাতে কখনও জড়াইনি, আমার প্রথম স্ত্রীও এসব দিক থেকে পবিত্র ছিল। তবুও তাকে বলেছি যে বিয়ের আগে তুমি কি ছিলে তা আমি জানতে চাইনা, এখন তুমি বিয়ের পর কিভাবে চলবে এটাই মুখ্য বিষয়। নিষেধ করা সত্ত্বেও সে তার আগের কাহিনি আমাকে শোনাতো, আমরা তাকে বিয়ে করার জন্য দেখতে যাওয়ার আগের দিন তার জন্মদিন ছিল, সে বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে জন্মদিন পালন করেছে, শাড়ি পড়েছে, ভ্রু প্লাক করেছে। বিয়ের আগে সে টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে কানে হেডফোন লাগিয়ে জগিং করতে বের হত। আমরা বিয়ে ঠিক করার পরেরদিন কোন ছেলের বাড়িতে গিয়ে ছেলের সাথে ঝগড়া করে এসেছে , এসব গল্প শোনাতো। আমার জন্য এগুলো শোনা ছিল জীবিত থেকেও মরে যাওয়ার মত। তবুও তাকে নসীহত করার চেষ্টা করেছি, বুঝিয়েছি, আল্লাহর ভয় দেখিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাকেও আইওএম এ ভর্তি করে দিলাম যেন অন্তত তালিম শুনে হলেও মনটা একটু নরম হয়, কিন্তু হয়নি। তালিমে যা শোনাতো, তা সে নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্যের দিকে খুঁজতো যে এই দোষ কার ভিতর আছে, বিশেষ করে আমার ভিতর আছে কিনা। মাদরাসার যে মেয়ের সাথেই পরিচয় হত না কেন তার সাথেই সে আমার নামে বলতো যে আমি নাকি তাকে দেখতে পারিনা, পছন্দ করিনা। সে আমি সামনে থাকলে খুব পর্দা করতো, কারও সামনে যেত না, কিন্তু আমি না থাকলে, বা বাপেরবাড়ি থাকলে সব ঢিলেঢালা হয়ে যেত। তাকে নসীহত করলে সে শুনতে চাইতো না, বিরক্তি দেখিয়ে সামনে থেকে উঠে চলে যেত। আমার প্রথম স্ত্রীর একটু কথা বললে সে চরম বিরক্তি প্রকাশ করতো। আমার প্রথম স্ত্রী এত কষ্ট পেয়ে মারা গেছে তা একটু বলা শুরু করলেই সে সেখান থেকে উঠে  চলে যায়, আমার কষ্টের কোনো মূল্য তার কাছে নেই। এমনকি সে আমাকে এমনও থ্রেট দিয়েছে যে তার সামনে যেন আমার আগের স্ত্রীর নাম উচ্চারণও না করি, অথচ তাকে আমি বিয়ের আগেই বলে নিয়েছিলাম। দ্বীনের বিষয়ে নসীহত শুনতে চাইতো না তাই বাধ্য হয়ে বলতাম যে আমার আগের স্ত্রী এভাবে এভাবে চলতো, তোমাকেও সেভাবে চলতে হবে। তার ভিতরে হালাল হারাম মানার বিষয়ে যে সতর্কতা তা কখনও দেখিনি। বিয়ের কিছুদিন পরই সে আমার মা এবং  বড় বোনের কাছে বিচার দেওয়া শুরু করলো আমার নামে যে আমি নাকি তাকে আগের বউয়ের মত ভালোবাসতে পারবো না, সে হাজার করলেও আমার মন পাবে না, এসব। আমার মা বোন আমাকে এজন্য বকতো সবসময়। কিন্তু তাকে আমি আগের স্ত্রীর চেয়েও বেশি ভালবাসতে চেয়েছিলাম, তেমন আদর যত্ন করতাম, তবুও তার কেন যেন মনে হত যে আমি তাকে ভালবাসি না। সে চাইতো নাটক সিনেমার মত সারাদিন তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াই, তাকে সাজিয়ে দেই, হাতে মেহেদী দিয়ে দেই। এগুলো সবই আমি করেছি, কিন্তু তার চাহিদা হচ্ছে সবসময় এমন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে জীবন তো অন্য রকম, আমার পড়াশোনা আছে, অন্যান্য বিষয় আছে, সবদিকই তো মেইনটেইন করে চলতে হবে,  কিন্তু সে চাইতো শুধু তাঁকে নিয়েই পড়ে থাকি। সে বিয়ের শুরু থেকেই আমার সাথে খুব খারাপ আচরণ করতো, আমাকে কটু কথা শোনাতো, একটু কিছু বললে আমার গালের সামনে হাত নিয়ে যেত, চড় মারবে দেখাতো। হোস্টেলে ডাইনিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাইরের