জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কুরআন এতটুকু সহিহ শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন, যার দ্বারা লাহনে জলি (অর্থ পরিবর্তন) হয় না।
লাহনে জলি (অর্থ পরিবর্তন) হয়, এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব কমপক্ষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যে সুরাগুলোর প্রয়োজন, সেগুলো (সুরা ফাতেহা ব্যাতিত কমপক্ষে চারটি সুরা) শুদ্ধ করে নেওয়া আবশ্যক, অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ তাআলার কালাম তিলাওয়াতের বিশেষ নিয়ম ও আদব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
কুরআন তিলাওয়াত কর ধীরস্থির ভাবে, স্পষ্টরূপে। -সূরা মুযযাম্মিল (৭৩) : ৪
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
زينوا القرآن بأصواتكم
সুন্দর সূরের মাধ্যমে কুরআনকে (এর তিলাওয়াতকে) সৌন্দর্যমণ্ডিত কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ইরশাদ করেছেন, (কিয়ামতের দিন) কুরআনের তিলাওয়াতকারী বা হাফেজকে বলা হবে-
اقْرَأْ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا.
তিলাওয়াত করতে থাক এবং উপরে উঠতে থাক। ধীরে ধীরে তিলাওয়াত কর, যেভাবে ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তিলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে যা তুমি তিলাওয়াত করতে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়।' (আবু দাউদ : ১৪৫২) নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, 'যারা সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ : ১৪৫৮)
নামাজের কেরাতে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, এমন ভুল পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভেতর হোক বা পরে হোক- সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল- যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে যায় না, তাতে নামাজ নষ্ট হবে না। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১১৮, ফাতাওয়া কাজিখান ১/৬৭)
,
★★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি উক্ত মহিলা এমন ভাবে তেলাওয়াত শিখে,যার দ্বারা নামাজ ছহিহ হয়ে যাবে,অর্থ বিকৃত হবেনা।
তাহলে তার আর না শিখলেও চলবে।
আর যদি নামাজ শুদ্ধ ভাবে পড়া যায়,এমন পরিমান সুরা শুদ্ধভাবে না পড়তে পারে,অথবা অর্থ বিকৃত হয়ে যায়,তাহলে তাকে আরো চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এইভাবে তেলাওয়াত করলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।
তাই তাকে শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শিখতে হবে।
.
লাহনে জলি হলে এমনভাবে কুরআন তেলাওয়াত এর কোনোভাবেই অনুমতি দেওয়া যাবেনা।
লাহনে খফি হলেও তার জন্য শুদ্ধতার সহিত কুরআন তেলাওয়াত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
,আরবী লাহন শব্দের অর্থ ‘ভুল’। কুরআন পড়ায় যে সব ভুল হয়ে থাকে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, তা হলো লাহনে জলী ও লাহনে খফী।
★★লাহনে জলি আর লাহনে খফি সম্পর্কে জানুনঃ
লাহনে জলী অর্থ মারাত্নক ভুল। কুরআন পড়ার যেসব অবশ্যই পালনীয় নিয়ম-নীতি আছে সেগুলোর লংঘন করাকে লাহনে জলী বলা হয়। যেমন
এক অক্ষরের স্থলে আরেক অক্ষর পড়া,
কোন অক্ষর বাড়িয়ে দেয়া যেমন اَحَدْ ‘আহাদ’ শব্দটি উচ্চারণ করার সময় ‘আ’ বলে হাদ বলতে এক মুহুর্তও দেরী করলে ‘আ’ এর হামযার সাথে আরেকটি হামযা যোগ হয়ে উচ্চারণ হয়ে গেল اَـاحَد ‘আ-হাদ’,
কোন অক্ষর এর উচ্চারণ কমিয়ে দেয়া যেমন, يُوْلَد ‘ইউ-লাদ’ কে يُلَد ‘ইউলাদ’ পড়া, এখানে অয়াও পেশের উচ্চারণ বাদ পড়ে গেল,
যের, যাবার, পেশ ও সাকিনের একটির স্থানে আরকেটি পড়া যেমন, اِهْدِنَـا ‘ইহ্দিনা’ শব্দটিকে اِهِدِنَـا ‘ইহিদিনা’ পড়া, এখানে ‘হা’ এ সাকিনের স্থানে যের হয়ে গেল,
অক্ষরগুলোকে তার মাখরাজ থেকে অর্থাৎ মুখ ও গলা’র যেসব স্থান থেকে আদায় করা দরকার তা না করা,
তাশদীদ যুক্ত অক্ষরকে বিনা তাশদীদে পড়া,
মাদে’র স্থানে মাদ না করা এবং মাদ নেই এরকম স্থানে মাদ করা।
এইসব ভুলগুলোক লাহনে জলী বা মারাত্নক ভুল বলা হয়। এধরণের ভুল পড়া হলে অর্থের পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার ফলে পড়া ও নামাজ উভটায় নষ্ট হয়ে বড় গুনাহ হয়।
★লাহনে খফী বা ছোট ভুল
কুরআন পড়ার যেসব তাজবীদ বা নিয়ম-নীতি আছে সেসব ঠিকভাবে আদায় না করাকে লাহনে খফী বলা হয়। কয়েকটি লাহনে খফীর উদাহরণ;
মোটা অক্ষরগুলোকে পাতলা পড়া যেমন ‘খ’ যাবার ‘খ’ না পড়ে ‘খা’ পড়া, ‘র’ যাবার ‘র’ না পড়ে ‘রা’ পড়া,
ইক্বলাব, ইখফা’র নিয়ম না মেনে পড়া, যেমন ইখফার ‘নুন সাকিন’কে ‘ং’ (অনুস্বর) না পড়ে ‘নুন সাকিন’ই পড়া ইত্যাদী।
এইসব নিয়ম না মেনে পড়লে অর্থের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় নামাজ নষ্ট হয়না এবং পড়ারও কোন ক্ষতি হয়না। তবে এরুপ পড়া মাকরুহ তাই লাহনে খফী ভুলগুলোও যেন না হয় তার চেষ্টা করতে হবে।