আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
123 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
আসসালামু আলাইকুম।
হযরত,

আমি জানি কেরআনের আয়াত সম্পর্কে বহুমত আছে।
আমার কাছে যে কেরআনটি আছে তাতে ৬৬৬৬ টি আয়াত লেখা।
তবে একজন আমাকে বলেছেন কোরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি।আর ৬৬৬৬ টি আয়াত সংখ্যা এটা নাকি ভুল এবং শিয়াদের থেকে আগত।

কোরআনের আয়াতগুলো যোগ করলে ৬২৩৬টি পাওয়া যায়।

আমার প্রশ্ন হলো কোরআনের সঠিক আয়াত সংখ্যা কি?
এবং ৬৬৬৬ এই মর্মে যে মত আছে তা কি ভুল?

1 Answer

0 votes
by (676,360 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


কিছু কুরআনের কপিতে কিছু ওয়াকফের জায়গাকে আয়াত ধরা হয়েছে,কিছু কপিতে সেগুলো শুধু মাত্র ওয়াকফের জায়গা হিসেবেই রাখা হয়েছে।
আয়াত বলা হয়নি। ইত্যাদি সহ বিবিধ কারনে ও কপি আলাদা আলাদা হওয়ার কারনে গণনা হিসেবে কম বেশি হয়। 

কুরআনুল মাজীদের আয়াতসংখ্যা গণনার জন্য একটি বিশেষ শাস্ত্র আছে যার মাধ্যমে কুরআন কারীমের প্রত্যেক সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ও পুরো কুরআন মাজীদের মোট আয়াত সংখ্যা জানা যায় যাকে ইলমুল কিরা’আত(علم القراءت) ও ইলমুল তাজওয়ীদের(علم التجويد) ইমামগণ ইলমু আদাদি আয়াতিল কুরআন ) (علم عد د الآيات القرآنবলে জানে। যার অন্যতম বিষয় হলো ফাওয়াসিলুল আয়াত (فواصل الآيات) বা আয়াতের সূচনা-পরিসমাপ্তি জানা। বলে রাখা ভালো যে, এই শাস্ত্র উলুমূল কুরআনের অন্যতম একটি পৃথক শাখা শাস্ত্র।

ইলমে আদাদ এটি রাসুলুল্লাহর(ﷺ) শিক্ষার ফসল। তিনি(ﷺ) সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আযমাঈন) যে শিক্ষা দিয়েছেন তারই ফসল হলো এই ইলমে আদাদ। কুরআনুল কারীম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহর(ﷺ) উপর দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন্ন ঘটনার ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছিলো। বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন অংশ এভাবে বিভিন্ন সময় নাযিল হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ও তার সাহাবীরা সেই আয়াত হিফজ (মুখস্ত) করে নিতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহুম আজমাঈন) আয়াত মূখস্থ করার পাশাপাশি তা কোন সূরার অংশ, কোন আয়াতের শুরু কোথা থেকে শুরু হয়েছে বা কোন আয়াত কোথায় শেষ হয়েছে তা ও হিফজ করে নিতেন। পরবর্তীতে প্রজন্ম পরম্পরায় তাদের কাছ থেকে তাবিঈ ও তাবিঈদের থেকে তাবি-তাবিঈনরা কুরআন এভাবেই শিখে নিয়েছেন, এবং পরবর্তীতে তাঁদের থেকে ইলমুল কিরাআতের ইমামগণ এভাবেই শিখেছেন আর সেভাবেই এই সংক্রান্ত কিতাবসমূহে ব্যাপকভাবে ও অসংখ্য হাদীছ ও আছার দ্বারা বর্ণিত হয়ে এসেছে। 

সাধাণত কয়েক ধরনের বা এলাকার গণনা পদ্ধতি প্রসিদ্ধ।


(১) মাদানী গণনাঃ
মাদানী গণনা দুই ধরনের 

(ক) প্রথম মাদানী গণনা (المدني الأول):
এই গণনা পদ্ধতি ইমাম নাফি ইবনে আবি নুয়াইম মাদানী(মৃ ১৬৯হি) আবু ইয়াযীদ ইবনে কা’কা(মৃ ১৩২হি) এবং শাইবা ইবনে নিসাহ(মৃ ১৩০হি) থেকে বর্ণনা করেন। এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী কুরআনের আয়াত সংখ্যা ৬২১৭।

(খ) দ্বিতীয় মাদানী গণনা(المدني الثاني):
এই গণনা পদ্ধতি ইমাম ইসমাঈল ইবনে জাফর মাদানী (মৃ ১৮০হি) সুলায়মান ইবনে মুসলিম ইবনে জামমায থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি(সুলাইমান) আবু জাফর (মৃ ১৩২হি) ও শাইবা ইবনে নিসাহ (মৃ ১৩০হি) থেকে বর্ণনা করেন। এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী আয়াত সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২১৪ বা ৬২১০টি।

(২) মক্কী গণনাঃ
এই গণনা পদ্ধতির ভিত্তি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে কাছীর (মৃ ১২০হি)।