হোটেলের খাবার খেয়ে ফুড পয়জনিং হয়ে একটু পেট খারাপ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলাম কিছুদিন, এটা নিয়েও সে তার বাপের বাড়িতে বিচার দিয়েছে যে  কেমন ছেলের সাথে বিয়ে দিল আমার নাকি পেটের সমস্যা সারাদিন শুধু শুয়ে থাকি। যাইহোক এভাবে দিন দিন তার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে, সাথে তার মুখের কথাও দিন দিন লাগামহীন হতে থাকে। আমাকে প্রতারক, বেঈমান, স্বার্থপর এসব বলতো। আমি কিভাবে তার সাথে প্রতারণা করেছি, বেঈমানী করেছি জানতে চাইলে আর কিছু বলতে পারতো না। মিথ্যা কথা বলতো খুব। আমার আগের স্ত্রীর সাথে দেড় বছরের সংসারে একটু রাগারাগি হয়েছে তাও কখনও আমার মা বাবা শুনতে পায়নি। আমাদের ভিতরের খবর নিজেদের ভিতরেই রাখতাম। কিন্তু এই দ্বিতীয় স্ত্রী তার সাথে একটু মেসেজে রাগারাগি হলে তাও আমার মা বোনকে গিয়ে বলতো। মা বোনও আমাকে বকতো, পরে আমি তাদেরকে সব ঘটনা খুলে বলা শুরু করলাম যে সে আমার সাথে শুরু থেকে কি কি করেছে। সে আমাকে মেসেজে এসব খারাপ কথা লিখতো, তাকে আল্লাহর ভয় দেখালে সে ভয় পেত না, সে মনে করতো আমিই জালেম, আমি তার ওপর জুলুম করছি, তাই আমাকে এমন খারাপ কথা বললে তার গুনাহ হবে না। তার একটা অবিবাহিত বড় বোন আছে, যে কিনা নারীবাদী টাইপের। আমার স্ত্রীকে সে সবসময় নিজের পায়ে দাড়াতে বলে, সে নিজে বিয়ে করতে চাচ্ছে না আগে নিজের পায়ে দাড়াবে, স্বামী তালাক দিলে কিছু করে খেতে হবে এই চিন্তায়। তার সাথে আমি আমার স্ত্রীকে যোগাযোগ করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও স্ত্রী যোগাযোগ করতো। আমার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে তার বড় বোনের পরামর্শে আলিয়া মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষা দিতে আমার বাসা থেকে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল গতবছর। তার বোন তাকে বলেছিল যে তার সংসার টিকবে কিনা সন্দেহ আছে তাই পরীক্ষাটা দিয়ে রাখতে যাতে পরে কিছু হলে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে। আমার স্ত্রীও সেই চিন্তা করে আমার নিষেধ সত্বেও চলে গিয়েছিল।  যাইহোক এভাবে দিন দিন সম্পর্ক খারাপ থেকে খারাপ হতে হতে শেষে বিচার সালিশ পর্যন্ত গড়ায়। বিচার পর্যন্ত যেত না, কিন্তু সে আমার আব্বু, বড় চাচর নামে অনেক মিথ্যা কথা বলে তার বাবার কাছে, তাই আমার আব্বু চাচারা বাধ্য হয়ে তার বাবাকে আমাদের বাসায় ডাকেন বিষয়গুলোর সুরাহা করতে। সে আমার নামে অভিযোগ দেয় যে আমি নাকি তার পায়ে পায়ে দোষ ধরি আর শুধু আগের বউয়ের সাথে তুলনা করি। আমি শুধু বলেছিলাম যে সে ই আমাকে বিয়ের শুরুতে বলেছিল যে তাকে যেন, আমি আমার আগের স্ত্রী কিভাবে কিভাবে চলতো তা বলি, সেও সেভাবে সেভাবে চলবে। কিন্তু এই বলাটাই এখন আমার দোষ হয়ে গেছে। বিচারে তেমন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি মুরুব্বিরা। তাই সে এখন তার বাবার বাড়ি আছে। সে সেখানে যাওয়ার পর আমাকে মেসেজে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি নাকি কাপুরুষ, বাজে লোক, ভন্ড লেবাসধারী, বেয়াদব, চরিত্র খারাপ, তার বাবার জায়গাজমির লোভে তাকে বিয়ে করেছি, আমার জাত খারাপ আরও অনেক কিছু। আমার বাবা মাকে সে কুকুরের সাথে পর্যন্ত তুলনা দিয়েছে, অথচ আমার মা বাবা তাকে নিজের মেয়ের মত করে রেখেছে, সংসারের রান্নাবান্না সহ বেশিরভাগ কাজ আমার মা ই করতো তিনবেলা খাওয়া দাওয়ার খোজ রাখতো, শরীর খারাপ থাকলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত, আব্বুও প্রতিদিন তার জন্য বাইরের থেকে আসার সময় দু হাত ভরে খাবার ফলমূল নিয়ে আসতো। তার এই কথা শুনে  আমার মা আব্বু খুবই কষ্ট পেয়েছেন মনে। তার বাসা থেকে একটা সুতাও যৌতুক নেইনি তবু আমার নামে সে যৌতুকের মিথ্যা দোষ চাপাচ্ছে যে আমি নাকি তাকে যৌতুক কেন দেয়নি তার জন্য কথা শুনিয়েছি। কিন্তু ওয়াল্লাহি আমি তাকে কখনোই এমন কিছু বলিনি। আমার আগের স্ত্রীদের কাছ থেকেও আমি কোনো যৌতুক নেইনি। আগের স্ত্রী তার বাপেরবাড়ি থেকে তার নিজের সেলাই করা একটা কাঁথা এনেছিল সেটাকেও এখন যৌতুক নিয়েছি বলে দ্বিতীয় স্ত্রী কথা শোনায়। তারা আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেড়াচ্ছে যে আমি নাকি পুরুষত্বহীন অক্ষম, তার সাথে চার মাস ধরে সহবাস করি না। এতকিছুর পরও আমি তাকে খারাপ কিছুই বলিনি। আমি তাকে ব্লক করে রেখেছি। যেকয়বার ব্লক খুলেছি যে নিজের ভুল স্বীকার করে কিনা, মাফ চায় কিনা, সেকয়বারই সে আরও বেশি করে গালগাল দিয়েছে মেসেজে। সে এখন ইমো, টেলিগ্রামে বোরকা পড়া ছবি স্টোরি দেয়, আমি নিষেধ করলে উল্টো খারাপ কথা শোনায়। তার আসলে সংসার কতটুকু করার ইচ্ছে ছিল জানি না। তবে তার পরিবারের লোকজন যে ভালো না তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তারা সমাজে একঘরে পরিবার, তাদের সাথে আশেপাশের মানুষ তো দূরে থাক নিজের মামা খালা, চাচা ফুফুদের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, যদিও তারা তাদের আশেপাশেই থাকে। সে আমাদের বাসায় যা হতো সব তার বাবাকে ফোন দিয়ে বলতো, তার বাবাও প্রত্যেকবার তার যত গয়নাগাটি আমরা মোহর হিসেবে দিয়েছি সেগুলো গুছিয়ে বাপেরবাড়ি চলে আসতে বলতো। শেষবারে সে তা-ই করেছে, সবকিছু গুছিয়ে বাপেরবাড়ি চলে গেছে।  তার বাপের বাড়িতে সবকিছুর ডিসিশন নেয় তার বড় বোন, তার বাবা মার ভূমিকা কোনোকিছুতে নেই বললেই চলে। এখন বাসার সবাই আমাকে বলে আমি নাকি ব্যর্থ স্বামী, আমি কেন বউকে এত আশকারা দিয়েছি, যখন উল্টা পাল্টা করেছে তখন সাথে সাথে কেন গালে চড় মেরে দেইনি, কেন কিছু বলিনি। কিন্তু আমি আসলে এমন তো কখনও ছিলাম না বা হতেও চাইনি যে গায়ে হাত তুলবো। আমি সুন্নাত তরিকা অনুযায়ী প্রথমে নসীহত করেছি, কাজ না হওয়ায় বিছানা আলাদা করে দিয়েছি, তাও না হওয়ায় বিচার ডেকেছি। এই মেয়ের বিয়ের আগে মানসিক সমস্যা ছিল, তার মানসিক চিকিৎসা চলছিলো সেই প্রেসক্রিপশনও আমি দেখেছি তাদের বাসায়। এগুলো সব আমাদের কাছে গোপন করেছে তারা। আমি সবকিছু মিলিয়ে খুবই পেরেশানিতে আছি। এসব কাহিনির পর আমার ছেলেটাকেও এখন আমার কাছে দিতে চাচ্ছেনা আমার আগের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। আমার এ বিষয়ে করনীয় কি একটু জানাবেন দয়া করে।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান হলো, স্ত্রী গরিব হোক বা ধনী। অসুস্থ হোক সুস্থ। বৃদ্ধা হোক বা যুবতী,সর্বাবস্থায় স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। এমনকি স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি থাকলেও ভরণ-পোষণের অধিকারী হবে।

