বিসমিহি তা'আলা জবাবঃ-
জবাবঃ-
কুরআন তিলাওয়াত সম্পর্কে চার মাযহাব সম্ভলিত সর্ববৃহৎ ফেকহী গ্রন্থ আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহতুল কোয়েতিয়্যাহ নামক কিতাবে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।নিম্নে আলোচনার সেই চুম্বকাংশকে তুলে ধরছি-
কিরাতুল কুরআন অর্থ-
الْقِرَاءَةُ فِي اللُّغَةِ: التِّلاَوَةُ
কিরাতুন শব্দের অর্থ হল,তিলাওয়াত।
وَالْقِرَاءَةُ اصْطِلاَحًا: هِيَ تَصْحِيحُ الْحُرُوفِ بِلِسَانِهِ بِحَيْثُ يُسْمِعُ نَفْسَهُ، وَفِي قَوْلٍ وَإِنْ لَمْ يُسْمِعْ نَفْسَهُ
পারিভাষিক কিরাত বলা হয়,যবান থেকে হরফ সমূহ উচ্ছারিত হওয়া,এমনভাবে যে,তা নিজে শ্রবণ করা যায়,এক বর্ণনামতে শ্রবণ করা না গেলেও তা কিরাত হিসেবে বিবেচ্য হবে।(৩৩/৪৬)
কিরাত এবং তিলাওয়াতের পার্থক্য
الْفَرْقُ بَيْنَ الْقِرَاءَةِ وَالتِّلاَوَةِ: أَنَّ التِّلاَوَةَ لاَ تَكُونُ إِلاَّ لِكَلِمَتَيْنِ فَصَاعِدًا، وَالْقِرَاءَةُ تَكُونُ لِلْكَلِمَةِ الْوَاحِدَةِ
কিরাত এবং তিলাওয়াতের পার্থক্য হল,সর্বনিম্ন একটি কালিমাকে উচ্ছারণ করে নিলে সেটা কিরাত হিসেবে বিবেচ্য হবে।তবে তিলাওয়াত হতে হলে সর্নিম্ন দু'টি বা তার চেয়ে চেশী আয়াত হতে হবে।(৩৩/৪৭)
কোন কোন জায়গায় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে?
يُسْتَحَبُّ أَنْ تَكُونَ الْقِرَاءَةُ فِي مَكَانٍ نَظِيفٍ مُخْتَارٍ، وَلِهَذَا اسْتَحَبَّ جَمَاعَةٌ مِنَ الْعُلَمَاءِ أَنْ تَكُونَ الْقِرَاءَةُ فِي الْمَسْجِدِ لِكَوْنِهِ جَامِعًا لِلنَّظَافَةِ وَشَرَفِ الْبُقْعَةِ، قَالَهُ النَّوَوِيُّ.
وَصَرَّحَ فُقَهَاءُ الْحَنَفِيَّةِ وَالْمَالِكِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ وَالْحَنَابِلَةِ بِكَرَاهَةِ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ فِي الْمَوَاضِعِ الْقَذِرَةِ، وَاسْتَثْنَى الْمَالِكِيَّةُ الآْيَاتِ الْيَسِيرَةَ لِلتَّعَوُّذِ وَنَحْوِهِ.
পবিত্রতম পছন্দনীয় স্থানেই কিরাত পড়া মুস্তাহাব।এজন্য উলামাদের বড় একটি জামাত পছন্দ করেন যে,মসজিদেই কিরাত পড়া মুস্তাহাব।কেননা মসজিদ পরিচ্ছন্ন থাকে এবং মসজিদই হল,সর্বোত্তম স্থান।এটা ইমাম নববী রাহ এর মন্তব্য। হানাফি, শা'ফেয়ী, মালিকী,এবং হাম্বলী মাযহাবের সমস্ত ফুকাহায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত হল,ময়লাযুক্ত স্থানে কুরআন তিলাওয়াত মাকরুহ।তবে মালিকী মাযহাবের ফুকাহাগণ দু'আর ছোট্ট আয়াতকে ময়লাযুক্ত স্থানে পড়ারও অনুমোদন দিয়ে থাকেন।(৩৩/৬২)
এবার মূল জবাবে আসি,সুতরাং.......
১. না যাবে না।
২. পড়া যাবে তবে অজু সহকারে পড়াই উত্তম।
৩. জ্বী যাবে।
৪.
