আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
124 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (18 points)
সম্মানিত শায়েখ,
আমি গত সাড়ে তিন বছর যাবত বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। স্নাতক শেষ করে বছর তিনেক বেকার থাকার পর আমি এখন স্বচ্ছল। মাসে কম-বেশি লাখ তিনেক মত আয় আমার গত বছর থেকে। আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর পেলে কৃতজ্ঞ হব।

১. আমাদের বিয়ের সময় কাবিনে উল্লেখ ছিল যে স্ত্রীর ভরনপোষণ আমি আদায় করব। বেকার থাকার কারণে আমি দিতাম না।স্ত্রীও তখন কোনো দাবী করে নি। কিছু দিন সংসার করার পর, পারিবারিক এক সমস্যার সূত্র ধরে আমার মা আমার স্ত্রীর বাবাকে ফোন করে আমার স্ত্রীকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে বলে। সেই পারিপার্শ্বিক ঘটনার জেরে মোটামুটি ১০ মাস আমার স্ত্রীর সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি। এ সময়ের এক পয়সা খরচ আমি তাকে দেয় নি। পরবর্তীতে তাকে বুঝিয়ে সংসারে আনার পর আমার ক্ষুদ্র স্বামর্থ অনুযায়ী এক সঙ্গে থেকেছি। সত্যি বলতে, আমি নিজে ফুটপাতের ৫০০ টাকার পায়জামা-পান্জাবি সেট পড়তাম। এখনও ৫০০-১০০০ এর মধ্যে প্যান্ট কেনার চেষ্টা করি। তবে শ্বশুরবাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় অনেক আত্মীয় দামী জিনিস দিলে পড়ি।
আমি বিদেশে আসার সময় স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ি রেখে আসি, যেহেতু সে সন্তান সম্ভবা ছিলেন। তখন থেকেই যেহেতু আমার আয়রোজগার শুরু হয়েছে, আমি তাকে হাজার পাচেক টাকা হাত খরচ দিতে শুরু করলাম।
আমার স্ত্রী একদিন আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের ফতোয়া দেখালেন, সেখানে হুজুর বলেছেন যে স্ত্রীকে ৩ দিনের বেশি বাপেরবাড়ি রাখলে তার খাওয়ার খরচ দেয়া লাগবে যেহেতু ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর।
আমার সন্তান জন্ম লাভের পর থেকে আমি শ্বশুরকে হাজার দশেক টাকা পাঠাতে শুরু করলাম। আমার খাওয়ার খরচও কম বেশি এরকমই।
কিন্তু স্ত্রী এতে নারাজ।সে অনলাইনে বিভিন্ন পড়াশোনার জন্য তার খরচ হয় দাবী করায়, গত মাস থেকে তাকে হাত খরচও দিচ্ছি হাজার পাচেক। বলেছিলাম আরো লাগলে যেন জানায়।
কিন্তু অবাক ব্যাপার যে সে আরো দাবি করছে। আমার বিয়ে হয়েছে সাড়ে তিন বছর হলো, বিয়ের সময় একজন একটা জিলবাব দিয়েছিল আমার স্ত্রীকে; পাশাপাশি আমার স্ত্রী নিজের টাকায় আরো দু-একটি কিনেছে। আমি ৩-৪ টা গজ কাপড়ের জামা ছাড়া আর কিছু দিই নি। এক ভাইয়ের স্ত্রীর জন্য কয়েকদিন আগে বোরখা কিনে গিফট করার সময় আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম লাগবে কি না, সে বলেছিল লাগবে না।
অথচ ইদানীং সে সাড়ে চার হাজার টাকার একটা জিলবাব কিনতে চাচ্ছে, সে বলতেছে যে এত কম দামে মিশরীয় জিলবাব আর পাওয়া যাবে না তাই কিনবে।
আরো দাবী করতেছে যে অনলাইনে রান্না কোর্স করতেছে তাই অনেক জিনিস কিনতে হবে। তবে সে একটু মিতব্যয়ীতা দেখায়ে ইলেক্ট্রিক ওভেন না কিনে সাশ্রয়ে গ্যাস ওভেন কিনতে চাচ্ছে।
হুজুর স্ত্রীর এত অহেতুক দাবি দাওয়া নাকচ করে এক টাকাও দেয় নি। এতে কি আমার পাপ হবে?

২. আমার স্ত্রী যেহেতু আমার দেয়া টাকায় সন্তুষ্ট না, সে একটা ল্যাপটপ চাচ্ছে যেন অনলাইনে দ্বীনি কিছু কাজ আর কিছু আয় রোজগার করতে পারে টুকটাক। আমি এটা দিতে ইচ্ছুক না, তাই সরাসরি না বলে অজুহাত দেখাচ্ছি। হুজুর, এতে কি গুনাহ হবে?

৩. যেই সময় আমার সামর্থ্যহীনতার জন্য ভরোনপোষন দিই নি, এখনকি সেটা আদায় করতে হবে?