(৩) শামী গণনাঃ
এই গণনা পদ্ধতির ভিত্তি হলেন ইয়াহইয়াহ ইবনে হারিছ আযযিমারী (মৃ ১৪৫হি) এই গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী মোট আয়াত সংখ্যা ৬২২৬টি। 

(৪) বসরী গণনাঃ
এই গণনার ভিত্তি হলেন আইয়ুব ইবনে মুতাওয়াক্কিল ও আসেম আলজাহদারী, তারা দুজনেই ইলমের কিরায়াতের ইমাম ছিলেন। এই গণনায় আয়াত সংখ্যা ৬২০৪টি। 

(৫) কুফী গণনাঃ
এই গণনার মূল বর্ণণাকারী হলেন তাবিঈ আবু আব্দুর রহমান আসসুলামী (মৃ ৭৪হি)। এই গণনা পূর্বে এবং বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ছিলো এবং এখনও আছে। এর গণনা পদ্ধতিতে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬টি, এই গণনা অনুযায়ীই সাধারণত বর্তমানে মুসহাফগুলোতে [পূর্ণ কুরআনের কপি] চিহ্ন দেওয়া হয়ে থাকে।
,
কিছু উদাহরণঃ-
সূরা ইখলাসঃ

١. قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، ٢. اللَّهُ الصَّمَدُ، ٣. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، ٤. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ

সূরা ইখলাসে আছে ৪টি আয়াত, কূফী, বাসরী, মাদানী (১ম ও ২য়) গণনা পদ্ধতিতে এই সূরাতে ৪ টি আয়াত আছে। তবে মক্কী ও শামী গণনা পদ্ধতিতে এই সূরার সংখ্যা ৫টি। কিভাবে? আসুন দেখে নিই।

١.قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَد، ٢. اللَّهُ الصَّمَد، ٣. لَمْ يَلِدْ، ٤. وَلَمْ يُولَدْ، ٥. وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد

এটি মক্কী ও শামী গণনা পদ্ধতি অনুযায়ী সূরা ইখলাস যেখানে ৫টি আয়াত দেখা যাচ্ছে। এটা কি এই কারণে যে এই গণনাতে একটি অতিরিক্ত আয়াত সংযুক্ত হয়েছে(নাউযুবিল্লাহ), মোটেও নয়। বরং এখানে দেখা যাচ্ছে যে, কূফী, বাসরী ও মাদানী(১ম ও ২য় উভয়) পদ্ধতিতে (لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَد) এই অংশটিকে একটি আয়াত হিসেবে গন্য করা হয়েছে যেখানে মক্কী ও শামী গণনায় (لَمْ يَلِدْ) অংশকে ১টি ও (وَلَمْ يُولَد) অংশকে আরেকটি পৃথক আয়াত হিসেবে গন্য করা হয়েছে। কোনো প্রকার সংযোজন বা বিয়োজনের কারণে এই পার্থক্য ঘটেনি। আরেকটি উদাহরণ দেখে নেওয়া যাকঃ-

সূরা কুরাইশঃ-

١. لِإِيلَـٰفِ قُرَيْشٍ ، ٢. إِۦلَـٰفِهِمْ رِحْلَةَ ٱلشِّتَآءِ وَٱلصَّيْفِ ، ٣. فَلْيَعْبُدُوا۟ رَبَّ هَـٰذَا ٱلْبَيْتِ ، ٤. ٱلَّذِىٓ أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍۢ وَءَامَنَهُم مِّنْ خَوْفٍۭ 

কূফী, বাসরী ও শামী এই তিন গণনা পদ্ধতিতে সূরা কুরাইশের আয়াত সংখ্যা ৪ যা আমরা উপরে দেখলাম। আর মক্কী ও মাদানী(১ম ও ২য়) গণনা পদ্ধতিতে এই সূরার আয়াত সংখ্যা ৫টি। কিভাবে??

١. لِإِيلَـٰفِ قُرَيْشٍ ، ٢. إِۦلَـٰفِهِمْ رِحْلَةَ ٱلشِّتَآءِ وَٱلصَّيْفِ ، ٣. فَلْيَعْبُدُوا۟ رَبَّ هَـٰذَا ٱلْبَيْتِ ، ٤. ٱلَّذِىٓ أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍۢ ، ٥.وَءَامَنَهُم مِّنْ خَوْفٍۭ

এই গণনা পদ্ধতিটি মক্কী ও মাদানীর। এখানে লক্ষ্যনীয় যে, উপরের কূফী, বাসরী ও শামী এই তিন পদ্ধতির গণনা পদ্ধতিতে (الذي أطعمهم من جوع وآمنهم من خوف) এই অংশটিকে পরিপূর্ণ একটি আয়াত হিসেবে গন্য করা হলে ও বাকী দুই পদ্ধতি অর্থাৎ, মক্কী ও মাদানী গণনা পদ্ধতিতে (الذي أطعمهم من جوع) কে একটি ও (وآمنهم من خوف) কে আরেকটি আলাদা আয়াত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে মূল পাঠ সবসময়ই এক ও অভিন্নই রয়েছে। কোনো সংযোজন বা বিয়োজনের কারণে এই পার্থক্য হয়নি।

বিস্তারিত  জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...