জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মুসাফিরের জন্য যোহর আসর ও ইশার ফরয নামায দুই রাকাত পড়া (কসর) ওয়াজিব; চার রাকাত (পূর্ণ পড়া) নাজায়েয,এতে সে গুনাহগার হবে । কারণ মুসাফিরের নামাযের বিধান হল কসর।
তবে যদি ভুলে ৪ রাকাত পড়ে ফেলে তাহলে ২ রাকাত পড়ে যদি বৈঠক করে থাকে তাহলে প্রথম ২ রাকাত ফরয হবে, আর বাকি ২ রাকাত নফল হিসেবে ধর্তব্য হবে। কিন্তু সালাম ফিরাতে দেরী হওয়ায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/৫৪১)
যদি নামাযের শেষে সেজদায়ে সাহু দেয়, তাহলে নামায হয়ে যাবে,(মাকরুহের সহিত)। আর যদি সেজদায়ে সাহু না দেয়, তাহলে নামায পুনরায় পড়তে হবে।
যদি ২ রাকাতের পর বৈঠক না করে থাকে, তাহলে নামায হয় নি, নামাযটি পূণরায় পড়তে হবে।
(মারাকিল ফালাহ ২৩১; শরহুল মুনইয়াহ ৫৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৮)
আয়েশা রাযি. বলেন,
فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ
মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামায দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের নামায ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের নামাযে বৃদ্ধি করা হল। (বুখারী ১০৪০ মুসলিম ৬৮৫)
অপর হাদিসে এসেছে,
عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)
আরো জানুনঃ-
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার নামাজের ক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো,আপনি যেহেতু সেজদায়ে সাহু আদায় করেননি,তাই উক্ত নামাজ আপনাকে পুনরায় আদায় করতে হবে।
এখন যেহেতু ওয়াক্ত চলে গিয়েছে,সেক্ষেত্রে অনেকের মতে পুনরায় আদায় করা আবশ্যক হবেনা।
সেক্ষেত্রে আপনার নামাজ হয়ে যাবে।
তবে মুক্তাদীদের নামাজ কোনো ভাবেই হয়নি।
কেননা এক্ষেত্রে আপনি (ইমাম) শেষ দুই রাকাতে নফল আদায়কারী তাই মুক্তাদীর জন্য আপনার ইক্তিদা করা সহীহ হয়নি। তাই তাদের কাহারোই নামায শুদ্ধ হয়নি। সুতরাং উক্ত নামায তাদের সবারই পুনরায় আবার আদায় করা আবশ্যক।
فلو اتم المقيمون صلاتهم معه، فسدت، لأنه اقتداء المفترض بالمتنفل، ظهيرية: أى اذا قصدوا متابعته، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر-2/130، وكذا فى منحة الخالق على البحر الرائق، باب المسافر-2/238)
সারমর্মঃ-
যদি মুকিমরা তার সাথে নামাজকে পূর্ণ করে,তাহলে তাদের নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
কেননা এখানে ফরজ আদায় কারীর ইক্তেদা নফল আদায় কারীর পিছনে হয়েছে।
(০২)
বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের মত অনুযায়ী কেউ বিমান,বুলেট ট্রেনে সফর করলেও তাত জন্য সফরের দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার হবে।
(০৩)
শরীয়তের অকাট্য ভাবে প্রমানিত কোনো মাসয়ালা পরিবর্তন হয়নি।
কিছু মাসয়ালা নিয়ে মতবিরোধ থাকলে সেক্ষেত্রে হুকুমের ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামগন যামানা হিসেবে ফতোয়া প্রদান করে থাকেন।
আর বিশেষ জরুরতের দিক লক্ষ্য করে কিছু মাসয়ালার ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামগন রুখসত দিয়ে থাকেন।
(০৪)
ফতোয়াটির লিংক দিলে ভালো হতো।
(০৫)
বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হাদীসের কিতাবের হাদীসের নাম্বার মিলবেনা।
সুতরাং কোনো হাদীসের নাম্বার দিয়ে খুজলে সেই হাদীস কোনো প্রকাশনীর কত নং হাদীস, সেটি জেনে নিতে হবে।
আরো জানুনঃ-
হাদিসটি সহীহ,হাসান,দুর্বল এই মানগুলো বিজ্ঞ মুহাদ্দিসিনে কেরামগন, যাদের উলুমুল হাদীসের উপর অগাধ পাণ্ডিত্য রয়েছে,তারা রাবীদের জীবনী ও তাদের ব্যপারে অন্যান্য মুহাদ্দিসিনে কেরামগনদের মতামত জেনে লিখেছেন।
(০৬)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ - رضي الله عنه - قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم: «يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ, فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ, وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ, وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ; فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। সওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে।
(বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫, মুসলিম ১৪০০, তিরমিযী ১০৮১, নাসায়ী ২২৪০, ২২৪১, ২২৪২, আবূ দাউদ২০৪৬, ইবনু মাজাহ ১৮৪৫, আহমাদ ৩৫৮১, দারেমী ২১৬৫, ২১৬৬।)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
সাওম মানুষকে খাসি করে দেয়। এই খাসির মানেপ্রবৃত্তিকে দমন করা।
হাদীসে যে সাহাবী খাসি হতে চাওয়ার কথা এসেছে,এটি মূলত বীর্যনালী কেটে দেয়ার মাধ্যমে হয়।
যাতে আর বাচ্চা আর না হয়।