আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
499 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম। 
ইয়াহুদিরাষ্ট্র ঈসরাইল যেভাবে নিজেদের পতাকায় ডেভিড'স স্টারকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে,খ্রিষ্টানরা যেভাবে ক্রুশকে খ্রিষ্টধর্মের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে,আজ আমরা মুসলিমরাও সেভাবে চাঁদ-তারাকে ইসলামের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করছি।এমনকি বর্তমানে অনেক মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রের পতাকায় চাঁদ-তারা দেখা যায়;যেমন তুরস্ক, পাকিস্তান।এটা কতটুকু ইসলাম সম্মত?

সম্প্রতি একটা লেখা পড়লাম এই বিষয়টা নিয়ে যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের মুলভাব তুলে ধরছি।

"১।বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের আমলে বায়জান্টিয়াম শহরকে (পরবর্তীকালে কন্সটান্টিনোপল ও ইস্তাম্বুল) শিকারের দেবী ডায়ানার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছিলো।অর্ধচন্দ্র ছিলো ডায়ানার প্রতীক।

২। কন্সট্যানটাইন ৩৩০ খ্রিষ্টাব্দে শহরটিকে আবার ভার্জিন মেরির প্রতি উৎসর্গ করেন।তখন আগের অর্ধচন্দ্রের সাথে মেরির তারা যুক্ত হয়ে প্রতীকটি চাঁদ-তারা রূপ পায়।

৩।১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কন্সটান্টিনোপল জয়ের পর মুসলিমদের 
 পক্ষে মেহমেত ২ ক্রিসেন্ট ফ্ল্যাগ উত্তোলন করেন।"

লিংকঃhttps://islamreigns.wordpress.com/2016/03/30/the-star-and-crescent-symbol-has-nothing-to-do-with-islam/

এখানে যা উল্লেখ করা হলো তা কি সঠিক?যদি সঠিক হয়ে থাকে,তবে তো কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের কারণে চাঁদ-তারা প্রতীক ব্যবহার করা মুসলিমদের জন্য হারাম হওয়ার কথা।তাছাড়া এটি বিদ'আত হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। এমনকি এটা ধীরে ধীরে মুসলিমদেরকে প্রতীকপূজার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে কিছু বলুন।

 

 

 

 

 

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তে বিধর্মী,ফাসেক দের অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ  করেন:- “হে মুমিন মুসলমানগণ! তোমরা কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না”। (সূরা আন নিসা : আয়াত  ১৪৪)

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ:: ” الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তি [কিয়ামতের দিন] তার সাতে থাকবে যাকে সে মোহাব্বত করে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-৬১৬৮, ৫৮১৬}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}
 
★ইসলামে পতাকাতে চাঁদ তারা,মিম্বারে চাঁদ তারা প্রতিক নাজায়েজ নয়।
 
পৃথিবীর প্রায় অনেক মুসলিম দেশেই চাঁদ-তারাকে ইসলামের একটি প্রতীক বা সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদ, মসজিদের গম্বুজ, মিনার, কবর, মাজার, ধর্মীয় বই-পুস্তক, জায়নামাজ, বিশেষ করে পতাকায় চাঁদ-তারার বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। পৃথিবীর বেশ কিছু মুসলিম দেশের পতাকায় চাঁদ-তারা বা শুধু চাঁদ অথবা শুধু তারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আরবি চন্দ্রমাস যেহেতু নতুন চাঁদ দেখে শুরু হয়, রমজান,শুরু হওয়া,ঈদ দিন নির্ধারন ইত্যাদি সহ অনেক বিষয় যেহেতু চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত।

 সে হিসেবে এই চাঁদ-তারা কিছু মুসলমানেরা পতাকা ইত্যাদিতে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত করে। 

আল কুরআনে চন্দ্রকে মাস গণনার প্রতীক বলা হয়েছে— يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ ظُهُورِهَا وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُوا الْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَابِهَا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 
তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘তা মানুষের ও হজ্জের জন্য সময় নির্ধারক’। আর ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। কিন্তু ভাল কাজ হল, যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা গৃহসমূহে তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৯] 

আরো ইরশাদ হয়েছে,
 هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ 
তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। 
[সুরা ইউনুস, আয়াত ৫] 

তারকা নিয়ে বলা হয়েছে—
 وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ لَكُمُ ٱلنُّجُومَ لِتَہۡتَدُواْ بِہَا فِى ظُلُمَـٰتِ ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِۗ قَدۡ فَصَّلۡنَا ٱلۡأَيَـٰتِ لِقَوۡمٍ۬ يَعۡلَمُونَ 
আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। নিশ্চয় আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে। [সুরা আনআম, আয়াত ৯৭] 
,

★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত  মুসলমানদের কিছু দেশের  পতাকাতে চাঁদ তারা,মিম্বারে চাঁদ তারা প্রতিক নাজায়েজ নয়।

কারন শরীয়তের বিধান হলো যে সমস্ত বিষয়  ইহুদী খৃষ্টানদের কালচার ও ধর্মীয় বিষয়  হিসেবে বিবেচ্য ও প্রসিদ্ধ। তা ব্যবহার  করা জায়েজ নয়। 

যেহেতু চাঁদ তারা প্রতিক হওয়া এটি বর্তমানে  ইহুদী খৃষ্টানদের ধর্মীয় কোনো বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত  নয়। বরং এটি এখন মুসলমানরাও তাদের পতাকা ইত্যাদিতে ব্যাপকহারে ব্যবহার  করে থাকে, তাই এটা ব্যবহার  করা হারাম নয়। 

এটি সব ধর্মের অনুসারীরাই ব্যবহার করে,তাই এটি ব্যবহার করা নাজায়েজ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...