আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
109 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
এক বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসে, পাত্র দ্বীনদার, হালাল উপার্জন এবং বড় চাকুরীওয়ালা। কিন্তু, পাত্রের আগের একটি বিয়ে এবং এক সন্তান আছে, যেই বিয়েটা ডিভোর্স হয়ে গেছে। বোনের অভিভাবক কিছুতেই রাজি নয়(প্রস্তাবটি সরাসরি বোনটিকেই দেওয়া হয়),কেননা তাদের মেয়ে অবিবাহিত এবং পাত্রের তুলনায় বয়সও অনেক কম, তারা মনে করে তাদের মেয়ে এই পাত্রের কাছে কিছুতেই সুখী হবে না। তারা বোনটিকে নিষেধ করে দেয় আর না এগোতে। কিন্তু, বোনটির সাথে ওই পাত্রের বেশ কিছু কথাবার্তা হয় ফোনালাপে, এতে করে বোনের মনে হয়, এই পাত্রই একমাত্র যোগ্য তার জন্য( বোনটিও দ্বীনদ্বার এবং পাত্রের সাথে কথা বলে তাঁর আচরণে মুগ্ধ হন)।

এরপর অভিভাবকদের না জানিয়েই বোনটি একরকম লুকিয়ে ওই পাত্রকে বিয়ে করে। তখন কথা হয় যে গোপনে বিয়েটা হচ্ছে হারাম থেকে বাঁচার জন্য, এরপর ওই বোন বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের জোর করবেন যেন তারা ওখানেই বিয়ে দেন, অর্থাৎ তারা জানবে না যে তাদের গোপনে বিয়ে হয়েছে।  তাদের বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রী হয়নি, তখন বলা হয় গোপনীয়তার জন্য করা যাচ্ছে না, পরে করে নেওয়া যাবে। এছাড়া, বিয়ের আগে কথা হয়, পাত্রের যে আগের দিকের সন্তান আছে, সে কখনো তার বাবার কাছে আসবে না।

কিন্তু, কিছু সমস্যার জন্য বোনটি নিজেই স্বীকার করে যে তারা গোপনে বিয়ে করে ফেলেছে। এতে অভিভাবকরা প্রচন্ড কষ্ট পায়।

কিছুদিন বাদে, মেয়ের অভিভাবকরা সামলে নেয় এবং মেয়েকে বলে যে তোমরা দ্রুত রেজিস্ট্রি করে ফেল, এরপর আমরা বিয়েটা মেনে নিব।
কিন্তু, বোন/মেয়েটি কিছুদিন পর তার স্বামীর কাছে থেকে জানতে পারে যে,  তার আগের স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়নি। কিন্তু স্বামীটি মন থেকেই আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে চান, কিন্তু কিছু আইনী জটিলতার জন্য একটু দেরি হচ্ছে(ব্যাপারটা লুকানোর কারণ হিসেবে স্বামী বলেন যে তিনি তাওরিয়া করেছিলেন, তার ২য় স্ত্রীকে দ্রুত কাছে পাবার জন্য, আর তখন তালাকের বিষয়টাও এমন ছিল যে যেকোনো দিন তালাক হয়ে যাবে, তাই ওরকম বলা, এজন্য উনি স্ত্রীর কাছে মাফও চান)। এরমধ্যে স্বামীর আগের পক্ষের বাচ্চাকে তার ১ম স্ত্রী রাখতে চান না, এবং স্বামীও মন থেকে চান তার বাচ্চা তার কাছে থাকুক। এতে বোনটি/২য় স্ত্রী টি অনেক কষ্ট পান, কেননা, বাচ্চা আসার কোনো কথাই ছিল না,এবিষয়ে তার স্বামী বলেন যে, বাচ্চা আনার কথা হলে তার থেকে অনুমতি নিয়েই করা হবে। তার স্বামী তাকে জোরও করেন না যে বাচ্চাটি তাকে নিতেই হবে, অথচ কষ্ট পান কিন্তু সেটা স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করেন না। তিনি শুধু তার স্ত্রীকে তাওয়াক্কুল করতে বলেন, দোয়া করতে বলেন। বলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এবং ওই বোনের স্বামীও তাকে খুব ভালোবাসেন। তাদের বিয়ের পর  ওই বোন তার স্বামীর মাঝে কোনো প্রতারণা দেখতে পাননা। তিনিও তার স্বামীকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু ওই বোনের অভিভাবক এগুলো জানার পরে আর মেয়েকে ওখানে রাখতে চান না, তারা চান মেয়ে ওখান থেকে চলে আসুক। এবং মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে তারা খুব কষ্ট পান। কিন্তু মেয়ে/বোনটি কাউকেই কষ্ট দিতে চান না, তার অভিভাবক (মা/বাবা) বলেন যে মেয়ে যদি ওখান থেকে সবকিছু ছেড়ে তাদের কাছে ফিরে না যায় তাহলে তারা মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করবে, কারণ মেয়েকে নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তায় থাকতে চায় না তারা।
মেয়ের এক অভিভাবক মেয়ের অসুস্থতায় দেখতে আসেন, এবং তার স্বামী ওই অভিভাবকের সাথে অনেক ভালো আচরণ করে। কিন্তু অভিভাবক যিনি, তিনি তেমন একটা ভালো মতো নেন না, বা আচরণও করেন না। এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকে, মেয়ে যেতে চায় না, এতে তাকে অনেক বকাঝকা করে, রাগ করে চলে যায় আর বলতে থাকে বাবা মার সাথে তুমি ভালো আচরণ করোনি, অনেক মিথ্যা বলেছো তাদেরকে, প্রতারণা করেছো তাদের সাথে।
সবমিলিয়ে মেয়েও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে, সে কখনোই তার বাবা মা কে কষ্ট দিতে চায়নি। এদিকে মেয়ে/ওই বোনের স্বামী বলেন, এখন তোমার স্বামীর আদেশ নিষেধ শোনা ফরজ, মা বাবার বিষয়টা নফলও না। মেয়ের মনে হয়, সে তার বাবা মার পরিপূর্ণ হক্ব আদায় করতে পারেনি, অনেক কষ্ট দিয়েছে।

