আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
120 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
আসসালামু আলাইকুম
উস্তায আমরা সবাই বদনজর এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত,  বদনজর থেকে রক্ষার্থে আমরা আল্লাহর যিকির মাশা আল্লাহ বলি এবং ভবিষ্যতে কোনো কাজের জন্য ইনশা আল্লাহ বলি।

কিছুদিন পূর্বে আমাকে একজন জানায় আমরা যেভাবে মাশা আল্লাহ এবং ইনশা আল্লাহ বলি তা নাকি ভুল।

কোরানে যেভাবে ইনশা আল্লাহ এর জায়গায় চার আলিফ টান আছে সেরকম  করেই বলতে হবে, মাশা আল্লাহ এর ক্ষেত্রেও তাই,,আমি এইটা কতটুকু সঠিক জানতে চাই,

1 Answer

0 votes
by (59,190 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ইসলামী পরিভাষাগুলোর একটি ‘ইনশাল্লাহ’। এর অর্থ হলো, যদি আল্লাহ চান অথবা আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে এই কাজটি করা সম্ভব। ভবিষ্যত বা আগামীতে কোনো কাজ করার আগে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করতে হয়।

اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

...وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًا اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰهُ

কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো না যে, ‘আমি ওটা আগামীকাল করব’। ইন শাআল্লাহ (আল্লাহ ইচ্ছা করলে) এই কথা না বলে; যদি ভুলে যাও, তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো ও বলো, ‘সম্ভবত, আমার প্রতিপালক আমাকে এ অপেক্ষা সত্যের নিকটতম পথ নির্দেশ করবেন।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৩-২৪)

এই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উম্মতকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতকালে কোনো কাজ করার ওয়াদা বা স্বীকারোক্তি করলে এর সাথে ‘ইনশাআল্লাহ’ বাক্যটি যুক্ত করতে হবে। কেননা, ভবিষ্যতে জীবিত থাকবে কিনা তা কারো জানা নেই। জীবিত থাকলেও কাজটি করতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। কাজেই মুমিনের উচিত মনে মনে এবং মুখে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা করা। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বললে এভাবে বলা দরকার, যদি আল্লাহ চান, তবে আমি এ কাজটি আগামী কাল করব। ইনশাআল্লাহ বাক্যের অর্থ তাই।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি যদি বলতেন ‘ইনশাআল্লাহ’, তবে অবশ্যই তার ওয়াদা ভঙ্গ হত না। আর তা তার ওয়াদা পূর্ণতায় সহযোগী হত’৷ (বুখারীঃ ৩৪২৪, ৫২৪২,৬৬৩৯, ৭৪৬৯, মুসলিম, ১৬৫৪, আহমাদঃ ২/২২৯, ৫০৬)

 

হাদিস দ্বারাও সাব্যস্ত যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কাজ শুরুর আগে ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনকেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো কসম করলে তার গুনাহ হবে না।

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় নবী-রাসূল ও তাদের জাতির দিকে ইঙ্গিত করে ইনশাল্লাহ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন সুরা বাকারায় মুসা আ.-এর কওমের বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে ,

قَالُوا ادۡعُ لَنَا رَبَّکَ یُبَیِّنۡ لَّنَا مَا هِیَ ۙ اِنَّ الۡبَقَرَ تَشٰبَهَ عَلَیۡنَا ؕ وَ اِنَّاۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ لَمُهۡتَدُوۡنَ

তারা বলল, ‘তুমি আমাদের জন্য তোমার রবের নিকট দোয়া কর, তিনি যেন আমাদের জন্য স্পষ্ট করে দেন, তা কেমন? নিশ্চয় গরুটি আমাদের জন্য সন্দেহপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আর নিশ্চয় আমরা আল্লাহ চাহে তো পথপ্রাপ্ত হব’। ( সুরা বাকরা, আয়াত, ৭০)

একটি বিবাদের মীমাংসার জন্যে বনী ইসরাইলের লোকেরা হযরত মূসা (আঃ)-এর শরণাপন্ন হলো। যেহেতু সাধারণ উপায়ে এ সমস্যার সামাধান করা সম্ভব ছিল না, তাই হযরত মূসা (আ.) অলৌকিক পন্থায় এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি বনী ইসরাইলীদের বললেন, আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, একটি গরু জবাই করতে হবে। এরপর জবাই করা গরুর এক টুকরো গোশত নিহত ব্যক্তির গায়ে স্পর্শ করলে সে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর নাম বলে দেবে।

আয়াতে এই ঘটনার বর্ণনায় ইকরিমাহ রহ. বলেন, যদি তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ বাক্য না বলত, তবে কখনই সে ধরনের গরু খুঁজে পেত না।  ( তাফসিরে তাবারি, ২/৮১)

হাদিস দ্বারাও সাব্যস্ত যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম কাজ শুরুর আগে ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো কসম করলে তার গুনাহ হবে না। ( তিরমিজি, ১৪৫১)

**সুন্দর কিছু দেখলে- ‘মা শা আল্লাহ’ বলতে হয়। তবে উলামায়ে কেরাম মা শা আল্লাহ বলার তিনটি অবস্থা নির্ধারণ করেছেন। তাহলো-

১. যখন কারও সফলতা দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।

২. যখন কাউকে ভালো কিছু করতে দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।

৩. যখন কারো কোনো সুন্দর জিনিস দেখবেন; তখন- ‘মা শা আল্লাহ’ বলা।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

মাশাআল্লাহ্ এর শাব্দিক বিশ্লেষণ এরূপ: মা = যা, শা(আ) = ইচ্ছা করেন/চান, আল্লাহ = আল্লাহভেঙে ভেঙে ‘মা শা আল্লাহ’ এভাবেও বলতে পারেন। মূল আরবি: مَا شَاءَ اللّٰه

একইভাবে, ‘ইনশাআল্লাহ’। এর অর্থ ‘যদি আল্লাহ্ চান/ইচ্ছা করেন।’ ভেঙে ভেঙে ‘ইন শা আল্লাহ’ বললেও অসুবিধা নেই। এর শাব্দিক বিশ্লেষণ এরূপ:

ইন = যদি, শা(আ) = ইচ্ছা করেন (চান), আল্লাহ্ = আল্লাহ্। মূল আরবি: إِنْ شَاءَ اللّٰه

সুতরাং প্রশ্নাল্লিখিত ছুরতে যদি অর্থ পরিবর্তন না হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। তবে  উত্তম হলো উপরে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেভাবেই বলার চেষ্টা করা। কারণ, এগুলি আরবি শব্দ আরা আরবিকে আরবির মত উচ্চারণ করাই শ্রেয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 155 views
...