আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
227 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (-1 points)
আসসালামু আলাইকুম,

ইসলামের প্রথম যুগে সাতটি হরফে কুরআন উচ্চারণ করা হতো।
প্রশ্ন: ইসলামের প্রথম যুগে কী সাতটি হরফে কুরআন লিখেও সংরক্ষণ করা হতো?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ- 

কুরআন প্রথমে আরবীতে কুরাইশদের আঞ্চলিক ভাষায় নাযিল হচ্ছিল, কিন্তু বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে রাসূলুল্লাহ(সা.) একাধিক উপায় কুরআন পড়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। এর প্রেক্ষিতে কুরআন সাত হরফে নাযিল হতে থাকে।

ইবনে আব্বাস(রা.) হতে বর্ণিত:

রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন, “জিব্রাইল[আ.] আমার কাছে এক হরফে কুরআন তিলাওয়াত করলেন, আর আমি তাকে ভিন্ন ভিন্ন হরফে তিলাওয়াত করতে বলতে লাগলাম যতক্ষণ না, তিনি সাতটি ভিন্ন হরফে  তিলাওয়াত করলেন।” [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ৩২১৯, ইংরেজি অনুবাদ: ৪।৫৪।৪৪২, সুন্নাহ.কম: ৫৯।৩০]
উবাই বিন কা’ব(রা.) হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিসের শেষে জিব্রাইল(আ.) বলেন: আল্লাহ আপনাকে আপনার উম্মতের নিকট সাত হরফে তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যে হরফেই তারা তিলাওয়াত করুক, তারা সঠিক [সাব্যস্ত] হবে। [দ্রষ্টব্য: সহিহ মুসলিম, আরবী: ৭।১৯৪২, ইংরেজি অনুবাদ: ৪।১৭৮৯, সুন্নাহ.কম: ২১৭৮৯০]
কিন্তু এই সাত হরফের বিষয়টি প্রথম দিকে উমর(রা.) এবং উবাই ইবনে কা’ব(রা.)এঁর মতো বড় সাহাবিরাও জানতেন না। পরে তারা এ বিষয়ে অবগত হন।

উমর বিন খাত্তাব বলেন: আমি হিশাম বিন হাকিম বিন হিযামকে সূরা আল-ফুরকান আমি যেভাবে পড়তাম, যেভাবে রাসূলুল্লাহ(সা.) আমাকে শিখিয়েছিলেন, তা অপেক্ষা ভিন্ন এক পদ্ধতিতে পড়তে শুনলাম। আমি তার সাথে তর্ক করতে উদ্যত হলাম, কিন্তু তিনি তা শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। অত:পর আমি তার চাদর ধরে তাকে রাসূলুল্লাহ(সা.)এঁর কাছে নিয়ে গেলাম এবং বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এই ব্যক্তিকে এমন পদ্ধতিতে সূরা আল-ফুরকান পড়তে শুনেছি যা আপনি আমাকে যেভাবে শিখিয়েছেন তা অপেক্ষা ভিন্ন। এই প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ(সা.) তাকে ছেড়ে দিতে বললেন এবং তাকে তিলাওয়াত করতে বললেন। তিনি তখন সেই পদ্ধতিতে পড়লেন যেই পদ্ধতিতে আমি তাকে পড়তে শুনেছিলাম। রাসূলুল্লাহ(সা.) তখন বললেন: এভাবেই এটা নাযিল হয়েছে। তিনি তখন আমাকে তিলাওয়াত করতে বললেন এবং আমি তিলাওয়াত করলাম। তিনি বললেন: এভাবেই এটা নাযিল হয়েছে। কুরআন সাতটি হরফে নাযিল হয়েছে। কাজেই সেগুলোর ভেতর হতে যেটা সহজ মনে হয় সেভাবেই তিলাওয়াত করো। [সূত্র: সহিহ মুসলিম, আরবী: ৭।১৯৩৫, ইংরেজি অনুবাদ: ৪।১৭৮২, সুন্নাহ.কম: ২১৭৮২০]
উবাই বিন কা’ব(রা.) হতে বর্ণিত:

