আসসালামু আলাইকুম হুজুর,
এর আগে করা আমার প্রশ্ন ও উওরটি দেখার অনুরোধ করছি। তাহলে আমার ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আরো কিছুটা ধারনা পাবেন ইনশা-আল্লাহ।
https://ifatwa.info/69397/
তীব্র ভারাকান্ত মন নিয়ে আমার কষ্টের কথাগুলা লিখলাম শায়েখ। আমি খুবই বড় আকারের মানসিক কষ্ট বা ওয়াসওয়াসার স্বীকার। আমার মনে প্রায় সবসময় ঈমান ও তালাক নিয়ে বিভিন্ন প্রকারের সন্দেহ আসে। যা খুবই অস্বাভাবিক। এমন সব বিষয় আসে যা আমি মুখে উচ্চারন করতে পারবো না। বিভিন্ন ধরনের শিরিকি ও কুফুরি বাক্য আসে। ঈমান হারা হয়ে গেলাম ভেবে সবসময় মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকি। আমি ইসলাম মানার চেষ্টা করছি শায়েখ। কিন্তু এসব চিন্তা ভাবনা আমাকে মানসিক ভাবে খুব কষ্ট দিচ্ছে। এবং আমার সামনের দিকে অগ্রসর হবার পথে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। মাথায় ঈমান ও তালাক নিয়ে একটার পর আরেকটা প্রশ্ন আসতেই আছে। কখনো শিরিকি, কুফুরি, তালাক নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন আসতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি পাগল হয়ে যাবো। মাঝে মাঝে মনে হয় চিন্তাই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বুকে ব্যাথা করতে থাকে। এসব খারাপ বা নোংরা কোন কথা মাথায় আসলেই আমি মাথায় বাড়ি মারি। মনে হয় এসব বাক্য আমি উচ্চারন করে ফেলবো।
(১) মনে সবসময় কোন না কোন তালাকের ওয়াসওয়াসা আসতে থাকায় এর আগে আমি অনেক প্রশ্ন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি ওয়াসওয়াসার রোগি বলে আমার তালাক পতিত হবে না বলা হয়েছে। তারপরেও আমার মনে তালাকের ওয়াসওয়াসা আসতেই থাকে। তাই আমার মনের ভিতর আসছে যে, যদি তালাক হয়ে গিয়ে আমার যেনার গুনাহ হয়ে যায়,তাহলে তো আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমার গুনাহকে নেকিতে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। এটা মনে আসার পরপরই আমার মনে আসছে যে, "আল্লাহ এটা করবেন না "। "আল্লাহ এটা করতে পারেন না "। এমন খারাপ কথা আমার বারবার মাথায় আসতেই আছে। আমি কিছুতেই এই চিন্তা মন থেকে বের করতে পারছি না। এতে আমি কষ্ট পাচ্ছি। আর উচ্চারন করে বলছি যে, আল্লাহ তুমি সব পারো।
এতে কি আমি শিরিক করে ফেললাম শায়েখ?
(২) আবার, একটা ওয়াজে শুনেছিলাম যে, ভাল খারাপ সব কিছুুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। শয়তানের কিছু খারাপ করার ক্ষমতা নেই। যদি কেউ বলে, খারাপ শয়তানের পক্ষ থেকে তাহলে শিরিক হবে।
আজ আমি উচ্চারন করে বলছিলাম যে, "আল্লাহ তোমার পক্ষ থেকে সবকিছু হয়। ভাল তোমার পক্ষ থেকে। খারাপ তোমার পক্ষ থেকে বলার সময় আমার মনের ভিতর প্রশ্ন আসতে থাকে যে, "খারাপ কিছুও কি আমি আল্লাহর পক্ষে থেকে বলবো? "। খারাপ কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে বলতে কেমন জানি একটা লাগছিল।
এমন কথা মনে আসার পর মনে হলো সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। ভাল খারাপ সবকিছু। শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই। এবং আমি উচ্চারন করে কথাগুলো বলতে থাকি।
এরপর থেকে আমার মনে হতে থাকে আমি মনে হয় খারাপ কিছু শয়তান করে বললাম। এমন ভেবে সারাদিন আমার মনে কষ্ট হতে থাকে। এবং আমি বারবার উচ্চারন করে বলতে থাকি যে, ভাল এবং খারাপ সবকিছুই আল্লাহই করে। শয়তানের কেন ক্ষমতা নাই। শুধু আল্লাহ শয়তানকে যতটুকু করার ক্ষমতা দিয়েছেন সে ততটুকুই করতে পারে।
এতে কি আমি শিরিক করে ফেললাম শায়েখ??