কুরআন তেলাওয়াত এবং আল্লাহর যিকির বসা অবস্থায়, হেলান দিয়ে, চিৎ হয়ে শুয়ে তথা সর্ব হলতে করা জায়েয আছে।
যেমন হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عن أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها أنها قالت : كان النبي صلى الله عليه وسلم : ( يَتَّكِئُ فِي حَجْرِي وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ )
আমার হায়েয অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাঃ আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন পড়লেন।
সহীহ বোখারী-২৯৭,সহীহ মুসলিম-৩০১
ইবনে রজব হাম্বলী রাহ বলেন,
"وفي الحديث : دلالة على جواز قراءة القرآن متكئاً ، ومضطجعاً ، وعلى جنبه ، ويدخل ذَلِكَ في قول الله عز وجل : ( الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَاماً وَقُعُوداً وَعَلَى جُنُوبِهِمْ ) آل عمران/191" انتهى .
এই হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে,হেলান দিয়ে,কাৎ হয়ে,চিৎ হয়ে কুরআন তেলাওয়াত জায়েয। এবং এ হুকুম নিম্নোক্ত আয়াত থেকে ও বুঝা যায়।
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।সূরা আলে ইমরান-১৯১
(সূত্র ফাতহুল বারী-১/৪০৬)
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত একটি ফাতাওয়ায় বলা হয় যে,
Fatwa ID: 229-204/sd=4/1438
(۲) اہل تجوید کے نزدیک قرآنِ کریم کی تلاوت کے چار مراتب ہیں:(۱) ترتیل:- یعنی مخارج وصفات کی رعایت رکھتے ہوئے خوش الحانی کے ساتھ ٹھہر ٹھہر کر پڑھنا، اس طرح کی تلاوت فرض نماز میں ہونی چاہئے۔(۲) تحقیق:- یعنی ترتیل سے بھی زیادہ اطمینان سے پڑھنا جیسا کہ جلسوں میں تلاوت ہوتی ہے۔(۳) حدر:- یعنی قواعد تجوید کی رعایت رکھتے ہوئے قدرے رواں پڑھنا جیسا کہ تراویح میں پڑھا جاتا ہے۔(۴) تدویر:- یعنی ترتیل وحدرکے درمیانی انداز میں تلاوت کرنا۔
ان میں سب سے افضل مرتبہ ترتیل کا ہے، چنانچہ قرآن پاک میں فرمایا گیا: ﴿وَرَتِّلِ الْقُرْاٰنَ تَرْتِیْلاً﴾ اس لئے افضل یہ ہے کہ فرض اور واجب نمازوں میں ترتیل کا لحاظ رکھا جائے، اور دیگر سنن ونوافل میں اگر حدراً یا تدویراً تلاوت کی جائے تو بھی کوئی حرج نہیں ہے۔ (مستفاد: تسہیل جمال القرآن ۵-۶)ثم القراء ة علی ثلاثة أوجہ في الفرائض: علی التؤدة والترسل والتدبر حرفاً حرفاً۔ وفي التراویح یقرأ بقراء ة الأئمة بین التؤدة والسرعة، وفي النوافل باللیل لہ أن یسرع بعد أن یقرأ کما یفہم وذٰلک مباح۔ (الفتاویٰ التاتارخانیة ۲/۶۷رقم: ۱۷۶۲زکریا)
কোরআন মজীদ তিলাওয়াতের স্তর চারটি।
(১) তারতীল (২) হদর এবং (৩) তাদবীর।
(১) তারতীল
মদ ও গুন্নাহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করে, ধীর- স্থীরে কোরআন মজীদ পড়াকে তারতীল বলে।
(২) তাহক্বীক
তারতীল থেকেও আরো ধীরসুস্থে তিলাওয়া করা যেমন বিভিন্ন জলসা অনুষ্টানে ক্বারী সাহেবগণ তিলাওয়াত করে থাকেন।
(৩)হদর
তাজবীদের নিয়ম কানুন রক্ষা করে, একটু দ্রুত কোরআন মজীদ পড়াকে হদর বলে।
(৪) তাদবীর
তারতীল এবং হদরের মাঝামাঝি ধরনের পড়াকে তাদবীর বলে।
সর্বোত্তম তিলাওয়াত তারতীল। যেমন কুরআনে কারীমে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে। (সূরা মুযাম্মিল-৪)
ফরয ওয়াজিব নামাযে তারতীলের সাথে কুরআন তিলাওয়াত উত্তম ও উচিৎ। সুন্নত এবং নফল নামাযে তাদবীর বা হদর যেকোনো এক পদ্ধতিতে পড়া যাবে।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