আমি এক মসজিদে ছিলাম যে সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করে নাযাল পড়ল এবং এমন এক পদ্ধততিতে তিলাওয়াত করলো যাতে আমি আপত্তি করলাম। অত:পর অন্য এক ব্যক্তি প্রবেশ করলো এবং এমন এক পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করলো যা তার সাথীর পদ্ধতি অপেক্ষা ভিন্ন ছিল। যখন আমরা নামায শেষ করলাম, আমরা সবাই রাসূলুল্লাহ(সা.)এঁর কাছে গেলাম এবং তাঁকে বললাম: এই ব্যক্তি এমন এক পদ্ধততিতে তিলাওয়াত করলো যাতে আমি আপত্তি করলাম, অত:পর অন্যজন প্রবেশ করলো এবং এমন এক পদ্ধতিতে তিলাওয়াত করলো যা তার সাথীর পদ্ধতি অপেক্ষা ভিন্ন ছিল। রাসূলুল্লাহ(সা.) তাদের তিলাওয়াত করতে বললেন, কাজেই তারা তিলাওয়াত করলেন। রাসূলুল্লাহ(সা.) তাদের ব্যাপারে অনুমোদন ব্যক্ত করলেন। আর আমার মনে একপ্রকার অস্বীকৃতি বিরাজ করলো যা এমনকি জাহিলিয়াতের দিনেও আসে নাই। যখন রাসূলুল্লাহ(সা.) দেখলেন আমি কিভাবে [ভুল ধারণার দ্বারা] আক্রান্ত হয়েছি, তিনি আমার বুকে আঘাত করলেন, যার ফলে আমি ঘামতে লাগলাম এবং ভয়ে মনে হতে লাগলো আমি যেন আল্লাহকে দেখছি। তিনি বললেন: উবাই! আমাকে এক হরফে কুরআন তিলাওয়াত করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। আমি উত্তর দিলাম: আমার উম্মতের জন্য সহজ করো। দ্বিতীয়বার আমাকে জানানো হলো যে দুই হরফে তিলাওয়াত করা যাবে। আমি পুনরায় উত্তর দিলাম: আমার উম্মতের জন্য সহজ করো। তৃতীয়বার আমাকে সাত হরফে তিলাওয়াত করার কথা জানানো হলো.. [সূত্র: সহিহ মুসলিম(হাদিসের প্রাসঙ্গিক অংশ), আরবী: ৭।১৯৪০, ইংরেজি অনুবাদ: ৪।১৭৮৭, সুন্নাহ.কম: ২১৭৮৭০]
আরবী হাদিসে ‘হরফ’ শব্দটি এসেছে, বিধায় অনুবাদে আমি ‘হরফ’ লিখেছি, যদিও ইংরেজি অনুবাদে ব্যাখ্যামূলকভাবে এর অনুবাদ ‘way’ বা ‘dialect’ করা হয়েছে। আমি মূল হাদিসে ব্যাখ্যা না দিয়ে পৃথকভাবে ব্যাখ্যা করাকেই শ্রেয় মনে করি।

সাত হরফ বলতে কী বুঝায়?

সাত হরফ বলতে কুরআন তিলাওয়াতের সাতটি ভিন্ন উপায় বা ধরণকে যে বুঝায় তা উপরের হাদিসগুলো থেকেই বোধগম্য হবার কথা। এই সাত হরফে বিধানের(অনুমোদন/নিষেধাজ্ঞা) কোন পরিবর্তন হয় না।

ইবনে শিহাব(রহ.) বলেন: আমার কাছে এই কথা পৌঁছেছে যে, এই সাতটি প্রকার অপরিহার্যভাবে একই, অনুমোদন বা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোন ভিন্নতা নেই। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ৭।১৯৩৮, ইংরেজি অনুবাদ: ৪।১৭৮৫, সুন্নাহ.কম: ২১৭৮৫০]
তবে, 

এই সাতটি ধরণ কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, সে নিয়ে উলামাগণ অনেক আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। অনেকের মতে এর ভিত্তি হচ্ছে, আরবের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার পার্থক্য। কেউ কেউ এর সাথে আরো অনেক মতও প্রকাশ করেছেন।

ভিত্তি যাই হোক না কেন, সাত হরফে আসলে সাত ধরণের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়:

১. বিশেষ্যের পার্থক্য:

এই পার্থক্য হয় বচনে(এক/দ্বি/বহু) এবং লিঙ্গে। আরবী অলংকার শাস্ত্র ব্যবহারের কারণে এই ধরণের পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক। কোন কিরআনে অলংকার প্রয়োগ করা হয়েছে, আবার সহজ করার জন্য কোন কিরাআতে অলংকার প্রয়োগ করা হয় নাই।

যেমন,

এক কিরাআতে এসেছে: কালিমাতু রাব্বিকা

ভিন্ন কিরাআনে এসেছে: কালিমাতু রাব্বিকা (‘মা’তে এক আলিফ টান)

২. ক্রিয়াপদের পার্থক্য:

এই পার্থক্য হয় অতীত, বর্তমান ও আজ্ঞাবাচক ক্রিয়ায়।

এক কিরাআতে এসেছে: রাব্বানা বাই’দু বাইনা আসফারিনা

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: রাব্বানা বাই’ই’দ  বাইনা আসফারিনা

৩. বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্নের পার্থক্য:

ই’রাব-এর পার্থক্যের ফলে শব্দের শেষের যবর, যের, পেশ ভিন্ন হয়। যেমন,

এক কিরাআতে এসেছে: যুল ‘আরশিল মাজিদু

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: যুল ‘আরশিল মাজিদি

 

