আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,121 views
in সালাত(Prayer) by (24 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আসরের নামাজের আউয়াল ওয়াক্ত নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। কিন্তু আমাদেরতো সঠিকটা জেনে সেই ওয়াক্তে নামাজ পড়া উচিত। এটা নিয়ে আমার দু'টি প্রশ্ন আছে-

১. "আসরের নামাজ দেরী করে পড়া ভালো, যেহেতু এর পরে আর কোনো নফল স্বলাত নেই।" এই মতটি কি সঠিক?

২. আসরের স্বলাতের সঠিক আউয়াল ওয়াক্ত কোনটি? শাফেয়ী মত অনুযায়ী ৩ঃ১৪ নাকি হানাফি মত অনুযায়ী ৪ঃ৪০।
নামাজের আউয়াল ওয়াক্ত নিয়েতো এরকম মতভেদ বাইরের দেশগুলোতে নেই। এখন আমি যদি হানাফি মাযহাবের অনুসারী হই তবে যদি কোনো প্রয়োজনীয়তা এসে যায় আমি আসর ৩ঃ১৪ তে আদায় করতে পারবো?
by

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على النبي الأمين وعلى آله وصحبه اجمعين

প্রশ্নঃ হাদিসে আওয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে কিন্তু আমাদের সমাজে সলাতগুলোকে ডিলে করে আদায় করা হয়ে থাকে বিশেষ করে আসরের সলাত। এর কারণ কি? আর আসরের সলাত কখন আদায় করলে আমরা সঠিক সময়ে সলাত আদায় করতে পারবো?

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ জী আপনি ঠিকই বলেছেন। রসূলুল্লাহ্ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, اي العمل احب الى الله قال الصلاة على وقتها কোন ‘আমালটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম? প্রশ্নের উত্তরে রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন “অভিষ্ট সময়ের মধ্যে সলাত আদায় করা।” [সহিহ বুখারি ৫২৭, সহিহ মুসলিম ৮৫]

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সলাতের জন্য যে ওয়াক্ত নির্ধারিত আছে তখনই সলাত আদায় করতে হবে। এ হাদিসের ব্যাখ্যার মধ্যে ইমাম নববী (রহ.) বলেন, আস সলাতু ‘আলা ওয়াক্তিহা এর অর্থ হচ্ছে, যে ওয়াক্ত বান্দার কাছে চাওয়া হয়েছে সলাত আদায় করার জন্য সে ওয়াক্তেই সলাত আদায় করা। আর সেই ওয়াক্তটা রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলে দিয়েছেন যে কখন সলাতের অভিষ্ট ওয়াক্ত হবে। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসাইমান (রহ.) হাদিসে একথা বলা হয়নি যে, সলাতের ওয়াক্তের মধ্যে সলাত আদায় করা। বরং বলা হয়েছে মাতলুব বা কাংক্ষিত সময় সলাত আদায় করা তাই রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর ‘আমাল থেকে যায় তিনি কখনো তা’খির করেছেন আবার কখনো একেবারে আওয়াল ওয়াক্তে আদায় করেছেন। তবে ইশার সলাতকে তা’খির করার কথা রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন। সুতরাং কারো যদি সুযোগ থাকে বা তিনি যদি চান তাহলে তিনি সলাতুল ইশাকে তা’খির করতে পারবেন বা দেরি করে আদায় করতে পারবেন। প্রচন্ড গরমের সময়ও রসূলুল্লাহ্ ﷺ যোহরের সলাতকে তা’খির করতে বলেছেন। আর বাকি সলাতগুলো নাবী ﷺ এর হাদী অনুযায়ী বা নির্দেশনা অনুযায়ী সময়মত আদায় করাটাই মূলত বিধান। তাই আওয়াল ওয়াক্তে সলাত পড়াটাই উত্তম এ ব্যাপারে কোনো ‘আলেমের দ্বিমত নেই। কিন্তু কেউ যদি কোনো কারণে তা’খির বা দেরি করে আর সেটা যদি সলাতের যে নির্ধারিত ওয়াক্ত রয়েছে সে ওয়াক্তের মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে তার সলাত হয়ে যাবে এবং এটি তার জন্য জায়েয। এ ব্যাপারেও ‘আলেমদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তিনি উত্তম কাজটি করতে পারেন নি।

