বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
মুফতি হেদায়তুল্লাহ শেখ লিখেন।এবং যথার্থই লিখেছেন-
প্রথম উম্মতের মাঝে ছিল ৭২ ফিরক্বা। আর এই উম্মতের মাঝে হবে তিহাত্তর ফিরক্বা। ৭২ ফিরক্বার মাঝে ৭১ ফিরক্বা ছিল জাহান্নামী, আর ১ জামাত ছিল জান্নাতী। আর উম্মতে মুহাম্মদীতে ৭২ ফিরক্বা হল জাহান্নামী আর একটি ফিরক্বা হল জান্নাতী।
৭২ ফিরক্বাতো পূর্ব থেকেই আছে। যাতে ৭১ ফিরক্বা হল জাহান্নামী আর এক ফিরক্বা হল জান্নাতী। সুতরাং জান্নাতী ফিরক্বা পূর্ব থেকেই আছে। আর ৭১ জাহান্নামী ফিরক্বাও পূর্ব থেকেই আছে। সুতরাং কেবল জাহান্নামী একটি ফিরক্বা উম্মতে মুহাম্মদীতে বাড়বে। যেটা পূর্বে ছিলনা।
এই দলটা কারা? আল্লামা কুরতুবী রঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-
ﻭﻗﺪ ﻣﻀﻰ ﻓﻲ “ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ” ﻣﻌﻨﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ : “ ﺗﻔﺮﻗﺖ ﺑﻨﻮ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﺛﻨﺘﻴﻦ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺃﻥ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﺔ ﺳﺘﻔﺘﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﺛﻼﺙ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ” . ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﻌﺎﺭﻓﻴﻦ : ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻔﺮﻗﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺯﺍﺩﺕ ﻓﻲ ﻓﺮﻕ ﺃﻣﺔ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫﻢ ﻗﻮﻡ ﻳﻌﺎﺩﻭﻥ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭﻳﺒﻐﻀﻮﻥ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ، ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺫﻟﻚ ﻗﻂ ﻓﻲ ﺍﻷﻣﻢ ﺍﻟﺴﺎﻟﻔﺔ . ( ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﻷﺣﻜﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ : ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺑﻦ ﻓﺮﺡ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺍﻟﺨﺰﺭﺟﻲ ﺷﻤﺲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﻘﺮﻃﺒﻲ ( ﺍﻟﻤﺘﻮﻓﻰ : 671 )
প্রথম উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ ছিলনা। তাই ইজতিহাদের দুশমনও ছিলনা। এই উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ আছে। তাই ইজতিহাদের দুশমনও আছে। আর এই উম্মতের অতিরিক্ত জাহান্নামী ফিরক্বা হল ইজতিহাদের দুশমন ফুক্বাহায়ে কিরামের দুশমন দল। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}
এই ফুক্বাহাদের দুশমন জাহান্নামী ফিরক্বা বাড়বে উম্মতে মুহাম্মদীতে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে ফুক্বাহাদের মর্যাদা
আল্লাহ তায়ালা কতটা মর্যাদা দিয়েছেন ফুক্বাহায়ে কিরামকে, হাদীস কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা দেখলেই তা আমাদের বুঝে আসে।
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
ফুক্বাহা কাকে বলে? দ্বীনের বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে বলে ফক্বীহ। ফুক্বাহাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার এতটাই মোহাব্বত যে, তাদের মাসআলা যদি ভুলও হয়, তবু তাদের গোনাহ হয়না, বরং তাদের একটি সওয়াব হয়। আর যদি মাসআলা সহীহ হয়, তাহলে সওয়াব হয় ডাবল। এটাই হল পন্থা। হয়ত এক নেকি। নতুবা দুই নেকি। গোনাহ হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
ইমাম আবু হানীফা রহ ১২ লাখ ৯০ হাজার মাসআলা ইস্তিম্বাত করেছেন। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, তাঁর ইস্তিম্বাতকৃত সব মাসআলাই ভুল। তাহলেও তাঁর ১২ লাখ ৯০ হাজার সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়েছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! তাঁর ইস্তিম্বাতকৃত একটি মাসআলাও ভুল নয়। আমরা চ্যালেঞ্জ করি।
ফুক্বাহাদের প্রতি আল্লাহর কতটা মোহাব্বত। আর শয়তানের কতটা শত্রুতা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺍﻟْﻤُﻨﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻻ ﻳَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ { [ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻮﻥ 7: ] অর্থাৎ মুনাফিকরা ফক্বীহ হতে পারেনা। [সুরা মুনাফিকুন-৭] সুতরাং ফক্বীহ কখনো মুনাফিক হতে পারেনা।
আর রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর একশত আবেদের চে’ বেশি কষ্টকর। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২২২]
এই এই ফুক্বাহাদের সমালোচনা করে বেড়ায় গায়রে মুকাল্লিদরা ঠিক কার কাজটা করছে একবার ভেবে দেখি।
সুতারাং আমরা আল্লাহ পাকের কাছে এই প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের কে এবং গোটা মুসলিম উম্মাহকে এদের ফেতনা থেকে হেফাজত করেন।
আমীন।