আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শায়েখ। আমার প্রশ্ন টা বুঝতে হলে আগে আমাকে প্রথম থেকে বিস্তারিত বলতে হবে, আর জানাটা জরুরিও, তাই প্রথমেই লেখাটা দীর্ঘ হওয়ার জন্য মাফ চাচ্ছি শায়েখ। তাও অনুরোধ একটু সময় নিয়ে পড়বেন দয়াকরে!!
ছোটবেলা থেকে আমি আমার পরিবারে প্রবলেম দেখে আসছি। ফ্যামিলি প্রবলেম যাকে বলে৷ আমার আব্বু চাচ্চু তারা পাচ ভাই তার মাঝে আমার আব্বু দুই নাম্বার। আর আমার সব চাচ্চুরই বিয়ে হয়ে গেছে শুধু একজন বাদে তিনি হলেন আমার ছোট চাচ্চু। তো আমাদের সবাই মিলেই হলো একটা যৌথ পরিবার যেটাকে বলে আরকি বাট আমার আব্বু আর আমার বড় চাচ্চু শুধু এক বাড়িতে থাকি আর নাহলে সবাই ভিবিন্ন কারনে অন্য জায়গায় থাকেন। কোনো বিশেষ দিন বা অনুষ্ঠান হলে সবাই এক হয়,আশা করছি বুঝতে পারছেন এমনি আলাদা থাকলেও আমরা একসাথে ছিলাম। তো যেহেতু আমার বড় চাচ্চু আর আমার আব্বু মানে আমরা একসাথে ছিলাম তো প্রবলেম টা আমাদের মধ্যেই হতো। আগেই বলি যে আমার আব্বু বিদেশে থাকেন বাট অবস্থা ততো ভালো না, প্রবাসি যাকে বলে,আর আমার বড় চাচ্চু দেশে চাকরি করেন তাও বেতন এতো বেশি ভালো না । তো আমাদের এই পরিবারের সব থেকে বেশি যেটা নিয়ে প্রবলেম হতো সেটা হলো (টাকা)। প্রশ্ন হলো আমার আব্বু বিদেশে থাকেন বেশি টাকা কেনো দিতে পারেননা। আমার আব্বু হয়তো টাকা জমাচ্ছে এসব নিয়েই আরকি ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। তো আরেকটা প্রবলেম হলো আমার আম্মু। আমার দাদি বলেন আমার আম্মু নাকি আব্বুকে বশ করেছেন বা বুলিয়ে বালিয়ে রেখেছেন, যাতে পরিবারে টাকা না দেয়। বাট আল্লাহর কসম শায়েখ আমি ওনার মেয়ে, আমি জানি আমার আম্মু কখনোই আমার আব্বুকে এমন বলেননি যে টাকা জমাতে হবে পরিবারকে দিওনা। যাইহোক তো আরেকটা প্রবলেম হলো আমার আম্মু সিলাইয়ের কাজ জানতেন তাই ছোটবেলা থেকে আম্মু আমাকে কাপড় সিলাই করে দিতেন আমার ড্রেস কিনতে হতো না, আর এর মাধ্যমে আম্মু কিছু ইনকামও করতেন সিলাই কাজ করে। আর আমাদের পড়ার খরচ যেমন খাতা কলম বা পরিক্ষার বেতন ইত্যাদি দিতে পারতেন। তো এখানে আমার পরিবারেও সমস্যা যে আমার আম্মু সিলাই কাজ করে নাকি সংসারের কাজ করেন না ইত্যাদি। আর এই সংসারের কাজ নিয়েই প্রবলেম হতো, যেহেতু আমার বড় চাচি আমার আম্মুর বড় জা তাই আমার বড় চাচি সবসময়ই আম্মুর ভুল ধরতেন এবং আমার দাদিকে বলতেন। এ নিয়েই আরকি প্রায়ই পরিবারে জামেলা হতো যে আম্মু পরিবারে কাজ করেননা ইত্যাদি ছোট বেলা থেকেই। বাট আমি বা আমরা ভাইবোন আজ আমার বয়স ১৮,এসব নিয়ে আমি বা আমরা কখনোই আমার বড় চাচির সাথে তর্কাতর্কি করিনি আমরা নর্মালি সবার সাথেই কথা বলতাম, যেহেতু ঝগড়াটা আমার আম্মুর সাথে আমাদের বাচ্চাদের এখানে রিয়েক্ট করাটা