আসসালামু আলাইকুম।পুরোটা পড়বেন মিন ফাদ্বলিক।
আমি ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আমার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল।তাই দাওয়াতের নিয়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেতাম।আমার পরিবারও বরাবর দ্বীনি শিক্ষার চেয়ে দুনিয়াবি রেজাল্ট -পড়াশোনা কেই প্রাধান্য দেয়। তারাঁ মূলত চান্স না পেলে "বিয়ে দিয়ে দিব" অর্থাৎ বিয়েকে পড়াশোনায় ব্যর্থতার কারণ মনে করে এবং ভালো ফ্যামিলি বা তথাকথিত উচ্চ মর্যাদার ফ্যামিলিতে বিয়ে দিবার জন্য ভালো পড়াশোনা-রেজাল্ট আশা করে। (কিন্তু আমি মনে করি বিয়ে ইবাদত এবং বিয়ের সাথে পড়াশোনায় ব্যর্থতার কোনো সম্পর্ক নেই)
এখন চান্স না পাইলেও সো কল্ড মহাব্যর্থ ট্যাগ লেগে যাবে (মাঝেও কিছু ক্ষতি সম্ভবনা আছে) আর পাইলে তো ভর্তি হওয়ার মত সিচুয়েশন তৈরি হবে।যখন চান্স না পাওয়ায় আশপাশ থেকে মেণ্টাল প্রেশার আসবে, প্রতিবেশিরা জিজ্ঞেস করবে "কোথায় ভর্তি হইছে?চান্স হয় নাই?সে না পরীক্ষা দিছে??হেন তেন পেন...!!" আরও অনেক সমালোচনা... তখন নিজেরও অবস্থা খারাপ হইতে পারে।আশেপাশের অনেকেই চান্স পাওয়াটাকে সব মনে করে। তাদের কাছে বুয়েট মেডিকেলে চান্স পাওয়াটাই সব।উভয় সংকট। না পারছি ভালোমত পড়ালেখা করে চান্স পাওয়ার নিয়ত করতে, না পারছি না চাইতে চান্স পেতে।পরিবার কিভাবে মেনে নিবে আমাকে অনার্সে ভর্তি না হলে??
এই কারণে পরিবারের প্রত্যাশা পূরণে এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখার নিয়তে (যেহেতু দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ নেই) ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার আমার এখন দ্বীনি বিষয়ক পড়াশোনা করতেই মন চায়।কুরআন শুদ্ধ তিলওয়াত শিখতে চাই,আরবী ভাষা শিখতে চাই,ঈমান, আক্বিদা, ইসলামি ইতিহাস,সিরাহ,ফিকহ, যতখানি সম্ভব হিফয করতে চাই(আল্লাহ যতটুকু চান)এবং জীবনে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে আমল এবং প্রয়োগ করতে চাই আল্লাহ চাইলে। মূলত আমি আমার মেধা,শ্রম, হায়াত, সময়,আন্তরিকতা সবটুকুই দ্বীনি বিষয়ে দিতে চাচ্ছি এবং পরিপূর্ন ইসলাম নিজের জীবন, নিজের পরিবারে সকলের জীবন,আশেপাশের মানুষের জীবনে দেখতে চাই ইন শা আল্লাহ।আমার কাছে মনে হচ্ছে এত কষ্ট করে ভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য সময় কেন ব্যয় করব যেহেতু আমি জীবনের দীর্ঘ সময় দ্বীনচর্চা থেকে দূরে ছিলাম এবং দ্বীন বিষয়ক জ্ঞান ও আমলের অগাধ ঘাটতি আছে।আমি ফিতনামুক্তভাবে পরিপূর্ন পর্দার সহিত অর্থাৎ নন মাহরামের আনাগোনা ব্যতীত দ্বীনি ইলম অর্জনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে চাচ্ছি মূলত।কোনোভাবেই সামান্য পর্দা নষ্ট হোক এমন পরিবেশে যেতে চাচ্ছি না। কিন্তু যেহেতু ছোট থেকে জেনারেলে পড়ছি তাই উপরে যেমনটা বললাম পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের প্রত্যাশা রয়েছে যে মেয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে হেন হবে তেন হবে। আর না হতে পারলে তাকে "ব্যর্থ হওয়ায় বিয়ে দিয়ে দাও"। আমি দ্বিধায় আছি যে আমার কি জেনারেল লাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া জায়েজ হবে কি না এবং যেহেতু আমার দ্বীনি শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় পুরোপরি ভর্তি হওয়ারও সুযোগ নেই কারণ আমার পরিবার ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে মাদ্রাসার অপশন বাছাই করতে দিবে না, মাদ্রাসায় পড়তে যেসকল কিতাব,দ্বীনি বই লাগে সেগুলো কিনে দিতে চাবে না। পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার কথা অথবা মাদ্রাসায় ভর্তির কথা বলা যাবে না..