তবে স্বামীর অবাধ্য হয়ে স্ত্রী পিত্রালয়ে বা অন্য কোথাও চলে গেলে ভরণ-পোষণের অধিকারী হবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 

، اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ، وَإِنَّ لَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ، أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ،

তোমরা নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার আছে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমার ঘরে স্থান না দেয়। তারা এরূপ করলে তাদেরকে খুবই হালকা মারধর করো।
‘তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমাদের ওপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯০৫)

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয়ে নিজ পিত্রালয়ে বা অন্য কোথাও চলে গেলে ভরণ-পোষণের অধিকারী হবে না।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্ত্রী ভরনপোষণ এর অধিকার পাবেনা।

https://ifatwa.info/83301/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

رواه الحاكم في "المستدرك" (7330) عن ابن عمر رضي الله عنهما، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اثنان لا تجاوز صلاتهما رءوسهما: عبد آبق من مواليه حتى يرجع، وامرأة عصت زوجها حتى ترجع  وصححه الألباني في صحيح الجامع برقم 136

রাসূল (ছাঃ) বলেন, দু’জন ব্যক্তির ছালাত তার মাথা অতিক্রম করবে না (কবুল হবে না)। (১) যে দাস তার মালিক হ’তে পলায়ন করেছে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। (২) অবাধ্য স্ত্রী যতক্ষণ না সে আনুগত্যে ফিরে আসে (হাকেম হা/৭২৩০; ছহীহাহ হা/২৮৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৮৮৮)। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন
অবাধ্য স্ত্রীর নামাজ কবুল হবে না মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। 
তবে সে যদি তওবা করে আবার আনুগত্য ফিরে আসে, তাহ’লে কবুল হবে।

قال المناوي في فيض القدير (1/ 150): " (امرأة عصت زوجها) بنشوز، أو غيره مما يجب عليها أن تطيعه، فلا تُرفع صلاتها كما ذُكر، (حتى ترجع) إلى طاعته فإباقه ونشوزها بلا عذر كبيرة. قالوا: ولا يلزم من عدم القبول عدم الصحة، فالصلاة صحيحة لا يجب قضاؤها، لكن ثوابها قليل أو لا ثواب فيها. أما لو أبق لعذر كخوف قتل أو فعل فاحشة أو تكليفه على الدوام ما لا يطيقه، أو عصت المرأة بمعصية ، كوطئه في دبرها أو حيضها، فثواب صلاتهما بحاله ، ولا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى.
সারমর্মঃ-
ইমাম মুনাবী রহঃ বলেন, এখানে নামাজ কবুল না হওয়া দ্বারা নামাজই সহীহ হবেনা বিষয়টি এমন নহে। নামাজ সহীহ হয়ে যাবে,তার কাজা আবশ্যক হবেনা। তবে ছওয়াব কম হবে অথবা ছওয়াবই হবেনা।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
স্ত্রী অবাধ্য হলে বাধ্য করার জন্য করনীয়ঃ-

প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে উপদেশ দেওয়া ।
খুব ভালো ভাবে নিজে বুঝানো,তাতে কাজ না হলে মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
স্ত্রী বাবার বাসার মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝানো।
তাতে কাজ না হলে দ্বিতীয় পদক্ষেপ বিছানা পরিত্যাগ করা ।
তাকে আলাদা বিছানায় থাকতে দেয়া।
প্রয়োজনে আলাদা রুমেও থাকতে পারেন।

এতে কাজ না হলে কিছুদিনের জন্য বাবার বাসায় রেখে আসতে পারেন।

তাতেও কাজ না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ মৃদু প্রহার করা। 
,
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, وَاضْرِبُوهُنَّ এবং তাদেরকে প্রহার করবে। 

এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর [রহ.] বলেন, যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
পরামর্শ থাকবে স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য ও পূর্ণ শরীয়তের উপর চালানোর জন্য উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার।

এরপরে কাজ না হলে তাকে তালাক দিলে আপনার কোনো গুনাহ হবেনা।

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...