আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
307 views
in সালাত(Prayer) by (31 points)

আসসালামু আলাইকুম। 

সলাত প্রসঙ্গে আমার কিছু প্রশ্ন নিচে করছি।

১. দুই রাকআত সলাতের মধ্যে প্রথম রাকআত শেষ করে উঠে দাঁড়ানোর পর সন্দেহ হলো, সিজদা ১টা হয়েছে, দুইটা হয়নি। এমতাবস্থায় আমি চলমান রাকআত শেষ করে দুইটি সিজদা দিয়ে আবার উঠে দাঁড়াই, এবং এক রাকআত বাড়তি আদায় করে তারপর শেষ বৈঠকে যাই। সাহু সিজদা আদায় করেছি। এই পদ্ধতি কি যথাযথ হয়েছে? নাকি অন্যভাবে করা উচিত? এক্ষেত্রে কি সলাত নতুন নিয়তে আবার আদায় করতে হবে? এই সমস্যা ৪ রাকআত সলাতের ক্ষেত্রে হলে মাসআলা কী হবে?

 

২. মাঝে মাঝে এমন সন্দেহ হয় যে, রুকু থেকে উঠে সোজা দাঁড়ানোর সময় তাকবির বলতে যেয়ে মনে হয় উচ্চারণ সঠিক হলো না। কোন অক্ষর বাদ গেছে এমন লাগে। যেমন "আল্লাহু আকবার" বলতে কাফ এর উচ্চারণ হয়নি। সিজদা বা রুকুর তাসবিহ বলতে যেয়ে মনে হয় যেন নুন এর উচ্চারণ হয়নি। এইরূপ সমস্যায় সলাতে কীভাবে সমাধান করতে হয়?

৩. ফজরের ওয়াক্ত শেষ পর্যায়ে এসে ঘুম ভাংলো, যখন সুন্নাত আদায় করতে গেলে ফরজের সময় পাওয়া যাবে না।  তখন দ্রুত উযু সেরে কি আগে ফরজ আদায় করে নেওয়া উচিত? নিষিদ্ধ সময় কেটে যাওয়ার পর কি আবার সুন্নাত আদায় করা উচিত?

৪. ফজর কাজা হয়ে গেলে কি সুন্নাত আর ফরজ দুইটাই আদায় করতে হয়? যদি কয়েকদিন আগের ফজরের সলাত হয় সেক্ষেত্রেও কি সুন্নাত আর ফরজ দুইটাই আদায় করতে হবে? 

৫. গোসল ফরজ থাকা অবস্থায় সলাতের একেবারে শেষ ওয়াক্ত পাওয়া গেলে, গোসলের সময় যদি না থাকে, গোসল করতে গেলে ওয়াক্ত পাওয়া যাবে না, এমতাবস্থায় কি শুধু উযু করেই আগে  সলাত আদায় করে নেওয়া উচিত? এই সলাত কি পরে আবার কাজাও করতে হয়?

৬. মুখ মন্ডলের কোথাও ক্ষত নিয়ে সলাতে দাঁড়ানোর পর যদি সন্দেহ হয় যে রক্ত ঝরছে কী না, তবে কি সলাত আদায় করা অবস্থায় আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে চোখে দেখে রক্তের চিহ্ন নিশ্চিত হওয়া যায়?

৭. আমি শুনেছি কেউ প্রাইভেট পার্টস স্পর্শ করলে উযু ভেঙে যায়। কিন্তু সলাতের মধ্যে যদি সন্দেহ হয় যে সাদা স্রাব নির্গত হয়েছে কি না, উযু ভাংলো কি না, তখন সালাম ফিরানোর পর যদি কেউ স্পর্শের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চায়, আর দেখে যে কিছু নির্গত হয়নি, তবে কি ওই একই উযুতে আবার সলাত আদায় করা যাবে? নাকি স্পর্শ করার কারণে আবার উযু করা জরুরি হবে?

 

৮. সলাতের মধ্যে মুখের উপর মশা বসলে হাত দিয়ে মেরে ফেলা যায়?

৯. মহিলাদের পায়ের পাতা যদি মুজা দিয়ে ঢাকা থাকে তবে কি সলাত আদায় করা যাবে? নাকি উপর থেকে ঝুলানো পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখা জরুরি? 

 

১০. পায়ের পাতা না ঢেকেও সলাত শুদ্ধ হতে পারে, এমন কথ কেউ বিশ্বাস করলে কি তার ঈমানের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব আসবে?