উচিত না তাইনা তো আমরা কিছু বলতামনা এখনো বলিনা। আর দাদি আমাদের ভালোবাসতেন । এতো কিছুর পরেও সবাই হাসিখুশিতেই চলতেন আমি বলবো যেটাকে কৃত্রিম হাসি বলে আরকি। তো শেষ পর্যন্ত এসব অনেক জামেলার কারনে একটা সময় আমাদের আলাদ হয়ে যাই, আমাদের নতুন করে ছোট্ট একটা দুই রোমের ঘর বানাই আপাতত ওইখানেই আছি , আর আমার আব্বুর বেতনটাও ভালো না, আমার আম্মু সিলাই কাজ করে আর আব্বুর বেতন দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সংসারটা ভালোই চলছে। এর মাঝেই অনেক জামেলা হইছে যা বিস্তর, লিখে বলা যাবেনা। এতো সব পর পরিস্থিতি ঠিক হয়, সব কিছুটা স্বাভাবিক হয়, দাদিও আমাদের ঘরে এসে রাতে ঘুমাতেন কারন আমাদের ঘরে শুধু আমি আর আম্মু থাকতাম একা, আর আমার ভাই দুইটা মাদ্রাসায়। তো সেদিন একটা জামেলা হইছে, প্রায় এক মাসের কাছাকাছি , তাও আমার আম্মুর সাথে আমার বড় চাচ্চুর। আর আমাদের বাড়ির একটা প্রচলিত কথা আছে যে, দেবর বা বাসুর নাকি ভাইয়ের বউকে মারত পারবে, কাটতে পারবে, একটু আতটু গালাগালিও করতে পারবে এতে কিছু হয়না বা ভাইয়ের বউ দেবর বাসুরের মুখের উপর কথা বলা উচিত না। যদিও আমি আজও জানিনা এই কথার মানে কি। আর হাদিসে পড়েছিলাম যে দেবর, বাসুর মৃত্যুর সমতুল্য। যেটা আমার আম্মুও মানেন।তো সেদিন যে একটা জামেলা হয়, ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে, এতে আমার বড় চাচ্চু কিছু গালাগালি করেন আমার আম্মুকে,আর আমার দাদিও আমার আম্মুর বিপক্ষে কথা বলছিলেন যে আমার বড় চাচ্চুর মুখের উপর কথা বলছেন ইত্যাদি। তো একটা সময় আমার দাদি বলছেন যে আমার আম্মু নাকি আব্বুকে জাদু করেছেন ইত্যাদি এসব নিয়ে তাদের মাঝে অনেক তর্কাতর্কি হয়েছে। তার এক পর্যায়ে আমার ছোট চাচ্চু যার বিয়ে হয়নি ওনি একটা কারনে রেগে আমাদের ঘরে আসেন আম্মুকে মারার জন্য আম্মুকে না পেয়ে আমাদের ঘরে আঘাত করেন এবং এতে আমাদের ঘরের কিছু ক্ষতিও হয়। তো একটা সময় পরিস্থিতি কিছুটা ঠিক হয়, আর আশা করছি এতে আমার বা আমাদের ছেলেমেয়েদের মনের পরিস্থিতি কি হতে পারে বুঝতে পারছেন শায়েখ। তাও বলি আমি জামেলায় কোনো কথা বলিনি কারোর পক্ষেও কথা বলিনি উল্টো আমি আম্মুকে কথা না বলার জন্য অনুরোধ করছিলাম। আর সত্যি বলতে এসব জামেলায় আমার কোনো কথা বলতে ভালো লাগেনা আমার এসব জামেলাই ভালো লাগেনা। তাও ছোট বেলা থেকে আমাকে এসব জামেলা দেখতে হয়েছে। যাইহোক,এই ঘটনার পর দাদু আমাদের ঘরে আর আসেন না। আর এই প্রথম আমিও আমার ছোট চাচ্চুর সাথে কথা বলিনা, বা দাদির সাথে এক কথায় আমি আমার বড় চাচ্চুর ঘরে যাইনা। যেহেতু আমার ছোট চাচ্চু আর দাদি বড় চাচ্চুর ঘরে থাকেন তাই তাদের ঘরে না যাওয়ায় তাদের সাথেও আমার কথা হয়না, এতে আমার দাদি মনে করেন যে আমি দাদির