আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
195 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আজকের প্রশ্নটি আমার এক আত্মীয়ার পক্ষ থেকে। আমি ওনার ভাষায় তুলে ধরছি ইংশাআল্লাহ।
"আমি একজন প্রবাসীর স্ত্রী। আমাদের বিয়ের বয়স ১৩+ বছর। এতগুলো বছরের মধ্যে উনি আমার সাথে ছিলেন মাত্র ১১ মাসের মতো (তিন বার বাড়ি এসে ঘুরে গেছেন)। ওনারা ৭ ভাই বোন। ৪ভাই,৩বোন। উনি ভাই বোনদের মধ্যে ৪নম্বর। বিয়ের শুরু থেকেই শশুর বাড়ির সবার কাছ থেকেই নানারকম অন্যায় আচরণ পেয়ে এসেছি (সে বিবরণ দিতে চাই না। বিবরণ দিতে গেলে বেশ লম্বা কতা হয়ে যাবে।)। বিয়ের চার বছর পর আমার দেবর ভাসুরদের পরিবার আলাদা হয়। শশুর শাশুরি আমার সাথে থাকতেন। কাউকেই সেবা যত্নে কোনো ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু প্রতিদানে অন্যায় আচরণ পেয়েছি সবসময়।

আমার দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ের বয়স ১১+, ছেলের বয়স ৭+। মেয়ে পড়াশোনার বয়সে আসতেই আমি নিয়ত করি ওকে মাদ্রাসায় পড়াবো। প্রথমে নুরানি এরপর হিফয এরপর কিতাবখানা। তো মেয়েকে হিফয পড়াতে আমাকে গ্রাম ছেড়ে শহরে বাসা নিতে হয়(মাদ্রাসার কাছাকাছি)। এরপর থেকে শশুর বাড়ির সবার আচরণ আরও বেশি খারাপ হতে থাকে। কারণ আমি নিজেও পরিবর্তন হতে চেষ্টা করি। দ্বীনের পথে চলা শুরু করি,পর্দা করা শুরু করি। নন্দাইদের সামনে যাওয়া বন্ধ করি। এই বিষয়গুলো ওনারা কেউ মানতে পারতেছিলো না। তাই শশুরের ছুতায় প্রেশার দিতে থাকে বাড়ি ফেরত যাওয়ার জন্য(শাশুরি মারা গেছেন) । আমি তখন শশুরকে আমার কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু উনিও সেখানে গিয়ে নানান অশান্তি শুরু করেন।

এরপরে আমাকে আমার স্বামী প্রস্তাব দেন বাড়ি চলে যেতে,মেয়েকে বাসায় হাফেযা রেখে পড়াবেন। হাফেযার বেতন,খোরাকী উনিই দিবেন। আর বলেন,আমি মাদ্রাসার মতো করেও সব ম্যানেজ করতে পারবো। মানে আমাকে বাসায়ই হিফয মাদ্রাসা করে দিবেন বলেন আরকি।

তো আমি রাজি হই এবং বাড়ি এসে হাফেযা খুঁজে মাদ্রাসা চালু দেই। আল্লাহর রহমতে আমার মাদ্রাসা বেশ ভালোই চলছিল। অনেক ছাত্রী হয়েছিল, পড়াশোনাও ভালো চলছিল।

কিন্তু এসব আমার শশুর বাড়ির কারোরই সহ্য হচ্ছিল না। কারণ বাসায় মহিলা মাদ্রাসা হওয়াতে ওনাদের বেড়াতে অসুবিধা হচ্ছিল। (এরকম একটা দ্বীনি পরিবেশে তো আর যাচ্ছে তাই ভাবে চলা যায়না তাইনা)। যদিও আমি ওনাদের সাথে কখনোই কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করিনি। ওনারা আসলে পর্দার সাথে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি মেহমানদারীর।

