বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হাদীসের প্রকারবেধ সাহাবা তাবেয়ী এর পরবর্তী উলামাগণ কর্তৃক নির্ধারিত।
হাফেয ইব্ন হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ্ হাসানের সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন:
وخبر الآحاد بنقل عدل تام الضبط، متصل السند، غير معلل ولاشاذ، هو الصحيح لذاته. ثم قال: فإن خف الضبط فالحسن لذاته. النزهة: (صـ91)
“আদিল ও পরিপূর্ণ দ্বাবত সম্পন্ন রাবির মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত, ইল্লত ও শায থেকে মুক্ত খবরে ওয়াহেদকে সহি লি-যাতিহি বলা হয়। অতঃপর তিনি বলেন: যদি দ্বাবত দুর্বল হয়, তাহলে হাসান লি-যাতিহি”।[2]
এ সংজ্ঞা মতে হাসান হাদিসে সহি হাদিসের শর্তগুলো থাকা জরুরি, তবে পঞ্চম শর্ত ব্যতিক্রম, যথা: ১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া। ২. শায না হওয়া। ৩. দোষণীয় ইল্লত থেকে মুক্ত হওয়া। ৪. রাবিদের আদিল হওয়া। ৫. সহি হাদিস অপেক্ষা হাসান হাদিসের রাবির দ্বাবত দুর্বল হওয়া। পঞ্চম শর্তের ভিত্তিতে সহি ও হাসান একটি অপরটি থেকে পৃথক হয়, অন্যথায় হাসানের রাবিগণ তাকওয়া, ইবাদত ও অন্যান্য দীনি বিষয়ে সহি হাদিসের রাবি থেকে উঁচুমানের হতে পারে।
মুদ্দাকথা: যে হাদিস দুর্বল নয়, কিন্তু সহির মর্তবায় উন্নীত হতে পারেনি তাই হাসান লি-যাতিহি। অথবা বলা যায় দ্বা‘ঈফ রাবি থেকে মুক্ত হাদিস হাসান লি-যাতিহি। এ হিসেবে হাসান হাদীস সহি হাদীসের একটি প্রকার। সহি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, হাসান সর্বনিম্ন প্রকার।
মুহাদ্দিসিনে কেরামের পরিভাষায় হাদিসে মাকবুল বা আমলযোগ্য হাদিসের কয়েকটি স্তর রয়েছে। তম্মোধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে হল সহিহ হাদিস। যার পরিচয় " পরিভাষা পরিচিতি - ০৬" এ আলোচনা করা হয়েছে। আমলযোগ্য হাদিসের দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে 'হাসান হাদিস'। 'হাসান' শব্দের আভিধানিক অর্থ : حسَنُ এর আভিধানিক অর্থ সুন্দর। 'হাসান' এর পারিভাষিক পরিচয় : হাদিসে হাসান এর পারিভাষিক সংজ্ঞায় মুহাদ্দিসিনে কেরামের মাঝে ব্যাপক মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে হাসান সম্পর্কে কতিপয় মুহাদ্দিসিনে কেরামের প্রদত্ত সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো : ১. হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. এর মতে , هو خبر الآحاد بنقل عدل خاف الضبط متصل السند غير معلل و لا شاذ - অর্থাৎ যে হাদিস অবিচ্ছিন্ন সনদ পরম্পরায় বর্ণিত হয়, বর্ণনাকারী আদিল বা ন্যায়পরায়ণ ও কম আয়ত্তশক্তির অধিকারী হয় এবং সনদটি শায কিংবা মুআল্লাল নয়- এরুপ হাদিসের নাম হাসান লিজাতিহি। এ সংজ্ঞা মতে হাসান হাদিসে সহি হাদিসের শর্তগুলো থাকা জরুরি, তবে তৃতীয় শর্ত ব্যতিক্রম, যথা: ১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া। ২. রাবির আদিল হওয়া। ৩. সহি হাদিস অপেক্ষা হাসান হাদিসের রাবির জাবত দুর্বল হওয়া। ৪. শায না হওয়া। ৫. মু‘আল্লাল না হওয়া বা দোষণীয় ইল্লত থেকে মুক্ত হওয়া। তৃতীয় শর্তের ভিত্তিতে সহি ও হাসান একটি অপরটি থেকে পৃথক হয়, অন্যথায় হাসানের রাবিগণ তাকওয়া, ইবাদত ও অন্যান্য দীনি বিষয়ে সহি হাদিসের রাবি থেকে উঁচুমানের হতে পারে। ২. 'হাসান' এর সংজ্ঞায় المنظومة البيقونية গ্রন্থকার বলেন, والحَسَنُ الْمَعْرُوفُ طُرْقاً - وَغَدَتْ رِجَالُهُ لا كَالصَّحِيحِ اشْتَهَرَتْ “যে হাদিসের সনদগুলো প্রসিদ্ধ, তবে সহি হাদিসের রাবিদের ন্যায় প্রসিদ্ধ নয়, তাই হাসান”। লেখক বাহ্যত হাসান হাদিসের দু’টি শর্ত উল্লেখ করেছেন: ১. রাবিদের প্রসিদ্ধ হওয়া। ২. সহি হাদিসের রাবিদের অপেক্ষা কম প্রসিদ্ধ হওয়া। সনদ মুত্তাসিল হওয়া, শায ও মু‘আল্ না হওয়া যদিও তিনি উল্লেখ করেননি, তবে সহির সাথে হাসানের তুলনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হাসান হাদিসেও সহির শর্তসমূহ প্রযোজ্য। ৩. শাহ আবদুল হক মুহাদ্দেসে দেহলবি রহ. এর মতে, যে হাদিসের মধ্যে সহিহ হাদিসের বৈশিষ্ট কম থাকে এবং তা দূর করার কোন পদ্ধতি থাকে না, তাকে 'হাসান লিজাতিহি' বলে। মুদ্দাকথা: যে হাদিস দুর্বল নয়, কিন্তু সহিহ'র মর্তবায় উন্নীত হতে পারেনি তাই হাসান লি-যাতিহি। অথবা বলা যায় জঈফ রাবি থেকে মুক্ত হাদিস হাসান লি-যাতিহি। এ হিসেবে হাসান হাদীস সহি হাদীসের একটি প্রকার। সহিহ বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, হাসান হল তার সর্বনিম্ন প্রকার। হাসান হাদিসের উদাহরণ : عن سفيان عن عبد الله بن عقيل عن محمد بن الحنفية عن على رض عن النبى صلى الله عليه وسلم ، قال : مفتاح الصلاة الطهور - এ হাদিসটিতে সহিহ হাদিসের যাবতীয় শর্তাবলী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও একন রাবির জাবত তথা স্মরণশক্তিতে কিছুটা দূর্বলতা আছে। তাই এটি হাসান হাদিস। (মুফতি মনিরুল ইসলাম এর লিখা থেকে সংগৃহিত)