আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
74 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (1 point)
edited by
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)

আমরা তো জানি যে, মহান আল্লাহ্ তায়ালা জ্বীন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর (আল্লাহ্'র) ইবাদাত করার জন্য।

প্রেক্ষাপটঃ ১

কিন্তু আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি, তখন থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত (যখন থেকে সাওয়াব ও গুনাহ্ লিপিবদ্ধ করা হয়) আমরা তো কোনো কিছু সম্বন্ধেই আবগত ছিলাম না। আমার জন্মের আগে আমাকে / আমার সত্ত্বাকে অবহিতও করা হলো না যে (মানে জিজ্ঞেসও করা হলো না যে), তোমাকে পৃথিবী নামক একটি যায়গায় প্রেরণ করা হবে, ওখানে যেয়ে যখন তুমি বালেগ হবা / প্রাপ্তবয়স্ক (যখন থেকে আমাদের কৃত কর্মের উপর ভিত্তি করে সাওয়াব ও গুনাহ্ লিপিবদ্ধ করা হয়) হবা, তখন থেকে তোমার কৃত কর্মের উপর তোমার আমলনামায় সাওয়াব ও গুনাহ্ লিখা হবে, এই সাওয়াব ও গুনাহ এর উপর ভিত্তি করে তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম এর ফায়সালা হবে।

প্রেক্ষাপটঃ ২

আমার প্রশ্ন হলো, যে বিষয়ে আমি অবহিতই ছিলাম না, যে বিষয়টি তে আমাকে (আমার প্রপ্তবয়ষ্ক অবস্থায়) না জানিয়েই জড়িয়ে দেয়া হলো, মানে পৃথিবীতে আসার পর যখন আমার বুঝ আসলো, যখন আমি পাপ-পূন্য বুঝতে শুরু করলাম, তখন বুঝলাম যে আমি একটা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যা কিনা আমাকে আগে জিজ্ঞেস করা হলে আমি পরীক্ষাটাই দিতে চাইতাম না।

প্রেক্ষাপটঃ ৩

ঠিক এই মুহূর্তে অনেকেই আমাকে বলে বসবে, "আল্লাহ্ কি তোমাকে জিজ্ঞেস করে কাজ করবে ?!!" [[নাউজুবিল্লাহ্]]...মানে আল্লাহ্ কি করবেন না করবেন, সেটা তাঁর বেপার, আমরা তো তার গোলাম মাত্র।

এই ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হলো, "তাহলে আমার নিজস্ব সত্ত্বাটা রইলো কোথায় ? কোথায় আমার বুদ্ধিমত্তা ? কোথায় আমার নিজস্বতা, যেই নিজ স্বত্তার কর্মের উপর ভিত্তি করে আমাকে পুরষ্কার/স্বাস্তি দেয়া হবে ?"

যেই প্রাপ্তবয়সের কাজের উপর ভিত্তি করে আমাকে রিওয়ার্ড/পানিশমেন্ট দেয়া হবে, সেই প্রপ্তবয়সে এখন যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হত, "তুমি কি পৃথিবী তে যেতে চাও, জান্নাত লাভের আশায় আল্লাহর বিধান মেনে চলতে চাও ? (যেখানে আল্লাহর বিধি বিধান মানা অনেক কষ্টসাধ্য, সর্বদা সয়তানের অসওয়াসা তোমার উপর আরোপিত হতে থাকবে, যাতে করে তুমি আল্লাহ্'র বিধি বিধান ঠিক ভাবে মেনে না চলতে পারো) " তাহলে আমার উত্তর হতো, "না, আমি পরিক্ষা দিতে চাই না...আমি আমার কোনো স্বত্তাই চাইনা"

#Conclusion

প্রশ্ন - ১ঃ (আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও) আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছায় আমাকে পৃথিবীতে পাঠালেন, আমাকে একটি পরিক্ষার মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে [যেটাও কিনা আমার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কিংবা আমার বুঝ আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস না করেই পরিক্ষার ময়দানে (পৃথিবীতে) পাঠানো হলো]। তাহলো আমার কৃতকর্মের উপর ভিত্তি করে কেনো আমাকে পুরষ্কার / শাস্তি দেয়া হবে ???