মূখস্থ থেকে শুয়ে শুয়ে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে।কিন্তু কুরআনকে কারীমকে হাতে নিয়ে বা মুবাইল এ্যাপে কুরআন রেখে শুয়ে শুয়ে তেলাওয়াত করা সালাফদের ত্বরিকা নয়।বিধান জায়েয হলেও শুয়ে শুয়ে তেলাওয়াত না করাই উত্তম।এবং আদবের তাক্বাযা।
৫. আদবের খেলাফ
৬. আদবের খেলাফ
৭. আদবের খেলাফ
ইমাম ইবন কাছীর কুরআন পাঠের কিছু আদব উল্লেখ করেছেন। যেমন :
1. কুরআন পাঠের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম। তবে পবে পবিত্রতা অর্জন ছাড়াও কুরআন পাঠ করা যায় । যদিও এ নিয়ে ফুক্বাহাগণের মধ্যে মতভেদ হয়েছে। নেশা জাতীয় কিছু খেয়ে কুরআন পাঠ করা নিষেধ।–মিশকাত হা/২১০৭।
2. মিসওয়াক করা : কুরআন পাঠের পূর্বে মিসওয়াক করা উচিত।
3. সুন্দর পোষাক পরিধান করা।
4. কিবলামুখী হয়ে বসা
5. হাই উঠলে কুরআন পড়া বন্ধ করা
6. বিনা প্রয়োজনে কুরআন পড়াবস্থায় কারো সাথে কথা না বলা।
7. মনোযোগ সহকারে কুরআন পাঠ করা।
8. ছাওয়াবের আয়াত আসলে থামা এবং উক্ত সাওয়াব আল্লাহর কাছে চাওয়া। পক্ষান্তরে শাস্তির আয়াত আসলে তা থেকে মাফ চাওয়া।
9. কুরআন খুলে না রাখা এবং তার উপরে কিছু না চাপিয়ে রাখা
10. অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এমন উচ্চ আওয়াজে কুরআন না পড়া।
11. বাজারে বা এমন স্থানে কুরআন পড়বে না যেখানে মানুষে আজে-বাজে-কাজে লিপ্ত থাকে।
কুরআন ও হাদীস হতে কুরআন পাঠের নিয়ম:
1. নিয়মিত পাঠ করা : কুরআন নিয়মিত পাঠ করা উচিত। হযরত মুসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা কুরআনের প্রতি সদা লক্ষ্য রাখবে। তাঁর কসম, যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, নিশ্চয়ই কুরআন রশিতে বাঁধা উট অপেক্ষাও অধিক পলায়নপর।– মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত হা/২০৭৬।
2. টানা পদ্ধতিতে কুরআন পাঠ করা: রাসূল (সা) কুরআন টেনে টেনে তিলাওয়াক করতেন। এ ব্যাপারে বুখারী শরীফে হাদীস রয়েছে যে, কাতাদাহ রা বলেন, একদিন আনাস (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূল (সা)-এর কুরআন পাঠ কিরুপ ছিল ? তিনি বললেন, তা ছিল টানা টানা। অত:পর আনাস (রা) ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়লেন; টানলেন ‘বিসমিল্লাহ’তে টানলেন ‘রাহমানে’ টানলেন এবং টানলেন ‘রাহিমে’- মিশকাত হা/২০৮০।
3. তারতীলের সাথে কুরআন পাঠ করা : এর অর্থ কুরআন শুদ্ধভাবে মাখরাজ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত করা। এ ব্যাপারে কুরআনে সুস্পষ্টরুপে নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَرَتِّلِ الْقُرْآَنَ تَرْتِيلًا
অনুবাদ : তোমরা তারতীলের সঙ্গে অর্থ্যাত ধীরস্থীরভাবে কুরআন তিলাওয়াত কর।[ মুযাম্মিল আয়াত নং-৪]
4. কুরআন তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ পড়া : কুরআন তিলাওয়াত করার শুরুতে আউযুবিল্লাহ পাঠ করা ওয়াযিব। এর মাধ্যমে শাইত্বান থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন,
فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآَنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
অর্থ: সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহ কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও। – সূরা আন-নাহল : ৯৮।
5. উচ্চস্বরে পাঠ না করে মধুর স্বরে পড়া : আল্লাহ তাআলা উচ্চ:স্বরে কুরআন পাঠ পছন্দ করেন না। রাসূল(সা) বলেছেন, আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন স্বরক, যত না পছন্দ করেন কোন নবীর মধুর স্বরে সরবে কুরআন পড়াকে। – মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত হা/২০৮২
