بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
মহিলাদের চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত না হলেও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লামা শামী (রহ.) নামাজের শর্তাবলি অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন ‘যুবতী নারীদের পুরুষের
সামনে মুখমণ্ডল খোলা থেকে বিরত রাখতে হবে। এ নির্দেশ এ জন্য নয় যে, তাদের মুখমণ্ডল
সতরের অন্তর্ভুক্ত। বরং ফেতনায় জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। (শামী ২/৯৭)
মুফতি তাকি ওসমানী হাদিস ও ফকিহগণের দীর্ঘ মতামত পর্যালোচনা
করে বলেন ‘চার মাজহাবের অভিমতগুলোর ওপর দৃষ্টিপাত করলে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সব
কয়টি মাজহাবই এ বিষয়ে একমত যে, কামবাসনা পূরণার্থে কিংবা ফেতনায় জড়িয়ে
যাওয়ার শঙ্কাযুক্ত অবস্থায় নারীদের মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত করা হারাম।
বিশেষত বর্তমান এ চারিত্রিক অধঃপতনের যুগে এখন সর্বত্র
ফেতনা ফাসাদের ছড়াছড়ি। এ জন্য হানাফি মাজহাবের মুতাআখখিরিন ওলামায়ে কেরাম সাধারণভাবে
প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর মুখমণ্ডলের ওপর দৃষ্টিপাত নিষিদ্ধ করেছেন। (তাকমিলায়ে ফাতহুল
মূলহীম খণ্ড- ৪/ পৃষ্ঠা ২৬১)।
*যার স্ত্রীর নিকট পর-পুরুষ প্রবেশ করে,
অথচ সে কিছুই মনে করে না বরং চুপ থাকে, সে ব্যক্তিকে
দাইয়ূস বলা হয়। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেনঃ
‘দাইয়ূছ’ সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ
সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে উক্ত ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা
তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে
কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’। (যাহাবী,
কিতাবুল কাবায়েরঃ ১/৫০ পৃঃ)
দাইয়ূস ব্যক্তির পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
‘দাইয়ূস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (নাসাঈঃ ২৫৬২,
আহমাদ, মিশকাতঃ ৩৬৫৫; সহীহুল
জামেঃ ৩০৫২)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেকেই
অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল।
সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জবাবদিহী করবে।একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল।
অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার
স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে।তোমরা
প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থদের
দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।" (বুখারীঃ ৮৯৩)
"দাইয়ুস" ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী
পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভাল মনে করে গ্রহণ করে অথবা
প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে। উপরের হাদিসটির ব্যাখ্যা ব্যাপক। এখানে মুল হল অশ্লীলতা।
যে তার নিজ ঘরে ইসলাম অনুশাসনে শিথিলতা করে, মেয়েদের পর্দা করতে
উৎসাহ দেয় না, আদেশ করেনা, ঘরে সিনেমা,
গান-বাজনা দিব্যি চলে, এর কোন প্রতিবাদ করে না;
যে এই রকম সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয় - সেই হল 'দাইয়ুস'।
আর 'ব্যভিচার' হল তার
মাঝে একটি। আমাদের সমাজের অনেক হাজ্বী-গাজী, দাড়ি-টুপিওয়ালা
পাচ (৫) ওয়াক্ত নামাজী লোক দেখা যায়! কিন্তু তাঁদের স্ত্রী ও মেয়েদেরকে দেখা যায়
রাস্তা-ঘাটে বে-পর্দা হয়ে বের হতে! কী কাজে আসবে তাঁর এই পরহেজগারিতায়! দাইয়ুস হয়ে
তাকে যেতে হবে জাহান্নামে! কারন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "তিন প্রকার লোকদের জন্য আল্লাহপাক জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন। অনবরত মদ
পানকারী, পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি এবং "দাইয়ুস"
এমন ব্যক্তি যে তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়"। (আহমাদ,
সাহীউল জামে: ৩০৪৭)
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!
১. জ্বী নামাজ দোহরাতে (পুনরায় পড়তে) হবে।
২,৩. এ সম্পর্কে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতামত এই যে, বর্তমান
এই ফেতনার যুগে নারীদের জন্য চেহারা ও হাত খোলা রাখা জায়েয নেই। স্বামী তার স্ত্রীকে
উক্ত বিষয়ে সতর্ক করা সত্বেও যদি সে চেহারা খোলা রাখে তাহলে স্বামী দায়ূস হবে না।
তবে স্বামীর জন্য করণীয় হলো, স্বীয় স্ত্রীকে মুহাব্বতের সাথে বুঝাতে থাকবে যেন তার
স্ত্রী পূর্ণ পর্দার বিধান মেনে চলে।
৪.যদি স্বামী তার স্ত্রীর পূর্ণ পর্দার ব্যাপারে উদাসীন
থাকে এবং এ সম্পর্কে তাকে কিছু না বলে তাহলে স্বামী গোনাহগার হবে। সুতরাং স্বামী
যেভাবে তার পূর্ণ পর্দা পালনের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করবে ঠিক তেমনি ভাবে তাকে
বুঝাতেও চেষ্টা করবে। এটা স্বমীর দায়িত্ব।