আসসালামু আলাইকুম।
শায়েখ,
আমি প্রায় ১ বছর যাবত বিভিন্ন ধরনের ওয়াসওয়াসার স্বীকার। বিশেষ করে ঈমান ও তালাক নিয়ে। এই জন্য আমি প্রায় সময় খুব মানসিক কষ্টে থাকি। একের পর এক সন্দেহ মনে বাসা বাধতে থাকে। কখনো মনে হয় এই আমার ঈমান চলে গেল আবার কখনো মনে হয় আমার ওয়াইফ তালাক হয়ে গেল। আমার মনে আল্লাহকে নিয়ে খুবই আজে বাজে বা নোংরা চিন্তা ভাবনা আসতে থাকে। যা আমি মুখে বলতে লজ্জাবোধ করি।
(১) আমার অফিসে আসার পর ফটো সেন্ড করতে হয়। কিন্তু আমি যেদিন লেট করে আসি সেদিন আর ফটো সেন্ড করি না, তাই এসব কথা আমি আমার এক বন্ধুর নিকট বলছিলাম। বলার সময় আমার মনে হচ্ছিল যে, অফিসে লেট করে আসা গুনাহ, গুনাহর কথা কারো নিকট প্রকাশ করা ঠিক না, আমি মনে হয় আল্লাহকে পরোয়া করি না, এসব কথা আমার মনে আসছিল। তারপরেও আমি অফিসে লেট করে আসার কথা শিয়ার করি। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে?
(২) কুল খেতে খেতে মনে হচ্ছিল যে, কুলে কি কি ভিটামিন আছে দেখা যাক। এই ভেবে মোবাইলে ভিডিও দেখছিলাম। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে, কুল খেলে এই রোগ হবে না। এতে অনেক ভিটামিন আছে। আল্লাহর কোন ক্ষমতা নেই। এসব উল্টা পাল্টা কথা মনে আসছিল।
আবার,ঘুমানোর সময় ভয়ে বাম সাইডে ঘুরে শুতে পারি না। মনে হয় আমি ডান দিকে কাত হয়ে শোয়াকে সুন্নাহ মনে করি না তাই বাম দিকে ঘুরে শুচ্ছি।
খাবার সময় প্লেটে ভাত রাখলে মনে হয় আমি প্লেট চেটা খাওয়াকে সুন্নাহ মনে করি না। তাই প্লেটে ভাত রাখছি।
এসবের জন্য কি ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
(৩) একবার আমি পেন্ট পরার সময় মনে হল যে,টাখনুর উপর প্যান্ট গুটায়ে পরি, না হলে আমার এক নামাজি বন্ধু টাখনুর নিচে প্যান্টা পরা দেখলে কিছু বলতে পারে। তখনি আবার মনে হচ্ছে, আমার আল্লাহর নির্দেশ মনে করে প্যান্ট টাখনুর উপর পরা উচিত। কিন্তু তখন থেকে আমার মনে সন্দেহ হতে থাকে যে, আমি মনে হয় আমার বন্ধুকে দেখানের জন্য টাখনুর উপর প্যান্ট পরেছি। সেজন্য আমি রাস্তায় আমার সেই বন্ধু থাকা অবস্থায় আমি তার সাথে কথা না বলে চলে আসি।
এতে কি আমার রিয়া বা গুনাহ হবে শায়েখ?
(৪) আমার মনে আল্লাহকে নিয়ে আজে বাজে কথা আসার কারনে আমাকে আমার নিজের কাছে খুব খারাপ মানুষ ফিল হয়। ম্মনে হয় আমি খুবই বড় একজন গুনাহগার। এজন্য মাঝে মাঝে কারো কোন বড় বড় গুনাহ করা দেখে একটু ভাল লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় যে, এরা এত বড় বড় গুনাহ করছে এদের ও তো শাস্তি হবে।
যেমন -
আমি একজনের সাথে কথা বলার সময় সে বললো যে,
"আমি আল্লাহর হিসাব নিকাশ আমি বুঝি না"।
একথা শুনে আমি বললাম যে, এসব কথা বলতে হয় না।
কিন্তু আমার মনে একটু ভাল লাগছিল এই ভেবে যে,আমার মত গুনাহগার অনেকে আছে ।
এমন চিন্তা করার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৫) মাঝে মাঝে কোন কারনে রাগ হলে মনে হচ্ছে মনে মনে আল্লাহকে গালি দিয়ে ফেলছি। এমনকি বাইক চালাতে চালাতে চোখে পোকা পড়াতে মনে হচ্ছে আমি আল্লাহকে গালি দিয়ে ফেলছি। এবং মনে হয় আমি মুখ দিয়ে যেন গালি উচ্চারণ করে ফেলবো। এমন মনে হয়। কোন কারনে রাগ হলে এমন মনে হয় আমার। এছাড়া মনের মাঝে অনেক শিরিকি ও কুফুরি বাক্য আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় এসব আমি উচ্চারন করে ফেলবো।