আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (31 points)

ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ‎‎

১.  বাচ্চা হওয়ার পর আমি নামাজে অনেক অলসতা করি। বাচ্চা কাপড়ে প্রসাব করে সেটা পালটে নামাজ পড়তে অলসতা লাগে। আগে কখনো এমন হতো না। এখন নামাজ ইবাদতে মনোযোগ বসে না। দান সদকা করতেও ইচ্ছা হয় না। কিভাবে ঠিক হবো?
২. এমন কোন দোয়া কি আছে যা কারো দিকে তাকিয়ে পরলে আমার জন্য তার দিল নরম হবে বা আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে?
৩. বাবুর প্রসাবের কাথার সাথে যদি আমার জামা ভেজানো হয় এবং এরপরে ৩ বার ধোয়া হয় তাহলে কি আমার জামার নাপাকি দূর হবে?

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১. অলসতা ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির অন্তরায়। কিন্তু কোন আমল করলে অলসতা দূর হবে তা অনেকে জানে না। তাদের জন্য অলসতা দূরের একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো। দোয়াটি পড়লে অলসতা ছাড়াও দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, কাপুরুষতা, ঋণ, কৃপণতা ও অন্যান্য অসুবিধা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসুল (সা.)  চিন্তা ও পেরেশানির সময় বিশেষ দোয়াটি পড়তেন।

দোয়াটি হলো

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخلِ وَالجُبنِ، وَضَلَعِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)

সময়মতো নামাজ আদায় করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা।

অলসতা উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা এমন রোগ যা মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য থেকে পিছিয়ে দেয়। এজন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । আশা করি, মেনে চলবেন এবং এই রোগ প্রতিরোধে সচেষ্ট হবেন।

এক. যথাসময়ে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা স্মরণ করা।

দুই. নামাজে অবহেলা প্রদর্শনের ভয়াবহতার কথা মনে জাগ্রত করা। এ দু’টি বিষয়ে কোরআনের আয়াত ও হাদিস সম্বলিত ভালো মানের বই কিংবা আর্টিকেল পাঠ করা উচিৎ। বিষয়গুলো জানা থাকলেও আবার পড়ুন। তাতে মনের মধ্যে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা আসবে।

তিন. মনে মৃত্যুর কথা জাগ্রত রাখা। যেকোনো সময় মৃত্যু ঘটতে পারে এটা ভাবা। সুতরাং সময় হওয়ার পরও যদি নামাজ আদায়ে বিলম্ব করি আর আমার যদি মৃত্যু সংঘটিত হয়, তাহলে অলসতাবশত: কাজা নামাজের দায়ভার মাথায় নিয়ে আল্লাহতায়ালার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

চার. অলসতা দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করা।

পাঁচ. যথাসময়ে নামাজ আদায়ের জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। কেউ যদি ভালো কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে অবশ্যই তাতে সাহায্য করেন।

ছয়. আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করা এবং পাপকাজ পরিত্যাগ করা। কারণ মানুষের পাপের সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে তার অন্তরে প্রলেপ পড়ে যায়। তখন সে ধীরে ধীরে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে যায়। সে আর আগের মতো ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। যার কারণে অন্তরে ইবাদতে আড়ষ্টতা, অবহেলা ভাব ও অলসতা অনুভব করে।

সাত. নামাজে বিলম্ব হলে নিজেকে ধিক্কার দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেন আর তা না হয় সে জন্য মনকে প্রস্তুত করা।

আট. সবসময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা। অজু ভেঙ্গে গেলে আবার অজু করে নিন। তাহলে এটি সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে- ইনশাআল্লাহ।

নয়. দৈনন্দিন কিছু কাজ নামাজের ওপর ভিত্তি করে সাজিয়ে নেওয়া। যেমন- এ কাজটি নামাজে আগে করবেন আর এ কাজটি নামাজে পরে করবেন; এভাবে সাজানো।

দশ. মনকে সময়মতো নামাজ পড়তে বাধ্য করা। কারণ আমরা যদি মনমতো চলি তাহলে আমরা সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হবো। তাই মনকে কখনও কখনও কাজে বাধ্য করতে হয়। অর্থাৎ ইচ্ছা না করলেও করতে হয়। সুতরাং আপনি যদি কিছুদিন মনের মধ্যে অলসতাতে প্রশ্রয় না দিয়ে মনকে সঠিক সময় নামাজ আদায় করতে বাধ্য করেন তাহলে অল্পদিন পর এর ফলাফল পাওয়া শুরু করবেন। তখন মনের মধ্যে অলসতা আশ্রয় পাবে না- ইনশাআল্লাহ।