যাইহোক এরকম সময়ে,আমি ফেসবুকে একজন আলেমের খোঁজ পাই। যেহেতু আমি জেনারেল লাইনের ছিলাম,মাদ্রাসা চালাতে আর নিজে দ্বীনি পথে চলতেও মাঝেমধ্যেই দ্বিধায় পড়ে যেতাম। শরিয়তের সকল বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলাম বলে ঐ আলেমের থেকে বিভিন্ন মাসয়াল জেনে নিতাম। প্রথমে আমাদের কথা শুধু প্রশ্ন আর উত্তরেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা শয়তানের ধোঁকায় পরে নফসের গোলামী করতে থাকি। টুকটাক কথাবার্তা থেকে আমাদের দ্বীনি ভাইবোনের সম্পর্ক হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন ঐ আলেম আমাদের এলাকায় চলে আসে আর আমাকে রিকুয়েষ্ট করতে থাকে বাসায় আসার জন্য। তখন আমি ওর জোরাজুরিতে খালাতো ভাইয়ের পরিচয়ে বাসায় আনি। এসব আমার মাদ্রাসার ম্যাডাম সবই জানতো। আমাদের মধ্যে কোনো অশালীন সম্পর্ক ছিল না। আর আমি ওর সামনেও বেপর্দায় যাই নি।
তো এরকম টুকটাক বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ঐ আলেম আর আমি একে অন্যের প্রতি দূর্বল হয়ে পরি। আর আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আলেম অনেক বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে দেখা করার জন্য, কথা বলার জন্য জোর করতে থাকে(অশালীন কোনো কাজের প্রস্তাব না)। এই সময়ে এসে আমি আমার হুশ ফিরে পাই। আমি বুঝতে পারি যে,আমি ভুল করছি,জঘন্য পাপ করছি। তখন আমি আমার স্বামীকে সব সত্যি কথা খুলে বলি,অনেক মাফ চাই। ওনাকে দেশে চলে আসতে বলি। কিন্তু উনি আমাকে আজেবাজে কথা বলতে থাকে। আর বলে, "তুই যদি গেটের বাইরে আর এক পা দেও,তাহলে তোর জন্য আমার ঘরের দরজা বন্ধ। আমার ঘরে আর তোর জায়গা হবে না।" এর কিছুদিন পর ঐ আলেম আমাকে আবার জোর করতে থাকে দেখা করার জন্য। আমাকে হুমকি দিতে থাকে,যদি দেখা না করি তাহলে বাড়িতে চলে আসবে আর লোক জানাজানি করে দিবে। তখন আমি আর উপায় না পেয়ে আমার স্বামীর কাছ থেকে বিভিন্ন ছুতায় বাইরে যাওয়ার পারমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু উনি পারমিশন না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আমাকে ঘরের বাইরে যেতে হয় দেখা করতে। আমার স্বামী আমার বািরে যাওয়ার কথা শুনে ফোনে আমাকে যা তা ব্যবহার করতে থাকে। আর বলে, "তুই আর আমার ঘরে উঠবি না। তোর জন্য আমার ঘরে জায়গা নাই। ছেলে মেয়ে ওরা(ওনার ভাই বোনরা) দেখবে।"

এসব কথা আমার পাশে বসে ঐ আলেম শুনে বলে, "তোমাদের তালাক হয়ে গেছে। " তখন আমি ওনার(আলেম) সাথে ঝগড়া করে আমার বাবার বাড়ি চলে আসি।আমার স্বামি তখন আমাদের বাবার বাড়ির সবাইকে ফোন করে আমার ব্যাপারে যা না তাই বলে। বাড়ি নিয়া থাকছি,হোটেলে থাকছি এসব। আর আমার কাছে ডিভোর্স চাইতে থাকে। আমার উত্তর ছিল "তুমি দাও"। আর উনি বলত " তুই দিবি"। এরকম সময়ে আমি মাদ্রাসার কথা চিন্তা করে সব রাগ জেদ ভুলে আবার বাড়ি যাই,মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করি। কিন্তু সবাই তখন উঠেপড়ে লাগে মাদ্রাসা বন্ধ করার জন্য। এমনকি বন্ধ করেও দেয়। তাও চুপচাপ ছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী প্রত্যেকবার ফোন দিয়ে আজেবাজে কথা বলত,সবসময়। ফোনে বলত উনি আর বাকি সময় বলত ওনার বাবা(শশুর)। এল পর্যায়ে আমও অতিষ্ট হয়ে বাবার বাড়ি চলে যাই। এবং কিছুদিন পর ঢাকায় যাই মুয়াল্লিমা ট্রেনিং দিতে। ছেলেমেয়ে নিয়েই। এরপর একটা কিতাবখানায় চাকরিও নেই। এই সময়ের মধ্যে আমার স্বামী অন্তত দশবার আমার কাছে ডিভোর্স চাইছে,আমি বলতাম আমার সময় হলে দেব। একটা সময় গিয়ে অতিষ্ট হয়ে আমি ডিভোর্স পাঠিয়ে দেই। তখন ঐ আলেম বলে যে আমাদের তালাক হয়ে গেছে। ডিভোর্স দেওয়া ছাড়াই নাকি আমাদের তালক হয়ে গেছে। তালাকে কেনায়া।
এরপর ঐ আলেম আমাকে বিয়ে করে সেচ্ছায়। কিন্তু আমরা আলাদা বাসা নেই না,একসাথে থাকি না,যাতে আমি আমার আগের স্বামীর কাছে আগের মতোই ফিরতে পারি। আমি ওকে বলছি "তোমার জন্য আমার সংসার ভাঙছে। তাই তুমি আমাকে হিল্লা বিবাহ করবা।" ও বলে,"আমি বিয়ে করতে পারি, কিন্তু হিল্লা নিয়তে না। তাহলে বিয়ে হবে না। আগে বিয়ে হোক,পরে একসাথে থেকে চিন্তা করা যাবে সংসার করবো কি না"।
তখন আমি ভাবি যে,ও যেহেতু একটা অবিবাহিত ছেলে,আমাকে দুইটা বাচ্চাসহ ও সংসার করবে না। তাই বিয়ে করলাম। হালাল ভাবে আমরা একসাথে থাকছি। যে মাদ্রাসায় চাকরি করতাম সেখানের মুহতামিমকে বলছি পর সে আমাদের একটা রুম দিয়েছে থাকার জন্য। ও ২/৩ সপ্তাহ পর আসতো।
কিন্তু মুহতামিম সব বিষয় শিওর হওয়ার জন্য আমার আগের স্বামীর নাম্বার যোগার করে যোগাযোগ করে। আমার স্বামী সব কিছু খুলে বলে এবং টাকার লোভ দেখিয়ে আলেমের কাছ থেকে তালাক নিয়ে দিতে বলে। তখন মুহতামিম ওকে(আলেম) খবর দেয়। ও আসলে পরে পুলিশ দিয়ে ওকে অনেক মারধর করে আর জোর করে মুখে একসাথে তিন তালাক দেওয়ায়।

