আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, আমি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিয়ে সংক্রান্ত কিছু বিষয় জানতে চাই।
১.বিয়েতে মোহর কিভাবে নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে? (মেয়ে পক্ষের  অভিভাবক ছেলের সামর্থের বাইরে বড় অংকের মোহর ধার্য করতে চায়,এটাকেই যৌক্তিক মনে করে ও সবকিছু ভালো লাগা সত্ত্বেও এটা ঠিকঠাক না হলে মেয়ে বিয়েই দিবে না, এমন মনমানসিকতা রাখে । তাদের ধারণা এতে বিয়ে ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকবে না। কিন্তু পাত্রী চায় পাত্রের সামর্থ অনুযায়ী মোহর নির্ধারণ করতে।)

২.যদি মোহর নির্ধারণে কিছু  গোপন কৌশল অবলম্বন করা হয় তা কি জায়েজ হবে?(বিয়েতে নাম মাত্র মোহর লেখা হবে, যেটা অভিভাবক চায়,তবে পাত্র পরিশোধ করবে ওটাই যা তার সামর্থে আছে, এক্ষেত্রে জানবে শুধু মেয়ের মা আর ছেলে পক্ষের অভিভাবক, এতে পাত্রীর সম্মতি থাকবে।)
৩.মোহর পরিশোধ করা কি ফরজ?

৪.জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে ইসলাম অনুমোদন করে?
৫..বিয়েতে কি তিনবার কবুল বলতে হয়, না বললে বিয়ে অশুদ্ধ হবে?

1 Answer

0 votes
by (598,170 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মোহরানা আদায় করা ফরজ।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤] 

অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪] 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

واتوا النساء صدقاتهن نحلة فان طبن لكم عن شيئ منه نفسا فكلوا هنيئا مرئيا

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে  দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।-সূরা নিসা : ৪

এই আয়াতের প্রধান কয়েকটি শিক্ষা ও বিধান এই :

১. মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন।

২. মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং স্বামী যেমন স্ত্রীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করতে, কিংবা পরিশোধ করার পর ফেরত নিতে পারে না তেমনি পিতা-মাতা, ভাইবোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়ার মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতে পারে না। নিলে তা হবে কুরআনের ভাষায় ‘আক্ল বিল বাতিল’ তথা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা।

৩. মুমিনের কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ-উপরোধ বা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ও অতি নিন্দনীয় প্রবণতা।

৪. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে।

৫. পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।

৬. স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না।

মোহরানা স্ত্রীর অধিকার।
সর্বনিম্ন মোহর ১০ দিরহাম,আর সর্বোচ্চ কোনো নির্দিষ্ট নেই।
এটি স্বামী ও তার অভিভাবক, এবং স্ত্রীর অভিভাবকগন স্ত্রীর অনুমতি স্বাপেক্ষে সন্তুষ্টি চিত্তে নির্ধারন করবেন।
,
যাহা নির্দিষ্ট হবে,স্বামীকে তাহা আদায় করতেই হবে।
স্বামী দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে তার জিম্মায় বাকি থেকে যাবে।

স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ    

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥] 

তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫] 

وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ  [٦٠:١٠] 

তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
মোহর ধার্য করার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হলো- স্ত্রীর বংশে তার সমমানের নারীদের বাস্তবসম্মত মোহর এবং স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য—এ দুটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে মোহর নির্ধারণ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্ত্রীকে তা পরিশোধ করে দেওয়া।

(০২)
বিষয়টা যদি এমন হয় যে মোটা অংকের মোহরানা নির্ধারণ করা হলো, তারপর বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রী নিজেই সে মোহরানা কমিয়ে দিল, তাহলে বিষয়টি জায়েজ হবে।

এক্ষেত্রে স্ত্রী যতোটুকু কমিয়ে দিবে তা বাদে বাকি অংশ স্বামী আদায় করবে।

পরবর্তীতে তালাক হয়ে গেলেও স্ত্রী আবার কাবিননামায় লেখা পূর্ণ মোহরের দাবী করতে পারবেনা।

স্ত্রী যাহা কমিয়ে দিবে,তাহা কমিয়ে যাবে।

(০৩)
হ্যাঁ, ফরজ।

(০৪)
ইসলাম অনুমোদন করেনা।
ইসলাম প্রকারের অপচয় সমর্থন করে না।

(০৫)
এক বার বলাই যথেষ্ট। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...