আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
62 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
edited by

আসসালামু আলাইকুম।পুরোটা পড়বেন মিন ফাদ্বলিক।

 আমি  ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আমার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল।তাই দাওয়াতের নিয়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চেতাম।আমার পরিবারও বরাবর দ্বীনি শিক্ষার চেয়ে দুনিয়াবি রেজাল্ট -পড়াশোনা কেই প্রাধান্য দেয়।  তারাঁ মূলত চান্স না পেলে "বিয়ে দিয়ে দিব" অর্থাৎ বিয়েকে পড়াশোনায় ব্যর্থতার কারণ মনে করে এবং ভালো ফ্যামিলি বা তথাকথিত উচ্চ মর্যাদার ফ্যামিলিতে বিয়ে দিবার জন্য ভালো পড়াশোনা-রেজাল্ট আশা করে। (কিন্তু আমি মনে করি বিয়ে ইবাদত এবং বিয়ের সাথে পড়াশোনায় ব্যর্থতার কোনো সম্পর্ক নেই)

এখন চান্স না পাইলেও সো কল্ড মহাব্যর্থ ট্যাগ লেগে যাবে (মাঝেও কিছু ক্ষতি সম্ভবনা আছে) আর পাইলে তো ভর্তি হওয়ার মত সিচুয়েশন তৈরি হবে।যখন চান্স না পাওয়ায় আশপাশ থেকে মেণ্টাল প্রেশার আসবে, প্রতিবেশিরা জিজ্ঞেস করবে "কোথায় ভর্তি হইছে?চান্স হয় নাই?সে না পরীক্ষা দিছে??হেন তেন পেন...!!" আরও অনেক সমালোচনা... তখন নিজেরও অবস্থা খারাপ হইতে পারে।আশেপাশের অনেকেই চান্স পাওয়াটাকে সব মনে করে। তাদের কাছে বুয়েট মেডিকেলে চান্স পাওয়াটাই সব।উভয় সংকট। না পারছি ভালোমত পড়ালেখা করে চান্স পাওয়ার নিয়ত করতে, না পারছি না চাইতে চান্স পেতে।পরিবার কিভাবে মেনে নিবে আমাকে অনার্সে ভর্তি না হলে??

 

 এই কারণে পরিবারের প্রত্যাশা পূরণে এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখার নিয়তে (যেহেতু দ্বীনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ  নেই) ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আবার আমার এখন দ্বীনি বিষয়ক পড়াশোনা করতেই মন চায়।কুরআন শুদ্ধ তিলওয়াত শিখতে চাই,আরবী ভাষা শিখতে চাই,ঈমান, আক্বিদা, ইসলামি ইতিহাস,সিরাহ,ফিকহ, যতখানি সম্ভব হিফয করতে চাই(আল্লাহ যতটুকু চান)এবং জীবনে সাধ্যের সবটুকু দিয়ে আমল এবং প্রয়োগ করতে চাই আল্লাহ চাইলে। মূলত আমি আমার মেধা,শ্রম, হায়াত, সময়,আন্তরিকতা সবটুকুই দ্বীনি বিষয়ে দিতে চাচ্ছি এবং পরিপূর্ন ইসলাম নিজের জীবন, নিজের পরিবারে সকলের জীবন,আশেপাশের মানুষের জীবনে দেখতে চাই ইন শা আল্লাহ।আমার কাছে মনে হচ্ছে এত কষ্ট করে ভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য সময় কেন ব্যয় করব যেহেতু আমি জীবনের দীর্ঘ সময় দ্বীনচর্চা থেকে দূরে ছিলাম এবং দ্বীন বিষয়ক জ্ঞান ও আমলের অগাধ ঘাটতি আছে।আমি ফিতনামুক্তভাবে পরিপূর্ন পর্দার সহিত অর্থাৎ নন মাহরামের আনাগোনা ব্যতীত দ্বীনি ইলম অর্জনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে চাচ্ছি মূলত।কোনোভাবেই সামান্য পর্দা নষ্ট হোক এমন পরিবেশে যেতে চাচ্ছি না। কিন্তু যেহেতু ছোট থেকে জেনারেলে পড়ছি তাই উপরে যেমনটা বললাম পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনের প্রত্যাশা রয়েছে যে মেয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে হেন হবে তেন হবে। আর না হতে পারলে তাকে "ব্যর্থ হওয়ায় বিয়ে দিয়ে দাও"। আমি  দ্বিধায় আছি যে আমার কি জেনারেল লাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া জায়েজ হবে কি না এবং যেহেতু আমার দ্বীনি শিক্ষার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসায় পুরোপরি ভর্তি হওয়ারও সুযোগ নেই কারণ আমার পরিবার ভার্সিটিতে ভর্তি না হয়ে মাদ্রাসার অপশন বাছাই করতে দিবে না, মাদ্রাসায় পড়তে যেসকল কিতাব,দ্বীনি বই লাগে সেগুলো কিনে দিতে চাবে না। পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ার কথা অথবা মাদ্রাসায় ভর্তির কথা বলা যাবে না..আবার জানিও না অফলাইনে কোথায় যোগ্য আলেমা অথবা মহিলা মাদ্রাসা পাব যেখানে আন্তরিকতার সহিত কওমী মাদ্রাসার মত করে পড়ালেখা করানো হয়।বিয়ের কথা বলতে চাই না কারণ আমার মূলত বিয়ের ক্ষেত্রে ভয় হয় যে যদি দ্বীনহীন পরিবারে যাদের দ্বীনি বুঝ নেই অথবা দ্বীনকে প্রাধান্য দেয় না বা যারা বিয়ের পর আমাকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশ করতে দিবে না...বা দ্বীন ধর্মের প্রতি আগ্রহহীন, দুনিয়ালোভী এমন পরিবারে বিয়ে হলে তো পুরো জীবনই শেষ,সব চেষ্টাই বৃথা কারণ স্বামী এবং তার পরিবারে যদি দ্বীনি বুঝ না থাকে তাহলে আল্লাহ না করুন আমি নিজের জীবনে এবং নিজেদের সন্তানদের ক্ষেত্রে কিভাবে দ্বীন মেনে চলব?