প্রশ্ন - ২ঃ আমার এই অনিচ্ছাকৃত পরীক্ষায় আমার ফল যেটাই আসুক (আমি পুরষ্কৃত / তিরষ্কৃত যেটাই হই), তাতে আমার কি ? আমার তো কোনো নিজস্ব সত্ত্বাই নাই ? [নিজস্ব সত্ত্বা নেই এজন্যই বলছি যে, আমাকে তো আমার বুঝ আসার পরে জিজ্ঞেস করে পৃথিবীতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য পাঠায়নি, আল্লাহর ইচ্ছায় তার সৃষ্টিকে (মানে আমাকে) তিনি পাঠিয়েছেন]

প্রশ্ন - ৩ঃ (আমার উপরোক্ত প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিবেন প্লিজ) ও এমতাবস্থায় আমার করনীয় কি ?

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ- 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾ 

যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম? তিনি পর্যক্রমশালী, ক্ষমাশীল।
(সুরা মূলক ০২)

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾ 

আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।
(সুরা আয যারিয়াত ৫৬)

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
অর্থাৎ আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদেরকে আমার ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করার জন্য; তাদের প্রতি আমার মুখাপেক্ষিতার কারণে নয়। আলি বিন আবু তালহা ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ যাতে তারা ইচ্ছাই বা অনিচ্ছায় আমার ইবাদতের স্বীকৃতি দেয়। এটি ইবনে জারীরের নির্বাচিত তাফসির। ইবনে জুরাইয বলেন: যাতে তারা আমাকে চিনে। আল-রাবি বিন আনাস বলেন: “একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য” অর্থাৎ ইবাদতের জন্য। সমাপ্ত [তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/২৩৯)]
শাইখ আব্দুর রহমান আল-সাদী (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, তাঁর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে তাঁকে চেনার জন্য এবং তিনি তাঁকে সে নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল হবে এবং নির্দেশ পালন করবে সে সফলকাম। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিবে সে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদেরকে এমনস্থানে সম্মিলিত করা অনিবার্য যেখানে তিনি তাদেরকে তার আদেশ-নিষেধ পালনের ভিত্তিতে প্রতিদান দিতে পারবেন। এ কারণে মুশরিকদের প্রতিদানকে অস্বীকার করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"[সূরা হুদ, আয়াত: ০৭] অর্থাৎ যদি আপনি এদেরকে বলেন এবং মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের ব্যাপারে সংবাদ দেন তারা আপনার কথায় বিশ্বাস করবে না। বরং আপনাকে তীব্রভাবে মিথ্যায়ন করবে এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন সেটার উপর অপবাদ দিবে। তারা বলবে: “এটা তো স্পষ্ট যাদু”
জেনে রাখুন এটা স্পষ্ট সত্য। [তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ৩৩৩]


চতুষ্পদ জন্তুর মত শুধু পানাহার ও বংশবৃদ্ধির জন্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। অনেক সৃষ্টির উপর আল্লাহ মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরিকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং যে মহান উদ্দেশ্যে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাকে তারা বেমালুম ভুলে গেছে বা অস্বীকার করেছে।

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আসমান-জমিন, জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তাঁর আনুগত্য করে যাতে তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন; আর কে তাঁর অবাধ্য হয় যাতে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
মহান আল্লাহ তায়ালা যেহেতু আমাদের স্রষ্টা,সুতরাং সব কিছুতেই তার একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে।

রুহের জগতে সকল রুহকে প্রশ্নের পর সকলেই আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করে নিজের পূর্ণ অধিকার আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া হয়েছিলো,সুতরাং অনিচ্ছা সত্ত্বেও দুনিয়াতে আসা ও তার উপর প্রশ্ন উত্থাপন কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। 

আর আল্লাহই যেহেতু স্রষ্টা,সুতরাং এই বিষয়ে তার পূর্ণ অধিকারও রয়েছে।

★আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সকলকে ভালো মন্দ কাজের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন,আর হিদায়াতের পথা বলে দেয়ার জন্য যুগে যুগে যুগে নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন,সুতরাং আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে, অন্যায় কাজ করলে,কুফরি করলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...