ওখান থেকে বের হওয়ার পর ও(আলেম) আমাকে বলে, সে আমাকে তালাক দেয়নি। ওটা জোর করায় মুখে উচ্চারণ করছে, নিয়ত ভিন্ন ছিল।এটাকে নাকি জবরান তালাক বলে। মানে জানের ভয়ে মুখে তালাক দিছে কিন্তু নিয়ত ভিন্ন ছিল।

শায়েখ আমি একজন আল্লাহর নাফরমান বান্দি। শয়তানের প্ররোচনায় নফসের গোলামী করে এত এত গুনাহ করে ফেলেছি। আমি এখন প্রচন্ড রকমের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আমি কি করে ফেললাম এসব? এখন কি করবো? কি কটা উচিত আমার?

বর্তমানে আমি আমার বাবার বাড়িতে আছি। এখন ঐ আলেমও আমাকে নিতে চায়। তার দাবি সে তালাক দেয়নি,তালাক হয়নি। আর আমার আগের স্বামীও আমাকে নিতে চায় বাচ্চাদের মুখ চেয়ে (যদিও সে এখন বিয়ে করছে,কিন্তু তাও নিতে চায়)।

শায়েখ,আমি দ্বীনের হুকুম আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। অনুগ্রহ করে আমাকে একটু দোয়ায় রাখবেন। আর আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিয়ে আমাকে সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবেন ইংশাআল্লাহ। আমার প্রশ্নঃ

১. প্রথম স্বামীর সাথে কি আমার তালাক হয়ে গেছে?
২. ঐ আলেমের সাথে আমার বিয়ে কি সহিহ ছিল?

৩. ঐ আলেমের তালাক কি কার্যকর? মানে ওনার সাথে কি আমার তালাক হয়ে গেছে?
৪. বর্তমানে এখন আমার কি করা উচিৎ?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ شِهَابٍ يَقُولُ فِي الرَّجُلِ يَقُولُ لِامْرَأَتِهِ بَرِئْتِ مِنِّي وَبَرِئْتُ مِنْكِ إِنَّهَا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ بِمَنْزِلَةِ الْبَتَّةِ قَالَ مَالِك فِي الرَّجُلِ يَقُولُ لِامْرَأَتِهِ أَنْتِ خَلِيَّةٌ أَوْ بَرِيَّةٌ أَوْ بَائِنَةٌ إِنَّهَا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ لِلْمَرْأَةِ الَّتِي قَدْ دَخَلَ بِهَا وَيُدَيَّنُ فِي الَّتِي لَمْ يَدْخُلْ بِهَا أَوَاحِدَةً أَرَادَ أَمْ ثَلَاثًا فَإِنْ قَالَ وَاحِدَةً أُحْلِفَ عَلَى ذَلِكَ وَكَانَ خَاطِبًا مِنْ الْخُطَّابِ لِأَنَّهُ لَا يُخْلِي الْمَرْأَةَ الَّتِي قَدْ دَخَلَ بِهَا زَوْجُهَا وَلَا يُبِينُهَا وَلَا يُبْرِيهَا إِلَّا ثَلَاثُ تَطْلِيقَاتٍ وَالَّتِي لَمْ يَدْخُلْ بِهَا تُخْلِيهَا وَتُبْرِيهَا وَتُبِينُهَا الْوَاحِدَةُ قَالَ مَالِك وَهَذَا أَحْسَنُ مَا سَمِعْتُ فِي ذَلِكَ

