আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
268 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (58 points)
একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাক:

আরিফ ও তানহা দুজন দুজন কে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছে। বিয়ের পূর্বে আরিফ ওসিডিতে আক্রান্ত হয় এবং জব এ সেটেলড হতে পারেনা। এজন্য বিয়ের পূর্বে আরিফের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েকে আর মেয়েপক্ষ কে আরিফ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় যাতে ধরেই নেয়া যায় আরিফ বিবাহের যোগ্য নয়।


তার মধ্যে কিছু কথা এমন:

১। আমাদের ছেলে বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। আমাদের ছেলের জব নেই। আপনারা জেনেশুনে কেন আগুনে ঝাপ দিচ্ছেন?


২। আরিফের চাকরি নেই। মেয়েদের অনেক চাহিদা থাকে যা বিয়ের পর আরিফের পক্ষ থেকে মেইনটেইন করা সম্ভব না। তাছাড়া বেকার ছেলেকে বিয়ে করাও সঠিক সিদ্ধান্ত হবেনা।


৩। আরিফ ধারণা করছিল তার সেক্সুয়াল সমস্যা আছে। এটা জানিয়েছিল। তবে সেক্স না করায় এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছিল না।


৪। আরিফের কিছু ব্যাড হ্যাবিট ও মেয়েকে জানানো হয়েছিল যেমন: মোবাইল এডিকশন, সিগারেট খাওয়া,  মাস্টাটারবেশন, এবং প্যানিক এটাক ও সিজোএফেক্টিভ ডিসঅর্ডার ইর‍্যাদি


এরপরেও মেয়ে বিয়েতে রাজি হয় এবং বলে সে সর্বদা সাপোর্ট দিবে এবং আরিফ কিছু করতে না পারলেও সেই আরিফএর ব্যয়ভার বহন করবে। মেয়েটা বলে, তাকে বিশ্বাস করতে। (ছেলের মা উপস্থিত ছিল)


এরপর অনেক কাহিনির পর বিয়ে হয়। বর্তমানেও ছেলের মধ্যে উপরোক্ত সমসস্যা বিদ্যমান।


ছেলে বিয়ের সময় অনেক ধার্মিক ছিল। বিয়ের পর বিভিন্ন কারণে ধার্মিকতায় অনেক ঘাটতি পড়ে যায়। এবং পুরনো অভ্যাস যেগুলো বিয়ের আগেই বলেছিল সেগুলো থেকে যায়। ছেলে নিজেকে শোধরানোর চেস্টা করেছে তবে শয়তানের সাথে পেরে ওঠেনি।


ছেলে মেয়েকে অভাবে রাখেনি। নিজস্ব রুম দিয়েছে, কাপড় চোপড়, খাবার দাবার এ ও সমস্যা হয়নি। সেক্সুয়াল সমস্যা আছে। মাসে এক/২ বার মিলন করতে পারে।


ছেলে চাকরির অনেক চেস্টা করছে। বিভিন্ন মানুষকে ধরণা দিচ্ছে। সিভি জমা দিচ্ছে। ইন্টারভিউ দিচ্ছে। কিন্তু সুবিধা করতে পারছেনা।


অপরপদিকে সাংসারিক অশান্তির কারণে ছেলে সরকারি চাকরির জন্য পড়াশোনায় মন দিতে পারছেনা।

তবে, তাদের মধ্যে খুব একটা ঝগড়া হয়না। ছেলের সংসারে মেয়ের নিরাপত্তার আশংকা নেই। ছেলের বাড়ির লোকজন মেয়েকে আদর করে। পর্দার ও সমস্যা নেই।

এখন মেয়ে মিথ্যা কথা বলে বাবার বাসায় গিয়েছে। বলেছল অল্প কয়দিনের মধ্যে ফিরে আসবে। কিন্তু বাবার বাসায় গিয়ে বলছে জব না হলে সে আসবেনা। ছেলে এটা মেনে নিতে পারে। ছেলে মেয়েটাকে বুঝিয়েছে আদর করে, কাজ হলনা। পরে ঝগড়া হয়েছে।


ছেলে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মেয়ের ভাইকে সব বলেছে। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। তারপর পুনরায় মেয়ের বাবা আর ভাই এর সাথে যোগাযোগ এর চেস্টা করেছে কিন্তু তারা সাড়া দিচ্ছেনা।


এ অবস্থায় মেয়ের ভাষ্য হচ্ছে - সে বাবার বাসায় থেকে জব প্রিপারেশন নিবে। ছেলে তাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাবে। সে ও আসবে। আসা যাওয়ার মাঝে থাকবে। কিন্তু ছেলে তা মানতে নারাজ। কারণ, ছেলের মানসিক ও শারীরিক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া মেয়ে যদি বাবার বাড়িতে থাকে তবে ঝগড়া বেশি হয়। দাম্পপ্ত্য জীবনে সমস্যা হয়। কিন্তু মেয়ে কিছুতেই আসতে চায়না।


এ অবস্থায় আমার প্রশ্ন:

১. মেয়েটি কি স্বামীর অবাধ্য বলে বিবেচিত হবে?

