আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
153 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (45 points)

হযরত আদম আঃ আর তার স্ত্রী হাওয়া আঃ তারা দুইজন যখন সেই নিষিদ্ধ ফল খেতে গেছিলেন সেই ফল আর গাছ কিসের ছিল কুরআন আর হাদিসে কি কিছু আছে কি কারন অনেক জায়গায় আপেল এর কথা দেখেছিলাম এটা কি কুরআন হাদিস দ্বারা কি প্রমানিত কি ? 

 

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by


بسم الله الرحمن الرحيم


জবাবঃ- 

আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত কথা যে, আদম (আঃ) গন্দম (গম) গাছের ফল খেয়েছিলেন। কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং কুরআন বা হাদীসে কোথাও তা নেই। আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে আল্লাহ একটি বিশেষ বৃক্ষের কাছে গমন করতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তাঁরা শয়তানের প্ররোচনায় এ বৃক্ষ থেকে ভক্ষণ করেন। কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন স্থানে এ কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ বৃক্ষ বা ফলের নাম কোথাও বলা হয় নি। পরবর্তী যুগে ইহূদীদের গল্পকাহিনীর ভিত্তিতে মুফাস্সিরগণ গম, আঙুর, খেজুর... ইত্যাদি বিভিন্ন গাছের নাম বলেছেন। এগুলো সবই অনুমানভিত্তিক কথা। হাদীসে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি। মুমিনের দায়িত্ব হলো, এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, গাছের বা ফলের নাম জানা নয়। সর্বাবস্থায় এ সকল মানবীয় মতামতকে আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের (ﷺ) কথা বলে মনে করা যাবে না। (ইবনু কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া ১/১৯)

এ গন্দম ফল নিয়ে আরো অনেক বানোয়াট কথা আমাদের দেশের প্রচলিত কাসাসুল আম্বিয়া ও এ জাতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায়। আদমের মনে কূটতর্ক জন্মে, জিবরাঈল তা বের করে পুতে রাখেন, সেখান থেকে গন্দম গাছ হয় .... ইত্যাদি...। সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা।

বাইবেলে বলা হয়েছে যে, হাওয়া (আঃ) আগে ফল খান, এরপর আদম (আঃ)-কে প্ররোচিত করেন। এজন্য নারীকে জন্মগতভাবে অপরাধী বলে গণ্য করা হয়েছে (তীমথিয় ২/১২-১৪) কুরআন বা হাদীসে এভাবে কোথাও বলা হয় নি। কুরআনে সর্বদা ফলভক্ষণের জন্য আদমকে দায়ী করা হয়েছে।


তাফসির-এ মা'রেফুল কোরআনে আছে যে, 

 একটি নির্দিষ্ট গাছ সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হলো, এর কাছেও যেয়ো না। অর্থাৎ সেটির ভোগ পূর্ণভাবে পরিহার করবে। শয়তান আদম (আ.)-এর কারণে ধিকৃত ও অভিশপ্ত হয়েছিল। যেকোনো প্রকারে সুযোগ পেয়ে এবং এই গাছের উপকারাদি বর্ণনা করে তাঁদের উভয়কে সে গাছের ফল খেতে প্ররোচিত করল।নিজেদের এই বিচ্যুতির দরুণ তাঁদের আল্লাহপাক পৃথিবীতে নেমে যেতে নির্দেশ দিলেন এবং তাঁদের বলে দেওয়া হলো যে পৃথিবীতে বসবাস জান্নাতের মতো নির্ঝঞ্ঝাট ও শান্তিপূর্ণ হবে না, বরং সেখানে মতানৈক্য ও শত্রুতার উন্মেষ ঘটবে। ফলে বেঁচে থাকার সাধ পূর্ণভাবে লাভ করতে পারবে না। এখানে উল্লেখ্য যে হজরত আদম (আ.)-কে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে সাবধানও করা হয়েছিল যে শয়তান তোমাদের শত্রু, কাজেই সে যেন তোমাদের পাপে লিপ্ত করে না দেয়। এতদসত্ত্বেও হজরত আদম (আ.)-এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য হবে কি না তা বিবেচ্য বিষয়।

কেননা নবীগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে নবীগণের যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পরিশুদ্ধ থাকার কথা যুক্তি-বুদ্ধির দ্বারা এবং লিখিত ও বর্ণনাতীতভাবে প্রমাণিত। চার ইমাম ও উম্মতের সম্মিলিত অভিমতেও নবীগণ ছোট-বড় যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত ও পবিত্র। এ ধরনের ঘটনাবলি সম্পর্কে উম্মতের সর্বসম্মত অভিমত এই যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা অনিচ্ছাকৃত কারণে নবীদের দ্বারা এ ধরনের কাজ সংঘটিত হয়ে থাকবে। কোনো নবী (আ.) জেনেশুনে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহপাকের হুকুমের পরিপন্থী কোনো কাজ করেননি। এ ত্রুটি ইজতেহাদগত ও অনিচ্ছাকৃত এবং তা ক্ষমাযোগ্য।

এখানে উল্লেখ্য যে হযরত আদম (আ.)-কে পৃথিবীতে অবতরণ শাস্তিস্বরূপ ছিল না বরং এ ছিল আল্লাহপাকের এক বিশেষ উদ্দেশের পূর্ণতা সাধনের জন্য। অর্থাৎ বিশ্বে আল্লাহর খিলাফতের পূর্ণতাসাধন। এ জন্য এর সঙ্গে হেদায়েত প্রেরণার উল্লেখও রয়েছে, যা আল্লাহর খিলাফতের পদগত কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...