 

উপরোক্ত প্রশ্নগুলো নিয়ে অনেক সংশয়ে আছি। দয়া করে উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন।

জাযাকাল্লাহ খাইরান। 

1 Answer

0 votes
by (566,280 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো ভুলে নামাযের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে কিংবা কোনো ফরয বা ওয়াজিব বিলম্বিত হলে ওয়াজিব হয়। 

حدثنا حفص بن عمر، حدثنا يزيد بن إبراهيم، عن محمد، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: صلى النبي صلى الله عليه وسلم إحدى صلاتي العشي ـ قال محمد: وأكثر ظني العصر ـ ركعتين، ثم سلم، ثم قام إلى خشبة في مقدم المسجد، فوضع يده عليها، وفيهم أبو بكر وعمر رضي الله عنهما، فهابا أن يكلماه، وخرج سرعان الناس فقالوا: أقصرت الصلاة؟ ورجل يدعوه النبي صلى الله عليه وسلم ذا اليدين، فقال: أنسيتَ أم قصرت؟ فقال: لم أنس ولم تقصر. قال: بلى قد نسيتَ. فصلى ركعتين، ثم سلم، ثم كبر فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه فكبر، ثم وضع رأسه فكبر، فسجد مثل سجوده أو أطول، ثم رفع رأسه وكبر.
 
 আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিকালের দুই নামাযের এক নামায (বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন বলেন, আমার প্রবল ধারণা আসরের নামায) দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে দেন। তারপর মসজিদের সম্মুখে একটি কাষ্ঠ খণ্ডের কাছে গিয়ে এর উপর হাত রাখেন। মুসল্লীদের মধ্যে আবু বকর ও উমর রা.-ও ছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর সাথে কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। আর ত্বরাকারীরা বেরিয়ে বলতে লাগল, নামায কি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? এক ব্যক্তি যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল ইয়াদাইন বলে ডাকতেন, জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি ভুলে গেছেন না নামায কমিয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, আমি ভুলিনি আবার নামায কমিয়ে দেওয়াও হয়নি! লোকটি বলল, আপনি অবশ্যই ভুলে গেছেন। অতপর তিনি দুই রাকাত পড়ে সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর দিয়ে অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। তারপর মাথা নিচু করে তাকবীর দিলেন। তারপর অনুরূপ বা তার চেয়ে দীর্ঘ সেজদা করলেন। তারপর মাথা তুলে তাকবীর দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২২৯
,
শরীয়তের বিধান হলো যদি নামাজে ভুলে সেজদাহ, রুকু ছুটে  যায়,তাহলে স্বরন আসা মাত্র সেই সেজদাহ,রুকু আদায় করতে হবে।
শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। 
যদি নামাজের ভিতরেই উক্ত সেজদাহ রুকু আদায় না করে,তাহলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী {রশিদিয়্যাহ } ১/১২৭)

আরো জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত কাজ তথা সেজদাহ দুইটি হয়নি,একটি সেজদাহ হয়েছে,এটি আপনার সন্দেহ।
,
আপনি যে একটিই সেজদাহ আদায় করেছেন,এই বিষয়ে আপনার একীন তথা প্রবল ধারনা নেই।
,
নিছক সন্দেহ মাত্র।   
নামাজে এরকম সন্দেহ হলে যদি কোনো দিকেই একীন না হতে পারেন,তাহলে বিধান হলো নামাজে সন্দেহ আপনার কি এটাই জীবনের প্রথম?
নাকি মাঝে মাঝেই হয়।
,
যদি জীবনের প্রথম সন্দেহ হয়,তাহলে পুনরায় নামাজ আদায় করবেন।
,
আর যদি মাঝে মাঝেই এমন হয়,তাহলে কম যেটি সেটি ধরবেন।
তথা দুই সেজদাহ আদায় করেছেন নাকি এক সেজদাহ,
তাহলে কম যেটি (এক সেজদাহ) সেটি ধরে নিয়ে বাকি সেজদাহ আদায় করবেন। 
শেষে সেজদায়ে সাহু আদায় করবেন।      