সাথে এই জামেলার কারনে কথা বলিনা বা বড় চাচ্চুর ঘরে যাইনা। বাট শায়েখ আল্লাহর কসম এমন কোনো কিছুই আমার মনে নাই। আমি দাদির সাথে বা কারোর সাথেই আমি রাগ করিনি বা রাগ করে তাদের ঘরে যাইনা এমনটা না, আল্লাহর কসম এমন কিছুই না। কারন আমি তাদেরকেও আমার পরিবার মনে করি, তারা তো আমার পরিবারই আর আল্লাহর কসম আমি তাদের ভালোওবাসি মন থেকে, I love my family । বাট এমনিই আমার পর্দার কারনে বেশি ঘর থেকে বের হইনা বেশি না বলতে গেলে বেরও হইনা। আর জামেলার আগেও আমি দরকার ছাড়া বড় চাচ্চুর ঘরে যেতাম না। এখন দরকারও পড়েনা তাই, বাট তারা মনে করে আমি আম্মুর পক্ষ নিয়েই এরকম করছি। আর আজ একদিন হলো আমার ছোট ফুফু বাপের বাড়ি এসেছেন বেড়াতে মানে বড় চাচ্চুর ঘরে। তো সবসময়ই আমার যে কোনো ফুফু আসলে আগে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলতাম ভালো খারাপ জিজ্ঞেস করতাম আর এটাই আমাদের পরিবারে নিয়ম ছিলো। বাট এইবার ফুফু আসছেন একদিন হয়ে গেছে আমি বড় চাচ্চুর ঘরেও যাইনি আর ফুফুর সাথেও কথা বলিনি। আর এই এক মাস দাদির সাথেও কথা বলিনি। বাট শায়েখ বিশ্বাস করেন আমার মনে অন্য কিছু ছিলোনা বা রাগ এরকম কিছুই ছিলোনা। তাও আমি কেনো আমার ফুফুর সাথে কথা বলিনি বড় চাচ্চুর ঘরে যাইনা বা দাদির সাথে কথা বলিনা আমি জানিনা বাট রাগ করে কথা বলিনা এমন না শায়খ। আর শায়েখ তারা আমার আপন ফুফু হলেও কেনো জানিনা তাদের সাথে কথা বলতে আমার কণফর্টেবল ফিল করিনা, মানে মনে হয় যেনো আমি বাইরের কারোর সাথে কথা বলছি। তাদের সাথে আমি ফ্রিলি কথা বলতে পারিনা। আমার বড় চাচ্চুর মেয়ে মানে আমার চাচাতো বোনেরা অনেক সুন্দর সব ফুফুদের সাথে গল্প করেন মা শা আল্লাহ। দেখতেও ভালো লাগে। আমি কেনো পারিনা জানিনা,যদিও তার অনেক কারন আছে নাই বললাম কারন লেখাটা বড় হয়ে যাবে। তো এখন শায়েখ আমার প্রশ্ন হলো এইযে আমি এতদিন আমার দাদির সাথে কথা বলিনি, বা আমার ফুফুর সাথে কথা বলিনি এতে কি আমার গোনাহ হবে!? একটা হাদিস পড়েছিলাম যে " আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা "। তাহলে কি শায়েখ এই হাদিসটা আমার উপরেও আসবে। আমার কি করা উচিত শায়েখ, আমার কি দাদির কাছে মাফ চাওয়া উচিত এইযে আমি কথা বলিনি , বা আমার ফুফুর কাছে কি মাফ চাওয়া উচিত। আমি অনেক ভয়ে আছি বুঝতে পারছিনা কি করবো, আমি কি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারি হয়ে যাবো। শায়েখ আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন!? আমার কি করা উচিত শায়েখ!?
প্লিজ শায়েখ একটু জানাবেন আমাকে, আমি উপেক্ষা করবো।
প্রশ্নটা এতো লম্বা হওয়ার জন্য আবারও মাফ চাইছি শায়েখ পুরো বিষয়টা বুঝানোর জন্যই লিখতে হলো। আফওয়ান ।
জাযাকাল্লাহু খাইরান শায়েখ।