জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআন তেলাওয়াত করে নাচ গানের অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়া কুরআনের সাথে চরম বেয়াদবী।
এটা স্পষ্ট নাজায়েজ।
এহেন কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরূরী।
নতুবা আল্লাহর গজব নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهٰذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِه اٰخَرِينَ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত।
(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯।)
وکذا قولہم بکفرہ، إذا قرأ القرآن في معرض کلام الناس، کما إذا اجتمعوا فقرأ فجمعناہم جمعًا، ولہ نظائر کثیرۃٌ في ألفاظ التکفیر کلہا ترجع إلی قصد الاستخفاف، بہ قال قاضیخان الفقاعی إذا قال عند فتح الفقاع للمشتري صل علی محمد ، قالوا: یکون آثمًا۔ (الأشباہ والنظائر ۱۰۴ زکریا)
যার সারমর্ম হলো কুরআনের অসম্মান হয়,অবমাননা হয়,এহেন জায়গায় কুরআন তেলাওয়াত করা গুনাহ।
ইমাম সাহেবকে বুঝানোর পড়েও যদি সে এহেন কাজ থেকে বিরত না থাকে,তাহলে তার পিছনে নামাজ মাকরুহ থেকে খালি নয়।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১২/৪৩১)
★সুতরাং এমন হুজুরদের পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহ হবে।
★তবে বৈধ কোনো অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিল কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা জায়েয এবং বরকতপূর্ণ কাজ। তা সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
এক হাদীসে আছে, আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন,
أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا جلسوا كان حديثهم - يعني الفقه - إلا أن يقرأ رجل سورة أو يأمر رجلا بقراءة سورة.
রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (এবং তারা ফিকহ ও দ্বীনী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে আদেশ করতেন কুরআনের কোনো সূরা পাঠ করার জন্য। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩২২; আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাআদ ২/৩৭৪; আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৪১৯
খতীব বাগদাদী রাহ. ‘আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে’ কিতাবে হাদীস ইমলার মজলিসের আদব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাদীস ইমলা শুরু করার আগে উচিত হল, মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননা, মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আমাদের নিকট বর্ণনা করেন ... আবু নাযরা রা. বলেন,
كان أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا اجتمعوا تذاكروا العلم وقرءوا سورة.
রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন তখন তাঁরা ইলমের মুযাকারা করতেন। এবং কুরআনের কোনো সূরা তিলাওয়াত তরতেন। -আলজামে লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে ২/৬৪
হাফিয সামআনি রাহ. ইবনে কাসীর রাহ. ইমাম নববী রাহ. ও হাফিয সাখাবী রাহ. প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ থেকেও অনুরূপ বক্তব্য রয়েছে এবং তাঁরা এর সপক্ষে উক্ত হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন। -আদাবুল ইমলা ওয়াল ইসতেমলা, সামআনী ১/৪৮; আলবা-ইসুল হাসীস, ইবনে কাসীর ১/১৫৩; ফাতহুল মুগীস ৩/২৫৪; তাদরীবুর রাবী ২/৫৭৩
আর সাহাবায়ে কেরামের আমলও শরীয়তের দলীল।
সুতরাং অনুষ্ঠান ও দ্বীনী মাহফিলের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা সম্পূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও সালাফের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো বৈধ অনুষ্ঠান বা মাহফিলে কুরআন তিলাওয়াত করতে চাইলে তা অবশ্যই কুরআন মাজীদের আদব রক্ষা করেই করতে হবে। এবং নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
ক) মাইক পরীক্ষার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না। এটা কুরআনের আদব পরিপন্থী।
খ) মজলিস এলোমেলো থাকলে মজলিস জমানোর উদ্দেশ্যে কেরাত পড়া হয়। এটাও ঠিক নয়।
গ) শ্রোতাগণ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং তারা তিলাওয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতে প্রস্তুত থাকে না। তখন তিলাওয়াত করা হয়। এতে মনোযোগসহ শোনা হয় না। তাই এটাও ঠিক নয়।
ঘ) যে অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য হবে এ জাতীয় অনুষ্ঠান তিলাওয়াত দ্বারা শুরু করাও অন্যায়।
ঙ) যেসব অনুষ্ঠানে পর্দা পুশিদার ব্যবস্থা নেই কিংবা শরীয়ত গর্হিত বিভিন্ন জিনিস বা কর্মকা- বিদ্যমান সে সব অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করাও ঠিক নয়। এতে কুরআন কারীমের অসম্মান হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।