যোহরের সলাতের ওয়াক্তের মধ্যে ‘আলেমদের দ্বিমত রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে ২ মিসেল পর্যন্ত যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে; ২ মিসেলের পরপরই আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। যদিও এই মর্মে সুস্পষ্ট কোনো সহিহ হাদিস পাওয়া যায়নি এবং এটি একটি ইজতিহাদী বিষয়। এই কারণেই মূলত একদল লোক আসরের সলাতকে দেরিতে অর্থাৎ ২ মিসেলের পরে আদায় করে থাকেন। ১ মিসেল বলা হয়ে থাকে কোনো বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া আর দুই মিসেল বলা হয়ে থাকে কোনো বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়াকে।

কিন্তু আমরা যদি রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর হাদিসগুলো একসাথ করে দেখি তাহলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে যে, সলাত আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ যোহরের সলাতের ওয়াক্ত মূলত এক মিসেল পর্যন্ত পরিপূর্ণ থাকে এবং এক মিসেল শেষ হওয়ার পরপরই আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের বক্তব্য এমনকি হানাফি মাযহাবের দুইজন শ্রেষ্ঠ ‘আলেম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আশ শাইবানী (রহ.) ও ইমাম আবু ইউসূফ (রহ.) এ দুজনও এ মতটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এটাই স্পষ্ট হয় যে, এই বক্তব্যটাই মূলত দলিলের দিক থেকে শক্তিশালী। আর রসূলুল্লাহ্ ﷺ কখনো আসরের সলাতকে তা’খির করতে বলেননি এটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি কেউ ডিলে করে থাকেন অথবা ইজতিহাদের কারণে যদি ডিলে করে থাকেন এতে তাদের সলাত হয়ে যাবে। কিন্তু উত্তম হচ্ছে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে বিষয়টি উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته

মানুষকে ইনসাফের সাথে ফতোয়া দিতে হবে আল্লাহর আদেশ, নচেৎ চুপ থাকতে হবে।

1 Answer

0 votes
by (697,400 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আসরের সালাত দুই মিছিলের পর না এক মিছিলের পর এ নিয়ে উলামায়ে আহনাফদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে,এবং দুই অভিমতের উপর-ই ফাতাওয়া রয়েছে, তবে ইবনে আবেদিন শামী সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম মনে করেন দুই মিছিলের পর-ই সুন্নাহ সম্মত ও উত্তম ।
এ সম্পর্কে উম্মে সালামাহ রাঃ থেকে বর্ণিত আছে
161 عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدَّ تَعْجِيلًا لِلظُّهْرِ مِنْكُمْ، وَأَنْتُمْ أَشَدُّ تَعْجِيلًا لِلْعَصْرِ مِنْهُ»: وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الحَدِيثُ عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ نَحْوَهُ،
[حكم الألباني] :)صحيح (
ترمذي 
উম্মে সালামাহ রাঃ বলেনঃনবী কারীম সাঃসর্বদাই জোহরের নামায তারাতারি পড়তেন(এবং আসর দেরীতে দুই মিছিলের পর পড়তেন) অথচ তোমরা আসরের নামায তারাতারি পড়ে নাও।
আসরের নামায দুই মিছলের(আসল ছায়া ব্যতীত প্রতিটা জিনিষের দিগুন ছায়া) পর উত্তম নিম্নোক্ত হাদীসের দিকে তাকালে সেটা অনায়াসে বুঝা যায়। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/705

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রত্যেক মুসলমানের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা ফরয,নির্দিষ্ট সময় মানে প্রত্যেক নামাযের নির্দিষ্ট ওয়াক্ত,আর নামাযের ওয়াক্ত সূর্যের সাথে সম্পর্কিত।সূর্যের নড়াচড়াই নামাযের সময়কে নির্ধারণ করে অর্থাৎ সূর্যের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকের গতিবিধিকে কেন্দ্র করে নামাযের ওয়াক্ত নির্ণয়  করা হয়,তাই ওয়াক্তের পূর্বে নামায নাময আদায় হবেনা,এর থেকে বিরত থাকা সবার উচিৎ ।
হানাফি মাযহাবে গ্রহণযোগ্য মতানুসারে আসর দুই মিছিলের পর পড়া মুস্তাহাব।তবে এক মিছিলের পর যদি কেউ পড়ে নেয় তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণত উত্তম হচ্ছে আসরকে দুই মিছিলের পর পড়া।(আহসানুল ফাতাওয়া ২/১১৩)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...