জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শাহাদাহ এর গুরুত্ব ঘরে প্রবেশের ন্যায়,ঘরে প্রবেশ না করলে কিছুই করা যাবেনা।
সুতরাং কালেমায়ে শাহাদত এটির মাধ্যমে মানুষ মুমিন হয়,এটা ছাড়া মানুষ মুমিন হতেই পারবেনা।
যদি শাহাদাহ পাঠ না করে,অন্তরে বিশ্বাস না করে,তাহলে সে হাজারো নামাজ রোযা আদায় করলেও কোনো ধর্তব্য নেই।
,
(০২)
মুমিম হওয়ার জন্য কালেমাই যথেষ্ট, তবে মুসলিম হওয়ার জন্য অবশ্যই কাজ করে দেখাতে হবে।
★মুমিন কাহাকে বলে,আর মুসলিম কাহালে বলে জানার জন্য মুসলিম শরীফের এই হাদীসের দিকে লক্ষ্য করিঃ
حَدَّثَنِي أَبُو خَيْثَمَةَ، زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ كَهْمَسٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الْعَنْبَرِيُّ، - وَهَذَا حَدِيثُهُ - حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا كَهْمَسٌ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، قَالَ كَانَ أَوَّلَ مَنْ قَالَ فِي الْقَدَرِ بِالْبَصْرَةِ مَعْبَدٌ الْجُهَنِيُّ فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَحُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحِمْيَرِيُّ حَاجَّيْنِ أَوْ مُعْتَمِرَيْنِ فَقُلْنَا لَوْ لَقِينَا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلْنَاهُ عَمَّا يَقُولُ هَؤُلاَءِ فِي الْقَدَرِ فَوُفِّقَ لَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ دَاخِلاً الْمَسْجِدَ فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي أَحَدُنَا عَنْ يَمِينِهِ وَالآخَرُ عَنْ شِمَالِهِ فَظَنَنْتُ أَنَّ صَاحِبِي سَيَكِلُ الْكَلاَمَ إِلَىَّ فَقُلْتُ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّهُ قَدْ ظَهَرَ قِبَلَنَا نَاسٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَيَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ - وَذَكَرَ مِنْ شَأْنِهِمْ - وَأَنَّهُمْ يَزْعُمُونَ أَنْ لاَ قَدَرَ وَأَنَّ الأَمْرَ أُنُفٌ . قَالَ فَإِذَا لَقِيتَ أُولَئِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنِّي بَرِيءٌ مِنْهُمْ وَأَنَّهُمْ بُرَآءُ مِنِّي وَالَّذِي يَحْلِفُ بِهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ لَوْ أَنَّ لأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللَّهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ ثُمَّ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ لاَ يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ وَلاَ يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الإِسْلاَمِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً . قَالَ صَدَقْتَ . قَالَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ . قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإِيمَانِ . قَالَ " أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ " . قَالَ صَدَقْتَ . قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإِحْسَانِ . قَالَ " أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ " . قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ . قَالَ " مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ " . قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا . قَالَ " أَنْ تَلِدَ الأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ " . قَالَ ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا ثُمَّ قَالَ لِي " يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ " . قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ " فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ " .
আবূ খাইসামাহ যুহায়র বিন হারব (রহঃ) ..... ইয়াহইয়া ইবনু ইয়ামার থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, বাসরার অধিবাসী মা'বাদ জুহাইনাহ প্রথম ব্যক্তি যে তাকদীর অস্বীকার করে। আমি ও হুমায়দ ইবনু 'আবদুর রহমান উভয়ে হজ্জ অথবা উমরাহ'র উদ্দেশে রওয়ানা করলাম। আমরা বললাম, যদি আমরা এ সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যে কোন সাহাবার সাক্ষাৎ পেয়ে যাই তাহলে ঐ সব লোক তাকদীর সম্বন্ধে যা কিছু বলে সে সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করব। সৌভাগ্যক্রমে আমরা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) এর মাসজিদে ঢুকার পথে পেয়ে গেলাম। আমি ও আমার সাখী তাকে এমনভাবে ঘিরে নিলাম যে, আমাদের একজন তার ডান এবং অপরজন তার বামে থাকলাম। আমি মনে করলাম আমার সাখী আমাকেই কথা বলার সুযোগ দেবে। (কারণ আমি ছিলাম বাকপটু)। আমি বললামঃ "হে আবূ আবদুর রহমান। আমাদের এলাকায় এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটেছে, তারা একদিকে কুরআন পাঠ করে অপরদিকে জ্ঞানের অন্বেষণও করে। ইয়াহইয়া তাদের কিছু গুণাবলীর কথাও উল্লেখ করলেন। তাদের ধারণা (বক্তব্য) হচ্ছে, তাকদীর বলতে কিছু নেই এবং প্রত্যেক কাজ অকস্মাৎ সংঘটিত হয়।"
ইবনু উমর (রাযিঃ) বললেনঃ “যখন তুমি এদের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আর আমার সাথেও তাদের কোন সম্পর্ক নেই। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) আল্লাহর নামে শপথ করে বললেন, এদের কারো কাছে যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা দান-খয়রাত করে দেয় তবে আল্লাহ তার এ দান গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাকদীরের উপর ঈমান না আনবে। অতঃপর তিনি বললেন, আমার পিতা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তার পরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তার মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাকে চিনেও না।
অবশেষে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে বসলো। সে তার হাটুদ্বয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলো এবং দুই হাতের তালু তার (অথবা নিজের) উরুর উপর রাখলো এবং বলল, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই– তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মাবূদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী উমর (রাযিঃ) বলেন, আমরা তার কথা শুনে আশ্চর্যাম্বিত হলাম। কেননা সে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করছে আর (বিজ্ঞের ন্যায়) সমর্থন করছে।
এরপর সে বললো, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার কিতাবসমূহ, তার প্রেরিত নাবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন।
এবার সে বললো, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইহসান এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তাকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে।
এবার সে জিজ্ঞেস করলো। আমাকে কিয়ামাত সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। অতঃপর সে বলল, তাহলে আমাকে এর কিছু নির্দশন বলুন। তিনি বললেন, দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে এবং (এককালের) নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গৰ্ব-অহংকারে মত্ত দেখতে পাবে ।
বর্ণনাকারী উমার (রাযিঃ) বলেন, এরপর লোকটি চলে গেলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমার! তুমি জান, এ প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল। তোমাদের কাছে তিনি তোমাদের দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। (মুসলিম শরীফ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১ম খণ্ড, ১; বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১ম খণ্ড, ১)
সুতরাং মুসলিম হল সেই ব্যক্তি যে ঈমান আনার পর ইসলামের বিভিন্ন হুকুম আহকাম মেনে চলে। আর মু'মিন হল সেই ব্যক্তি যে শুধুমাত্র ঈমান এনেছে। অর্থাৎ, মুমিন শব্দের চেয়ে মুসলিম শব্দ ব্যাপক অর্থবোধক।
আর ঈমান হচ্ছে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো- যেমন- আল্লাহ,ফেরেশতা,... আসমানী কিতাব, নবী রাসুল,শেষ দিবস, ভালো হোক কিংবা মন্দ তাকদীর তথা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও পুণরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন করা।
,
প্রথমে শব্দগত অর্থে আসি। আরবীতে ঈমান (বিশ্বাস করা) যে আনে তাকে বলে মু'মিন। আর বিশ্বাসের সাথে ইসলামকে যে গ্রহণ করে নেয় তাকে বলে মুসলিম।
ওলামায়ে কেরামগণ বলেন: ঈমান হল মনের বিশ্বাস আর ইসলাম হল বাহ্যিক কাজকর্ম। যদি কেউ নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ...্জ করে ইত্যাদি, তাকে আমরা মুসলিম বলব। আর প্রকাশ্যে এগুলো করতে থাকলেও তারই অন্তরে যদি এগুলোর বিশ্বাস না থাকে তাহলে, সে মু'মিনও নয় এবং মুসলিমও নয়। কেননা, ইসলামের শর্ত হল বাহ্যিক আমলের সাথে ঈমানের উপস্থিতি।
মোটকথা- মু'মিন হতে হলে শুধুমাত্র অন্তর দিয়ে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করা লাগবে। এ রকম বিশ্বাস করলেই তাকে মু'মিন বলা যাবে। আর যখন সে নেক আমল করবে (ঈমানের সাথে সাথে) তখন তাকে মুসলিম বলা যাবে।
আমরা দলীল হিসেবে রাসুল (সাঃ) এর হাদীসের উদ্দৃতি দিতে পারি- রাসুল (সাঃ) কে জিবরাইল (আঃ) জিজ্ঞাসা করেছিলেন: ঈমান কাকে বলে? রাসুল (সাঃ) জবাব দিয়েছেন- ঈমান হল- তুমি আল্লাহ তায়ালা, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, রাসুল, শেষ বিচারের দিন ও তাকদীরকে বিশ্বাস করবে। (বুখারী শরীফ)
একইভাবে ইসলাম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: ইসলাম হল তুমি "আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার রাসুল" এ কথার সাক্ষ্য দেবে,নামাজ আদায় করবে,যাকাত আদায় করবে, রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখবে এবং সক্ষম হলে হজ্জ আদায় করবে। (বুখারী)
এখান থেকে উলামায়ে কেরামগণ বলেছেন: ঈমান হল অন্তরের বিশ্বাস আর ইসলাম হল বাস্তবের আমল।
অন্য কথায় আমরা বলতে পারি- ঈমান হল- বিশ্বাস আর ইসলাম হল নেক আমল।
(০৪)
৫টির মধ্যে ইবাদতগত বিষয় হলো নামাজ,রোযা,হজ যাকাত।
শাহাদাহ্ বিশ্বাসও করতে হবে,মুখে স্বীকারও করতে হবে,কাজ করে দেখিয়েও দিতে হবে।
(০৫)
আল্লাহ তায়ালার একত্ত্ববাদের ঘোষণার দিকটির উপর আমাদের পদক্ষেপঃ আমরা উপরে উল্লেখিত হাদীসের বিষয়ের উপর ঈমান আনবো,সেটা মুখে স্বীকারও করবো,কাজ করে দেখিয়েও দিবো।
(০৬)
একজন শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং ঘোষণা করলো, যে আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয় । সে মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ নবী হিসেবে মেনে নিল । কিন্তু সে আল্লাহর তায়ালার এবং রসুলের আদেশ-নিষেধ-উপদেশ সম্পর্কে অজ্ঞ, জানার চেষ্টাও করে না । এই ব্যাক্তির পরিচয় সে মুমিন।
,
তার পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটা আল্লাহ তায়ালা ফায়সালা করবেন।
,
(০৭)
★কাফের
যার শাব্দিক অর্থ হল ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় কুফর ঈমানের বিপরীত। আর তা হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান না রাখা, চাই তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হোক কিংবা না হোক, বরং তা যদি সন্দেহ ও সংশয় প্রসূতও হয়ে থাকে, কিংবা ঈর্ষা ও অহংকারবশতঃ বা রিসালাতের অনুসরণ থেকে ফিরিয়ে রাখে এমন কোনো প্রবৃত্তির অনুকরণবশতঃ ঈমান থেকে দূরে সরে থাকার কারণেও হয়ে থাকে।
কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?"[কুরআন 29:68
,
★মুসলিম আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ আত্মসমর্পণকারী
যারা ইসলামের অনুসরণ করে তাদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। মুসলমানেরা তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে মনে করে যা ইসলামের নবী ও রাসূল মুহাম্মদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। সকল মুসলমানরা ঐতিহ্যবাহী বিবরণীতে বর্ণিত মুহাম্মদের শিক্ষা (সুন্নাহ) ও হাদিস অনুসরণ করে।
★মুনাফিক।
যে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। আর এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় নিফাক (আরবি: نفاق)।
তারাই মুনাফিক।
কুরআনে বলা হয়েছে,
"তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরী করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।"[কুরআন 63:3]
★ফাসেক
যদি দাঁড়ি এক মুষ্ঠির কম রাখেন এবং প্রকাশ্যে আল্লাহর বিধান লংঘন করেন তারা ফাসেক।
,
★মুশরিক
যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে,একের বেশি খোদার ইবাদত করে।
,
★মুমিন
যারা কালেমায়ে শাহাদাহ এর উপর বিশ্বাস রাখে।
,
★মুত্তাকী
খোদা ভিরু,তাকওয়াবান ব্যক্তিকে বলা হয়।
,
(০৮)
নামায ছেড়ে দিলেই ব্যক্তি কাফের হবে না। বরং কাফেরদের মত কাজ হয়।
তাই উপরে উল্লেখিত ব্যাক্তি অমুসলিম হয়ে যায়নি।
,
তবে তার জন্য উচিত হলো উক্ত নাজ গুলো ওয়াক্ত মতো আদায় করা।
,
কারনবশতঃ ছুটে গেলেও জিবনে অবশ্যই তার কাজা আদায় করতে হবে।
যদি কাজা আদায় না করা হয়,তাহলে অবশ্যই ফিদিয়া দেওয়ার অছিয়ত করে যেতে হবে।
,
আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাকে মাফও করে দিতে পারেন,আবার শক্ত আযাবে গ্রেফতারও করতে পারেন
,
সবই আল্লাহর ইচ্ছা,এখানে অন্য কাহারো কথা বলার অধিকার নেই।
নামাজ না পড়লে কাফের হয়না সংক্রান্ত জানূনঃ
,
কাহারো উপর কাফেরের হুকুম লাগানো সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুন
,
(০৯)
হ্যাঁ, মুসলিম এর শ্রেণীবিভাগ আছে,
প্রকৃত মুসলিম এরকম,,,
হাদীস শরীফে এসেছে ঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي خَالِدٍ، حَدَّثَنَا عَامِرٌ قَالَ: أَتَى رَجُلٌ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، وَعِنْدَهُ الْقَوْمُ حَتَّى جَلَسَ عِنْدَهُ، فَقَالَ: أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ سَمِعْتَهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللَّهُ عَنْهُ
‘আমির (রহঃ) বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)-এর কাছে একটি লোক এলো। তখন কতিপয় লোক সেখানে উপস্থিত ছিলো। লোকটি তার নিকটে বসে বললো, আপনি আমাকে এমন কিছু অবহিত করুন যা আপনি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ সে-ই প্রকৃত মুসলিম যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর ঐ ব্যক্তি প্রকৃত মুহাজির যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে।
(আবু দাউদ ২৪৮১)
,
(১০)
উক্ত এক ওয়াক্ত নামাজের ফিদিয়া আদায় করতে হবে।
,
ফিদিয়া আদায় না করলেও আল্লাহ চাইলে তাকে মাফ করে দিয়ে সরাসরি জান্নাতে দিতে পারেন,এটি আল্লাহর ইচ্ছা।
তবে ২য় ব্যাক্তি অবশ্যই নিম্নমানের হলেও জান্নাতে যাবেন।
সে যদি পরেও জান্নাতে যায়,তাহলেও
অবশ্যই সে প্রথম ব্যক্তির থেকে অনেক বেশি মর্যাদাশীল হবেন।
জান্নাতের উঁচু মাকামে তার স্থান হবে।
কারন তার আমল নামায় নেক কাজ অনেক অনেক বেশি ছিলো।
,
(১১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهٗ لَا إِلهَ اِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (খাঁটি মনে) এ বিশ্বাস নিয়ে মারা যাবে যে, ‘‘আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই’’ সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।
(মুসলিম ২৬, শু‘আবুল ঈমান ৯৪।)
وَعَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَعَلَيْهِ ثَوْبٌ أَبْيَضُ وَهُوَ نَائِمٌ ثُمَّ أَتَيْتُهُ وَقَدْ اسْتَيْقَظَ فَقَالَ : مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ ثُمَّ مَاتَ عَلى ذلِكَ اِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ : وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ. قُلْتُ وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ : وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ قُلْتُ وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ : وَإِنْ زَنى وَإِنْ سَرَقَ عَلى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ. وَكَانَ أَبُوْ ذَرٍّ إِذَا حَدَّثَ بِهذَا قَالَ وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ أَبِي ذَرٍّ.
আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একবার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে পৌঁছলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়েছিলেন। আমি ফেরত চলে এলাম। অতঃপর পুনরায় তাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জেগে ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে দেখে) বললেন, যে ব্যক্তি (অন্তরের সাথে) ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে আর এ বিশ্বাসের উপর তার মৃত্যু হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, সে চুরি ও ব্যভিচার (এর মতো বড় গুনাহ) করে থাকে তবুও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে চুরি ও ব্যভিচার করলেও। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, চুরি ও ব্যভিচার করার পরও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, চুরি ও ব্যভিচারের ন্যায় গুনাহ করলেও। আবূ যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, যখনই আবূ যার (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন (গৌরবের সাথে) এ শেষ বাক্যটি ‘আবূ যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও’ অবশ্যই বর্ণনা করতেন।
বুখারী ৫৮২৭, মুসলিম ৯৪, আহমাদ ২১৪৬৬, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৩৩।
.
হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, কোন ব্যক্তি ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করলে সে নিশ্চিত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে এ কথা ঠিক যদি সে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ না করে। অথবা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করলেও তার উপর অটল থেকে মারা না যায়। তবে সে প্রথমেই অর্থাৎ- কোন প্রকার শাস্তি ভোগ না করেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি সে কোন কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করে এবং তার উপর অটল থেকেই মারা যায় তবে সে আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তাকে যদি আল্লাহ ক্ষমা করেন তবে সে শাস্তি ভোগ না করেই জান্নাতে যাবে। আর আল্লাহ যদি ক্ষমা না করেন তবে পাপানুসারে সে শাস্তি ভোগ করবে। অতঃপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে স্থায়ীভাবে জান্নাতে দেয়া হবে।
‘‘যদিও সে যিনা করে ও চুরি করে’’ এ থেকে বুঝা যায় যে, যদি কোন মু’মিন সকল ধরনের কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ করে আর তাকে ক্ষমা করা হয় তাহলে শাস্তি ভোগ না করেই সে জান্নাতে যাবে। আর ক্ষমা করা না হলে শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাতে যাবে। হাদীসে কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের দু’টি প্রকার উল্লেখ করা হয়েছে। এ কথা বুঝানোর জন্য যে, গুনাহ দুই প্রকারঃ আল্লাহর হক যেমন যিনা করা, আর বান্দার হক যেমন অন্যায়ভাবে তাদের মাল আত্মসাৎ করা।
,
সুতরাং কালেমা পড়ার পর কোনো কবীরা গুনাহ করা,(ইসলামের ফরজ বিধান অনুযায়ী না চলাও কবিরা গুনাহ) তাকে তার শাস্তি পেতে হবে,তারপর সে জান্নাতে যাবে।
,
তবে শাস্তি ভোগ করে হলেও কালেমার কারিনে একদিন না একদিন সে জান্নাতে যাবেই।
,
,
★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই!
যেই ব্যাক্তিকে আপনি দাওয়াত দিচ্ছিলেন,,,
তার তাকদির সংক্রান্ত তার আকীদায় ভুল আছে।
উক্ত ব্যক্তিকে বুঝাবেনঃ
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কোন কাজ করতে বাধ্য করেন না। বরং দুনিয়াতে তাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যেহেতু সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। তাই তিনি আগে লিখে রেখেছেন বান্দা কী করবে? এটাই তাকদীর। আর আল্লাহর এ লিখে রাখা বান্দার কর্মের উপর কোন প্রভাব সৃষ্টি করে না। তাই, বান্দা তার কর্ম অনুপাতে ফল পাবে।
আরেক শব্দে বলি, দুনিয়াতে বান্দা ভাল এবং মন্দ উভয় কাজের জন্য স্বাধীন। এখানে আল্লাহ তাআলা কাউকে কোন কাজ করতে বাধ্য করেন না সরাসরি। বাকি বান্দা কী করবে? তা আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই জানেন। সেই হিসেবে আগেই সব কিছু লিখে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার উক্ত লিখে রাখার দ্বারা বান্দার কাজে কোন প্রভাব সৃষ্টি করে না। তা’ই বান্দা তার কর্ম অনুপাতে বদলা পাবে। ভা করলে ভাল। আর মন্দ করলে মন্দ। আর বান্দা যেহেতু জানে না, আল্লাহ তাআলা কী লিখে রেখেছেন, তাই বান্দার উচিত ভাল কর্ম করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকা। এবং মন্দ কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
তাকদির সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