আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
হুজুর,
আমার স্বামী একজন শিক্ষক। তাবলীগ জামাতে এখনও জুড়ে নি।দীনের বিষয়ে আমাকে অনেক সহযোগিতা করে।কিন্তু তার জরুরী আমলের উন্নতি কম।পূর্ণ পর্দা মেনে চলেন না।আলহামদু লিল্লাহ, আমি পূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে সাধারণভাবে সাহায্য করে,আলহামদু লিল্লাহ,জাযাহুল্লাহ। কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যা হয়।যেমন-
১.একদিন শিক্ষক সন্ধ্যা নামে সব শিক্ষক-শিক্ষিকারা পুরো পরিবারসহ সাক্ষাৎ করেছেন।গান বাজনা হয়েছে কম হলেও। সেখানে সে নিয়ে গেছে আমাকে।কয়েকজন স্যারদের সাথে আমাকে কুশল বিনিময় করতে হয়েছে।আমি প্রায় পুরোটা সময় একটি বড় টেবিলে বসেছিলাম।একই টেবিলে অল্প দূরে কয়েকজন পুরুষ টিচারও ছিল।তাদের সামনেই নিকাব না খুলে,নিকাবের নিচ দিয়ে চামচ দিয়ে খেতে হয়েছে।আবার যাওয়া আসার সময় পুরুষদের মাঝ দিয়েই হেঁটে যেতে হয়েছে।নারী পুরুষ এক জায়গাতেই আর কি।
আমার খুবই কষ্ট হয় এরকম পরিবেশে যেতে।সেখানে আমি আগেই যেতে চাই নি।কিন্তু না গেলে সামাজিকতা নষ্ট হবে,শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ আমার স্বামীকে ও আমাকে অসামাজিক ভেবে বিভিন্ন মন্তব্য করবেন সামনে/আড়ালে।প্রতিষ্ঠানে স্বামীর ইমেজ নষ্ট হবে ইত্যাদির কথা সে বলে। আমি একটু বুঝানোর চেষ্টা করি যে গোনাহ দিয়ে সামাজিকতা হয় না ইত্যাদি। তখন সে রাগ করে অনেক।তার কথা হলো,তুমি তো বোরকা পড়েই যাচ্ছ,তাহলে সমস্যা কোথায়?তার রাগ দেখে আমি যেতে রাজি হই।সেখানে কি আমার যাওয়া ঠিক হয়েছে?গোনাহ হয়েছে?
২.এখন আগামী পরশু আবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফ্যামিলি গেট টুগেদার,পিকনিক হবে।আগেরটাতে তো এক জায়গায় বসে থাকতে পেরেছি।এবার খোলা মাঠে খেলাধুলা,খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি হবে। তাছাড়া অনুষ্ঠান মানেই গান বাজনা।এবার স্বামীকে আবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। এবার আগের চেয়ে বেশি রাগ করেছে।আমি বলেছি,ঠিক আছে যাবো।তবে শুধু মহিলাদের সাথে পরিচিত হবো কিন্তু কোনো খেলাধুলাতে আমি নেই।সবাই আমাকে খেলতে ডাকলে আমি যাব না।তখন তুমি নিজের সম্মানের কথা ভেবে যদি আমাকে ডাকো,তখনও যদি আমি না যাই,তখন সবার সামনে আমাদের মান সম্মান বাড়ার বদলে আরও কমে যাবে।সামাজিকতার বদলে আরও অসামাজিকতা দেখা যাবে।এর চেয়ে না যাওয়া ভালো।(পরশু আমার মাদ্রাসার পরীক্ষা রেখে আমি যাচ্ছি)তুমি তো বলতেই পারো যে ওর পরীক্ষা তাই আসে নি। গেলেও তুমি আমাকে খেলতে বলো না।এটা ম্যানেজ করো তুমি।