মালিক (রহঃ) বলেনঃ তিনি ইবন শিহাব (রহঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছেন, যে ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে বলিলঃ “আমার তোমা হইতে দায়িত্বমুক্ত হইয়াছি। তুমিও আমা হইতে দায়িত্বমুক্ত।” ইহা দ্বারা তালাকাই আল-বাত্তা-এর মতো তিন তালাক প্রযোজ্য হইবে।

যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীকে বলিলঃ (أَنْتِ خَلِيَّةٌ أَوْ بَرِيَّةٌ) “তুমি দায়মুক্ত” (أَنْتِ بَائِنَةٌ) “তুমি আমা হইতে পৃথক।” মালিক (রহঃ) বলেনঃ সে স্ত্রী যাহার সঙ্গে সহবাস করা হইয়াছে এইরূপ হইলে তবে তাহার স্বামীর উপরিউক্ত বাক্যগুলির দ্বারা তাহার উপর তিন তালাক বর্তাইবে। আর যদি সেই স্ত্রী এমন হয় যাহার সহিত সহবাস করা হয়নি, তবে ধর্মত স্বামীকে বিশ্বাস করা হইবে এবং তাহার নিকট জিজ্ঞাসা করা হইবে-সে উপরিউক্ত বাক্যগুলি দ্বারা এক তালাক উদ্দেশ্য করিয়াছে, না তিন তালাক। যদি সে এক তালাক উদ্দেশ্য করিয়াছে বলিয়া প্রকাশ করে তাহা হইলে এই বিষয়ে সেই ব্যক্তিকে হলফ দেওয়া হইবে। (যেহেতু স্বামীর উক্তির দ্বারা স্ত্রীর প্রতি এক তালাক বায়েন প্রযোজ্য হইয়াছে, তাই পুনর্বিবাহ ছাড়া স্বামী সেই স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে পারবে না) তাই সে বিবাহের প্রস্তাবকারী হিসাবে অন্য লোকদের মতো একজন বলিয়া পণ্য হইবে। ইহার কারণ এই যে, যে স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করা হইয়াছে সেই স্ত্রী তিন তালাক ছাড়া দায়িত্বমুক্ত বা স্বামী হইতে পৃথক হইবে না। আর যাহার সহিত সঙ্গম হয় নাই সেই স্ত্রী এক তালাক দ্বারা দায়িত্বমুক্ত ও পৃথক হইয়া যায়।

মালিক (রহঃ) বলিয়াছেনঃ এ বিষয়ে যাহা আমি শুনিয়াছি তন্মধ্যে ইহাই আমার নিকট উত্তম।
(মুয়াত্তা মালিক ১১৬৫)

ফাতওয়ার কিতাবে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
২য় প্রকার,কেনায়া বাক্য।
এর দ্বারা তালাক হবেনা,কিন্তু তালাকের নিয়ত অথবা অবস্থার ভিত্তিতে তালাক হবে। কেনায়া বাক্য দুই প্রকার। এর মধ্যে তিনটি শব্দ এমন আছে, যার দ্বারা  তালাকে রজয়ী পতিত হয়। 
সেগুলো হলোঃ- তুমি ইদ্দত পালন করো,তুমি তোমার গর্ভাশয় মুক্ত করো,তুমি এক।

