ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
‘সার্বভৌমত্ব’ আধুনিক বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। শব্দটি ‘সার্বভৌম’ শব্দের গুণবাচক বিশেষ্য। ‘সার্বভৌম’ শব্দটি সর্ব ও ভূমি শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এর মূল আভিধানিক অর্থ হলো সমুদয় ভূমির অধীশ্বর, সম্রাট (প্রভু)। (সূত্র : বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃষ্ঠা-১১৪৯; বাংলা উচ্চারণ অভিধান, পৃষ্ঠা-৪৮৬)।
এ ব্যুত্পত্তিগত অর্থে আল্লাহ তাআলাই হলেন একমাত্র
সার্বভৌমত্বের মালিক। তিনি ছাড়া গোটা পৃথিবীর প্রভু ও মালিক বলতে আর কেউ নেই, হতেও পারে না।
قَالَ مُوۡسٰی لِقَوۡمِہِ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِاللّٰہِ وَ اصۡبِرُوۡا ۚ اِنَّ الۡاَرۡضَ لِلّٰہِ ۟ۙ یُوۡرِثُہَا مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ؕ وَ الۡعَاقِبَۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۲۸﴾
মূসা তার সম্প্রদায়কে বললেন, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং ধৈর্য ধর; নিশ্চয় যমীন আল্লাহরই। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তার ওয়ারিশ বানান। আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্যই।
(সুরা আ'রাফ ১২৮)
অর্থাৎ ‘গোটা পৃথিবীর একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ।’
اللّٰہِ الَّذِیۡ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ وَیۡلٌ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ مِنۡ عَذَابٍ شَدِیۡدِۣ ۙ﴿۲﴾
আল্লাহর পথে—আসমানসমূহে যা কিছু রয়েছে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে তা তাঁরই। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ।
(সুরা ইবরাহিম ০২)
(০২)
সুরা ফাতেহা উম্মুল কুরআন, তাই সুরা ফাতেহা দ্বারা কুরআন শুরু করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي شُعَيْبٍ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " ( الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) أُمُّ الْقُرْآنِ وَأُمُّ الْكِتَابِ وَالسَّبْعُ الْمَثَانِي "
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সূরাহ ‘‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন’’ হচ্ছে উম্মুল কিতাব, উম্মুল কুরআন এবং বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত।
(বুখারী (অধ্যায় : তাফসীর, অনুঃ আমি তোমাকে দিয়েছি সাতটি মাসানী এং কুরআন মাজীদ, হাঃ ৪৭০৪) অনুরূপ, দারিমী (হাঃ ৩১২৪), আহমাদ (২/৪৪৮) আবু দাউদ ১৪৫৭,তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩১২৪ [আল মাদানী প্রকাশনী]
وذكر بعض أهل العلم أن معاني القرآن جمعت في الفاتحة
কোনো কোনো আহলে ইলেম বলেছেন যে সমস্ত কুরআনের অর্থ সুরা ফাতেহার মধ্যে জমা হয়েছে।
তাই সুরা ফাতেহা দ্বারা কুরআন শুরু করা হয়েছে।
কোরআনের সূরাগুলো ওহির ভিত্তিতে সাজানো হয়েছেঃ-
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
فَقَالَ عُثْمَانُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يَأْتِي عَلَيْهِ الزَّمَانُ وَهُوَ تَنْزِلُ عَلَيْهِ السُّوَرُ ذَوَاتُ الْعَدَدِ فَكَانَ إِذَا نَزَلَ عَلَيْهِ الشَّىْءُ دَعَا بَعْضَ مَنْ كَانَ يَكْتُبُ فَيَقُولُ ضَعُوا هَؤُلاَءِ الآيَاتِ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا وَإِذَا نَزَلَتْ عَلَيْهِ الآيَةُ فَيَقُولُ ضَعُوا هَذِهِ الآيَةَ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا
উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর এমন এক যামানাও এসেছে যখন তাঁর উপর বহুসংখ্যক সূরা এক সঙ্গে নাযিল হয়েছে। ঐ যুগে তাঁর উপর কোন বিষয় নাযিল হলে ওয়াহী লেখকগণের কাউকে ডেকে তিনি বলতেন এ আয়াতগুলো যে সূরায় অমুক অমুক বিষয়ের উল্লেখ আছে, সে সূরায় অন্তর্ভূক্ত কর। কোন আয়াত নাযিল হলে বলতেন, এই আয়াতটি যে সূরায় অমুক অমুক বিষয়ের উল্লেখ আছে সে সূরায় অন্তর্ভূক্ত কর। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩০৮৫, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২৮৭৫, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-৩০৫৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৯৯]
تَرْتِيبُ السُّوَرِ هَكَذَا هُوَ عِنْدَ اللَّهِ فِي اللَّوْحِ الْمَحْفُوظِ عَلَى هَذَا التَّرْتِيبِ وَعَلَيْهِ كَانَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْرِضُ عَلَى جِبْرِيلَ كُلَّ سَنَةٍ
সূরার তারতীব এমনি। এমনি আছে আল্লাহর কাছে লওহে মাহফূজে। আর এ তারতীবের সাথেই প্রতি বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলকে শুনাতেন। [আলইতকান ফী উলুমিল কুরআন লিসসুয়ূতী-১/২১৭]
تَرْتِيبُ السُّوَرِ وَوَضْعُ الْآيَاتِ مَوَاضِعَهَا إِنَّمَا كَانَ بِالْوَحْيِ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: “ضَعُوا آيَةَ كَذَا فِي مَوْضِعِ كَذَا ” وَقَدْ حَصَلَ الْيَقِينُ مِنَ النَّقْلِ الْمُتَوَاتِرِ بِهَذَا التَّرْتِيبِ مِنْ تِلَاوَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِمَّا أَجْمَعَ الصَّحَابَةُ عَلَى وَضْعِهِ هَكَذَا في المصحف
সূরার তারতীব এবং আয়াতসমূহকে যথাস্থানে রাখা এর পুরোটাই হয়েছে অহীর মাধ্যমে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উক্ত আয়াতকে ওমুক স্থানে রাখো। এ বিষয়টি মুতাওয়াতির তথা নিরবচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় সুনিশ্চিত হয়েছে যে, এ তরতীবেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতেন এবং এভাবে মুসহাফে সূরার তারতীব থাকা বিষয়ে সাহাবাগণের ইজমা বা ঐক্যমত্য সংঘটিত হয়েছে। [আলইতকান ফী উলুমিল কুরআন লিসসুয়ূতী-১/২১৬]
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)