আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,504 views
in সালাত(Prayer) by (24 points)
আসসালামুআলাইকুম। নামাজ লম্বা করার জন্য নামাজ পড়ার সময় হাতে মুসহাফ নিয়ে দেখে দেখে তিলওয়াত করা যাবে?

1 Answer

0 votes
by (671,200 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


নামাজে কুরআন দেখে পড়া জায়েজ নেই।  

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন,
: نَہَانَا أمیرُ المُوٴمِنِیْنَ عُمَرُ رضی اللّٰہ عنہ أَن یَوٴُمَّ النَّاسَ فِي الْمُصْحَفِ، وَنَہَانَا أَن یَّوٴُمَّنَا اِلَّا الْمُحْتَلِمُ․
অর্থাৎ আমিরুল মুমিনীন ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ইমাম সাহেবকে নামাযে কোরআন দেখে পড়তে নিষেধ করেছেন৷ কিতাবুল মুসহাফ, ইমাম আবু দাউদ লিখিত, হাদিস নং ১৮৯)
,
এই বিষয় শায়েখ রেজাউল করিম আবরার হাফিঃ কিছু দলিল জমা করেছেনঃ
 
কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বিখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
إِذَا کَانَ مَعَہُ مَا یَقُوْمُ بِہِ لَیْلَہُ رَدَّدَہُ وَلاَ یَقْرَأُ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ কেউ যদি কিয়ামুল লাইলে পড়ার মতো সামান্য কোরআন মুখস্থ থাকে, তাহলে সেটা বারবার পড়বে৷ তারপরও কোরআন দেখে পড়বে না৷

লাইস রাহিমাহুল্লাহ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ এর ব্যাপারে বলেন,
أنَّہُ کَانَ یَکْرَہُ أَنْ یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ یَعْنِيْ أَنْ یَّوٴُمَّہُمْ فِي الْمُصْحَفِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য রেখে তিনি নামাযে কোরআন দেখে পড়াকে মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন৷

আমাশ ইবরাহিম নাখাঈ থেকে বর্ণনা করেন,
کَانُوْا یَکْرَہُوْنَ أَنْ یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ فِي الْمُصْحَفِ کَرَاہِیَةً شَدِیْدَةً أَن یَّتَشَبَّہُوْا بِأَہْلِ الْکِتَابِ“
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম নামাযে কোরআন দেখে পড়াকে মারাত্মক অপছন্দ করতেন আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে (বক্তব্যগুলো ইমাম আবু দাউদ কিতাবুল মাসাহিফে উল্লেখ করেছেন৷ হাদিস নং ১৮৯, ১৯০, ১৯১)

খতীবে বাগদাদী রাহিমাহুল্লাহ তারিখে বাগদাদ এ আম্মার বিন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুর আছার উল্লেখ করেছেন৷
: عَنْ عَمَّارِ بْنِ یَاسِرٍ کَانَ یَکْرَہُ أَن یَّوٴُمَّ الرَّجُلُ النَّاسَ بِاللَّیْلِ فِيْ شَہْرِ رَمَضَانَ فِي الْمُصْحَفِ ہُوَ مِنْ فِعْلِ أَہْلِ الْکِتَابِ
অর্থাৎ আহলে কিতাবদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণে রমযানের রাতের নামাযে কোরআন দেখে ইমামতি করাকে তিনি মাকরূহ বলেছেন (তারিখে বাগদাদ : ৮/১২০)

 আয়শা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার হাদীসের ব্যাপারে শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وما ذکر عن ذکوان حادثة عین لا عموم لہا
অর্থাৎ জাকওয়াম এর ঘটনা একটি বিশেষ ঘটনা৷ এটা ব্যাপক বিষয় নয়৷ (ফাতহুর রাহমান : ১২৩)

