জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমেই আমরা অসুস্থ ব্যাক্তির নামাজের কিছু মাসআলা জেনে নেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
হযরত ইবনে রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ، ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : " ﻳﺼﻠﻲ ﺍﻟﻤﺮﻳﺾ ﻗﺎﺋﻤﺎ ، ﻓﺈﻥ ﻧﺎﻟﺘﻪ ﻣﺸﻘﺔ ﺻﻠﻰ ﺟﺎﻟﺴﺎ ، ﻓﺈﻥ ﻧﺎﻟﺘﻪ ﻣﺸﻘﺔ ﺻﻠﻰ ﻧﺎﺋﻤﺎ ﻳﻮﻣﺊ ﺑﺮﺃﺳﻪ ، ﻓﺈﻥ ﻧﺎﻟﺘﻪ ﻣﺸﻘﺔ ﺳﺒﺢ "
অসুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়ে দাড়িয়ে নামাজ পড়বে।যদি দাড়াতে কষ্ট হয়,তাহলে বসে বসে নামায পড়বে।যদি বসে বসে নামায পড়তে কষ্ট হয়,তাহলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তার মাথা দ্বারা ইশারা করে সে নামায আদায় করবে।যদি তারপরও তার কোনো প্রকার কষ্ট হয়,তাহলে সে যিকির করবে।(এ'লাউস-সুনান-৭/১৭৪)
যে ব্যক্তি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে সর্বশেষ ইশারার মাধ্যমেও নামায আদায় করতে অক্ষম।এবং সুস্থতার আশা প্রায় গৌণ।এমন ব্যক্তি শরীয়তের বিধি-বিধানের মুকাল্লাফ নয়।অর্থা ঐ ব্যক্তির যিম্মা থেকে নামায-কে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৭/৫৪৫)
আরো জানুনঃ
যদি বেহুশ অবস্থায় কারো পাঁচ ওয়াক্ত নামায বা তার চেয়ে বেশি নামায কা'যা হয়ে যায়,তাহলে উনি আর শরীয়তের মুকাল্লাফ থাকবেন না।তবে যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পূর্বেই হুশ চলে আসে,তাহলে উনি শরীয়তের মুকাল্লাফ থাকবেন। যথাসম্ভব নামায আদায়ের চেষ্টা করবেন,নতুবা কাফফারা আদায়ের অসিয়ত করে যাবেন।নিজ জীবদ্দশায় নামাযের কাফ্ফারা আদায় করা সমুচিত নয়।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৫/৫১১)
নামাজি অসুস্থ হলে এবং দাঁড়াতে অপারগ হলে তাকে চতুষ্পদ (চারজানু) হয়ে বসে অথবা তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় বসে নামাজ আদায় করতে হবে।
যদি বসেও আদায় করতে অক্ষম হয় তবে ডান পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে। তাও যদি কষ্টকর হয় তবে বাম পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
এ ভাবেও যদি নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, তবে কিবলার দিকে পা দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে মাথা দ্বারা বুকের দিকে ইশারা করে রুক ও সিজদা আদায় করবে। তবে সিজদার সময় রুকুর চেয়ে একটু বেশি মাথা ঝুকাবে।
সর্বোপরি জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো নামাজির নামাজ মাফ হবে না। অসুস্থ ব্যক্তি তার সুবিধা মতো নামাজ আদায় করবে।হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের বিবরণ দিয়েছেন-
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ((صلِّ قائمًا، فإن لم تستطع فقاعدًا، فإن لم تستطع فعلى جنب
رواه البخاري في أبواب تقصير الصلاة، باب إذا لم يُطِقْ قاعدًا 1/ 376 (1066)
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অশ্ব রোগ ছিল, তাই এ অবস্থায় কিভাবে নামাজ আদায় করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার তবে বসে কর, তাও যদি না পার তাহলে এক পার্শ্বের উপর আদায় কর।’ (বুখারি ১/৩৭৬)
,
যে ব্যক্তি ইশারায় রুকু-সিজদা করবে, সে রুকু থেকে সিজদাতে সামান্য বেশি ঝুঁকবে। অন্যথায় নামাজ সহিহ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৭৬)
,
অসুস্থতার কারণে বসে নামাজ পড়তে অপারগ হলে, শুয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ পড়বেন। তখন অসুস্থ ব্যক্তির পা কিবলার দিকে করে শোয়াতে হবে। তবে মাথাকে সামান্য ওপরে তুলে শোয়র ব্যবস্থা করতে হবে, যেন চেহারা কিবলার দিকে হয়। এরপর ইশারা করে রুকু-সিজদা করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৭৩)
শুধুমাত্র মাথা দিয়ে ইশারা করলেও তা রুকু-সিজদার স্থলাভিষিক্ত বলে বিবেচিত হবে। ইশারা কেবল চোখ বা অন্তরে করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (সুনানে কুবরা, হাদিস নং: ৩৭১৯)
