আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
113 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (49 points)
আসসালামু আলাইকুম

১)  কেউ যদি অন্যের দ্বারা হত্যা হয় তাহলে কী সে শহীদের মর্যাদা পাবে?

২) যে অন্যকে হত্যা করবে তার কী  ধরনের শাস্তি হবে দুনিয়া ও আখিরাতে?

৩) ইসলামে কখন একজনকে হত্যা  করা জায়েজ হয়?

৪) শুধু জুম্মার নামায পরা ব্যাক্তিদের ইমান থাকে?

৫) সব শহীদ কি জান্নাতি?

জাযাকাল্লাহু খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (564,060 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


https://ifatwa.info/8748/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে, 
শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। এক প্রকার হলো প্রকৃত শহীদ। তা হলো, দ্বিন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া। এ ধরনের শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)
,
আরেক প্রকারের শহীদ হলো, হুকুমি। অর্থাৎ তারা শহীদের সাওয়াব প্রাপ্ত হবেন। 

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারি ও মুসলিম)

,
সায়িদ ইবনে যায়েদ রা: থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে দ্বীন রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২; তিরমিজি, হাদিস : ১৪১৮)

মহামারী জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা। আনাস ইবনে মালেক রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তাউন’ হচ্ছে সব মুসলিমের জন্য শাহাদত। (বুখারি ১০/১৬৫-১৬৭; মুসনাদে আহমদ ৩/১৫০, ২২০)

সন্তান প্রসবের সময় ও নেফাস অবস্থায় নারী মৃত্যুবরণ করা। উবাদা ইবনে সামিত রা: থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন-সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নারীর মৃত্যু হলে তা শাহাদত। তার সন্তান তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ ৪/২০১, ৫/৩২৩)

পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে কিংবা ভূমিধসে মৃত্যুবরণ করা। আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, শহীদ পাঁচ শ্রেণীর : প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ভূমিধসে মৃত্যুবরণকারী এবং আল্লাহর পথের শহীদ। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৩; মুসলিম, হাদিস :১৯১৫)

হজরত জাবির ইবনে ওতাইক বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও আরো সাত শ্রেণীর শহীদ আছেন। যথা প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, জাতুল জাম্বে (ফুসফুসের একটি বিশেষ ব্যাধি) মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, ধসের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নারী শহীদ। (মুসনাদে আহমদ ৫/৪৪৬; আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১; নাসায়ি ৪/১৩-১৪)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
কেউ যদি অন্যের দ্বারা হত্যা হয় তাহলেই তাকে শহিদ বলা হবেনা।

হ্যাঁ যদি সে আল্লাহর রাস্তায় মারা যায়,তাহলে শহিদ হবে।

এছাড়া যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মাজলুম হিসেবে নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে মাজলুম হিসেবে নিহত হয়, সে শহীদ। যে দ্বীন রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার জীবন রক্ষায় মাজলুম হিসেবে নিহত হয় সে শহীদ।

(০২)
দুনিয়াতে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
আর আখেরাতে তার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

(০৩)

ক, বিবাহের পর ব্যভিচার করলে তাকে হত্যা করা যাবে। 
খ, ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় কুফরীতে লিপ্ত হলে অর্থাৎ মুরতাদ হয়ে গেলে তাকে হত্যা করা যাবে। 
গ, অনৈতিকভাবে কোনো লোককে হত্যা করা হলে সেই হত্যাকারীলে কিসাসের ভিত্তিতে হত্যা করা যাবে । 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ زِنا بعدَ إِحْصانٍ فإِنَّهُ يُرجَمُ ورجلٌ خرَجَ مُحارِباً للَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّهُ يُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الْأَرْضِ أَوْ يَقْتُلُ نَفْسًا فَيُقْتَلُ بِهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিম ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার্ রসূলুল্লা-হ’ (অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যি কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল)- এ কথার সাক্ষ্য দেয়, তাকে তিনটি কাজের যে কোনো একটি কাজ ব্যতীত খুন করা হালাল নয়। ১- বিবাহ করার পর যিনা করলে পাথর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করা। ২- যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, তাকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। ৩- অনৈতিকভাবে কাউকে হত্যা করলে তার বিনিময়ে তাকে হত্যা করা হবে।
(আবূ দাঊদ ৪৩৫৩, নাসায়ী ৪০৪৮, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৪১, সহীহ আত্ তারগীব ২৩৮৯,মিশকাত ৩৫৪৪।)

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ أَنَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَشْرَفَ يَوْمَ الدَّارِ فَقَالَ: أَنْشُدُكُمْ بِاللَّهِ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِإِحْدَى ثلاثٍ: زِنىً بَعْدَ إِحْصَانٍ أَوْ كُفْرٌ بَعْدَ إِسْلَامٍ أَوْ قتْلِ نفْسٍ بِغَيْر حق فَقتل بِهِ ؟ فو الله مَا زَنَيْتُ فِي جَاهِلِيَّةٍ وَلَا إِسْلَامٍ وَلَا ارْتَدَدْتُ مُنْذُ بَايَعْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا قَتَلْتُ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ فَبِمَ تَقْتُلُونَنِي؟

আবূ উমামাহ্ ইবনু সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উসমান ইবনু ‘আফফান(রাঃ) তাঁর অবরোধের দিন উঁচুস্থানে উঠে (বিদ্রোহীদের উদ্দেশে) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি। তোমরা কি জান না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিমের রক্ত তিনটি কারণের কোনো একটি ব্যতীত হালাল নয়- (১) বিবাহের পর ব্যভিচার করা, (২) ইসলাম গ্রহণের পর পুনরায় কুফরীতে লিপ্ত হওয়া এবং (৩) অনৈতিকভাবে কোনো লোককে হত্যা করা। এ তিনটি কারণের কোনো একটি করলে তাকে হত্যা করা যাবে। আল্লাহর কসম! আমি জাহিলিয়্যাত যুগেও যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হইনি এবং ইসলাম গ্রহণের পরও না। আমি যেদিন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ইসলামের বায়‘আত গ্রহণ করেছি, সেদিন হতে কক্ষনো কুফরীতে লিপ্ত হইনি এবং আমি এমন কোনো লোককে হত্যাও করিনি, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন। তাহলে বল, তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছ? 
(তিরমিযী ২১৫৮, আবূ দাঊদ ৪৫০২, নাসায়ী ৪০১৯, ইবনু মাজাহ ২৫৩৩।)

(০৪)
সে যেহেতু নামাজ অস্বীকার কারী নয়,তাই তার ঈমান থাকে।

(০৫)
হ্যাঁ, সব শহিদ জান্নাতী।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...