এ সকল চিন্তা ভাবনা আমাকে মানসিকভাবে খুব কষ্ট দেই।আজ একবার মনের মাঝে হলো যে, নামাজ না পড়লেও ঈমান ঠিক থাকবে। এই ভেবে ইয়ারফোনটা নিয়ে আসলাম। আবার তখনি মনে হচ্ছে আমি এ কি ভাবলাম? তাই আবার ইয়ারফোনটা রেখে আসলাম। আমি পাগল মতো হয়ে যাচ্ছি শায়েখ। এগুলার দ্বারা কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৬) আজকে একটা সময় মনে হচ্ছিল যে, আমি অতিতে যা করে ফেলেছি আল্লাহতো সেটা ইচ্ছা করলে নেকিতে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। আবার মনে হচ্ছে আল্লাহ করতে পারেন না। এমন কথা মনে আসছে। আমি ভাল কিছু ভাবতে পারি না। ভাবতে গেলে সেটা সম্পর্কে বিভিন্ন খারাপ কথা মনে আসতে থাকে। এতে কি ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
(৭) আজ সারাদিন এসব চিন্তা করতে করতে মনটা খুব খারাপ লাগছে। তাই ডাক্তারের কাছে থেকে ঘুমের বড়ি নিতে গেছিলাম। নেয়ার পর বললাম যে, আজ ইশার সময়ই শুয়ে পড়বো। তখনি মনে হচ্ছে আমি মনে হয় ইশার নামাজের চেয়ে ঘুমকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেললাম।আমি মানি ঘুম থেকে নামাজ উওম। কিন্তু তারপরেও আমি যদি ইশার নামাজ না পড়ি তাহলে কি
এতে আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৮)কম্পিউটারে কিছু দেখতে দেখতে হ্যা সুচক মাথা নাড়ালে কিংবা কোন কারনে মাথা নিচু করলে মনে হয় আমি মাথা নত করে কাউকে সিজদা করলাম। এমন সন্দেহ আসে। এতে কি শিরিক হবে শায়েখ?
(৯)আমি জানি ১৪ ফেব্রুরুয়ারি আমাদের অফিস ছুটি দেই না। আমার একজন বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় আমি বললাম যে, ১৪ ফেব্রুরুয়ারি আমাদেরতো ছুটি দিল না?
একথা বলার জন্য কি ঈমান চলে যাবে??
(১০) আমি যেটা দেখি বা শুনি সেটা নিয়ে আমার ওয়াসওয়াসা শুরু হয়ে যায়। যেদিন থেকে আমি হুরমতের বিষয়টা শুনেছি ঠিক সেদিন থেকে আমার শাশুড়িকে নিয়ে আজে বাজে কথা মনে হওয়া শুরু হয়েছে। তার আগে এমন খারাপ চিন্তা ভাবনা কখনো আসতো না।
যেদিন থেকে হুরমতের মাসায়ালা জেনেছি তার পর থেকে কিছু লজ্জাজনক সমস্যা হচ্ছে আমার।
( আমি বাসায় একা থাকা কালিন কখনো কখনো মনে হচ্ছে শাশুড়িকে নিয়ে উল্টা পাল্টা চিন্তা আসার জন্য লজ্জাস্থান শক্ত হচ্ছে,
আবার কখনো শশুর বাড়ি যাবার পর শাশুড়িকে দেখে লজ্জাস্থান শক্ত করার ট্রাই করছি মনে হচ্ছে)
এজন্য আমি আমার ছোট মেয়েকেও আমার শাশুড়ির কোল থেকে নিচ্ছি না ভয়ে। যেন আমার শাশুড়ির গায়ে হাত লেগে না যায়। এজন্য কি আমার বিবাহিত জিবনে কোন সমস্যা হবে শায়েখ??
(১১) দুই একটা করে দাড়ি টেনে টেনে ছেড়া আমার এটা একটি বাজে অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু দাড়ি ছেড়ার সময় মনে হয় আমি মনে হয় দাড়িকে পছন্দ করি না অথবা দাড়িকে নবির সুন্নাহ মানি না তাই দাড়ি ছিড়ছি। এমন মনে হয়। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১২) আজ বাসায় আসার পথে আমার এক নামাজি বন্ধুর অফিসের সামনে দিয়ে যাবার সময় মনে হচ্ছিল যে, হয়তো গেলেই নামাজ পড়তে বলবে।
অটোমেটিক এমন চিন্তা চলে আসলো। আমি কেন যে নামাজকে এত ভয় পাচ্ছি বুঝতে পারছি না। নামাজে কেন যেতে পারছি না বুঝতে পারছি না। আজ থেকে শুরু করবো কাল থেকে শুরু করবো এমন মনে হয়। কিন্তু পারি না। আমার কি ঈমান চলে গেল শায়েখ??
(১৩) রিয়া জনিত শিরিক হয়ে গেলে কি বিবাহিত জিবনে কোন সমস্যা হবে শায়েখ??