অসুস্থ ব্যক্তি মাথার মাধ্যমে ইশারা করতে অক্ষম হলে, তার অবস্থা বিবেচনা করা হবে। তখন দেখতে হবে, এভাবে তিনি কতক্ষণ থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর যদি অবস্থার উন্নতি ঘটে, তাহলে ওই সব নামাজ মাথা দিয়ে ইশারা করে কাজা করে নেবে। আর যদি এর চেয়ে বেশি সময় পার হওয়ার পরও উন্নতি না হয়, তবে ওই সব নামাজ তার দায়িত্বে আর থাকবে না। অর্থাৎ এগুলো আদায় করা লাগবে না। (মুআত্তা মুহাম্মদ, হাদিস নং: ২৭৮, দারা কুতনি, হাদিস নং: ১৮৮৩)
,
"إن تعذر الإیماء برأسه أخرت الصلاة فلا سقط عنه؛ بل یقضیها إذا قدر علیها، ولوکانت أکثر من صلاة یوم ولیلة إذا کان مضیقًا وهو الصحیح، کما في الهدایة. وفي الخانیة: الأصح أنه لایقضي أکثر من یوم ولیلة کالمغمیٰ علیه، وهو ظاهر الروایة، وهذا اختیار فخر الإسلام، وشیخ الإسلام. وفي الخلاصة: وهو المختار؛ لأن مجرد العقل لایکفي لتوجه الخطاب. وفي التنویر: وعلیه الفتویٰ، ولایومئ بعینیه ولابحاجبیه ولابقلبه؛ لما روینا، وفیه خلاف زفر". (مجمع الأنهر، کتاب الصلاة، باب صلاة المریض، دار الکتب العلمیة بیروت ۱/۲۲۹)
সারমর্মঃ যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এমন হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবেনা।
"قال بعضهم: إن زاد عجزه علی یوم ولیلة لایلزمه القضاء، وإن کان دون ذلك یلزمه کما في الإغماء، وهو الأصح، والفتوی علیه". (الفتاوى الهندیة، کتاب الصلاة، الباب الرابع عشر في صلاة المریض، (۱/۱۹۷)
সারমর্মঃ যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এই ওযর (ইশারা করেও নামাজ আদায় করতে অক্ষম) হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবেনা।
"عن عمران بن حصین رضي اللّٰه عنه قال: کان بي الناصور، فسألت النبي صلی اللّٰه علیه وسلم فقال: صل قائماً، فإن لم تستطع فقاعداً، فإن لم تستطع فعلی جنب". (سنن أبي داؤد، الصلاۃ / باب صلاۃ القاعد ۱؍۱۴۴)
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার তবে বসে কর, তাও যদি না পার তাহলে এক পার্শ্বের উপর আদায় কর।’
.
وإن تعذر القعود ولو حکما أومأ مستلقیا علی ظہرہ ورجلاہ نحو القبلة غیر أنہ ینصب رکبتیہ لکراہة مد الرجل إلی القبلة ویرفع رأسہ یسیرا لیصیر وجہہ إلیہا ․․․ وإن تعذر الإیماء برأسہ وکثرت الفوائت بأن زادت علی یوم ولیلة سقط القضاء عنہ وإن کان یفہم فی ظاہر الروایة وعلیہ الفتوی کما في ظاہر الروایة الخ (درمختار مع الشامي: ۲/ ۵۶۹، وبعدہ، ط: زکریا، باب صلاة المریض) وفیہ (۲/ ۵۷۰) في البحر عن القنیة: ولا فدیة في الصلوات حالة الحیاة بخلاف الصوم الخ․
সারমর্মঃ যদি এক দিন এক রাতের নামাজ থেকেও বেশি সময় ধরে এই ওযর (ইশারা করেও নামাজ আদায় করতে অক্ষম) হয়, তাহলে তার আর কাজা আদায় করতে হবেনা।
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বাবা যে স্টোক করে অসুস্থ হয়ে যায় এবং তাকে ক্যাথেটার লাগাতে হয়। সে অবস্থায় সে তিনদিন ছিল, তার সেন্স ছিল কিন্তু নামাজ পড়ার অবস্থায় ছিল না।
,
এই সময়ে যদি সে ইশারা করেও নামাজ পড়ার শক্তি না রেখে থাকে,তাহলে তার ফিদিয়াহ দিতে হবেনা।
আর যদি তার ইশারা করে নামাজ পড়ার শক্তি ছিলো বলে জানা যায়,তাহলে সেই কয়দিনের নামাজের ফিদিয়াহ দিতে হবে।
★বিতরসহ প্রতি ওয়াক্ত নামায হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতির এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতাওয়া শামী-২/৭২)
সহজ কথায়, প্রতিটি নামাযের জন্য সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা গরীবকে দান করে দিতে হবে।
,
★এরপর আপনার বাবা সেন্স লেস হয়ে অক্সিজেন দেওয়া অবস্থায় দুইদিন ছিল।
সেই দুইদিনের নামাজের কোনো ফিদিয়াহ দিতে হবেনা।
,
তারপর সেন্স ফিরে কথাবার্তা বলতে পারত, বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে পারত কিন্তু নিজে নিজে উঠতে বা কিছু করতে পারতো না। খাওয়া নাকে নল দিয়ে চলত এবং ক্যাথেটার পড়ানো থাকত। এই অবস্থায় ২৫ দিন ছিল।
,
এই ২৫ দিন যদি তিনি ইশারা করেও নামাজ পড়ার শক্তি না রেখে থাকে,তাহলে তার ফিদিয়াহ দিতে হবেনা।
আর যদি তার ইশারা করে নামাজ পড়ার শক্তি ছিলো বলে জানা যায়,তাহলে সেই ২৫ দিনের নামাজের ফিদিয়াহ দিতে হবে।