বিস্তারিত জানুনঃ  
,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার ততক্ষনাৎ সেজদায়ে যাওয়া উচিত ছিলো,
কিন্তু আপনি যেহেতু সেটি না করে বরং বাড়তি এক রাকাত আদায় করেছেন,সুতরাং আপনি শেষ বৈঠক,যেটি ফরজ।
সেটি যেহেতু আদায় করেননি,তাই আপনার ফরজ নামাজ আদায় হয়নি।    
,
(দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ২য় রাকাতে বৈঠক করা,চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে ৪র্থ রাকাতে বৈঠক করা ফরজ।এটি আদায় না করলে নামাজই আদায় হবেনা। ) 
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত নামাজ আপনার আদায় হয়নি।
পুনরায় উক্ত নামাজ আদায় করতে হবে।     
,
যদি এটি ফরজ নামাজ না হয়ে নফল নামাজ হয়,সেক্ষেত্রে আপনারা নামাজ ছহীহ হয়নি।
যদি নফল নামাজ চার রাকাত বিশিষ্ট হয়ে থাকে,তাহলে ২য় রাকাতে আপনি বৈঠক করে থাকলে শুধু ঐ দুই রাকাত ছহীহ হবে।
বাকি রাকাত গুলো ফাসেদ হয়ে যাবে।

(০২)
নামাজের শুরুর তাকবির,যেটাকে তাকবিরে তাহরিমা বলা হয়,শুধু সেটিই ফরজ।
বাকি তাকবির বলা সুন্নাত। 
,
না বললেও নামাজ ছহীহ হয়ে যাবে।
,
তাই এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
উক্ত তাকবির আবার বলতে হবেনা। 
,
(০৩)
হ্যাঁ শুধু ফরজ নামাজ আদায় করবেন।

ফজরের সুন্নাত কাযা হয়ে গেলে সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে নিয়ে জোহরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত (নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতিত) পড়া যাবে।  

এর পরও যদি পড়া না হয়,তাহলে আর সেটার কাযা আদায় করার সুযোগ নেই।
(ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী ১/১১২)

হাদীস শরীফে এসেছে    

وفى جامع الترمذى- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من لم يصل ركعتي الفجرفليصلهمابعد ما تطلع الشمس (جامع الترمذى-أبواب الصلاةعن رسول الله صلى الله عليه وسلم، باب ماجاءفي إعادتهمابعدطلوع الشمس،رقم-423)

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেন-যে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত (সময়মতো) পড়ল না সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে। ( জামে তিরমিজী-১/৯৬)

আরো জানুনঃ
,
(০৪)
ফজর নামাজের শুধু ঐ দিনের সুন্নাত কাজা করার বিধান এসেছে।
যদি কয়েকদিন আগের ফজরের সলাত হয় সেক্ষেত্রে  সুন্নাত আর ফরজ দুইটাই আদায় করতে হবেনা।
শুধু ফরজের কাজা আদায় করবেন।
,
(০৫)
এক্ষেত্রে আপনার উপর যেহেতু গোসল ফরজ,তাই গোসলই করতে হবে।
,
শুধু অযু করলে আপনি পাক হবেননা,আপনার শরীর নাপাকই থাকবে।
আর নাপাক শরীর নিয়ে নামাজ পড়া মারাত্মক অপরাধ।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত কাজ কোনো ভাবেই জায়েজ নেই।
সময় থাকুক বা না থাকুক,আপনার জন্য গোসল ছাড়া নামাজ পড়া কোনোভাবেই জায়েজ নেই।   
.
(০৬)
যদি অন্য কোনোভাবে রক্তের চিহ্ন নিশ্চিত হতে না পারেন,তাহলে এক হাত দিয়ে অল্প সময়ে (কয়েক সেকেন্ড) নিশ্চিত হওয়ার জন্য ব্যবহার করলে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা। 
,
(০৭)
হানাফি মাযহাব মোতাবেক সরাসরি নিজ লজ্জাস্থানে হাত দিলেও অযু ভাঙ্গেনা।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে অযু থাকবে।
কোনো সমস্যা নেই।
,
তবে ইমাম শাফেয়ী রহঃ সহ আরো কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে অযু ভেঙ্গে যাবে।
সুতরাং তাদের মতানুসারীগনদের নতুন ভাবে অযু করতে হবে। 
,
(০৮)
আমলে কাছির না হলে নামাজ ভেঙ্গে যাবেনা।
এক হাত দিয়ে অল্প সময়ে একাজ করা যাবে।
নামাজ ভঙ্গ হবেনা।              
,
আমলে কাছির সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০৯)
পায়ে মোজা থাকলেও নামাজ পড়া যাবে।
কোনো সমস্যা নেই।
,
(১০)
নামাজে চেহারা,উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত অংশ,  পায়ের পাতা খোলা রাখা জায়েজ আছে। 
এতে কোনো সমস্যা নেই।     
এটাই শরীয়তের বিধান।   
,
নামাজে পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। মহিলাদের মুখমণ্ডল, দুই হাত কবজি পর্যন্ত ও টাখনুর নিচে পায়ের পাতা ছাড়া সব অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ। 
(ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১০৬)।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 142 views
...