আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
890 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)

আসসালামুয়ালাইকুম,উস্তায আমরা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে শুনেছি প্লাস তিরমিযীর ২৬৪১ নাম্বার হাদীসে পড়েছি:আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বানী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বানী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত।

উক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে বনি ইসরাইলের মাঝে হয়েছিল ৭২ দল আমাদের মাঝে হবে ৭৩ দল একটি দল ব্যতীত বাকি সব জাহান্নামী বনি ইসরাইলের ছিলো ৭২ দল আমাদের মাঝে এক দল বেশি হবে কিছুদিন পূর্বে এক আলেমের ওয়াজে শুনেছি প্লাস তাকে প্রশ্ন করলে সে লিখিত জবাব দেয় যে সেই একটা দল যে বেশি হবে অর্থাৎ ৭৩ নাম্বার দল সেটা নাকি হবে আলেম ওলামাদের বিরোধী দল অবশেষে সে তাফসীরে কুরতুবী সুরাতুল আনাম এর এই রেফারেন্স টা দিয়েছি আমি এই তাফসীরের সত্যতা টা জানতে চাই উস্তায।

. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء ، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة.( الجامع لأحكام القرآن

المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفى : 671)

যেই ফিরক্বাটি উম্মতে মুহাম্মদীদে বাড়বে তারা হল-ওলামাদের সাথে শত্রুতা করবে, আর ফুক্বাহাদের প্রতি রাখবে বিদ্বেষ। এই গ্রপটি পূর্ব উম্মতের মাঝে ছিল না। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}

1 Answer

+1 vote
by (589,320 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
মুফতি হেদায়তুল্লাহ শেখ লিখেন।এবং যথার্থই লিখেছেন- 
প্রথম উম্মতের মাঝে ছিল ৭২ ফিরক্বা। আর এই উম্মতের মাঝে হবে তিহাত্তর ফিরক্বা। ৭২ ফিরক্বার মাঝে ৭১ ফিরক্বা ছিল জাহান্নামী, আর ১ জামাত ছিল জান্নাতী। আর উম্মতে মুহাম্মদীতে ৭২ ফিরক্বা হল জাহান্নামী আর একটি ফিরক্বা হল জান্নাতী।
৭২ ফিরক্বাতো পূর্ব থেকেই আছে। যাতে ৭১ ফিরক্বা হল জাহান্নামী আর এক ফিরক্বা হল জান্নাতী। সুতরাং জান্নাতী ফিরক্বা পূর্ব থেকেই আছে। আর ৭১ জাহান্নামী ফিরক্বাও পূর্ব থেকেই আছে। সুতরাং কেবল জাহান্নামী একটি ফিরক্বা উম্মতে মুহাম্মদীতে বাড়বে। যেটা পূর্বে ছিলনা।
এই দলটা কারা? আল্লামা কুরতুবী রঃ তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-
ﻭﻗﺪ ﻣﻀﻰ ﻓﻲ “ ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ” ﻣﻌﻨﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ : “ ﺗﻔﺮﻗﺖ ﺑﻨﻮ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﺛﻨﺘﻴﻦ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺃﻥ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﺔ ﺳﺘﻔﺘﺮﻕ ﻋﻠﻰ ﺛﻼﺙ ﻭﺳﺒﻌﻴﻦ ” . ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ . ﻭﻗﺪ ﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺍﻟﻌﺎﺭﻓﻴﻦ : ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻔﺮﻗﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺯﺍﺩﺕ ﻓﻲ ﻓﺮﻕ ﺃﻣﺔ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫﻢ ﻗﻮﻡ ﻳﻌﺎﺩﻭﻥ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭﻳﺒﻐﻀﻮﻥ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ، ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺫﻟﻚ ﻗﻂ ﻓﻲ ﺍﻷﻣﻢ ﺍﻟﺴﺎﻟﻔﺔ . ( ﺍﻟﺠﺎﻣﻊ ﻷﺣﻜﺎﻡ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ : ﺃﺑﻮ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺑﻦ ﻓﺮﺡ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺍﻟﺨﺰﺭﺟﻲ ﺷﻤﺲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﻘﺮﻃﺒﻲ ( ﺍﻟﻤﺘﻮﻓﻰ : 671 )
প্রথম উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ ছিলনা। তাই ইজতিহাদের দুশমনও ছিলনা। এই উম্মতের মাঝে ইজতিহাদ আছে। তাই ইজতিহাদের দুশমনও আছে। আর এই উম্মতের অতিরিক্ত জাহান্নামী ফিরক্বা হল ইজতিহাদের দুশমন ফুক্বাহায়ে কিরামের দুশমন দল। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}
এই ফুক্বাহাদের দুশমন জাহান্নামী ফিরক্বা বাড়বে উম্মতে মুহাম্মদীতে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে ফুক্বাহাদের মর্যাদা
আল্লাহ তায়ালা কতটা মর্যাদা দিয়েছেন ফুক্বাহায়ে কিরামকে, হাদীস কুরআনের বিভিন্ন বর্ণনা দেখলেই তা আমাদের বুঝে আসে।
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪}
ফুক্বাহা কাকে বলে? দ্বীনের বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিকে বলে ফক্বীহ। ফুক্বাহাদের সাথে আল্লাহ তায়ালার এতটাই মোহাব্বত যে, তাদের মাসআলা যদি ভুলও হয়, তবু তাদের গোনাহ হয়না, বরং তাদের একটি সওয়াব হয়। আর যদি মাসআলা সহীহ হয়, তাহলে সওয়াব হয় ডাবল। এটাই হল পন্থা। হয়ত এক নেকি। নতুবা দুই নেকি। গোনাহ হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
ইমাম আবু হানীফা রহ ১২ লাখ ৯০ হাজার মাসআলা ইস্তিম্বাত করেছেন। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, তাঁর ইস্তিম্বাতকৃত সব মাসআলাই ভুল। তাহলেও তাঁর ১২ লাখ ৯০ হাজার সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়েছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! তাঁর ইস্তিম্বাতকৃত একটি মাসআলাও ভুল নয়। আমরা চ্যালেঞ্জ করি।
ফুক্বাহাদের প্রতি আল্লাহর কতটা মোহাব্বত। আর শয়তানের কতটা শত্রুতা। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ﻭَﻟَﻜِﻦَّ ﺍﻟْﻤُﻨﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻻ ﻳَﻔْﻘَﻬُﻮﻥَ { [ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻘﻮﻥ 7: ] অর্থাৎ মুনাফিকরা ফক্বীহ হতে পারেনা। [সুরা মুনাফিকুন-৭] সুতরাং ফক্বীহ কখনো মুনাফিক হতে পারেনা।
আর রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-একজন ফক্বীহ শয়তানের উপর একশত আবেদের চে’ বেশি কষ্টকর। [সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২২২]
এই এই ফুক্বাহাদের সমালোচনা করে বেড়ায় গায়রে মুকাল্লিদরা ঠিক কার কাজটা করছে একবার ভেবে দেখি।
সুতারাং আমরা আল্লাহ পাকের কাছে এই প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদের কে এবং গোটা মুসলিম উম্মাহকে এদের ফেতনা থেকে হেফাজত করেন।
আমীন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...