(৩)একটা বন্ধুর সাথে বিভিন্ন হাদিস ও ইসলাম নিয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলার মাঝে আমার মনে হলো যে, "আল্লাহ বলে কেউ নেই"। যদিও এটি আমার বিশ্বাসের পরিপন্থি। কিন্তু এসব কথাবার্তা বা এর থেকে আরো ভয়ানক কথাবার্তা আমার মনে আসতেই থাকে। আর আমার ঈমান হারিয়ে গেছে ভাবতে থাকি।
কোন একদিন আমি একটা লেখা পড়েছিলাম যে, "আল্লাহ কি করতে পারেন না? "। এবং সেখানে কেমন জানি একটা উওর লেখা ছিল তা আমি মনে করতে পারছি না।
আজ আমার বন্ধুর সাথে নাস্তিকদের নিয়ে কথা বলতে বলতে আমার সেই কথা মনে আসতে থাকে। আর আমি ভাবতে থাকি যে, "আল্লাহ কি করতে পারেন না?"
আর আমি সেই উওরটা মনে করতে থাকি।
এমন কথা আমার বারবার মনে আসতে থাকে। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
(৪) আল্লাহর সাথে নামাজ পড়া, গান বাজনা না শোনার ওয়াদা করার পরেও যদি কয়েকদিন পর আর নামাজ পড়া না হয় ও গান বাজনা শোনা হয়, তাহলে কি ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৫) নামাজের ভিতরে আমার বিভিন্ন শিরিকি ও কুফুরি চিন্তা আসে। বৈঠকে বসে দরুদ পড়ার সময় ইবরাহিম (আ:) নাম বলার পর মনের ভিতর আসছিল যে," ইবরাহিম(আ:) কে সেজদা করা উচিত"।এমন শিরিকি কথা মনে আসছিল। এতে কি শিরিক হবে শায়েখ??
(৬) আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি শায়েখ। আমারদের খাটের চাদরে ও কম্বলে বির্য লেগেছে আমার মনে আছে। কিন্তু এখন চাদর ও কোম্বল শুকনো। আমি গত ২/৩ দিন এভাবে ওখানে শুচ্ছি। কিন্তু আজ রাতে কোম্বল গায়ে দিয়ে শোবার পর আমি ফিল করছিলাম যে, আমার পিঠের দিকে হালকা ঘামে ভেজা ভেজা লাগছে। এভাবে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। ফজরে নামাজের জন্য উঠে মসজিদে যেয়ে যখন সুন্নাত পড়তে যাবো তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি নামাজকে তিরস্কার করছি। রাতে আমার শরিল নাপাক হয়ে গেছে এই সন্দেহের জন্য। আর কয়েকদিন আগে আমি শুনেছি যে, নামাজকে কেউ তিরস্কার করার জন্য নাপাক অবস্থায় সেজদা করলে সে কাফের হয়ে যায়।
আর আমার ওয়াসওয়াসা বা মানসিক রোগ থাকার জন্য নামাজে দাড়ানোর পরপরি আমার মনে হতে থাকে যে, আমি নামাজকে তিরস্কার করছি।
এতে কি কাফের হয়ে যাবে শায়েখ??
