যদি বেহুশ অবস্থায় কারো পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার চেয়ে বেশি নামায কা'যা হয়ে যায়,তাহলে উনি আর শরীয়তের মুকাল্লাফ থাকবেন না।তবে যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পূর্বেই হুশ চলে আসে,তাহলে উনি শরীয়তের মুকাল্লাফ থাকবেন। যথাসম্ভব নামায আদায়ের চেষ্টা করবেন,নতুবা কাফফারা আদায়ের অসিয়ত করে যাবেন।নিজ জীবদ্দশায় নামাযের কাফ্ফারা আদায় করা সমুচিত নয়।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৫/৫১১)
নামাজি অসুস্থ হলে এবং দাঁড়াতে অপারগ হলে তাকে চতুষ্পদ (চারজানু) হয়ে বসে অথবা তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় বসে নামাজ আদায় করতে হবে।
যদি বসেও আদায় করতে অক্ষম হয় তবে ডান পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে। তাও যদি কষ্টকর হয় তবে বাম পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
এ ভাবেও যদি নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, তবে কিবলার দিকে পা দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে মাথা দ্বারা বুকের দিকে ইশারা করে রুক ও সিজদা আদায় করবে। তবে সিজদার সময় রুকুর চেয়ে একটু বেশি মাথা ঝুকাবে।
সর্বোপরি জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো নামাজির নামাজ মাফ হবে না। অসুস্থ ব্যক্তি তার সুবিধা মতো নামাজ আদায় করবে।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের বিবরণ দিয়েছেন-
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ((صلِّ قائمًا، فإن لم تستطع فقاعدًا، فإن لم تستطع فعلى جنب
رواه البخاري في أبواب تقصير الصلاة، باب إذا لم يُطِقْ قاعدًا 1/ 376 (1066)
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অশ্ব রোগ ছিল, তাই এ অবস্থায় কিভাবে নামাজ আদায় করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার তবে বসে কর, তাও যদি না পার তাহলে এক পার্শ্বের উপর আদায় কর।’ (বুখারি ১/৩৭৬)
,
যে ব্যক্তি ইশারায় রুকু-সিজদা করবে, সে রুকু থেকে সিজদাতে সামান্য বেশি ঝুঁকবে। অন্যথায় নামাজ সহিহ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৭৬)
,
অসুস্থতার কারণে বসে নামাজ পড়তে অপারগ হলে, শুয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ পড়বেন। তখন অসুস্থ ব্যক্তির পা কিবলার দিকে করে শোয়াতে হবে। তবে মাথাকে সামান্য ওপরে তুলে শোয়র ব্যবস্থা করতে হবে, যেন চেহারা কিবলার দিকে হয়। এরপর ইশারা করে রুকু-সিজদা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৭৩)
শুধুমাত্র মাথা দিয়ে ইশারা করলেও তা রুকু-সিজদার স্থলাভিষিক্ত বলে বিবেচিত হবে। ইশারা কেবল চোখ বা অন্তরে করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস নং: ৩৭১৯)
অসুস্থ ব্যক্তি মাথার মাধ্যমে ইশারা করতে অক্ষম হলে, তার অবস্থা বিবেচনা করা হবে। তখন দেখতে হবে, এভাবে তিনি কতক্ষণ থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে, তাহলে ওই সব নামাজ মাথা দিয়ে ইশারা করে কাজা করে নেবে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় পার হওয়ার পরও উন্নতি না হয়, তবে ওই সব নামাজ তার দায়িত্বে আর থাকবে না। অর্থাৎ এগুলো আদায় করা লাগবে না। (মুআত্তা মুহাম্মদ, হাদিস নং: ২৭৮, দারা কুতনি, হাদিস নং: ১৮৮৩)
,
"إن تعذر الإیماء برأسه أخرت الصلاة فلا سقط عنه؛ بل یقضیها إذا قدر علیها، ولوکانت أکثر من صلاة یوم ولیلة إذا کان مضیقًا وهو الصحیح، کما في الهدایة. وفي الخانیة: الأصح أنه لایقضي أکثر من یوم ولیلة کالمغمیٰ علیه، وهو ظاهر الروایة، وهذا اختیار فخر الإسلام، وشیخ الإسلام. وفي الخلاصة: وهو المختار؛ لأن مجرد العقل لایکفي لتوجه الخطاب. وفي التنویر: وعلیه الفتویٰ، ولایومئ بعینیه ولابحاجبیه ولابقلبه؛ لما روینا، وفیه خلاف زفر". (مجمع الأنهر، کتاب الصلاة، باب صلاة المریض، دار الکتب العلمیة بیروت ۱/۲۲۹)
সারমর্মঃ যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এমন হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবেনা।
প্রশ্নে উল্লেখিত সময় গুলোতে তিনি যদি একেবারেই বেহুশ হয়ে থাকেন,শুয়ে থেকে ইশারা করেও নামাজ আদায়ে অক্ষম হোন,সেক্ষেত্রে তার উক্ত নামাজ গুলির ফিদইয়াহ করতে হবেনা।
হ্যাঁ যদি সেই সময়ে তিনি বেহুশ না হয়ে থাকেব,সেক্ষেত্রে এই ১০ বছরের ফরজ ও বিতর নামাজের ফিদইয়াহ আদায় করতে হবে।
প্রতিটি নামাজ+প্রতিটি রোযার জন্য একটি সদকায়ে ফিতর সমপরিমাণ টাকা গরিব মিসকিনকে দান করে দিতে হবে।