সে বুঝতে পারে না কী করবে, কীভাবে বাবা মা'র সাথে সম্পর্ক ঠিক করবে। বাবা মা'র জন্য তালাক নিবে নাকি ওমনই থাকবে সে কিছুই বুঝতে পারে না। এদিকে বাবা মা'র হয়ে কথা বললে স্বামী রেগে যায়, বলেন, অমন বাপ-মা ভক্তি থাকলে এ বাড়িতে কারো জায়গা হবে না। অন্যদিকে, মেয়ের বাপ মা তার সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সে এখন কী করবে?

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ-

“যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহবান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।” (ইবনে মাজাহ হা/১৮৫৩; সহীহাহ হা/১২০৩।)

ইফকের ঘটনায় মা আয়েশা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি চাওয়ার হাদিস:
তিনি বলেন:
أتأذن لي أن آتي أبوي

“(হে আল্লাহর রাসূল,) আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিবেন?” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)

لا يجوز للمرأة الخروج من بيت زوجها إلا بإذنه ، لا لوالديها ولا لغيرهم ؛ لأن ذلك من حقوقه عليها ، إلا إذا كان هناك مسوغ شرعي يضطرها للخروج

“কোন মহিলার জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া জায়েয নয়। পিতামাতা বা অন্য কারো নিকট নয়। কারণ এটি তার উপর স্বামীর হক। অবশ্য যদি শরিয়ত সম্মত বিশেষ কোনো কারণ থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।” (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ১৯/১৬৫)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
স্ত্রীর জন্য জরুরি হল, বিশেষ কোনো কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে স্বামীর নিকট অনুমতি নেয়া। স্বামী অনুমতি দিলে পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে এবং নিজেকে ফিতনা থেকে হেফাযতে রেখে স্ত্রী বাইরে যেতে পারে। 

https://ifatwa.info/2653/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী স্বামীর অনুমতি  ব্যাতিত স্ত্রীর জন্য নফল রোযা রাখা, নফল নামাজ পড়া,কুরআন তেলাওয়াত করা নিষেধ।   
(নাজমুল ফাতওয়া ৫/৩০৭) 

হাদীস শরীফে আছে,

إذا دعا الرجل زوجته لحاجته فالتأته، وإن  كانت على التنور

স্বামী যখন নিজ প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় (রান্নার কাজে) থাকে (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬০; সুনানে নাসাঈ, হাদীস : ৮৯৭১)।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত বোনের জন্য স্বামীর আদেশ নিষেধ মানা আবশ্যক। 
সুতরাং সে এক্ষেত্রে তার স্বামীর আদেশই মানবে।

(তবে ধীরে ধীরে হিকমতের সহিত বাবা মার সাথে যোগাযোগ শুরু করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...