রাসুল সাঃ বলেন-
وَإِيّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنّ كُلّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
আর সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কারণ, সকল নব উদ্ভাবিত বিষয় বিদআত। আর সকল বিদআত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।’ (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭১৪২, ১৭১৪৫)
আরেক হাদীসে আছে-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدّ .
‘যে আমাদের এই বিষয়ে (অর্থাৎ দ্বীন ও শরীয়তে) এমন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখাত।’ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১৮; সহীহ বুখারী, হাদীস ২৬৯৭
বিদআত বলা হয় দ্বীন ও ইবাদতে নব আবিষ্কৃত কাজকে। অর্থাৎ দ্বীন বা ইবাদত মনে করে করা এমন কাজকে বিদআত বলা হবে, যে কাজের কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর কোন দলীল নেই।
নব আবিষ্কৃত পার্থিব কোন বিষয়কে বিদআত বলা যাবে না। যেমন শরীয়াতে নিষিদ্ধ কোন কাজকে বিদআত বলা হয় না। বরং তাকে অবৈধ, হারাম বা মাকরূহ বলা হয়।
বিদআত বলা হয় দ্বীন বিষয়ক কোন নতুন কর্মকে, যার কোন দলীল শরীয়তে নেই।
মহানবী (সঃ) বলেছেন, “ অবশ্যই তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিদায়ের পর জীবিত থাকবে তাঁরা অনেক রকমের মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার ও আমার সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো, তা দাঁত দ্বারা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো। (তাতে যা পাও মান্য কর এবং অন্য কোনও মতের দিকে আকৃষ্ট হয়ো না।) আর (দ্বীনে) নবরচিত কর্মসমূহ হতে সাবধান! কারণ, নিশ্চয় প্রত্যেক বিদআত (নতুন আমল) হল ভ্রষ্টতা।”(আবু দাঊদ ৪৪৪৩, তিরমিযী ২৮১৫, ইবনে নাজাহ ৪২ নং)
পারিভাষিক অর্থে বিদআত হলো, যে আমল বা কাজ নবীজী ও তার সাহাবা এবং তাবেয়ী যুগে ছিল না। সেই কাজ বা আমলকে সওয়াব মনে করে ইসলামের অংশ মনে করে করার নাম হল বিদআত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন বিষয় আবিস্কার করে যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যাজ্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬০৮, সহীহ বুখারী, হাদিস নং-২৫৫০, সহীহ মুসলিম-৪৫৮৯}
এই হাদিসে কি কি শর্তে নব আবিস্কৃত বস্তুকে পরিত্যাজ্য বলেছেন নবীজী সাঃ।
১-
সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।
২-
দ্বীনী বিষয় হতে হবে। সুতরাং দ্বীনী বিষয় ছাড়া যত নতুন বিষয়ই আবিস্কারই হোকনা কেন তা বিদআত নয়। যেমন বৈজ্ঞানিক আবিস্কার। নতুন নতুন আসবাব ইত্যাদী। এসব বিদআত নয়। কারণ এসব দ্বীনী বিষয় নয়। বরং বৈষয়িক বিষয়।
৩-
দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার হতে হবে। দ্বীনের জন্য হলে সমস্যা নাই। কারণ দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল এটা সওয়াবের কাজ। সুন্নাত, ওয়াজিব ইত্যাদি। আর দ্বীনের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মাদরাসা শিক্ষা একাডেমিক পদ্ধতি নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে। এই একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু সিষ্টেমটা মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক।
সুতরাং এসব বিদআত নয়।
উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, জুম'আর দিন ২য় আযানের বিষয়টি যেহেতু হাদীসে আছে।
মসজিদে মিম্বারের সামনে এই আযানের কথা হাদীসে নেই।
কিন্তু বিদ'আত বলা হয়,যাহা সম্পূর্ণ নতুন বিষয়। যার কোন সামান্যতম প্রমাণ নবীযুগে বা সাহাবা যুগে নাই এমন বিষয় হতে হবে।
সুতরাং এটি কোনোভাবেই পারিভাষিক বিদআতের অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই এটি জায়েজ আছে।
,
اى أنشأ واخترع وأتى بأمر حديث من قبل نفسه…… (ما ليس منه) أى رأيا ليس له فى الكتاب أو السنة عاضد ظاهر أو خفى، ملفوظ أو مستنبط (فهو رد) أى مردود على فاعله لبطلانه، (فيض القدير، رقم الديث-8333)
বিদ'আত হলো, নব্য বিষয়, নব আবিস্কৃত বিষয়, যাহা হাদীসের অন্তর্গত নয়,কুরআন হাদীসে যার স্পষ্ট বিপরীত কিছু নেই,,
بدعة أصلها : ما أحدث علی غير مثال سابق.
ابن حجر عسقلانی، فتح الباری، 4 : 253
"বিদআতের আসল হল এটি কোন নজির ছাড়াই উদ্ভাবিত হয়েছে।"
محدثه والمراد بها ما أحدث، وليس له أصلٌ في الشرع ويسمي في عرف الشرع ’’بدعة‘‘، وما کان له أصل يدل عليه الشرع فليس ببدعة، فالبدعة في عرف الشرع مذمومة بخلاف اللّغة : فإن کل شيء أحدث علي غير مثال يسمي بدعة، سواء کان محمودًا أو مذمومًا،
ابن حجر عسقلانی، فتح الباری، 13 : 253
মুহাদ্দিছ আমর বলতে এমন একটি নতুন কাজ উদ্ভাবন করাকে বোঝায় যার শরীয়তে কোনো উৎস নেই। এই নব আবিস্কৃতকে শরীয়তের পরিভাষায় ‘বিদআত’ বলা হয়। কাজেই এমন কোন কাজকে বিদ‘আত বলা হবে না যার উৎস শরী‘আতে আছে বা তা বোঝায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআতকে শুধু খারাপ বিদআত বলা হয়, আক্ষরিক বিদআত নয়। তাই নজির ছাড়া উদ্ভাবিত প্রতিটি কাজকে বিদআত বলা হয়, তা ভালো বিদআত হোক বা খারাপ বিদআত।