এগারো. যে বিষয়গুলো নামাজে অলসতা তৈরি করে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। বর্তমানে অলস সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে আছে, সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও টেলিভিশন। তাই এসব থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও দূরে থাকতে হবে। তাহলে কাজে মন বসবে, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং অলসতা হার মানবে।

 

বারো. অতিরিক্ত ঘুম ও খাওয়া মনকে অলস এবং শরীরকে স্থূল করে দেয়। সুতরাং এ দু’টি বিষয় যেন অতিরিক্ত না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকা। বরং পরিমিত পরিমাণ খাওয়া ও পরিমিত ঘুম, হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস মানুষকে সচল রাখে এবং অলসতা ও স্থবিরতা দূর করে। এগুলো মেনে চলা।

২. স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা মজবুত করতে নিম্নে লিখিত টিপসগুলো ফলো করার চেষ্টা করুন:

১। আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আল্লাহকে ভয় করে চলতে হলে আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত কুরআন হাদিস পড়তে হবে এবং সেগুলো আমল করার চেষ্টা করতে হবে।

২। সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে যে কাজ নিজ চোখে করতে দেখেননি সেটি তার উপর চাপিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন যে, সন্দেহকে ইসলামে জঘন্য খারাপ কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

৩। ছাড় দেয়ার মানসিকতা পোষণ করুন। আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীকে কোন ভাল পরামর্শ দেন আর আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি সেটা গ্রহণ না করেন তবে হতাশ হওয়া হবেন না। বিষয়টি খুব জরুরী না হলে সেটি তার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিন।

৪। পরস্পরকে অন্যায় থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। স্বামী স্ত্রীর উচিত শুধু ভাল কাজেই পরস্পরকে সাহায্য করা এবং অন্যায় কাজ থেকে একে অপরকে বারণ করা। বারণ করতে গিয়ে যদি কোন ক্ষতির আশংকা থাকে তবে আপনার উচিত হবে আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করা। (তবে যদি অন্যায়টা অনেক বড় হয় তখন আপনার উচিত হবে আইনের আশ্রয় নেয়া)।

৫। একে অপরকে মাঝে মাঝে সাধ্যমত উপহার দিন। এ কাজটিকে আমাদের নবী (সা) উৎসাহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, এর মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হয়।

৬। দেখা হলে একজন আরেকজনকে সালাম দিন। সালাম দিলেও পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধি হয়। এটিও হাদিস দ্বারা স্বীকৃত।

৭। পরস্পরের সাথে কথা বলার সময় অপরের নিন্দা বা গীবত করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ আমি দেখেছি এসবের কারণেও অনেক সময় স্বামী স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হয়।তাছাড়া কারও সামনে বা পিছনে তার ব্যাপারে নিন্দা করা ইসলামে কবিরা গুণাহ বা মারাত্বক পাপ।এটা সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্টেরও অন্যতম কারণ।

৮। স্বামী স্ত্রী পরস্পরের অধিকারের প্রতি সচেতন থাকুন। ইসলাম স্বামী এবং স্ত্রীকে যেসব অধিকার এবং কর্তব্য দিয়েছে সেগুলোই প্রকৃতপক্ষে স্বামী এবং স্ত্রীর অধিকার এবং কর্তব্য। যেমন:

স্বামীর কর্তব্য হল স্ত্রীকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ঠিকমত এনে দেয়া। তার উপর কোন বোঝা চাপিয়ে না দেয়া। স্ত্রীর কর্তব্য হল স্বামীর ভাল কথা মান্য করে চলা। স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোথাও না যাওয়া। ঘরে স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া ইত্যাদি।

৯। কেউ কারও সাথে ভুল করে ফেললে অতিদ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিন। অন্যথায় নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে।

১০। সাংসারিক কাজগুলো বিয়ের পরপরই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিন।

পরিশেষে বলতে পারি আমরা যদি নিজেদের জীবনকে মহান আল্লাহ এবং তার রাসুলের দেখানো পথে পরিচালিত করি তবে আমরা সকল মানুষের সাথেই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারব। আল্লাহ আমাদেরকে সকলকে সেই তাওফিক দান করুন।

৩. জ্বী তিন বার ধৈাত করলে পবিত্র হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...