২. সে কি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত পিতার গৃহে অবস্থান করে জব প্রিপারেশন নিতে পারবে?

৩. ইসলামে অবাধ্য স্ত্রীর পরিণাম বলতে কি বলা হয়েছে।

1 Answer

0 votes
by (589,230 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
স্বামীর উপর ওয়াজিব যে,সে তার স্ত্রীর ভরণপোষণ করবে।
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।(সূরা নিসা-৩৪)

لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا
বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে।(সূরা তালাক-৭)

হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ আল-কুশাইরী (রহ.) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত।
وعَنْ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : " قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ ؟ قَالَ : ( أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ ، وَلَا تَضْرِبْ الْوَجْهَ ، وَلَا تُقَبِّحْ ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ) 
 তিনি বলেন, একদা আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো উপর তার স্ত্রীর কি হক রয়েছে? তিনি বললেনঃ তুমি যখন আহার করবে তাকেও আহার করাবে। তুমি পোশাক পরিধান করলে তাকেও পোশাক দিবে। তার মুখমন্ডলে মারবে না, তাকে গালমন্দ করবে না এবং পৃথক রাখতে হলে ঘরের মধ্যেই রাখবে।(আবু দাউদ-২১৪২,ইবনে মা'জা-১৮৫০)

স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ আদায় না করলে এবং স্ত্রীকে সঙ্গ না দিলে,স্ত্রী যদি কাযী সাহেবের নিকট বিচার দায়ের করে,তাহলে কাযী সাহেব উক্ত বিবাহকে ভঙ্গ করে দেয়ার অধিকার রাখেন।(জাদীদ ফেকহী মাসাঈল-৩/১০০)


সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
স্বামীর উপর হল, মধ্যম ধরণের খোরাকি স্ত্রীকে প্রদান করা।এবং প্রয়োজনিয় খরচাপাতি স্বামীর উপর ওয়াজিব। 
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)
নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে।

খোরাকি ব্যতিত বিলাসিতার ব্যবস্থা স্বামীর উপর ওয়াজিব নয়।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺝ ﻭﻁﺀ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺑﻘﺪﺭ ﻛﻔﺎﻳﺘﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻨﻬﻚ ﺑﺪﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﺸﻐﻠﻪ ﻋﻦ ﻣﻌﻴﺸﺘﻪ ، .. ﻓﺈﻥ ﺗﻨﺎﺯﻋﺎ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺿﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻛﺎﻟﻨﻔﻘﺔ ﻭﻛﻮﻃﺌﻪ ﺇﺫﺍ ﺯﺍﺩ " 
স্ত্রীর সন্তুষ্টি পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব(অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র স্বামীকে সহবাস করতে হবে)।যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সহবাসের পরিমাণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে উচিৎ খোরপোষ ইত্যাদির মত সহবাসের পরিমাণকে বিচারক ঠিক করে দেবেন।(দৈনিক না সাপ্তাহিক? এইভাবে ঠিক করে দিবেন)ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৪৬
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/990


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
স্বামী যদি ঠিকমত স্ত্রীর বাসস্থান ও খোরপোষের ব্যবস্থা করে থাকে, তাহলে চাকুরীর অযুহাতে স্ত্রী নিজেকে স্বামী থেকে দূরে রাখতে পারবে না।

(১)সুতরাং এক্ষেত্রে মেয়েটি স্বামীর অবাধ্য বলেই বিবেচিত হবে।
(২) স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রী পিতার গৃহে অবস্থান করে জব প্রিপারেশন নিতে পারবে না।
(৩) ইসলামে অবাধ্য স্ত্রীর পরিণাম আল্লাহর কঠোরতম শাস্তি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,230 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।
by (58 points)
শায়খ, আমি আসলে জানতে চাইছিলাম ইসলামে অবাধ্য স্ত্রীর কি কি শাস্তি হতে পারে? মানে তার নামাজ কবুল হবে কিনা ইত্যাদি

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...