ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
আর-রাহীকুল মাখতূম, গ্রন্থে ওহীর পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন,
এখানে আমরা আলোচনার মূল বিষয়াদি থেকে একটু সরে গিয়ে, অর্থাৎ রিসালাত ও নবুওয়াতের বরকতময় বিষয়াদির বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ করার পূর্বে ওহীর প্রকৃতি ও প্রকারভেদ সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি। কারণ, এটাই হচ্ছে রেসালাতের উৎস এবং প্রচারের উপায়। ওহীর প্রকৃতি এবং প্রকারভেদ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাইয়্যেম যে আলোচনা করেছেন তা নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলঃ
১. সত্য স্বপ্নঃ স্বপ্নের মাধ্যমে নাবী কারীম (ﷺ)-এর উপর ওহী অবতীর্ণ হয়।
২. ফিরিশতা দেখা না দিয়ে অর্থাৎ অদৃশ্য অবস্থান থেকেই রাসূল (ﷺ)-এর অন্তরে ওহী প্রবেশ করিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে নাবী কারীম (ﷺ) যেমনটি ইরশাদ করেছেনঃ
(إن روح القدس نفث في روعى أنه لن تموت نفس حتى تستكمل رزقها، فاتقوا الله وأجملوا في الطلب، ولا يحملنكم استبطاء الرزق على أن تطلبوه بمعصية الله ، فإن ما عند الله لا ينال إلا بطاعته)
অর্থঃ ‘জিবরাঈল (আঃ) ফিরিশতা আমার অন্তরে এ কথা নিক্ষেপ করলেন যে, কোন আত্মা সে পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না যে পর্যন্ত তার ভাগ্যে যতটুকু খাদ্যের বরাদ্দ রয়েছে পুরোপুরিভাবে তা পেয়ে না যাবে। অতএব, তোমরা আল্লাহকে সমীহ কর এবং রুজি অন্বেষণের জন্য ভাল পথ অবলম্বন কর। রুজি প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় তোমরা আল্লাহর অসন্তোষের পথ অন্বেষণে যেন উদ্বুদ্ধ না হও। কারণ, আল্লাহর নিকট যা কিছু রয়েছে তা তাঁর আনুগত্য ছাড়া পাওয়া দুস্কর।
৩. ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণপূর্বক নাবী কারীম (ﷺ)-কে সম্বোধন করতেন। তারপর তিনি যা কিছু বলতেন নাবী কারীম (ﷺ) তা মুখস্থ করে নিতেন। এ অবস্থায় সাহাবীগণ (রাঃ)ও ফেরেশতাকে দেখতে পেতেন।
৪. ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় নাবী কারীম (ﷺ)-এর নিকট ঘন্টার টুন টুন ধ্বনির মতো ধ্বনি শোনা যেত। ওহী নাযিলের এটাই ছিল সব চাইতে কঠিন অবস্থা। টুন টুন ধ্বনির সংকেত প্রকাশ করতে করতে ফিরিশতা ওহী নিয়ে আগমন করতেন এবং নাবী (ﷺ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। ওহী নাযিলের সময় কঠিন শীতের দিনেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কপাল থেকে ঘাম ঝরতে থাকত। তিনি উষ্ট্রের উপর আরোহণরত অবস্থায় থাকলে উট বসে পড়ত। এক দফা এইভাবে ওহী নাযিল হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উরু যায়দ বিন সাবেত (ﷺ)-এর উরুর উপর ছিল। তখন তাঁর উরুতে এতই ভারবোধ হয়েছিল যে মনে হয়েছিল যেন উরু চূর্ণ হয়ে যাবে।
৫. নাবী কারীম (ﷺ) ফিরিশতাকে কোন কোন সময় নিজস্ব জন্মগত আকৃতিতে প্রত্যক্ষ করতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই অবস্থাতেই তিনি তাঁর নিকট ওহী নিয়ে আগমন করতেন। নাবী কারীম (ﷺ)-এর এ রকম অবস্থা দু’বার সংঘটিত হয়েছিল যা আল্লাহ তা‘আলা সূরাহ ‘নাজমে’ উল্লেখ করেছেন।
৬. পবিত্র মি’রাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন আকাশের উপর অবস্থান করছিলেন সেই সময় আল্লাহ তা‘আলা নামায এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সরাসরি হুকুমের মাধ্যমে ওহীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
৭. আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সরাসরি কথোপকথন যেমনটি হয়েছিল, তেমনি মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে হয়েছিল। মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে যে আল্লাহ তা‘আলার কথোপকথন হয়েছিল কুরআন কারীমে তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে নাবী কারীম (ﷺ)-এর কথোপকথনের ব্যাপারটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে (কুরআন দ্বারা নয়)।
কোন কোন লোক পর্দা বা আবরণ ব্যতিরেকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর সামনা-সামনি কথোপকথনের মাধ্যমে ওহী নাযিলের অষ্টম রীতির কথা বলেছেন। কিন্তু ইসলামের পূর্বসূরীদের হতে শুরু করে পরবর্তীদের সময়কাল পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে ওহী নাযিলের ব্যাপারে মতভেদ চলে আসছে।(যাদুল মা’আদ-১/১৮ থেকে সংক্ষেপিত)