বললো যে,সমস্যা কি।বোরকা পড়েই তো খেলবা।শুধু একটু হাত নাড়ানো।ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ ইত্যাদি।নাচানাচি তো না।আমি নম্রভাবেই বলেছি,মেয়েদের মুভমেন্টই পুরুষকে নাড়া দেয়।সাধারণ হাঁটা চলায় যতটুকু,খেলার মধ্যে আরও বেশি।এখানে পর্দার সমস্যা হয়।আরো কিছু বিষয় বুঝিয়েছি। তারপর চুপ করে শুনতে শুনতে রেগে গিয়ে বললো,তোমার থেকে আমি জ্ঞান নিব না।আমার কথায় তুমি চলবা।না পারলে আমাকে তুমি ছেড়ে দিতে পারো।সবশেষে বললো, "তুমি টিচারের স্ত্রী হবার যোগ্যই না।"যেহেতু এ যোগ্যতা কোনো শ্রেষ্ঠত্বের বিষয় না,শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ইমান-তাকওয়া,তাই এ প্রেক্ষিতে এসব কথা বলতে পারতাম আমি।কিন্তু অনর্থক+ফিতনা হবে বিধায় সাথে সাথে চুপ হয়ে গেছি।পিকনিকে পর্দার বিষয়ে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু তো বলা হয়েছেই।
এই পরিস্থিতিতে আমার কি করণীয় হুজুর?আমি কি যাবো বা খেলবো?না গেলে রাগারাগির সময় যদি এভাবে আবার ছেড়ে দেয়ার কথা বলে ফেলে?পরশুদিনের আগেই উত্তর পেলে ভালো হতো।না হয় কি পরিস্থিতি আসে ভয় পাচ্ছি।
সেখানে সবার কাছে ১০টাকার একাধিক টিকেট বিক্রি করে লটারি দেয়া হবে।একাধিক লটারীতে একাধিক পুরষ্কার থাকবে।এটা কি জায়েজ হবে?আমরা কি কিনতে পারবো?
৩.আরেকদিন তার ২ বন্ধু ও ওয়াইফের সাথে রেস্টুরেন্টে আমাকে খেতে যেতে হয়েছে ওর জোরাজুরিতে।সেও সাথে ছিল।বোরকা পড়ে একই টেবিলে খেতে হয়েছে।এসব কি গোনাহ হচ্ছে না?
৪.তার দীনচর্চা কিছু ক্ষেত্রে কম বিধায় আমাকে কিছু ছাড় দিতে হয়।কয়েকটি উদাহরণ -
ক)বাসা থেকে আমি খুবই কম বের হই।অনলাইন মাদ্রাসায় পড়ি।এই পড়াশুনার শিট,খাতা,কলম কিনতে আমি বের হই।এগুলো আমার নিজের কাজ ভেবে চায় না এসব করে দিতে।তখন আমিই বের হয়ে কিনে নিয়ে চলে আসি।
খ)আবার ওর জন্য কখনো আমাকে একদম ওয়াক্তের শেষদিকে নামাজ পড়তে হয়।কিছু বলি না।
গ)মাঝে মাঝে মাদ্রাসার ক্লাস রেখে ওর সাথে সময় কাটাতে হয়।ওর সাথে হাঁটতে বের হতে হয়।
ঘ)বোরকা পড়ে শ্বশুর বাড়ির অনেক গায়রে মাহরামের সামনে গিয়ে কথা বলতে হয়।আড়ালে দাঁড়িয়ে বলতে দেয় না।
এরকম আরো কিছু বিষয়েও আমি ছাড় দিচ্ছি। দিতে গিয়ে নিজের ইমানের হালত খারাপ হয়ে যায়।(নাউযুবিল্লাহ) কিন্তু সেই ছাড় আমি কতটুকু দিব?কতটুকু স্যাক্রিফাইস করবো?মাঝে মাঝে মনে হয় আমি কি কঠিন করে ফেলছি তাকওয়ার খাতিরে?আমার কি এইটুকু ছাড় দিলে গোনাহ হতো না?এটা কি হিকমাহ হলো না? তখন ছাড় দেই।আবার কখনও মনে হয়, আমি কি বেশি ছাড় দিয়ে গোনাহ করে ফেলছি?এ বিষয়ে উত্তর দিলে উপকৃত হবো হুজুর।
৫.ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে তার চাকরী।তার সাথে চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে এরকম গোনাহে পতিত হওয়ার অনেক পরিস্থিতি চলে আসে এবং আরও অনেক আসবে বুঝা যাচ্ছে।এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়?