আর কেনায়া তালাকের অন্যান্য শব্দ,যেক্ষেত্রে তালাকের নিয়ত করলে বায়েন তালাক হয়। তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাক পতিত হয়। 
যদি দুই তালাকের নিয়ত করে,সেক্ষেত্রে এক তালাক পতিত হয়।
যেমনঃ- তুমি বিচ্ছিন্ন, তুমি সম্পর্ক মুক্ত,তুমি ভিন্ন,তুমি হারাম,তুমি শুণ্য,তুমি মুক্ত,তোমার রশি তোমার কাঁধে,তুমি তোমার পরিবারবর্গের সাথে মিলিত হও,আমি তোমাকে তোমার পরিবারের জন্য হেবা-দান করলাম,আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম,আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম,তোমার বিষয় তোমার হাতে,তুমি আযাদ,তুমি ঘোমটা পড়,তুমি ওড়না দ্বারা নিজেকে আবৃত করো,তুমি আড়াল হও (পর্দা করো), তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও,তুমি দন্ডায়মান হও (দাঁড়িয়ে যাও), তুমি অন্য স্বামী খুজো।
স্বামীর যদি এখানে নিয়ত না থাকে,তাহলে এ সব বাক্য দ্বারা তালাক হবেনা। তবে মুযাকারায়ে তালাকের ক্ষেত্রে হলে কাযা'আন তালাক হবে। দিয়ানাতান তালাক হবেনা।
(কুদুরী ৩৬৩.৩৬৪. হেদায়া শরহুল বিদায়াহ ১/২৪১,শরহে বিকায়াহ ২/৭৭)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনার স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় আপনাকে বলেছিলো,
"তুই আর আমার ঘরে উঠবি না। তোর জন্য আমার ঘরে জায়গা নাই। ছেলে মেয়ে ওরা(স্বামীর ভাই বোনেরা) দেখবে।"

এটি তালাকের কেনায়া বাক্য যেমনঃ- তুমি বিদূরিত হও, তুমি বের হয়ে যাও,তুমি চলে যাও
এর সমার্থক বোধক বাক্য।

সুতরাং আপনার স্বামী এহেন বাক্য বলার সময় তালাকের নিয়ত করে বলে থাকলে সেই সময়েই বায়েন তালাক পতিত হয়েছে।
সেক্ষেত্রে আপনার প্রদত্ত ডিভোর্স অনার্থক বলে সাব্যস্ত হবে।

এক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত সেই আলেমের সাথে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর বিবাহ করে থাকলে আপনার পরবর্তী সেই বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে।
পরবর্তীতে জোড়পূর্বক প্রদত্ত মৌখিক তিন তালাকও পতিত হয়েছে।

কেননা জোড় পূর্বক লিখিত তালাক পতিত হয়না,তবে মৌখিক তালাক পতিত হয়।
বিস্তারিত জানুনঃ- 

সুতরাং শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত এই ২য় স্বামীর সাথে বিবাহ করা যাবেনা।

এক্ষেত্রে আপনি প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।

★আর যদি উপরে উল্লেখিত কেনায়া বাক্য বলার সময় আপনার স্বামীর তালাকের নিয়ত না থাকে,সেক্ষেত্রে সেই সময়ে তালাক পতিত হয়নি। 

পরবর্তীতে আপনি যখন ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছিলেন,সেখানে কি লেখা ছিলো?

স্বামীকে তালাক দিলে তালাক হয়না,পদ্ধতি হলো নিজেকে নিজে তালাক বা নিজের নফসের তালাক প্রদান করতে হবে।

সুতরাং আপনার সেই ডিভোর্স লেটারে যদি স্বামীকে তালাক দেয়ার কথা লেখা থাকে,সেক্ষেত্রে ১ম স্বামীর সাথে তালাক কার্যকর হয়নি।
আপনি এখনো ১ম স্বামীর বৈধ স্ত্রী হিসেবেই আছেন।
প্রশ্নে উল্লেখিত ঐ আলেমের সাথে আপনার বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।

আর যদি আপনি সেই ডিভোর্স লেটারে নিজেকে নিজে তালাক বা নিজের নফসের তালাক প্রদান করিলাম এই জাতীয় বাক্য লিখে থাকেন,বা এই জাতীয় বাক্যের শেষে সাইন করে থাকেন,সেক্ষেত্রে উক্ত তালাক কার্যকর হয়েছে।

এক্ষেত্রে  ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর সেই আলেমের সাথে  বিবাহ করে থাকলে আপনার পরবর্তী সেই বিবাহ শুদ্ধ হয়েছে।
পরবর্তীতে জোড়পূর্বক প্রদত্ত মৌখিক তিন তালাকও পতিত হয়েছে।

সুতরাং শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত এই ২য় স্বামীর সাথে বিবাহ করা যাবেনা।

এক্ষেত্রে আপনি প্রথম স্বামীর সাথে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...