আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
3,913 views
in সালাত(Prayer) by (53 points)
reshown by
১.এক বোনের প্রশ্ন:
কোচিং সেন্টারে ৫টা পর্যন্ত পড়ায়।কিন্তু সেখানে নামাযের জায়গা নাই। বাসায় আসতে আসতে নিষিদ্ধ ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে করণীয় কি?
নিষিদ্ধ ওয়াক্তে সালাত আদায় করা নাকি কাজা করা?

২.সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত ও নিষিদ্ধ সময়ে নামায পড়লে শয়তানকে সিজদা দেওয়া হয়ে যায়-কথাটি কি সত্য?

৩.সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এই নিষিদ্ধ সময় কেন?

নিষিদ্ধ ওয়াক্তে নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

৪.সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে অস্ত যায়-এটা দ্বারা কি বুঝায়?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
আছরের সময়ে প্রাইভেট থাকলে,প্রাইভেটের অজুহাত দেখিয়ে নামাজ তরক করা,সেই অজুহাতে প্রতিনিয়ত  নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত তরক করা  জায়েজ হবেনা,বরং সেই শিক্ষকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আছরের নামাজ পড়তে হবে।

যদি শিক্ষক ছুটি না দেয়,বা নামাজের ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে অন্যত্রে প্রাইভেট পড়তে হবে। 
,
যদি মা বাবা জোড় করে,তাহলে মা বাবার কথা শোনা যাবেনা।
মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ পড়াকেই প্রাধান্য দিতে হবে। 

কারনে হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ». رَوَاهُ فِىْ شَرْحِ السُّنَّةِ

নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই। 

শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩৬৯৬, সহীহ আল জামি‘ ৭৫২০।

 وَقَالَ لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ 

তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার অবাধ্যতায় কারো আনুগত্য করা যাবে না; আনুগত্য শুধু ভাল কাজে করতে হবে।
(নাসায়ী ৪২০৬,সহীহাহ ১৮১, সহীহ আবু দাউদ ২৩৬০, সহীহ জামে' আস-সগীর ৭৫১৯।)

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত প্রাইভেট পরিবর্তন করতে হবে।
বা সময় চেঞ্জ করতে হবে।     

★★তবে প্রশ্নে উল্লেখিত ওয়াক্তে ঐ দিনের আছর নামাজ আদায় করলে সেটি আদায় হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ

عن أبي هريرة: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أدرك من الصبح ركعة قبل أن تطلع الشمس، فقد أدرك الصبح، ومن أدرك ركعة من العصر قبل أن تغرب الشمس، فقد أدرك العصر»

তরজমাঃ-

যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন ফজরের নামাযকে পেয়ে গেল।যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন আসরের নামাযকে পেয়ে গেল।(সহীহ বুখারী-৫৭৯,সহীহ মুসলিম-৬০৮)

কেহ যদি সূর্য হলুদ হয়ে যাওয়ার পর ঐ দিনের আছর নামাজ পড়বে,তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

এমনকি কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ঐ দিনের আসরের নামাযে দাড়িয়ে যায়,নামাজ শুরু করে, অতঃপর নামাযের মধ্যেই সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে না।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ৩/১৫৪)  

فإذا غربت الشمس في أثناء الصلاة لم يفسد العصر؛ لأنه ما بعد الغروب كامل كما دل فيه لأن ما وجب ناقصا يتادى كاملا بطريق الأولى

যদি আছরের নামাযের সময় সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে ঐ আছরের নামায ফাসিদ হবে না।কেননা সূর্যাস্তর পর সময়টা কামিল(ত্রুটিহীন)।যেহেতু নামায শুরু করার পূর্ব মূহুর্তটা নামায ফরয হওয়ার সবব বা কারণ।তাই বলা যায় তার উপর নাক্বিসভাবে তথা ত্রুটিপূর্ণ ওয়াক্তে বা অবস্থায় নামায ফরয হয়েছে।আর যে নামায ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় ফরয হয়েছিলো এবং শুরুও হয়েছিলো,সে নামায কামিল ওয়াক্ত তথা ত্রুটিহীন অবস্থায় উত্তমভাবে আদায় হবে।(বেনায়া শরহে হেদায়া-২/২৩-শামেলা)
,
★★সুতরাং কেহ যদি ঐ দিনের আছরের নামাজ পড়তে চায়,এবং ছহীহ ভাবে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজের কার্যক্রম শুরু করে,তারপরেই যদি সূর্য ডুবে,যায়,তাহলে এমতাবস্থায় সে যদি ঐ নামাজ সম্পন্ন করে,তাহলে নামাজ হয়ে যাবে। 

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ  
إلا عصر یومہ ذلک ، فإنہ یجوز اداء ہ عند الغروب
 الفتاوی الہندیۃ: ۱/۵۲۔