৬.আমি ২ চোখ খোলা কালো বোরকা পড়ি,প্রায় সব তাবলীগওয়ালাদের স্ত্রীগণ এখন যেমন বোরকা পড়েন।আমার গাফলতেই চোখ ঢাকা হয় নি এখনও।মাঝে মাঝে ঢাকতে গেলে স্বামী নিষেধ করে।তখন চোখ খোলাই রাখি।রাগারাগি হয় না।স্বামী নিষেধ করলে এ ব্যাপারে স্বামীর সাথে কতটুকু কঠোর হওয়া যাবে?
৭.আমাকে রঙিন বোরকা বানিয়ে পড়তে বলে অন্য ডিজাইনের।শরীরে শেপ হয়তো বুঝা যাবে না।তবে কালারে আমার মনে হয় একটু হলেও সুন্দর লাগে।আর সুন্দর না লাগলে কি সে চাইতো? কালার বোরকা সরাসরি নিষেধ নেই জানলাম কিন্তু তাবলীগী প্রচলিত বোরকা ছাড়লে আমার ঈমান আমলের ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা এবং দাওয়াতি ক্ষেত্রেও নেগেটিভ প্রভাব পড়বে আমার খুব আশংকা হচ্ছে।আমি এমনি মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হই বেশি।খুব সহজেই ইমান বাড়ে আবার খুব সহজেই কমে যায়।এজন্য খুবই ভয়ে থাকি।কান্নাকাটি করি।এই বোরকা পরিবর্তন মানে আমার কলিজা ছিড়ে যাবে-এরকম মনে হচ্ছে।আমি কি করবো?
৮.সংসারের কাজ ঠিক রেখেই আমি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছি।ওর বাবা চায় আমি চাকরী করি।মাদ্রাসার পড়া ছেড়ে দিই।বলে মাদ্রাসার পড়া নাকি ভাজিভুজি। বাবার কথা শুনে মাঝে মধ্যে আমার স্বামী আমাকে বলে "হয় চাকরী কর,না হয় এসব পড়াশুনা বাদ দিয়ে চুপচাপ সংসার কর।না মানলে বাবার বাসায় চলে যাও।আমি এখনই তোমার বাবার বাসায় বলবো।ফোন দাও তোমার মাকে।"-এ কথায় কি তালাক হয়ে গেছে?আমি জিজ্ঞেস করেছি তোমার কি একথায় তালাকের নিয়ত ছিল?সে বলেছে,"না"।
৯.সাধারণত আমার কষ্ট হলেও কিছু ছাড় দেই।কিন্তু পর্দার মত কিছু জরুরী বিষয় নিয়ে(যেমন ১নং,২নং,৩নং,৮নং)এরকম সমস্যা হলেই সে বলে আমাকে ছেড়ে দিতে পারো।খুব রেগে যায়।আমার গায়েও হাত তোলে। রেগে গিয়ে বলে বিচ্ছিন্ন হওয়াই ভালো।বেশ কয়েকবার এরকম পরিস্থিতি হয়েছে। নিজ পক্ষ থেকে সরাসরি-ছেড়ে দিলাম,চলে যাও ইত্যাদি বলে না।এক্ষেত্রে তালাক হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না?
আফওয়ান হুজুর,একই বিষয় তাই একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন হয়ে গেলো।সবশেষে দুআ চাই একটা জান্নাতী পরিবারের জন্য।