৪. উচ্চারণগত পার্থক্য:

এই ক্ষেত্রে শব্দ একই থাকে তবে কোন হরফকে মোটা বা চিকন করা হয়, দীর্ঘ বা হ্রস্ব করা হয়, পরিষ্কার বা নাকের মধ্যে গোপন করা হয়, ইত্যাদি।

যেমন,

এক কিরাআতে এসেছে: মুসা

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: মুসি

৫. শব্দের ভিন্নতা:

কোন কোন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কিরাআতে একই শব্দের স্থলে ভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই শব্দগুলো আসলে একটি অপরটির প্রতিশব্দ।

যেমন,

এক কিরাআতে এসেছে: ফাতাবাঈয়ানু

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: ফাতাছ্বাববাতু (একই অর্থ বহন করে)

(অবশ্য কোন কোন ক্ষেত্রে এই ভিন্ন শব্দগুলো অবস্থাভেদে নির্দেশের পার্থক্যকে বুঝায় যা তাফসিরকারকদের বিষয়টি বুঝার ক্ষেত্রে অধিক সহায়ক হয়।)

৬. শব্দের আগ-পিছ:
যেমন,

এক কিরাআতে এসেছে: ওয়াজাআত সাকরাতুল হ্বাক্বক্বি বিল মাউতি

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: ওয়াজাআত সাকরাতুল মাউতি বিল হ্বাক্বক্বি

(একই অর্থ বহন করে)

৭. শব্দের কম-বেশ:

এক কিরাআতে এসেছে: তাজরি মিন  তাহ্বতিহাল আনহারু

ভিন্ন কিরাআতে এসেছে: তাজরি তাহ্বতিহাল আনহারু (“মিন” বাদ দেওয়া হয়েছে অথচ অর্থের কোন পরিবর্তন নাই)

মোট কথা কুরআন তিলাওয়াতকে সহজ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে অনেক অক্ষর বা বাক্যে সুনির্দিষ্ট কিছু ভিন্ন পাঠের অবকাশ দেওয়া হয়, যাতে অর্থের তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। তিলাওয়াতের এই ভিন্নতা আল্লাহ তায়ালা হতে নাযিলকৃত এবং রাসূলুল্লাহ(সা.) কর্তৃক বর্ণিত ও স্বীকৃত। এগুলো মানুষের ঐচ্ছিক বা ভুলবশত: পরিবর্তন নয়।


সাত কিরাআত:
যা হোক, সাত হরফের ফলে রাসূলুল্লাহ(সা.) হতে সাহাবা(রা.)এর মাধ্যমে যে অনুমোদিত কিরাআতগুলো চালু হয় সেগুলোর ওপর দক্ষতার ভিত্তিতে সাত জন ক্বারি অধিক প্রসিদ্ধ হন, যদিও উনারা ছাড়াও আরো অনেক ক্বারি বিদ্যমান ছিলেন। এই সাত জন ক্বারির ‘বহুল বর্ণিত বিশ্বস্ত বর্ণনাসূত্রে প্রাপ্ত’ কিরাআতসমূহ পরবর্তিতে সাত কিরাআত বলে প্রসিদ্ধি পায়।

বর্তমান সময়ে সারা পৃথিবীতে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ কিরাআত হচ্ছে ‘হাফস’ কিরাআত। এই কিরাআত আমরা যার থেকে পেয়েছি তিনি হলেন: আসিম ইবনে (বাহলাদাহ ইবনে) আবি আন নাজুদ (র.) [ওফাত ১১৭ হি.] (সংগৃহিত)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সাত হরফ তথা সাতটি পদ্ধতি বা ত্বরিকায় যে কুরআন নাযিল হয়েছিল,

এ পদ্ধতি সমূহের নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে উলামাদের মধ্যে অনেক প্রকার মতবেদ রয়েছে।

আল্লামা তাকী উসমানী দাঃ বাঃ উনার লিখিত কিতাব উলূমুল কুরআন গ্রন্থে লিখেন,(যা বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, আল-কুরআনের জ্ঞান বিজ্ঞান নামে)
উক্ত গ্রন্থে তিনি লিখেন,
যে সাত হরফে কিরআন নাযিল হয়েছে,সেটা মূলত এক বচন দ্বিবচন, হরকত ইত্যাদির পার্থক্যর দ্বারাই নির্ণিত হবে।এবং বর্তমান মুসহাফে উসমানিতে ঐ সাত হরফ বিদ্যমান রয়েছে।


সুতরাং উনার ব্যখ্যা অনুযায়ী সর্বযুগে সাত হরফ লিখিত ছিলো।এবং কিয়ামত পর্যন্ত সাত হরফ লিখিত আকারে বিদ্যমান থাকবে।



(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...