আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
232 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (13 points)
আমার সাথে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। গত দেড় বছরে আমাদের মধ্যে ঝগড়া ত দূরে থাক,সামান্য মনোমালিন্যও হয়নি। আমরা একে অপরকে নিয়ে খুবই খুশি,আর সারা জীবন এভাবেই থাকতে চাই।

কিছুদন আগে আমি তা..ক এবং কেনায়া বাক্য সম্পর্কে ওয়াজে জানতে পারি। তখন আমার মনের মধ্যে ভয় হয় আমি এধরনের কোন কথা বলি নাই তো? তেমন কিছুই মনে পড়ে না।তারপরেও সারাদিন ভাবতে থাকি এধরনের কোন কথা বলে ফেললাম নাকি?রাতে ঘুমের মধ্যে মনে হয়,কেনায়া বাক্য বলে ফেলেছি,ঘুম থেকে উঠে কিছুই মনে পড়ে না। আমি খুব সচেতন থাকি যেন এধরনের কথা আমার মুখ দিয়ে না বের হয়।

আগে আমি প্রান খুলে মজা করে কথা বলতাম। আমার কথা শুনে আমার স্ত্রী হেসে কুটি কুটি হতো। কিন্তু এখন আমি খুব সতর্ক থাকি।বেছে বেছে বেছে কথা বলি যাতে কেনায়ার ধারে কাছেও না যায়।
আমার মনের মধ্যে আমার সম্পুর্ণ অনিচ্ছাকৃত "আমি...  দিলাম" কথাটা চলে আসে। এটা আমি চাই না। তারপরেও এটা চলে আসে। এই কথাটা আমার কথা নয়।আমার উদ্দেশ্য বা নিয়ত এরকম নয়। কিন্তু এই বাজে কথাটা মনে মধ্যে উকি দেয়।

খুব সতর্ক থাকার পরেও কয়েকটা ঘটনা নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি।

১। আমি আর আমার স্ত্রী একদিন গল্প করতেছিলাম। সে বলল,"আব্বু তোমাকে বাইক কিনে দেবার জন্য টাকা দিতে চাইছে"। আমি জানি, ওর বাবার বেশ কিছু ঋণ আছে। কিন্তু শখের জন্য দিতে চাচ্ছে। আমি তাই বলি" আমার জন্য গাড়ি কেনার কথা ভুলে যাও"। কথাটা বলার সাথে সাথে মনে মধ্যে"আমি... দিলাম " কথাটা উকি দিলো,আমার ইচ্ছার বাইরে।তারপর আমি বললাম " আমি গাড়ি নেবো না"।আবার অই কথাটা একই ভাবে ইচ্ছার বাইরে মনের মধ্যে উকি দিল।আমার স্ত্রী বললো" তোমার মত স্বামী পেয়ে আমি ভাগ্যবান।তোমাকে কিছু জোর করে দিতে চাইলেও নিতে চাওনা।আর অনেকেই নিজে চেয়ে নেয়"।আমি ভয়ে চুপ করে ছিলাম।

২। আমাকে কেও অবিশ্বাস্য বা অবাস্তব কোন কথা বললে আমি সহজাত ভাবেই বলে ফেলি,"হেট এখান থেকে"। অর্থ করলে এরকম হতে পারে, "দূর বেটা পাগল"। আমি না ভেবে না চিন্তা করেই মজার ছলে কথাটা বলে ফেলি। এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

আমার স্ত্রী একদিন আমার সাথে গল্প করতে করতে একটা অবিশ্বাস্য কথা বলল। মজা করার জন্য বলেছিল।আমিও মজার ছলে অভ্যাস মত বলে ফেলি" হেট এখান থেকে"।আমার এই কথা শুনে সে হেসে ফেটে পড়ে। কিন্তু আমি ভাবি,এত সাবধান থেকে কি কেনায়া বাক্যের হাত থেকে রক্ষা পেলাম না। এটা কি কেনায়া বাক্য হয়ে গেল?যদিও আমি কোন কিছু মিন করে এটা বলি নি।

৩। আমার ছেলে মাঝে মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে যায়।গ্রামে ডাক্তার দেখালে সুস্থ্য হতে অনেক দিন সময় লাগে। কোন কোন ক্ষেত্রে সুস্থ্য হয় না।৷ শেষ মেষ শহরে ভাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম। আমি বললাম" এবার থেকে গ্রামে ডাক্তার দেখাবা না।শহরে গিয়ে দেখাবা"।  ও বললো, "সাথে যে যাবে তাদের ত সময় মেলে না।"উল্লেখ্য আমি বাড়ি থাকি না,,সে আমার আব্বা বা শ্বশুরের সাথে ডাক্তারের কাছে যায়।আমি বললাম" একাই চলে যাবা"

কথাটা বলার পর প্রথমে মনে হল,এটা কেনায়া বাক্য হয়ে গেল নাতো,পরে মনের মধ্যে "আমি.... দিলাম” কথাটা মনের মধ্যে আসবে বুঝতে পারে আস্তগফিরুল্লাহ পড়তে থাকি।

৪। আমি আর আমার স্ত্রী এক সাথে একটা কাজ করতে ছিলাম। কিচ্ছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম।সে আবার কাজ করতে পারবে কি না জানার জন্য প্রশ্ন করলাম," আর হবে না?” কথাটা বলার সাথে সাথে আমার মনের মধ্যে"আমি.....  দিলাম" কথাটা মনের মধ্যে উকি দিল। সাথে সাথে আমি।দোয়া পড়তে শুরু করলাম।

আমি ইচ্ছা করে মনে করি নাই এই বাজে কথাটা। আমি বরং সাবধান থাকি এধরনের কথা না বলার এবং চিন্তা না করার।

খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে এই ঘটনা গুলো নিয়ে।

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


তালাক খুবই মারাত্মক একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

★তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় ইঙ্গিত সূচক শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।
(হেদায়া ১/২৪১)

আরো জানুনঃ  

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এতে তালাক হবেনা।

(০২)
এটা কেনায়া বাক্য হয়ে যায়নি।
এতে তালাক হবেনা। 

(০৩)
এটা কেনায়া বাক্য নয়।
আপনি অহেতুক টেনশন করবেননা।

(০৪)
এতে কোনো সমস্যা হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...