আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার ইচ্ছে হলো বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিয়ে
(১) আমার প্রথম প্রশ্ন হলো, এই দায়িত্ব কীভাবে একাধিক ভাই-বোনের মধ্যে ভাগ হবে?
(i) এটা কি সবার ওপরে সমানভাবে ন্যাস্ত,
(ii) নাকি ভাইদের ওপর দ্বিগুণ, বোনদের ওপর একগুণ এভাবে ন্যাস্ত,
(iii) নাকি ভাইবোনদের একজন বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিতে সক্ষম হলেই, বাকিদের ওপর আর ন্যাস্ত হয়না,

(iv) নাকি ন্যুনতম ভাগ সবারই সমান, তারপরে যে যতটুকু পারে। সেক্ষেত্রে এক ভাই যদি এতোটা ধনী হয় যে, বাবা-মায়ের সব চাহিদা পূরণ করে বিলাসিতাও করাতে পারছেন, তারপরও আরেক ভাই/বোনের ওপর ন্যুনতম খরচ দেওয়া কি বাধ্যতামূলক?
আমি যতদূর জানি, একজন বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই। আমার দ্বিতীয় প্রশ্নটা কন্যা এবং স্ত্রী হিসেবে মেয়েদের দিক থেকে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে।

(২)কোনো মেয়ে যদি তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর সংসার থেকে কিছুটা ছাড় চায়, তাহলে তার অনুমতি না দেওয়ার অধিকার কি স্বামীর আছে? নাকি এক্ষেত্রে স্বামীর কোনো অনুমতি স্ত্রীর প্রয়োজন নেই।  যেমন:

(i) বাবা - মায়ের সেবাযত্নের জন্য তাদের এলাকায় গিয়ে থাকা এবং স্বামীকে কয়েক মাস পরপরই শুধুমাত্র কয়েকদিন করে সময় দেওয়া।
(ii) বাবা - মায়ের ভরণপোষণের জন্য চাকুরীতে জয়েন করা, সেজন্য পরিবারে সন্তানদের, স্বামীকে কম সময় দেওয়া বা চাকুরীর জন্য স্বামীর থেকে দূরে অবস্থান করা।

এসব সিচুয়েশনে স্বামীর কী করা উচিত আর স্ত্রীর কী করা উচিত?
(৩) বিশেষ করে, নিজের বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য স্ত্রী যদি চাকুরী করে কিন্তু সেটা তার স্বামীর পছন্দনীয় না হয়, তাহলে স্বামীর এখানে কী করা উচিত, স্ত্রীর এখানে কী করা উচিত?
(৪) বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য যদি চাকুরী করতে গিয়ে স্ত্রীকে স্বামীর থেকে দূরে থাকতে হয় এবং এক্ষেত্রে বাবা-মাও যদি কন্যা হিসেবে তাদের মেয়ের কাছে এভাবে দূরে থেকে চাকুরী করতেই আদেশ করে, তাহলে স্বামীর এখানে কী করা উচিত আর স্ত্রীর এখানে কী করা উচিত???


(৫) একই কাজে একজন স্ত্রীকে যদি তার বাবা-মা একরকম আদেশ করেন আর স্বামী আরেকরকম আদেশ করেন, দুটোর কোনোটাই বেশি ভালো বা খারাপ না হয়, তাহলে স্ত্রীর কোন আদেশটা মেনে চলা উচিত?.


৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নটার উত্তর একটু বিশেষভাবে জানতে চাচ্ছি।

1 Answer

0 votes
by (713,800 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
সন্তানের উপর পিতা-মাতার খোরপোষ কখন ওয়াজিব হবে?
(وَ) تَجِبُ (عَلَى مُوسِرٍ) وَلَوْ صَغِيرًا (يَسَارَ الْفِطْرَةِ) عَلَى الْأَرْجَحِ وَرَجَّحَ الزَّيْلَعِيُّ وَالْكَمَالُ إنْفَاقَ فَاضِلِ كَسْبِهِ.
গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী সচ্ছল, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক সন্তানের উপর উপর মাতা-পিতার নাফক্বাহ ওয়াজিব হবে।ইমাম যাইলায়ী, ও আল-কামাল রাহ. দৈনন্দিন রোজগারের অতিরিক্ত উপার্জনকে (পিতা-মাতার জন্য খরছ করবে অন্য কিছু নয়) অগ্রাধিকার দেন।(দুর্রুল মুখতার৩/৬২১)