(৭) রাতে ১১:৪০ এর দিকে শুয়ে পড়ে ভাবলাম একটু সুরা কাহাফ শুনি। কিন্তু শুনতে গিয়ে দেখলাম সম্পূর্ন ডাওনলোড করা নেই। এজন্য শুনতে পারলাম না। ঠিক তখনি আমার মনের ভিতর হলো যে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি নাহলে আবার পেসাবের জন্য উঠতে হবে। এমন কথা মনে আসার পর আমার মনে হতে থাকে যে, আমি মনে হয় কোরআন শুনার থেকে পে** জন্য উঠাকে বেশি গুরুত্ব দিলাম। এমন কথা আমার মনে আসতে থাকে। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৮) ওয়াশরুমে যাবার পর আমার তালাক নিয়ে ওয়াসওয়াসা বেশি আসতে থাকে। আমার ওয়াইফ সম্পর্কে এমন সব কথা মনে আসতে থাকে যা সে করেনি। এসব ভাবতে থাকায় রাগ হয়ে যায় আর আমি মনে মনে তালাক বলতে থাকি। রাতে ঘুমানো অবস্থায় তালাক নিয়ে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখি। আজ রাতে স্বপ্নে দেখছি যে, একটা মেয়ে আমাকে একটা চিরকুট দিচ্ছে। তখনি আমার ঘুম ভেংগে যায়,আর আমার মনের ভিতর আসলো যে, " তাহলে আমার ওয়াফকে তালাক দিয়ে দেবো। এমন কথা মনে আসার পর আমি জিব্বাই এক ধরনের শব্দ করে ঢোক গিললাম।
এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(৯) গত কয়দিন ধরে মনের ভিতর আসছে যে, "ইসলামিক শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষার ও দরকার আছে "।
এমন কথা মনে আসলে কি ঈমানের কোন ক্ষতি হবে?
এবং এমন কথা বললে কি ঈমানের ক্ষতি হবে??
(১০) ইশার নামাজের জামাতের সময় দেখি সবই দৃতীয় রাকাতের বৈঠকে বসে আছে। আমি তখন তাকবির দিয়ে হাত বাধলাম। তখনি আমার মনে সন্দেহ আসতে থাকে যে, তাকবির দিয়ে হাত বাধার পর বৈঠকে বসবো না তাকবির দিয়ে হাত না বেধে বৈঠকে বসবো?
এমন সন্দেহ আসাতে আমি নামাজ ছেড়ে দিলাম। এবং সবাই যখন উঠলো তখন আবার নতুন করে নামাজ শুরু করলাম। বিষয়টা ঠিকমত না জানার জন্য এমন করাতে এতে কি আমার গুনাহ হবে?
(১১) উপরের প্রশ্নে যখন "নামাজ ছেড়ে দিলাম " লিখছিলাম তখন আমি একটু থেমে গেছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দিলাম লিখছি।
আশা করি আপনি বুঝবেন আমার ওয়াসওয়াসার মাএা।
এতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(১২) আমি মুখে বলছিলাম যে, আল্লাহ তুমি সব থেকে বড় রক্ষাকারী। এমন বলার পর আমার মনে হতে থাকে যে,
"এটা আমি কি বললাম? আমি কি আল্লাহ ছাড়া আর কোন রক্ষাকারি আছে বললাম? যেহেতু আমি আল্লাহকে সব থেকে বড় রক্ষাকারী বললাম। তাহলে আমি কি ছোট কোন রক্ষাকারী আছে মনে করলাম? "
এমন মনে আসার পর আমি বারবার বলতে থাকলাম যে, আল্লাহ তুমিই একমাএ রক্ষাকারি। তুমি ছাড়া আর কোন রক্ষাকারী নাই।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১৩) আমার মেয়েকে নিয়ে আমার ওয়াইফ যখন আমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলে সেসময় হঠাৎ আমার মেয়ে স্কিনের বাইরে চলে গেলে আমি যদি তাকে আম্মু বলে ডাকি, তাহলে মনে হয় আমি আমার ওয়াইফকে যেন আম্মু বলে ডাকছি। এতে কি বিবাহিত জিবনে কোন সমস্যা হবে??
