আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ।
আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের সদ্য অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থী। আমার বাসাও চট্টগ্রামের মিরসরাইতে। বাসা থেকে ভার্সিটি ৭৬/৭৭ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত।
আমার পরিবারের একটু বর্ণনা দেই। আমার আব্বু ইন্তেকাল করেছেন ২০২১ এ। পরিবারে আম্মু, ভাইয়া(আমার ৭ বছরের বড়), ভাবী, আমি, আমার ছোটবোন(৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠবে এবার), আমার ৯ মাস বয়সী ভাতিজি আছে। অর্থাৎ ভাইয়া বাদে সব ফিমেল মেম্বার।
দ্বীনি অবস্থা- পরিবারে সবাই রক্ষণশীল, কিন্তু দুনিয়া, সমাজ প্রায়োরিটি দেয়।
আর্থিক অবস্থা- আমার আব্বু সাব ইন্সপেক্টর ছিলেন। খুব বেশি ইনকাম তিনি করেন নি। পারফেক্ট মধ্যবিত্ত লাইফ লিড করেছি আমরা আলহামদুলিল্লাহ। তাঁর সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে মিরসরাই উপজেলাতে ২ তলা বাড়ি করে দিয়ে গেছেন, ৪টা ফ্ল্যাট, একটায় আমরা থাকি, বাকি ৩টা ভাড়া। অনেক সময়ই ভাড়ার অভাবে ফ্ল্যাট গুলো খালি থাকে। ভাইয়া এতদিন চাকরি করতো, কিন্তু সে এখন চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় মুভ করে। ব্যবসাটা সম্ভাবনাময় বেশ, কিন্তু এই মুহুর্তে অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার বিয়ে হয় ২০২২ এ। আমি তখন ৩য় বর্ষে। আমার তখন দ্বীনের বুঝ হয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় নি। মনে হয়েছিলো আমার থেকে ভাইয়ার বেশি প্রয়োজন, তাই তাকে উৎসাহ দিয়েছিলাম। তো ভাইয়ার বিয়েতে লাখ পাঁচেক খরচ হয়ে আমাদের ফান্ড কমে আসে। এরপর ২০২৩ এ বাবুর জন্মের সময়ে আরোকিছু টাকা খরচ হয়। তো সব মিলিয়ে আমাদের ক্যাশ খুব একটা নেই, লাখ খানেক সম্ভবত আছে। বর্তমানে সবকিছুর দাম এতো বেশি যে কম খরচে বিয়ে করতে চাইলেও এর বেশি টাকা খরচ করতে হবে। অর্থাৎ আমার বিয়ের খরচের জন্য ভাইয়ার ব্যবসার বারকাহর উপর আমরা নির্ভরশীল।
এখন আসি মূল সমস্যায়। ডিপার্ট্মেন্টে মাস্টার্সের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জব করবো না, কনফিডেন্টলি পরিবারকে আগে জানিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। তারা কোনোরকম মেনে নিয়েছে। সহশিক্ষা হারাম হিসেবে মানি এবং বুঝি। তাই পরিবারে বলেছি মাস্টার্সে ভর্তি হবো না। তারা এটা মেনে নিচ্ছে না কেউই। সবার এক কথা ভর্তি হয়ে থাকি, ভার্সিটিতে থাকার প্রয়োজন নেই, বাসায় পরিবারের সাথে থাকবো। পরীক্ষার সময় গিয়ে পরীক্ষা দেবো। একাডেমিক পড়া এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনোরকমে মাস্টার্স দিলেই তারা খুশি।
এর পাশাপাশি অর্ধেকদ্বীনে বায়ো দেওয়া আছে ২৩ এর জানুয়ারি থেকে। যদি আল্লাহ ভালো পাত্র মিলায়, এমন পাত্র যে এই ফান্ড অনুযায়ীই বিয়েতে আগ্রহী, তাহলে বিয়ে হবে। কিন্তু এই মুহুর্তে কোনো পাত্রকে আমাদের পক্ষ হতে প্রপোজাল পাঠানো সম্ভব নয়, যেহেতু পর্যাপ্ত ক্যাশ নেই হাতে। ব্যবসায় বারাকাহ আসার সম্ভাবনা আছে আল্লাহ চাইলে, যদি আসে, সাথে সাথেই বিয়ের জন্য প্রপোজাল পাঠানো শুরু করবে।
অর্থাৎ তাদের ইচ্ছা যে, বিয়ে যেহেতু এখনো হয় নি, মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে থাকো। নয়তো তাদের মুখ থাকবে না।
আমি খুব দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে আছি । এই মনে হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ত্যাড়ামি করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে অনেক। আবার মনে হচ্ছে আমি মেনে নিতে পারছি না এটা। আবার অনেক ফতোয়ায় রুখসত দেখে মনে হচ্ছে, আমাকে তো ক্যাম্পাসে থাকা লাগছে না। আবার ভার্সিটিও ৭৮ কিলো এর কম দূরত্বে আছে। আপাতত ভর্তি হয়ে বাসায় থাকি, হয়তো এই বছরের মধ্যে ইন শা আল্লাহ দ্বীনি পাত্র মিলে যাবে, বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবেন আল্লাহ। তাহলে তো আর মাস্টার্স এক্সামও দেওয়া লাগবে না।
উস্তাদ, এমন পরিস্থিতিতে আমার করণীয় কি?