পরবর্তী হাদীসেই স্বর করে কুরআন পাঠ না করলে তাদের মুসলিমদের দলভুক্ত করা হয়নি । মিশকাত হা/২০৮৩।
এছাড়া রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর কর। – আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবন মাজাহ ও দারেমী। মিশকাত হা/২০৮৮।
6. বিসমিল্লাহ পড়া : তিলাওয়াতকারীর উচিত সূরা তাওবাহ ব্যতীত সকল সূরার শুরুতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়া। হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা) এক সূরা শেষ করে বলে আরেক সূরা শুরু করতেন।– বাযযার,হা/৪৯৭৯।
7. অপরের তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকা : কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকা এবং মনযোগ সহকারে শুনা। কুরআন আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
‘আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক,যাতে তোমরা রহমত লাভ কর। [সূরা আরাফ: ২০৪]।
8. শত্রু ভূমিকে কুরআন নিয়ে সফর করা নিষেধ: রাসূল (সা) নিষেধ করেছেন শত্রুভূমিতে কুরআন নিয়ে সফর করতে।
এছাড়া আরেক বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা) তা শত্রুর হাতে পড়া সম্পর্কে নিরাপদ মনে করতেন না। মিশকাত হা/২০৮৬।
9. কুরআন পাঠ করে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা : কুরআন পাঠ কর দৃঢ়ভাবে ধারণ করা নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন: স্মৃতেকুরআরে রক্ষকদের উদাহরণ হচ্ছে রশিতে বাঁধা উট রক্ষকের ন্যায়। যদি উটের প্রতি সদা লক্ষ্য রাখে তাকে আবদ্ধ রাখতে পারে, আর যদি তাকে ছেড়ে দেয় তবে তা পলায়ন করে ।-বুখারী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৭৮ (সোলেমানিয়া প্রকাশনী)।
10. তিনদিনের কমে কুরআন খতম করা নাযায়েজ: রাসূল (সা) তিনদিনের কমে কুরআন খতম দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, যে এভাবে পড়েছে সে কুরআন বুঝে নি। – মিশকাত হা/২০৯০। এথেকে স্পষ্ট যে, কুরআন বুঝে বুজে পড়া উচিত। বিভিন্ন সাহাবীর জীবন থেকে জানা যায় যে, তাঁরা দশটি করে কুরআনের আয়াত পড়তেন এবং তা বুঝতেন সেই সাথে আমল করতেন। তারপর আবার দশটি নতুন আয়াত পড়তেন।
11. কুরআন পড়ে আমল করা : কুরআন পাঠ শুধু জানার জন্য নয়, সেই সাথে আমল করতে হবে। কুরআনের আদেশ ফরয হিসেবে আমল করতে হবে এবং নিষেধকে হারাম হিসেবে পরিত্যাগ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিরমিযীতে যইফ হাদীস রয়েছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে অনেক উত্সাহমূলক শাহেদ হাদীস বিদ্যমান।
12. কুরআন পাঠের সময় আল্লাহর ভয় থাকা: কুরআন পাঠের সময় অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকা উচিত। এ বিষয়ে তাবেঈ হযরত তাউস (ইয়ামানী) মুরসালরূপে বর্ণনা করেন যে, একবার রাসূল(সা)-কে জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! কুরআনের স্বর প্রয়োগ ও ভালো তেলাওয়াতের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? রাসূল (সা) বললেন, যার কুরআন পাঠ মুনে তোমার কাছে মনে হয় যে, সে আল্লাহর প্রতি ভয় পোষণ করছে। তাউস বলেন, তাবেঈ তালক এরুপ ছিলেন। – দারেমী, মিশকাত হা/২০৯৭।
