এক বোনের বিয়ের প্রস্তাব আসে, পাত্র দ্বীনদার, হালাল উপার্জন এবং বড় চাকুরীওয়ালা। কিন্তু, পাত্রের আগের একটি বিয়ে এবং এক সন্তান আছে, যেই বিয়েটা ডিভোর্স হয়ে গেছে। বোনের অভিভাবক কিছুতেই রাজি নয়(প্রস্তাবটি সরাসরি বোনটিকেই দেওয়া হয়),কেননা তাদের মেয়ে অবিবাহিত এবং পাত্রের তুলনায় বয়সও অনেক কম, তারা মনে করে তাদের মেয়ে এই পাত্রের কাছে কিছুতেই সুখী হবে না। তারা বোনটিকে নিষেধ করে দেয় আর না এগোতে। কিন্তু, বোনটির সাথে ওই পাত্রের বেশ কিছু কথাবার্তা হয় ফোনালাপে, এতে করে বোনের মনে হয়, এই পাত্রই একমাত্র যোগ্য তার জন্য( বোনটিও দ্বীনদ্বার এবং পাত্রের সাথে কথা বলে তাঁর আচরণে মুগ্ধ হন)।
এরপর অভিভাবকদের না জানিয়েই বোনটি একরকম লুকিয়ে ওই পাত্রকে বিয়ে করে। তখন কথা হয় যে গোপনে বিয়েটা হচ্ছে হারাম থেকে বাঁচার জন্য, এরপর ওই বোন বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের জোর করবেন যেন তারা ওখানেই বিয়ে দেন, অর্থাৎ তারা জানবে না যে তাদের গোপনে বিয়ে হয়েছে। তাদের বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রী হয়নি, তখন বলা হয় গোপনীয়তার জন্য করা যাচ্ছে না, পরে করে নেওয়া যাবে। এছাড়া, বিয়ের আগে কথা হয়, পাত্রের যে আগের দিকের সন্তান আছে, সে কখনো তার বাবার কাছে আসবে না।
কিন্তু, কিছু সমস্যার জন্য বোনটি নিজেই স্বীকার করে যে তারা গোপনে বিয়ে করে ফেলেছে। এতে অভিভাবকরা প্রচন্ড কষ্ট পায়।
কিছুদিন বাদে, মেয়ের অভিভাবকরা সামলে নেয় এবং মেয়েকে বলে যে তোমরা দ্রুত রেজিস্ট্রি করে ফেল, এরপর আমরা বিয়েটা মেনে নিব।
কিন্তু, বোন/মেয়েটি কিছুদিন পর তার স্বামীর কাছে থেকে জানতে পারে যে, তার আগের স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়নি। কিন্তু স্বামীটি মন থেকেই আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে চান, কিন্তু কিছু আইনী জটিলতার জন্য একটু দেরি হচ্ছে(ব্যাপারটা লুকানোর কারণ হিসেবে স্বামী বলেন যে তিনি তাওরিয়া করেছিলেন, তার ২য় স্ত্রীকে দ্রুত কাছে পাবার জন্য, আর তখন তালাকের বিষয়টাও এমন ছিল যে যেকোনো দিন তালাক হয়ে যাবে, তাই ওরকম বলা, এজন্য উনি স্ত্রীর কাছে মাফও চান)। এরমধ্যে স্বামীর আগের পক্ষের বাচ্চাকে তার ১ম স্ত্রী রাখতে চান না, এবং স্বামীও মন থেকে চান তার বাচ্চা তার কাছে থাকুক। এতে বোনটি/২য় স্ত্রী টি অনেক কষ্ট পান, কেননা, বাচ্চা আসার কোনো কথাই ছিল না,এবিষয়ে তার স্বামী বলেন যে, বাচ্চা আনার কথা হলে তার থেকে অনুমতি নিয়েই করা হবে। তার স্বামী তাকে জোরও করেন না যে বাচ্চাটি তাকে নিতেই হবে, অথচ কষ্ট পান কিন্তু সেটা স্ত্রীর কাছে প্রকাশ করেন না। তিনি শুধু তার স্ত্রীকে তাওয়াক্কুল করতে বলেন, দোয়া করতে বলেন। বলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। এবং ওই বোনের স্বামীও তাকে খুব ভালোবাসেন। তাদের বিয়ের পর ওই বোন তার স্বামীর মাঝে কোনো প্রতারণা দেখতে পাননা। তিনিও তার স্বামীকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু ওই বোনের অভিভাবক এগুলো জানার পরে আর মেয়েকে ওখানে রাখতে চান না, তারা চান মেয়ে ওখান থেকে চলে আসুক। এবং মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে তারা খুব কষ্ট পান। কিন্তু মেয়ে/বোনটি কাউকেই কষ্ট দিতে চান না, তার অভিভাবক (মা/বাবা) বলেন যে মেয়ে যদি ওখান থেকে সবকিছু ছেড়ে তাদের কাছে ফিরে না যায় তাহলে তারা মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করবে, কারণ মেয়েকে নিয়ে আর দুঃশ্চিন্তায় থাকতে চায় না তারা।
মেয়ের এক অভিভাবক মেয়ের অসুস্থতায় দেখতে আসেন, এবং তার স্বামী ওই অভিভাবকের সাথে অনেক ভালো আচরণ করে। কিন্তু অভিভাবক যিনি, তিনি তেমন একটা ভালো মতো নেন না, বা আচরণও করেন না। এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার বলতে থাকে, মেয়ে যেতে চায় না, এতে তাকে অনেক বকাঝকা করে, রাগ করে চলে যায় আর বলতে থাকে বাবা মার সাথে তুমি ভালো আচরণ করোনি, অনেক মিথ্যা বলেছো তাদেরকে, প্রতারণা করেছো তাদের সাথে।
সবমিলিয়ে মেয়েও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ে, সে কখনোই তার বাবা মা কে কষ্ট দিতে চায়নি। এদিকে মেয়ে/ওই বোনের স্বামী বলেন, এখন তোমার স্বামীর আদেশ নিষেধ শোনা ফরজ, মা বাবার বিষয়টা নফলও না। মেয়ের মনে হয়, সে তার বাবা মার পরিপূর্ণ হক্ব আদায় করতে পারেনি, অনেক কষ্ট দিয়েছে।
সে বুঝতে পারে না কী করবে, কীভাবে বাবা মা'র সাথে সম্পর্ক ঠিক করবে। বাবা মা'র জন্য তালাক নিবে নাকি ওমনই থাকবে সে কিছুই বুঝতে পারে না। এদিকে বাবা মা'র হয়ে কথা বললে স্বামী রেগে যায়, বলেন, অমন বাপ-মা ভক্তি থাকলে এ বাড়িতে কারো জায়গা হবে না। অন্যদিকে, মেয়ের বাপ মা তার সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সে এখন কী করবে?