জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) ফরজ নামাজের পর মুনাজাত করা জায়েজ আছে।
এটা সুন্নাহ থেকে প্রমাণিত
وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِذَا صَلَّيْتَ فَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الخَيْرَاتِ، وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ، وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ،
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুহাম্মদ! যখন তুমি নামায পড়ে ফেলবে, তখন এ দুআ করবে- হে আল্লাহ!আপনার নিকট ভাল কাজের তৌফিক চাই এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাহায্য চাচ্ছি এবং আপনার দরবারের মিসকীন তথা আল্লাহ ওয়ালাদের মুহাব্বত কামনা করছি। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩২৩৩}
★ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় কিতাব আততারীখুল কাবীরে এনেছেন-
عَنْ كاتب المغيرة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو في دبر صلاته
হযরত মুগিরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায শেষে দুআ করতেন। {আততারীখুল কাবীর, হাদীস নং-১৭৭২, ৬/৮০}
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ مَقَامِي بَيْنَ كَتِفَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكَانَ إِذَا سَلَّمَ قَالَ: «اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَوَاتِيمَ عَمَلِي رِضْوَانَكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِى يَوْمَ أَلْقَاكَ»
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ছিলাম রাসূল সাঃ এর কাঁধের পাশে। তখন রাসূল সাঃ সালাম ফিরিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ জীবনকে সবচে’ সুন্দর কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার শেষ আমলকে তোমার সন্তুষ্টি অনুপাতে কর। হে আল্লাহ! তুমি তোমার সাথে আমার সাক্ষাতের দিনকে সর্বোত্তম দিন কর। {আলমুজামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৯৪১১}
★হযরত সাদ রাঃ বলেন,
وَيَقُولُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَتَعَوَّذُ بِهِنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَعَذَابِ الْقَبْرِ»
রাসূল সাঃ প্রতি নামাযের পর এই শব্দে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কৃপণতা থেকে পানাহ চাই। এবং অভাব থেকে পানাহ চাই এবং অশীতিপর বৃদ্ধাবস্থা থেকে পানাহ চাই এবং দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আজাব থেকে পানাহ চাই। {সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫৪৭৯}
مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ بِدَعَوَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ: «إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ
হযরত মুহাম্মদ বিন আবী ইয়াহইয়া বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ কে দেখলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে নামাযের ভিতরে হাত তুলে দুআ করছেন। যখন লোকটি নামায শেষ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ নামায শেষ করার আগে হাত তুলে দুআ করতেন না। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৩২৪}
সুতরাং ফরজ নামাযের পর দুআ করলে সেটি বিদআত হবেনা
তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-
১
ফরজ নামাযের পর দুআকে জরুরী মনে করা।
২
দুআকে নামাযের অংশ মনে করা।
৩
এ ছাড়া নামায পূর্ণ হয় না আকিদা রাখা।
এ তিনটির কোন একটি পাওয়া গেলে উক্ত দুআ বিদআত হবে। কারণ এর কোন প্রমাণ নেই।
কিন্তু যদি উপরোক্ত কোন কারণ পাওয়া না যায়। বরং যেহেতু রাসূল সাঃ ফরজ নামাযের পর দুআ করেছেন, , তাহলে উক্ত দুআকে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি উক্ত শর্ত গুলো মানা হয়,তাহলে এমন দোয়া করা বিদআত হবেনা।
(উল্লেখ্য যে কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে ফরজ নামাজের পর দোয়া করা বিদআত।
তাদের মতানুসারীরা সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবে।)
(০২)
সেজদায় গিয়ে سبحان ربي الأعلى
ছাড়াও অন্যান্য দোয়া পড়া যাবে। সমস্যা নেই। কিন্তু দুনিয়াবি দোয়া বা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দুআ করা যাবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় অনেক দোয়া পাঠ করতেন। যার কিছু তুলে ধরা হলোঃ
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ فِى سُجُودِهِ « اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ সেজদায় পড়তেন আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি’ কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। {তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১১২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-৬৭২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-১৯৩১}
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন
سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم استغفرلي
-উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থ : আপনার প্রশংসা হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রভু! আপনার প্রশংসার সহিত আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রুকু ও সিজদায় কখনো কখনো তাসবিহের সঙ্গে এ দোয়াটিও পড়তেন-
سبوح قدوس رب الملأ كة والروح
উচ্চারণ : ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’ (মুসলিম)অর্থ : ‘সকল ফেরেশতা এবং জিবরিলের প্রতিপালক অতিপবিত্র।’
-হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সিজদা করতেন তখন তিনি বলতেন
اللهم لك سجدت وبك آمنت و لك أسلمت سجدا وجهي للذي خلقه و صوره وشق سمعه تبارك الله احسن الخالقين
-উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া লাকা আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া চাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআ’হু ওয়া বাচারাহু তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সিজদা করছি। একমাত্র তোমার প্রতিই ঈমান এনেছি এবং তোমার কাছেই আত্মসমর্পন করেছি। আমার মুখমণ্ডল ঐ সত্ত্বার জন্য সিজদাবনত হয়েছে, যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন, সুসমন্বিত আকৃতি দিয়েছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। নিপুনতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কত কল্যাণময়!
’হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সিজদায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াটিও পাঠ করতেন-
اللهم اغفر لي ذنبي دقه وظله والله وآخره وعلانيته وسره
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া ঝুল্লাহু ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু ওয়া আলানিয়্যাতাহু ওয়া সিররাহু।’
(মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার ছোট-বড়, পূর্বের-পরের এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ করে দাও।
হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। আমার হাত তাঁর পা মোবরকের তলাতে ঠেকলো। তখন তিনি মসজিদে উভয় পায়ের পাতা খাড়া অবস্থায় সিজদায় ছিলেন। তখন তিনি বলছিলেন-
اللهم اني اعوذ بك برضاك من سخطك وبمعافتك من عقوبتك و اعوذ بك منك لا احسي ثناء عليك انت كما اثنيت علي نفسك
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উজু বি-রিদাকা মিন সাখাতিকা ওয়া বি-মুআ’ফাতিকা মিন উ’কুবাতিকা ওয়া আ’উজুবিকা মিনকা লা উহসি ছানাআন আলাইকা আংতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা। (মুসলিম, মিশকাত)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি হ’তে আশ্রয় চাই। আর তোমার শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাই। তোমার প্রশংসা করে শেষ করা যায় না। তুমি সেই প্রশংসার যোগ্য, যেরূপ তুমি নিজেই করেছ।
’হজরত আবি মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় এ দোয়াটিও পড়তেন-
اللهم اغفر لي خطيبتي وجهلي واسراف في امري وانت أعلم .به مني اللهم اغفر لي.....
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি খাত্বিয়াতি ওয়া ঝাহলি ওয়া ইসরাফি ফি আমরি ওয়া আংতা আ’লামু বিহি মিন্নি; আল্লাহুম্মাগফিরলি ঝিদ্দি ওয়া হাযলি ওয়া খাত্বায়ি ওয়া আ’মদি ওয়া কুল্লু জালিকা ইংদি; আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লানতু আংতা ইলাহি লা ইলাহা আংতা। (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থ : হে আল্লাহ্! তুমি আমার অসতর্কতা বশত কৃত গুনাহ, অজ্ঞতা বশত অপরাধ, আমার কাজের ক্ষেত্রে সীমালংঘন এবং তুমি আমার ঐ সমস্ত অপরাধও ক্ষমা করে দাও যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক অবগত আছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমার চেষ্টাপ্রসূত, হাসি-ঠাট্ট্রা প্রসূত, ভুলবশত এবং ইচ্ছাকৃত সকল গুনাহ্ মা’ফ করে দাও।
(০৩) আজানের পর আজানের দুআ পড়বে। হাদীসে দুআর কথা এসেছে। {সুনানে সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৯৬, বুখারী, হাদীস নং-৬২৪}
আজানের পরের দুআর আরবী পাঠ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِحَقِّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ،