আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
205 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (48 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমি প্রথমবার কোরানের বাংলা অর্থসহ পড়ছি এবং শয়তান কিছু জায়গায় আমার মনে অদ্ভুত প্রশ্নের সৃষ্টি করছে।  এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পাচ্ছি না কোথাও।
১) সূরা আত-তাওবাহর ৫৯ এবং ৭৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে ( আল্লহ ও তার রাসূল তাদের যা  দিয়েছেন-৫৯)  এবং ( আল্লহ ও তার রাসূল স্বীয় অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করেছেন)
আমার প্রশ্ন এই জায়গাটাতেই তাই এইটুক অংশই লিখেছি৷ আমার প্রশ্নটা হলোঃ সব কিছুর মালিক তো মহান আল্লহ তাআ'লা। তিনিই সব কিছু দান করেন৷  তাহলে এখানে আল্লহর সাথে তিনি রাসূলকেও কেন যুক্ত করেছেন? আল্লাহর সাথে বলা হয়েছে, রাসূল দিয়েছে ও রাসূলের অনুগ্রহ৷ এটা একটু ব্যাখা করুন দয়া করে।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ১ম আয়াতঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

وَ لَوۡ اَنَّہُمۡ رَضُوۡا مَاۤ اٰتٰىہُمُ اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗ ۙ وَ قَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰہُ سَیُؤۡتِیۡنَا اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ رَسُوۡلُہٗۤ ۙ اِنَّاۤ اِلَی اللّٰہِ رٰغِبُوۡنَ ﴿۵۹﴾ 

আর ভাল হত যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হত এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে দেবেন নিজ করুণায় এবং তার রাসূলও; নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত।
(সুরা তাওবা ৫৯)


উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে তার আগের কয়েকটি আয়াত আমাদের জানতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

وَ یَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰہِ اِنَّہُمۡ لَمِنۡکُمۡ ؕ وَ مَا ہُمۡ مِّنۡکُمۡ وَ لٰکِنَّہُمۡ قَوۡمٌ یَّفۡرَقُوۡنَ ﴿۵۶﴾ 
আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত, অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বস্তুত তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভয় করে থাকে।
(সুরা তাওবা ৫৬)

لَوۡ یَجِدُوۡنَ مَلۡجَاً اَوۡ مَغٰرٰتٍ اَوۡ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوۡا اِلَیۡہِ وَ ہُمۡ یَجۡمَحُوۡنَ ﴿۵۷﴾ 
তারা কোন আশ্রয়স্থল, কোন গিরিগুহা অথবা লুকিয়ে থাকার কোন প্রবেশস্থল পেলে সেদিকেই পালিয়ে যাবে দ্রুততার সাথে।
(সুরা তাওবা ৫৭)

وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّلۡمِزُکَ فِی الصَّدَقٰتِ ۚ فَاِنۡ اُعۡطُوۡا مِنۡہَا رَضُوۡا وَ اِنۡ لَّمۡ یُعۡطَوۡا مِنۡہَاۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡخَطُوۡنَ ﴿۵۸﴾ 

আর তাদের মধ্যে এমন লোক আছে, যে সদকা বন্টন সম্পর্কে আপনাকে দোষারোপ করে, তারপর এর কিছু তাদেরকে দেয়া হলে তারা সন্তুষ্ট হয়, আর এর কিছু তাদেরকে না দেয়া হলে সাথে সাথেই তারা বিক্ষুদ্ধ হয়।
(সুরা তাওবা ৫৮)

এর পর (প্রশ্নে উল্লেখিত ৫৯ নং আয়াতে) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

وَ لَوۡ اَنَّہُمۡ رَضُوۡا مَاۤ اٰتٰىہُمُ اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗ ۙ وَ قَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰہُ سَیُؤۡتِیۡنَا اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ رَسُوۡلُہٗۤ ۙ اِنَّاۤ اِلَی اللّٰہِ رٰغِبُوۡنَ ﴿۵۹﴾ 

আর ভাল হত যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট হত এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে দেবেন নিজ করুণায় এবং তার রাসূলও; নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত।
(সুরা তাওবা ৫৯)

আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পদ বন্টন করছিলেন, তখন যুল খুওয়াইসরা আত-তামীমী এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দুর্ভোগ তোমার, কে ইনসাফ করবে যদি আমি ইনসাফ না করি? উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমাকে ছাড়ুন, আমি তাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও; তার কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে যাদের সালাতের কাছে তোমরা তোমাদের সালাতকে, তাদের সাওমের কাছে তোমাদের সাওমকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর তূণীর থেকে বেরিয়ে যায়। ... আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বলেছেন এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। [বুখারী: ৬৯৩৩]

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তাদের কথাই বর্ণনা করছেন যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বন্টনের উপর আপত্তি উত্থাপন করত।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত আয়াতটি মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে।
এখানে তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সম্পদ বন্টণের উপর খুশি না হওয়াতে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলো।

বস্তুত এখানে একটি (গণিমতের) সম্পদ বন্টন হচ্ছিলো,এখানে যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ সেই বন্টনের কাজ করছিলেন,তাই আয়াতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দিকে দেয়ার নিসবত (ইঙ্গিত) করা হয়ে।

         
(০২)
প্রশ্নে উল্লেখিত ২য় আয়াতঃ

یَحۡلِفُوۡنَ بِاللّٰہِ مَا قَالُوۡا ؕ وَ لَقَدۡ قَالُوۡا کَلِمَۃَ الۡکُفۡرِ وَ کَفَرُوۡا بَعۡدَ اِسۡلَامِہِمۡ وَ ہَمُّوۡا بِمَا لَمۡ یَنَالُوۡا ۚ وَ مَا نَقَمُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ اَغۡنٰہُمُ اللّٰہُ وَ رَسُوۡلُہٗ مِنۡ فَضۡلِہٖ ۚ فَاِنۡ یَّتُوۡبُوۡا یَکُ خَیۡرًا لَّہُمۡ ۚ وَ اِنۡ یَّتَوَلَّوۡا یُعَذِّبۡہُمُ اللّٰہُ عَذَابًا اَلِیۡمًا ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ مَا لَہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۷۴﴾ 

তারা আল্লাহ্র শপথ করে যে, তারা কিছু বলেনি; অথচ তারা তো কুফরী বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর তারা কুফরী করেছে; আর তারা এমন কিছুর সংকল্প করেছিল যা তারা পায়ানি। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করেছিলেন বলেই তারা বিরোধিতা করেছিল। অতঃপর তারা তাওবাহ করলে তা তাদের জন্য ভাল হবে, আর তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন; আর যমীনে তাদের কোন অভিভাবক নেই এবং কোন সাহায্যকারীও নেই।
(সুরা তাওবা ৭৪)

অনুরূপ কথাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসারদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,

فَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمْ اللهُ بِيْ وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِيْنَ فَأَلَّفَكُمْ اللهُ بِيْ وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمْ اللهُ بِيْ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ قَالَ مَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تُجِيْبُوْا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمَنُّ

তোমরা ছিলে পথভ্রষ্ট তারপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করেছেন। আর তোমরা ছিলে দরিদ্র, আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে ধনী করেছেন। তারা যখনই রাসূলের মুখ থেকে কোন কথা শুনছিল তখনই বলছিল, আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দয়াই বেশী। [বুখারী ৪৩৩০; মুসলিম: ১০৬১]

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রশ্নে উল্লেখিত ২য় আয়াতের ব্যাখ্যা বুঝা যায়।
এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ কিছু দেননি,তিনি পথপ্রদর্শন করেছেন।
তিনি ছিলেন ওসিলা তথা মাধ্যম,তাই দেয়ার নিসবত (ইঙ্গিত) রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দিকেও করা হচ্ছে।
বস্তুত যাহা কিছু দিয়েছেন,সবই মহান আল্লাহই দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাঃ ওসিলা তথা মাধ্যম।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...