পরিবার থেকে চান্স না পেলে বিয়ে দিয়ে দিতে চাবে কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে ভয় আমার পরিবার দ্বীনকে প্রাধান্য নাও দিতে পারে। এক্ষেত্রে আমি কি নিজ দায়িত্বে দ্বীনি পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে কি পরিপূর্ণ পর্দা করে জেনারেল পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি যাতে দ্বীনহীন পরিবারে বিয়ে না হয়ে যায় এবং পরিপূর্ণ দ্বীনী বুঝ সম্পন্ন ইসলামকে পরিপূর্ণ মেনে চলে এমন পরিবারে বিয়ের আগ পর্যন্ত জেনারেল পড়া চালিয়ে যাওয়ার ছলে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে চেষ্টা করতে পারি?তবে আমার বাসার বাইরে যেতে খুব ভয় করে এবং যেতে চাই না প্রয়োজন ছাড়া, মানুষের সাথে ইন্টারেকশন খুবই কম করি প্রভাবিত হওয়ার ভয়ে।আবার আমি জানিও না ভার্সিটির পরিবেশ আসলে কেমন, সেখানে কতটুকু পর্দার খেয়ানত হয় এবং আমি বিয়ে ছাড়া ভার্সিটিতে ফিতনামুক্তভাবে কিভাবে পড়াশোনা করব?আবার আমি  ভার্সিটির প্রস্তুতি নিলে ননমাহরামদের কাছে পড়তে হবে, তাদের ক্লাস করতে হবে কিন্তু আমি নতুন জেনেছি যে ননমাহরামের ক্লাস করাও উচিত না।এখন আমি কোনদিকে যাব কি করব এসব বিষয় চিন্তা করে আমার কোনো কিছুই ঠিকমত হচ্ছে না।আমার কোন পথে কিভাবে গেলে ভালো হবে? আমার ফ্যামিলিও কনভিন্স থাকবে, আমি দ্বীনি জ্ঞানও অর্জনে মনোযোগ দিতে পারব আবার ফিতনামুক্তও থাকতে পারব?

(আবার আমার পরিবারের কাছে তারাই সুপিরিয়ির যাদের একাডেমিক পারমেন্স ভালো, ক্যারিয়ার ভালো..তাদেরকেই উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাদেরকেই প্রমোট দেয়া হয়।  তাই নিজেরও অনেক সময় মোহে পড়ে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে।)
এমন পরিস্থিতিতে আমার কোনদিকে কিভাবে আগানো উচিত যাতে আমার বাবা মায়ের চক্ষুশীতকারিণী সন্তানও হতে পারি এবং তাদেরকে মন থেকে খুশি রাখতে পারি আবার সর্বোপরি নিজের জীবনে দ্বীনকে প্রাধান্য দিয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি সন্তুষ্ট করে চলতে পারি ?

1 Answer

0 votes
by (680,280 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
জেনারেল শিক্ষা অর্জন সম্পর্কে আমরা ইতি পূর্বে বলেছিলাম যে,
বলা যায় মুসলিম দেশের মুসলিম সরকারের জন্য ওয়াজিব যে,অচিরেই পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
প্রয়োজনে এ জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করা সমস্ত মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কিন্তু যতদিন পর্যন্ত এই পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।(ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১)(শেষ)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/434

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার পারিবারিক অবস্থান ও বক্ষমান পরিস্থিতির আলোকে আমরা আপনার ব্যাপারে বলবো যে, আপনি  নিজ দায়িত্বে দ্বীনি পড়াশোনা করার পাশাপাশি পরিপূর্ণ পর্দা করে জেনারেল পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। যাতে দ্বীনহীন পরিবারে বিয়ের জন্য আপনার পরিবার চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। পরিবারে বিয়ের আগ পর্যন্ত জেনারেল পড়া চালিয়ে যাওয়ার ছলে দ্বীনি জ্ঞান অর্জনে চেষ্টা করবেন। ভার্সিটির পরিবেশে পর্দা রক্ষা নিতান্তই কঠিন ও অসম্ভব কাজ। তাই এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।ভার্সিটির প্রস্তুতি ক্ষেত্রে ননমাহরামদের কাছে যেহেতু পড়তে হবে, তাই চেষ্টা করবেন, কোনো নারী শিক্ষিকার কাছে ক্লাস করতে অথবা কয়েন মেয়ের সাথে একত্রে ক্লাস করতে। সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও যদি দেখা যায় যে, নিজ ঈমান আমলকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন পড়াশোনাটাকে সম্পূর্ণই পরিত্যাগ করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...