(১৪) নামাজের ভিতরে এসব ওয়াসওয়াসার জন্য মনে অশান্তি কাজ করে, তখন আমি নামাজের ভিতরেই ভাবি আপনাদের কাছে এই বিষয়ে কিভাবে প্রশ্ন করবো। এতে কি আমার ঈমানে কোন সমস্যা হবে??
(১৫) কম্পিউটারে ওয়াজ চলাকালিন অন্য ভিডিওতে যেতে পারি না। বা একটু টেনে দিতেও ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে আমার এই অংশ ভাল লাগছে না, তাই টেনে দিচ্ছি। ওয়াজে প্রথমে কেরআন বা হাদিস থেকে যখন কথা বলে তখন টেনে দেয়াতে মনে হচ্ছিল আমি এই অংশ পছন্দ করছি না, তাই টানলাম। এতে কি আমার ঈমানের ক্ষতি হবে??
(১৬)যোহরের নামাজের জন্য প্রস্তুত হতে টয়লেটে গেছিলাম। টয়লেট থেকে প্যান্টে পেসাব লেগেছে সন্দেহে আর নামাজে যেতে পারলাম না। এর কিছুক্ষন পর মনে হলো যে, নামাজ না পড়া কুফুরি। এই কথা মনে আসার পরপরি মনে হতে থাকে যে, কুফুরি হয়ছে তো কি হয়ছে।
আবার, যেহেতু প্যান্টে পেসাব লেগেছে সন্দেহ আছে। তাই গোছল না করা পর্যন্ত টিশু না নিয়ে পেসাব করবো, এমন ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কিছুক্ষন পর পেসাব আসলে মনে হতে থাকে যে, এভাবে টিশু না নিয়ে পেসাব ফেরা শান্তি।
আবার, খেতে গিয়ে প্লেটে ভাত রাখলে মনে হয় আমি প্লেট চেটে খাওয়াকে সুন্নাত মনে করি না, তাই ভাত রাখলাম। এমন কথা মনে আসাতে গতকাল জোর করে সম্পূর্ন ভাত খেতে গিয়ে বমি বমি লাগছিল। এগুলার দ্বারা কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১৭) আমি বিবাহিত হওয়া সর্তেও পর্ন ও মাস্টারবেশনে আ্যাডিকটেড। কিছুদিন বাদ দিলেও আবার কয়েকদিন পর এই গুনাহ আবার হয়ে যায়। গত কয়দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। ১ দিন ৫ ওয়াক্ত পড়ার পর আবার আজকে নাপাকের ওয়াসওয়াসা আসায় আর নামাজ পড়তে পারলাম না। ভাবলাম বাসায় যেয়ে গোছল করে ইশা থেকে নামাজ পড়বো। কিন্তু বাসায় আসার পর মনে হচ্ছিল যে, আজ পর্ন ও মাস্টারবেশনে করবো, কাল থেকে নামাজ পড়বো। এই ভেবে আমার রুমে থেকে আমপারা অন্য রুমে ও টুপি ডয়ারের ভিতরে রেখে দিই, অবমাননা হয়ে যাবে এই ভয়ে। এবং আমি সেই জঘন্য কাজ করে ফেলেছি। আমার ওয়াসওয়াসা থাকার কারনে তখন মনে আসছিল যে, আমি মনে হয় কোরআনকে অবমাননা করার জন্য এই কাজ করছি। এমন কথা মনে আসছিল।
এই গুনাহর জন্য কি আমার ঈমান চল যাবে??
(১৮) আমার জন্য কি শরিয়তে কোন ছাড় রয়েছে?