রাসূল (সা) বলেছেন, ‘কুরআন তিলাওয়াতের সর্বোত্তম কণ্ঠ সে ব্যক্তির, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় সে কাঁদছে।–সুনান ইবন মাজাহ, হা/১৩৩৯। এছাড়া অনেক সাহাবীর জীবন থেকে জানা যায় যে, তাঁরা জাহান্নামের আয়াত আসলে ক্রন্দন করতেন। এমনকি সলাত আদায় করতে করতেও ক্রন্দনের বিষয়ে বুখারীতে তালীক্ব রয়েছে।
13. কুরআন নিয়ে গবেষণা করা : কুরআন সম্পর্কে গবেষণা বা ইজতিহাদ করার নির্দেশ আছে। আজ পশ্চিমা বিশ্ব কুরআন নিয়ে গবেষণা করে জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি করেছে। আর আমরা মুসলিম জাতি কুরআন ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে আছি।আল্লাহ তাআলা বলেন,
ِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آَيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ
অর্থ: ‘আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে ।-সূরা সোয়াদ:৪৪।
এ বিষয়ে হাদীসে আছে, হযরত উবায়দা মুলাইকী (রা) বলেন, আর তিনি ছিলেন রাসূল (সা)-এর সহচর। রাসূল (সা) বলেন, হে কুরআনধারীগণ। তোমরা কুরআনকে বালিশ বানাবে না। বংর কুরআন তিলাওয়াত করা মত তাকে তিলাওয়াত করবে রাত ও দিনে এবং প্রকাশ করবে ও সুর করে পড়বে; অধিকন্তু কুরআনে যা আছে সেসব সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারে এবং শীঘ্র শীঘ্র এটার প্রতিফল পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হবে না। কেননা, কুরআনের প্রতিফল রয়েছে। – বায়হাকী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২০৯৯।
14. কুরআন শিক্ষা করে ভুলে না যাওয়া: কুরআন শিক্ষা করে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে হাদীসে পলায়নপর জন্তুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। মিশকাত হা/২০৭৬-৭৮। এ ব্যাপারে আবূ দাউদ ও দারেমীতে উল্লেখিত, যে কুরআন ভুলে যায় সে কিয়ামতের দিন অঙ্গহীনরুপে উঠবে বর্ণিত হাদীসটি যইফ।–মিশকাত জাল ও যইফ হাদীস, হা/৪৭৭।
15. মনের সন্তুষ্টি পরিমাণ কুরআন পাঠ করা : যতক্ষণ মনের সন্তুষ্টি থাকে ততক্ষণ কুরআন পাঠ করা উচিত। জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, কুরআন পড়, যতক্ষণ তোমাদের মন পড়তে চায়। আর যখন মনের ভাব অন্যরূপ দেখ, তখন উঠে যাও।
16. সিজদার আয়াত পাঠ করলে সিজদাহ দেয়া: কুরআন পাঠ করতে করতে সাজদাহ’র আয়াত আসলে তা পাঠ করে সাজদাহ করা উচিত। এটি ওয়াজিব কিনা তা নিয়ে মতভেদ হলেও এ ব্যাপারে অসংখ্য সাহাবীর আমল বিদ্যমান। কেউ কেউ সাজদাহ’র আয়াত আসলে এড়িয়ে যান এটা ঠিক নয়। ফুক্বাহাকেরাম সাজদাহ’র আয়াত পড়ার অনেক পরে সাজদাহ’র দেয়া যাবে বলে অভিমত দিয়েছেন। আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) খুতবাহ দেয়ার সময় সাজদাহ’র আয়াত তিলাওয়াত করার পর সাজদাহ দিলেন, তার সাথে আমরাও সাজদা’হ করলাম। -ইবনু খুযাইমাহ, হা/১৪৫৫।
আল্লাহা আমাদের কুরআন সঠিকভাবে ও নিয়মিত ভাবে তিলাওয়াত করার তাওফিক দিন।
অতএব সম্মানিত পাঠক ! আপনার সময়ের নির্দিষ্ট অংশ কুরআন পাঠের জন্য নির্ধারণ করুন। যত ব্যস্তই থাকুন না কেন। ঐ অংশটুকু পড়ে নিতে চেষ্টা করুন। কেননা যে কাজ সর্বদা করা হয় তা অল্প হলেও বিচ্ছিন্নভাবে বেশী কাজ করার চাইতে উত্তম। রাসূল (সা) বলেছেন, “কোন মানুষ যদি কুরআনের নির্দিষ্ট অংশ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়ে তবে ফজর ও যোহর নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে যেন তা পড়ে নেয়। তাহলে তার আমলনামায় উহা রাতে পড়ার মত সাওয়াব লিখে দেয়া হবে। -মুসলিম।(সংগৃহিত)