বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)সেক্যুলার শাসকের অর্থ যদি হয়,যে শাসক কুরআন-হাদীসকে অস্বীকার করে,তাহলে এমন শাসক নিঃসন্দেহে কাফির।আর যদি সেক্যুলার শাসকের অর্থ হয়,কুরআন হাদীসকে স্বীকার করে,তবে বাস্তবায়ন করে না,তাহলে এমন শাসক ফাসিক।দেখুন আল্লাহ তা'আলা কিছু কিছু শাসকদেরকে একবার কাফির এবং একবার ফাসিক বলে সম্ভোধন করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৪)
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤُﻮﻥَ
যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৫)
ﻭَﺃَﻥِ ﺍﺣْﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢ ﺑِﻤَﺂ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻭَﻻَ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀﻫُﻢْ ﻭَﺍﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ ﺃَﻥ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻙَ ﻋَﻦ ﺑَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪৯)
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘُﻮﻥَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।(সূরা মায়েদাঃআয়াতঃ৪)
(২)নামাযের মধ্যে ইমামের অজু ভেঙ্গে গেলে,তিনি একজন নায়েব বা প্রতিনিধি ঠিক করে অজু করতে চলে যাবেন।কিন্তু যদি তিনি বিনা অজুতে নামায পড়ান,তাহলে কারোরই নামায হবে না।
(৩)স্ত্রীকে দুষ্টামি করে 'আপু' বললে স্ত্রী হারাম হবে না।তবে মাহরামে আবদি(যাদের সাথে চিরস্থায়ী বিয়ে হারাম)যেমন, নিজ মা, বোন ইত্যাদির কোনো অঙ্গের সাথে তুলনা করলে, বিয়ে জিহার সাব্যস্ত হয়ে হারাম হয়ে যাবে।
(৪)রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রী দুষ্টামি করে ইচ্ছাকৃতভাবে থুতু দিলে আর সেটা স্বামী ভুলে গিলে ফেললে, অবশ্যই রোযা ভেঙে যাবে।যেহেতু স্বামী ভুলে গিলেছে,তাই শুধুমাত্র কা'যা আসবে,কাফফারা আসবে না।
(৫)পিরিয়ড অবস্থায় মেয়েরা নামায,রোযা, হজ্ব-উমরা এবং হানাফি ফিকহ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত ব্যতীত সকল তাসবিহ তাহলিল আদায় করতে পারবে।
(৬)ইসলামে নিলামের বৈধতা আছে।কাঠুরিয়ার কম্বলকে রাসূলুল্লাহ সাঃ নিলামে বিক্রি করেছিলেন।
(৭)বিবাহের জন্য সাক্ষী জরুরী।সাক্ষীদেরকে অবশ্যই স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।তবে তালাকের জন্য স্বাক্ষীর কোনো প্রয়োজন নাই।সুতরাং মেসেজে বা গ্রুপ চ্যাটে বিয়ে হবে না,তবে তালাক হয়ে যাবে।
(৮)উচ্ছস্বরের নামায হোক বা নিম্নস্বরের নামায হোক,হানাফি ফিকহ অনুযায়ী মুক্তাদির জন্য কেরাত পড়া হারাম।হ্যা অন্যান্য মাযহাবে নিম্নস্বরের নামাযে মুক্তাদির জন্য অনুমোদন রয়েছে।
(৯)
1837 নং ফাতাওয়ায় সাহু সিজদার সঠিক নিয়ম উল্লেখ করেছি যে,
হযরত ছাওবান রাযি থেকে বর্ণিত
عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ سَهْوٍ سَجْدَتَانِ بَعْدَ مَايُسَلِّمُ»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,প্রত্যেক ভুলের(তরকে ওয়াজিবের)সালামের পর জন্য দু'টি সেজদা রয়েছে।(সুনানু আবি-দাউদ-১০৩৮,বায়হাক্বী-২/৩৩৭)
উক্ত হাদীসে সালামের পর সেজদায়ে সাহুর কথা বলা হয়েছে।সালামের পর বলতে এক সালামের পর।কেননা দুই সালাম তো নামাযকে সমাপ্ত করে দেয়।আরো জানুন-
897
(১০)জ্বী রয়েছে।তবে নিজ স্ত্রীকে দেখানোর জন্য।বেগানা নারীকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্য থাকলে,তখন জায়েয হবে না।
(১১)না জায়েয হবে না।নাশিদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-১৮৯৮