৪. আমার স্ত্রীর ইচ্ছে ছিল মোহর হিসেবে সে হজ করার খরচ নিবে। অত টাকা আমার ছিল না। আমার মা তার গহনার কিছু অংশ দিয়েছিলেন মোহরে ফাতেমী আদায় করার জন্য।যেহেতু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব ঠিকঠাক করা হয়েছিল, তাই ঘটকের পিড়াপিড়িতে মোহরে ফাতেমীতে রাজি হন পাত্রীপক্ষ।আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে ছেলের সামর্থ্য হলে ভবিষ্যতে অনেক হজ করা যাবে। কোনো কথা দেয়া হয় নি এই মর্মে। আমি আমার স্ত্রীকে পাসপোর্ট করে দিয়েছি এবং বলেছি যে উমরার টাকা রেডি। এখন কোনো কারণে যদি ডিভোর্স হয়ে যায় আমাদের তাহলে কি হজ-উমরার টাকা তাকে দিয়ে দিতে হবে?
৫. আল্লাহ আমাকে অনেক সামর্থ্য দিয়েছেন, সেই সুবাদে ভাই- খালাত ভাইরা কম্পিউটার, ক্যামেরা এসব দামী জিনিস গিফট চাইলেও দিয়ে দিয়। কিন্তু আমি নিজের খাওয়া-পরাতে কম খরচ করি। এখন আমার স্ত্রীকে কিভাবে নসিহত করব এ ব্যাপারে একটু পরামর্শ চাই।
৬. আমার স্ত্রী ভেবেছিলেন যে পাত্র দ্বীনদার, তাই বরযাত্রী অধিক হতে পারে এরকম ধারণাও করেনি। আমাদের বাসা থেকে ৭০ জন মত যেতে চাইলে আমার শ্বশুর তার সম্মান বাচাতে রাজি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি জানতে পারি যে আপ্যায়নের পুরো টাকায় একদিনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে বহু কস্টে যোগাড় করেছিলেন শ্বশুর।
বিয়ের মাস ছয়েক পরে, আমার ফুপা শ্বশুরকে ফোন করে যৌতুকের কথা বলে।সেই জন্য আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকার ফার্নিচার বানানো হয়। ওগুলো আমার স্ত্রী আনতে রাজি না। আমি বা আমার মা বাবা এ ব্যাপারে কিছু বলিনি শ্বশুর বাড়িতে। কিন্তু উনাদের বাড়িতে ওগুলো শুধু শুধু নস্ট হওয়ার থেকে যদি আমাদের উপহার দেন, তাহলে তো গ্রহণ করা উচিৎ। আমার স্ত্রী দাবি করে যে বরযাত্রী আর যৌতুক চেয়ে তার বাবার ওপর জুলুম করা হয়েছে। সে কি ঠিক বলে?

জাযাকাল্লাহ

1 Answer

+1 vote
by (678,880 points)
জবাব
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো, স্ত্রী গরিব হোক বা ধনী। অসুস্থ হোক সুস্থ। বৃদ্ধা হোক বা যুবতী,সর্বাবস্থায় স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। এমনকি স্বামীর অনুমতিক্রমে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি থাকলেও ভরণ-পোষণের অধিকারী হবে।

তবে স্বামীর অবাধ্য হয়ে স্ত্রী পিত্রালয়ে বা অন্য কোথাও চলে গেলে ভরণ-পোষণের অধিকারী হবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 

، اتَّقُوا اللَّهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانَةِ اللَّهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللَّهِ، وَإِنَّ لَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ، أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ،

তোমরা নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার আছে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমার ঘরে স্থান না দেয়। তারা এরূপ করলে তাদেরকে খুবই হালকা মারধর করো।
‘তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমাদের ওপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৯০৫)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উল্লেখিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ-
‘তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমাদের ওপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করবে।’

সুতরাং এক্ষেত্রে আপনি স্ত্রীকে স্বাভাবিক ভরনপোষণ দিবেন।
এটিই আপনার উপর আবশ্যক। 

অহেতুক দাবী দাওয়া পূরন করা আপনার উপর আবশ্যক নয়।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার কোনো গুনাহ হবেনা।

(০২)
এতে আপনার গুনাহ হবেনা।

(০৩)
সেই সময় ভরনপোষণ কে দিয়েছিলো? 
যিনি সেই সময় আপনার স্ত্রীর ভরনপোষণ দিয়েছিলেন,তাকে আপনি সেই ভরনপোষণ বাবদ টাকা দিয়ে দিবেন।
হ্যাঁ যদি তিনি নিতে না চান,সেক্ষেত্রে দিতে হবেনা।

অর্থাৎ সেই সময়ে যদি মেয়ের বাবা মেয়ের ভরনপোষণ দিয়ে থাকে,তাহলে আপনি তাকে ভরনপোষণ বাবদ টাকা দিয়ে দিবেন।
হ্যাঁ যদি তিনি নিতে না চান,সেক্ষেত্রে দিতে হবেনা।

(০৪)
আপনি যেই মোহরানা তাকে দিতে রাজি হয়েছিলেন,(মোহরে ফাতেমী) শুধু সেটাই দেয়া৷ আপনার উপর আবশ্যক। 
হজ্জ বা উমরাহ কোনোটাই আপনার উপর আবশ্যক নয়।

এখন কোনো কারণে যদি আপনাদের ডিভোর্স হয়ে যায়, তাহলে হজ-উমরার টাকা তাকে দিয়ে দিতে হবেনা।

আপনি মোহরানা আদায় করলেই যথেষ্ট। 

(০৫)
উপরের উল্লেখিত আয়াতের ভিত্তিতে নসিহত করবেন যে এখানে স্ত্রীকে স্বাভাবিক ভরনপোষণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

সুতরাং বেশি না চাওয়াই ভালো।

(০৬)
হ্যাঁ, স্ত্রীর কথা ঠিক।
এখানে মেয়ের বাবার উপর জুলুম করা হয়েছে।

আপনি ফার্নিচার নিতে চাইলে তিন লাখ টাকা দিয়ে নিবেন,তাহলে কোনো সমস্যাই হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...