বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/54889/ নং
ফাতাওয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,
আল্লাহ তায়ালা অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে
দিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ
صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي مَا
وَسْوَسَتْ بِهِ صُدُورُهَا، مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَكَلَّمْ ".
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেন, (আমার বরকতে) আল্লাহ আমার উম্মতের
অন্তরে উদিত ওয়াসওয়াসা (পাপের ভাব ও চেতনা) মাফ করে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে
তা কাজে পরিণত করে অথবা মুখে বলে। (সহীহ বুখারী ২৫২৮)
অপর এক হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى
الله عليه وسلم إِنَّ اللهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ
وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ) থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ আমার উম্মাতের ভুল , বিস্মৃতি ও বলপূর্বক যা করিয়ে নেয়া হয় তা ক্ষমা করে
দিয়েছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, ২০৪৩]
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ
الصَّبِيِّ حَتَّى يَشِبَّ وَعَنِ الْمَعْتُوهِ حَتَّى يَعْقِلَ " .
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে দন্ডবিধি
রহিত করে দেওয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে
জাগ্রত হয়, শিশু যতক্ষন না সাবালক হয়, বেহুশ ব্যক্তি যতক্ষণ না তার হুশ ফিরে এসেছে। - ইবনু মাজাহ
২০৪১, ২০৪২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৪২৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদীস শরীফে এসেছে-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَّامٍ قَالَ: أَخْبَرَنَا عَبْدَةُ،
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا شَيْئًا
مَا نُحِبُّ أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهِ وَإِنَّ لَنَا مَا طَلَعَتْ عَلَيْهِ
الشَّمْسُ، قَالَ: «أَوَ قَدْ وَجَدْتُمْ ذَلِكَ؟» قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: «ذَاكَ
صَرِيحُ الْإِيمَانِ»
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মনের
মধ্যে এমন কিছু চিন্তার উদ্রেক হয় যা সূর্য উদিত হওয়ার পরিধির মধ্যকার
(মূল্যবান) সবকিছুর বিনিময়েও কথায় প্রকাশ করা আমরা মোটেও সমীচীন মনে করি না।
তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কি তা অনুভব করো? তারা
বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ এটিই ঈমানের
সুস্পষ্ট পরিচয়। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান) আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং- ১২৯৬ হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
আরো জানুন- https://ifatwa.info/54114/
□ শয়তানের উক্ত ওয়াসওয়াসাকে প্রতিহত করার লক্ষে নিমোক্ত
হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করতে পারেন–
১. আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা
দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ
قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ হে অন্তর
পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।
আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম,
হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার
উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? (যে বেশি
বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন
হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে
পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)
সুতরাং এই হাদিসের শিক্ষা অনুযায়ী আপনিও উক্ত দোয়া অধিকহারে
করুন।
২. সকাল ও সন্ধ্যায় পড়ুন-–أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ
التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
وَأَنْ يَحْضُرُونِ (আমি আল্লাহর
পরিপূর্ণ কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার
বান্দার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।)
ফজর ও মাগরিবের পর এবং ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক ও নাস পড়ুন।
হাদিসে এসেছে, উকবা ইবনে আমের রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ
أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ ، لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ؟ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ
الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল
হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখা যায় নি। আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও
কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (মুসলিম ৮১৪)
৩. মনের মধ্যে ওয়াসওয়াসা আসলে পড়ুন– أَعُوذُ
بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم (আমি আল্লাহর
নিকট বিতাড়িত থেকে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি।)
৪. ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর পড়ুন– أَعُوذُ بِكلِمَاتِ الله
التّامّاتِ مِن شَرّ مَا خَلَقَ (আমি আল্লাহ
তাআলার পূর্ণাঙ্গ কালামের কাছে তাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।)
৫. বেশী করে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা, জিকির শয়তান
থেকে আত্মরক্ষার শক্তিশালী দুর্গ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اسْتَحْوَذَ
عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَأَنسَاهُمْ ذِكْرَ اللَّهِ أُوْلَئِكَ حِزْبُ
الشَّيْطَانِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ الشَّيْطَانِ هُمُ الْخَاسِرُونَ
শয়তান তাদেরকে বশীভূত করে নিয়েছে, অতঃপর
আল্লাহর জিকির ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই
ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা মুজাদালাহ ১৯)
৬. ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
فَمَنْ
أَرَادَ مِنْكُمْ بَحْبَحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمُ الْجَمَاعَةَ، فَإِنَّ
الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ، وَهُوَ مِنَ الِاثْنَيْنِ أَبْعَدُ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মাঝখানে থাকতে ইচ্ছুক, সে যেন
অবশ্যই জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সঙ্গী এবং দু’জন থেকে
সে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকে। (তিরমিযি ২২৫৪)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. না, এতে ঈমান চলে
যাবে না।
২. না, এভাবে বলার
দ্বারা ঈমান চলে যাবে না।
৩. না, এতে ঈমান চলে
যাবে না। কারণ, কুফরীর চিন্তা করার দ্বারাই কুফরী হয়ে যায়
না। যদি না তা কাজে বা কথায় প্রতিফলিত না করা হয়।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঈমান চলে যায়নি। তবে আপনি
এসব চিন্তা ভাবনা থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকার চেষ্টা করবেন এবং শয়তানের এমন
কুমন্ত্রণাকে এড়িয়ে চলার চলবেন। কারণ, ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে
সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’
(আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)