অন্যত্র এসেছে,
إلَّا إذَا كَانَ الْأَصْلُ زَمِنًا لَا كَسْبَ لَهُ، فَلَا يُشْتَرَطُ سِوَى قُدْرَةِ الْوَلَدِ عَلَى الْكَسْبِ
কিন্তু যদি পিতা-মাতা বার্ধক্যর ধরুণ দুর্বল,রোগগ্রস্ত হন।যদ্দরুন উপার্জন করতে অক্ষম হন।তাহলে সন্তান উপার্জন সক্ষম হলেই তার উপর পিতা-মাতার নাফক্বাহ দেওয়া ওয়াজিব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- 3712 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) একাধিক ভাই-বোনের মধ্যে যারা সচ্ছল, যাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকা থাকবে, তাদের উপর মাতাপিতার ভরণপোষণ ওয়াজিব। যদি একাধিক সন্তান সচ্ছল থাকে, তাহলে তাদের সবার উপর সমানভাবে ওয়াজিব। 
(i) সচ্ছল ও সামর্থবান সন্তানদের উপর মাতাপিতার ভরণপোষণ সমানভাবে ওয়াজিব।
(ii) ছেলে মেয়ের কোনো তফাৎ নাই যদি তারা সবাই ব্যক্তিগতভাবে সচ্ছল থাকে। 
(iii) ছেলে মেয়ের মধ্যে কোনো একজন বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দিতে সক্ষম হলে, বাকিদের ওপর থেকে রহিত হবে না। বরং সবাই সমানভাবে মাতাপিতার দেখাশোনা করবে।

(iv) মাতাপিতাকে ভরণপোষণ দেওয়া সামর্থবান সকল সন্তানদের উপর সমানভাবে বর্তাবে। তবে মেয়েদের যেহেতু নিজস্ব কোনো ইনকাম থাকে না, তাই মেয়েদের উপর ওয়াজিব হবে না।

(২) বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য কোনো মেয়ে যদি স্বামীর সংসার থেকে কিছুটা ছাড় চায়, তাহলে তার অনুমতি না দেওয়ার অধিকার স্বামীর থাকবে। 

(i) বাবা-মায়ের সেবাযত্নের জন্য তাদের এলাকায় গিয়ে থাকা এবং স্বামীকে কয়েক মাস পরপরই শুধুমাত্র কয়েকদিন করে সময় দেওয়া,স্বামীর অনুমতি ব্যতিত এমনটা জায়েয হবে না। বরং সাপ্তাহে একবার মাতাপিতাকে গিয়ে দেখে আসবে পারবে, এক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি লাগবে না।

(ii) বাবা - মায়ের ভরণপোষণের জন্য চাকুরীতে জয়েন করা, সেজন্য পরিবার,সন্তান,স্বামীকে সময় কম দেওয়া বা চাকুরীর জন্য স্বামীর থেকে দূরে অবস্থান করাও স্বামীর অনুমতির উপর নির্ভর করবে। বেপর্দা চাকুরী তো কখনো জায়েয হবে না।

এমন পরিস্থিতিতে স্বামীর উচিৎ স্ত্রীর মাতা-পিতাকে দেখভাল করা। এবং স্ত্রীর উচিৎ স্বামীকে সামর্থ্যর অধিক চাপ প্রয়োগ না করা। এবং বেপর্দা চাকুরী থেকে দূরে থাকা।


(৩) স্ত্রী যদি নিজ বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য চাকুরী করে কিন্তু সেটা তার স্বামীর পছন্দনীয় না হয়, তাহলে স্ত্রীর উচিত স্বামীর পছন্দ অপছন্দকে অত্যান্ত গুরুত্বসহকারে দেখা এবং বেপর্দার চাকুরী থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা।

(৪) বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য যদি চাকুরী করতে গিয়ে স্ত্রীকে স্বামীর থেকে দূরে থাকতে হয় এবং এক্ষেত্রে বাবা-মাও যদি কন্যা হিসেবে তাদের মেয়ের কাছে এভাবে দূরে থেকে চাকুরী করতেই আদেশ করে, স্বামীর উচিত স্ত্রীকে এভাবে চাকুরীর অনুমোদন না দেয়া বরং স্ত্রীর মাতাপিতাকে দেখভাল করা। এবং স্ত্রীর  উচিত এরকম কোনো পদক্ষেপের ধারেকাছেও না যাওয়া।

(৫) প্রশ্নের বিবরণমতে স্ত্রী স্বামীর আদেশ মানতে বাধ্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...