ইমাম কাসানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وأما حدیث ذکوان فیحتمل أن عائشة ومن کان من أہل الفتوی من الصحابة لم یعلموا بذلک وہذا ہو الظاہر بدلیل أن ہذا الصنیع مکروہ بلا خلاف ولو علموا بذلک لما مکنوہ من عمل المکروہ في جمیع شہر رمضان من غیرحاجة، ویَحْتَمِلُ أن یکون قول الراوي کان یوٴم الناس في شہر رمضان وکان یقرأ من المصحف إخبارا عن حالتین مختلفین أي کان یوٴم الناس في رمضان وکان یقرأ من المصحف في غیر حالة الصلاة
অর্থাৎ সম্ভবত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা সে বিধান জানতেন না৷ জানলে তিনি এমনটা করতেন না৷ অথবা বর্ণাকারীর কথা দ্বারা এটাও উদ্দেশ্য হতে পারে যে, তিনি রমযানের দুটি অবস্থা বর্ণনা করেছেন৷ তিনি রমযানে ইমামতি করতেন এবং নামাযের বাহিরে কোরআন দেখে পড়তেন (বাদায়িউস সানায়ে : ২/১২৩)
,
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ আয়শা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে এ সংক্রান্ত একটি আছার নকল করেছেন৷ সেখানে কোরআন দেখে পড়ার কথা নেই৷

عن ابن أبي ملیکة أنہم کانوا یأتون عائشة بأعلی الوادي ہو وعبید بن عمیر والمسور بن مخرمة وناس کثیر فیوٴمہم أبو عمر و مولی عائشة، وأبو عمر وغلامہا حینئذ لم یعتق․

ইবনে আবী মুলাইকা বর্ণনা করেন, তিনি, মিসওয়ার বিন মাখরামা এবং আরও অনেক মানুষ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার কাছে আসেন৷ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার গোলাম আবু আমর ইমামতি করেন (আত তালখিসুল হাবির: ,২/১১০)

শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি রাহিমাহুল্লাহ’র বক্তব্য তুলে ধরছি৷ তিনি বলেন,
لا نری ذلک، وما ذکر عن ذکوان حادثة عین لاعموم لہا، وبإباحة ذلک لأئمة المساجد یوٴدي بہم إلی ترک تعاہد القرآن والعنایة بحفظہ غیبا وہذا خلاف قولہ صلی اللہ علیہ وسلم: تعاہدوا القرآن فوالذي نفسي بیدہ لہو أشد تفصیا من الإبل في عقلہا، ومعلوم أن للوسائل حکم الغایات کقولہم مالا یقوم الواجب إلا بہ فہو واجب وما یوٴدي إلی معصیة فہو معصیة

অর্থাৎ আমি এটাকে জায়েজ মনে করি না৷ আর জাকওয়ানের ঘটনা একটি বিশেষ অবস্থার, ব্যাপক বিধান নয়৷ এটাকে জায়েজ বললে মসজিদের ইমামরা কোরআন মুখস্থ করা ধীরে ধীরে বাদ দিতে থাকবে৷ আর এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসবিরোধী৷ আর শরিয়তে যে কাজ গুনাহের দিকে ধাবিত করে, সেটাও গুনাহ৷ (ফাতহুর রহমান : ১২৫)
,
★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,নামাজে কুরআন দেখে পড়া জায়েজ নেই।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত ""নামাজ লম্বা করার জন্য নামাজ পড়ার সময় হাতে মুসহাফ নিয়ে দেখে দেখে তিলওয়াত করা যাবেনা।
এটি নাজায়েজ। 
এতে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
,   
★তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে নামাজে কুরআন দেখে পড়া জায়েজ আছে।    
তাদের মতানুসারীগন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারেন।
কোনো সমস্যা নেই।     
,
কারন এই মতটির স্বপক্ষেও হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

হযরত আয়েশা রাঃ এর আযাদকৃত গোলাম যাকওয়ান রমযানে (তারাবীতে) দেখে দেখে কুরআন পাঠ করে তাঁর ইমামতি করতেন। 
(মালেক, মুঅত্তা, ইবনে আবী শাইবা ৭২১৫, ৭২১৬, ৭২১৭ নং)

হযরত আনাস (রাঃ) নামাযে ক্বিরাআত পড়তেন আর তাঁর গোলাম তাঁর পশ্চাতে মুসহাফ ধরে দাঁড়াতেন। তিনি কিছু ভুলে গেলে গোলাম ভুল ধরিয়ে দিতেন। (ইবনে আবী শাইবা ৭২২২ নং)

ইমাম হাসান, মুহাম্মদ, আত্বা প্রমুখ সলফগণ এরূপ (প্রয়োজনে) বৈধ মনে করতেন। (ইবনে আবী শাইবা ৭২১৪, ৭২১৮, ৭২১৯, ৭২২০, ৭২২১ নং)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...