যার সারমর্ম হলো ঐ দিনের আছরের নামাজ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময়েও আদায় চালিয়ে যাওয়া যাবে।
নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
,
(২.৪)
সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত ও নিষিদ্ধ সময়ে নামায পড়লে শয়তানকে সিজদা দেওয়া হয়ে যায়-কথাটি হাদীস দ্বারা প্রমানীত।  

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: لَا يَتَحَرّى أَحَدُكُمْ فَيُصَلِّيَ عِنْدَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَلَا عِنْدَ غُرُوبِهَا وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: إِذَا طَلَعَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَدَعُوا الصَّلَاةَ حَتّى تَبْرُزَ. فَإِذا غَابَ حَاجِبُ الشَّمْسِ فَدَعُوا الصَّلَاةَ حَتّى تَغِيْبَ وَلَا تَحَيَّنُوا بِصَلَاتِكُمْ طُلُوْعَ الشَّمْسِ وَلَا غُرُوْبَهَا فَإِنَّهَا تطلع بَين قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ.

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সূর্য উদয়ের ও অস্ত যাওয়ার সময় সলাত আদায়ের জন্য অন্বেষণ না করে।

একটি বর্ণনার ভাষা হলো, তিনি বলেছেন, ‘‘যখন সূর্য গোলক উদিত হয় তখন সলাত  ত্যাগ করবে, যে পর্যন্ত সূর্য বেশ স্পষ্ট হয়ে না উঠবে। ঠিক এভাবে আবার যখন সূর্য গোলক ডুবতে থাকে তখন সলাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে, যে পর্যন্ত সূর্য সম্পূর্ণভাবে ডুবে না যায়। আর সূর্য উঠার ও অস্ত যাওয়ার সময় সলাতের ইচ্ছা করবে না। কারণ সূর্য শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদয় হয়।

(বুখারী ৫৮৫, ৩২৮৩, মুসলিম ৮২৮,মিশকাতুল মাসাবিহ ১০৩৯)
,
এই হাদীস গুলো ব্যপারে মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বিভিন্ন মত পেশ করেছেন।
  
★আলোচিত হাদীসের মর্ম হলো সলাত আদায়ের জন্য সূর্যোদয়ের ও সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। ‘কেননা তা শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝ দিয়ে উদয় হয়’। সূর্যোদয়ের সময় শায়ত্বন (শয়তান) তার বরাবর দাঁড়িয়ে থাকে। সূর্য পূজারীরা সূর্যোদয়কালে যখন সূর্যকে সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করে তখন ঐ সাজদাহ্ শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্যই হয়ে থাকে। যাতে মু’মিনের ‘ইবাদাত সূর্য পূজারীদের সাথে সাদৃশ্য না হয় এজন্য উক্ত সময়ে সলাত আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে।

★ঐ সময়ে শয়তানের দুই জামাতের এক জামাতকে পাঠানো হয় মানুষকে গোমরাহ করার জন্য।
,
★ঐ সময়ে সূর্যের ইবাদত কারীদের উপর শয়তান বিশেষ ভাবে থাকে।
,
★কেহ কেহ বলেছেন যে এটার দ্বারা  প্রকৃত অর্থই উদ্দেশ্য। 
ঐ সময়ে সূর্য এর সামনে শয়তান দাঁড়িয়ে যায়,যাতে সেই সময়ে যেই কাফেররা সূর্যের সেজদাহ করে,সেটা শয়তানের জন্যেও সেজদাহ হয়ে যায়।
(মিরকাতুল মাফাতিহ ৮/২২২ নফহাত ২/৩০৩)
,
,
(০৩)
সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এই নিষিদ্ধ সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাদীসের কারনে।   

হাদীস সূত্রে জানা যায়, তিন সময়ে নামাজ পড়া নিষেধ।  

উকবা বিন আমের জুহানী রাযি. বলেন,
ثَلاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا : حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ

তিনটি সময়ে রাসুল ﷺ আমাদেরকে নামাজ পড়তে এবং মৃতের দাফন করতে নিষেধ করতেন। সূর্য উদয়ের সময়; যতোক্ষণ না তা পুরোপুরি উঁচু হয়ে যায়। সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময় থেকে নিয়ে তা পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া পর্যন্ত। যখন সূর্য অস্ত যায়। (সহীহ মুসলিম ১৩৭৩)

অন্য হাদীসে আরো দুই সময়ে নামাজ পড়ার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, আমি রাসুল ﷺ -কে বলতে শুনেছি,
لا صَلاةَ بَعْدَ الصُّبْحِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ وَلا صَلاةَ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغِيبَ الشَّمْسُ
ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নামাজ নেই। (বুখারী ৫৫১)
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 391 views
...