(১২)দ্বীনদারিত্বর কারণে বিবাহের জন্য দূর থেকে পছন্দ করা যায়।তবে বিবাহ বহির্ভূত কাউকে পছন্দ করা বা বিবাহের পূর্বে অন্তরে কামনানবাসনা রাখা বা কল্পনা করা কখনো জায়েয হবে না।
(১৩)আসুন জেনে নিই হাত-পায়ের নখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি
১. সপ্তাহে একবার (হাত পায়ের) নখ কাটা সুন্নত। ২. শুক্রবার জুমার নামাযে যাওয়ার আগে নখ কাটা সুন্নত। সূত্র: শরহুস্ সুন্নাহ, হাদিস নং ৩০৯০ ও ৩০৯১।
হাতের নখ কাটার পদ্ধতি: উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। সূত্র: ফাতওয়ায়ে শামী, ৬: ৪০৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫: ৩৫৮।
পায়ের নখ কাটার পদ্ধতি: ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা।
বি. দ্র. ৩ ও ৪ নং এর বিষয়বস্তু সরাসরি হাদিসের কিতাবে না থাকলেও জুতা পরিধান ও জুতা খোলার হাদিসে যে কারণ দর্শানো হয়েছে সে কারণ এ পদ্ধতিতেও পাওয়া যায়, তাই সুন্নাতের আকিদা না রেখে আমল এরুপ করা ভাল। সূত্র: বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৫৮৫৫,
(১৪)মুসলিম দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁ গুলোতে গোশত খাওয়া জায়েয রয়েছে।এক্ষেত্রে সন্দেহ প্রবণতা পরিহার করা উচিত।মুসলমানকে এবং মুসলিম সমাজের মানুষকে বিশ্বাস করাই স্বাভাবিকতা। অবশ্য কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে নিশ্চয়ই এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।
অন্যদিকে অমুসলিম রেস্তোরাঁ থেকে গোস্ত ভক্ষণ করতে হলে মালিককে জিজ্ঞাসা করতে হবে।সে যদি বলে ইসলামি ত্বরিকায় হালালভাবে যবেহ করা হয় নাই,তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত গোশতকে ভক্ষণ করা যাবে না। কিন্তু যদি সে বলে যে এটাকে হালাল ত্বরিকায় যবেহ করা হয়েছে,তাহলে এমতাবস্থায় করণীয় কি?সে সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,যদি কোনো মুশরিক দাবী করে যে তার কাছে হালাল যবেহ করা গোস্ত রয়েছে। তাহলে সেটা খাওয়া জায়েয রয়েছে।(কিতাবুল ফাতাওয়া ৪/১৯৯)
আরো বর্ণিত রয়েছে,আবকে মাসাঈল -৭/২৯২জা'মেউল ফাতাওয়া-৩/১৩৭,
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-686
(১৫)জ্বী,মাহরাম হইবে।কেননা তারা পরস্পর সৎ ভাই।
(১৬)জ্বী, যিনার গোনাহ হবে,সাথে সাথে ওয়াদা ভঙ্গের গোনাহ হবে।মোটকথা যিনা,ধোকা ইত্যাদি সবকিছুরই গোনাহ হবে।
(১৭)না,গোনাহ হবে না।
(১৮)না,তার উপর হদ কায়েম হবে না।কেননা যথাসম্ভব জান বাঁচানো ফরয।
(১৯)ইসলাম ও মুসলমানদের স্বর্থ রক্ষার্থে নিজ জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার অনুমোদন ফুকাহায়ে কেরাম দিয়ে থাকেন।তবে এক্ষেত্রে আত্মহত্যার শরয়ী ব্যখ্যার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে-আত্মঘাতি দুই প্রকার যথা
(১) কাফিরদের মধ্যে ঢুকে তাদের উপর বোমা নিক্ষেপ করা,ফলাফল বোমায় নিক্ষেপকারীও মারা যাওয়া।এটা জায়েয।উহুদের যুদ্ধে রাসূল সাঃ এর শাহাদতের মিথ্যা সংবাদ শুনে আলী রাযি কাফিরদের মধ্যে একাই গিয়ে প্রবেশ করেছিলেন।
(২)নিজের শরীরে বোমা রেখে কাফিরদের মধ্যে ঢুকে বোমা ফোটানো।এটা নাজায়েয ও হারাম।
যথাসম্ভব প্রথম প্রকারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।প্রথম প্রকারের কোনো সুযোগ না থাকলে দ্বিতীয় প্রকারের রুখসত থাকবে।
(২০)কাউকে কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে খারাপ নামে ডাকা নাজায়েয ও হারাম।তবে আদর করে কাউকে খারাপ নামে ডাকা অনুচিৎ।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।(সূরা হুজুরাত-১১)