আবার জানিও না অফলাইনে কোথায় যোগ্য আলেমা অথবা মহিলা মাদ্রাসা পাব যেখানে আন্তরিকতার সহিত কওমী মাদ্রাসার মত করে পড়ালেখা করানো হয়।বিয়ের কথা বলতে চাই না কারণ আমার মূলত বিয়ের ক্ষেত্রে ভয় হয় যে যদি দ্বীনহীন পরিবারে যাদের দ্বীনি বুঝ নেই অথবা দ্বীনকে প্রাধান্য দেয় না বা যারা বিয়ের পর আমাকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করতে দিবে না...বা দ্বীন ধর্মের প্রতি আগ্রহহীন, দুনিয়ালোভী এমন পরিবারে বিয়ে হলে তো পুরো জীবনই শেষ,সব চেষ্টাই বৃথা কারণ স্বামী এবং তার পরিবারে যদি দ্বীনি বুঝ না থাকে তাহলে আল্লাহ না করুন আমি নিজের জীবনে এবং নিজেদের সন্তানদের ক্ষেত্রে কিভাবে দ্বীন মেনে চলব?
পরিবার থেকে চান্স না পেলে বিয়ে দিয়ে দিতে চাবে কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে ভয় আমার পরিবার দ্বীনকে প্রাধান্য নাও দিতে পারে। এক্ষেত্রে আমি কি নিজ দায়িত্বে দ্বীনি পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে কি পরিপূর্ণ পর্দা করে জেনারেল পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি যাতে দ্বীনহীন পরিবারে বিয়ে না হয়ে যায় এবং পরিপূর্ণ দ্বীনী বুঝ সম্পন্ন ইসলামকে পরিপূর্ণ মেনে চলে এমন পরিবারে বিয়ের আগ পর্যন্ত জেনারেল পড়া চালিয়ে যাওয়ার ছলে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে চেষ্টা করতে পারি?তবে আমার বাসার বাইরে যেতে খুব ভয় করে এবং যেতে চাই না প্রয়োজন ছাড়া, মানুষের সাথে ইন্টারেকশন খুবই কম করি প্রভাবিত হওয়ার ভয়ে।আবার আমি জানিও না ভার্সিটির পরিবেশ আসলে কেমন, সেখানে কতটুকু পর্দার খেয়ানত হয় এবং আমি বিয়ে ছাড়া ভার্সিটিতে ফিতনামুক্তভাবে কিভাবে পড়াশোনা করব?আবার আমি ভার্সিটির প্রস্তুতি নিলে ননমাহরামদের কাছে পড়তে হবে, তাদের ক্লাস করতে হবে কিন্তু আমি নতুন জেনেছি যে ননমাহরামের ক্লাস করাও উচিত না।এখন আমি কোনদিকে যাব কি করব এসব বিষয় চিন্তা করে আমার কোনো কিছুই ঠিকমত হচ্ছে না।আমার কোন পথে কিভাবে গেলে ভালো হবে? আমার ফ্যামিলিও কনভিন্স থাকবে, আমি দ্বীনি জ্ঞানও অর্জনে মনোযোগ দিতে পারব আবার ফিতনামুক্তও থাকতে পারব?
(আবার আমার পরিবারের কাছে তারাই সুপিরিয়ির যাদের একাডেমিক পারমেন্স ভালো, ক্যারিয়ার ভালো..তাদেরকেই উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাদেরকেই প্রমোট দেয়া হয়। তাই নিজেরও অনেক সময় মোহে পড়ে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে।)
এমন পরিস্থিতিতে আমার কোনদিকে কিভাবে আগানো উচিত যাতে আমার বাবা মায়ের চক্ষুশীতকারিণী সন্তানও হতে পারি এবং তাদেরকে মন থেকে খুশি রাখতে পারি আবার সর্বোপরি নিজের জীবনে দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি সন্তুষ্ট করে চলতে পারি ?